What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মালা শাড়ির মায়ায় (1 Viewer)

সত্তর–আশির দশকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল মালা শাড়ি, বাংলাদেশে শাড়ির প্রথম ব্র্যান্ড। আনোয়ার হোসেন প্রতিষ্ঠিত আনোয়ার সিল্ক মিলস লিমিটেড তৈরি করত এই শাড়ি। ১৯ আগস্ট মারা যান আনোয়ার হোসেন। এর পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই শাড়ির প্রতি ভালোবাসার কথা তুলে ধরেন অনেকেই। মা–খালাদের বিয়ের শাড়ি এখন নিজেদের কাছে ভালোবাসার এক সংগ্রহ। একসময় বিয়ের জনপ্রিয় মালা শাড়িকে চলতি ধারায় একঝলক তুলে ধরা হলো।

HGCs8Pm.jpg


‘নববধূকে মধুর স্বপ্নে রাঙিয়ে তোলে’—এই ট্যাগলাইনে মালা শাড়ি প্রসিদ্ধ ছিল দেশজুড়ে। সীমিত আয়ের পরিবারে একসময় এ শাড়ি ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠান কল্পনা করা যেত না। ১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে জিঙ্গেলের শেষে একটা কণ্ঠস্বর, ‘শতরূপে তুমি অপরূপা নারী, মালা শাড়ি’। অর্থাৎ, মালা শাড়ির এত বৈচিত্র্য যে এর প্রতিটিতেই নারীর একেকটি রূপ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। তাতেই সে অপরূপ।

84Oxbmi.jpg


শাড়ি কৃতজ্ঞতা: কাজী সানজিদা

বিজ্ঞাপনচিত্রে দেখা যায়, নানা রং এবং প্রিন্টের মালা শাড়ি পরে একই নারী বিচিত্র রূপে উদ্ভাসিত। কনের সাজে যেমন, তেমনি আটপৌরে ঘরোয়া পরিবেশে কিংবা গ্রামবাংলার নিসর্গে বাঙালি নারীর সৌন্দর্যে জড়িয়ে আছে এই শাড়ি।

এ তো গেল পর্দায় দেখা ছবির বর্ণনা। বাস্তবেও তাই। নইলে বাংলাদেশের নারীরা এই ব্র্যান্ডের শাড়ি এত পছন্দ করবেনই-বা কেন? এ প্রশ্নের জবাবে স্মৃতিতে ধরা দেয় ‘মালা শাড়ি না দিলে বিয়া করুম না’—আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত জনপ্রিয় এ সংলাপ। বোঝা যায়, এ শাড়ি বাঙালি নারীর কাঙ্ক্ষিত পরিধেয় শুধু নয়, চলতি ধারাও বটে। বিয়ে নামের সামাজিক আনুষ্ঠানিকতায়ও যা এড়ানো যায় না।

এ কথা বলা যায়, বাংলাদেশে নারীদের কাছে মালা শাড়ি প্রথম সুপরিচিত ব্র্যান্ড। ১৯৬৮ সালে আনোয়ার হোসেনের প্রতিষ্ঠিত আনোয়ার সিল্ক মিলস থেকেই এটি বাজারে আসে। মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে এ শাড়ি এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে বলা হতো, ‘বিয়ে মানেই মালা শাড়ি’। নারীদের কাছে এটি যখন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, বাজারে তখন অবাঙালিদের তৈরি শাড়ির রমরমা। ফলে বলা যায়, মালা শাড়ির উত্থান বৈপ্লবিক। এটি পরবর্তীকালে শাড়ির বাজারকে প্রভাবিত করেছে। শাড়ি উৎপাদনে উৎসাহ জুগিয়েছে বাঙালি উদ্যোক্তাদের।

BFNxe3A.jpg


কেমন এ শাড়ি? কেনই-বা এটি জনপ্রিয় হয়েছিল? এ শাড়ি ছিল সুতি, সিল্ক এবং কাতানে তৈরি। গাঢ় ও হালকা রং, চিকন সুতায় বোনা সুনিপুণ নকশা এ শাড়ির জনপ্রিয়তার আসল কারণ। তা ছাড়া ফুলেল নকশা ও পাতা থেকে শুরু করে বিচিত্র মোটিফে, জরির কাজে, জমাট নকশায় এর স্বকীয়তা লক্ষ করা যায়; যা বাঙালি নারীর মোহনীয়তায় স্বাতন্ত্র্য তৈরি করে। তাই বাংলাদেশে সব বয়সী নারীর কাছেই মালা শাড়ি প্রিয় ছিল। জনপ্রিয়তার আরেকটি কারণ, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এবং সৌন্দর্যের দিক থেকে নারীর সাজসজ্জায় এর কোনো বিকল্প ছিল না।

মায়ের বিয়ের মালা শাড়ি এখন সানজিদার সংগ্রহে

gUpnXhe.jpg


মায়ের বিয়ের মালা শাড়িটি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন মেয়ে কাজী সানজিদা আখতার। মায়ের কাছে অনেক শুনেছেন এই মালা শাড়ির গল্প। ১৯৭৮ সালে বিয়ে হয়েছিল তাঁর বাবা–মায়ের। একবার মায়ের বিয়ের এই মালা শাড়িটি পরেই দাঁড়ালেন মা–বাবার সামনে। অভিভূত হয়েছিলেন তাঁরা। তিন বছর আগে সানজিদার মা তাঁর শাড়িগুলো সবাইকে ভাগ করে দেন। তখন সানজিদা মায়ের মালা শাড়িটি তাঁর সংগ্রহে নিয়ে নেন।

এ যুগের সঞ্চিতা বিয়েতে পরেছিলেন মালা শাড়ি

eYLjJFy.jpg


মালা শাড়ি পরে বউ সেজেছিলেন ডিজাইনার মাধুরী সঞ্চিতা। তিনি জানালেন, এই শাড়ি সংগ্রহের পেছনের গল্পটা বেশ মজার। বরাবরই পুরোনো জিনিসের প্রতি সঞ্চিতার তীব্র আকর্ষণ। দাদি–নানির কাছে শুনেছিলেন, তাঁদের বিয়েতে মালা শাড়ির পরার গল্প। সেই থেকেই ভেবে রেখেছিলেন নিজের বিয়ের সময় তিনিও পরবেন মালা শাড়ি।

সেই সময় ফ্যাশন হাউস যাত্রায় কাজ করতেন মাধুরী সঞ্চিতা। যাত্রার সঙ্গে জড়িত একজন জানালেন, ময়মনসিংহে তাঁর ভাইয়ের দোকানে এমন অনেক পুরোনো দিনের শাড়ির সংগ্রহ আছে। সেখানেই খোঁজ মিলে এই শাড়িটির। মুক্তিযুদ্ধের আগে তৈরি হয়েছিল শাড়িটি। কিন্তু সঞ্চিতা যখন শাড়িটি হাতে পান, তখন তা ছিল একেবারেই কাগজে মোড়ানো নতুন শাড়ি। ২০১২ সালে এই মালা শাড়ি পরেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন মাধুরী সঞ্চিতা।

[FA]pen[/FA] লেখক: কানিজ আলমাস খান, ঢাকা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top