শিবগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত
বগুড়া শহর থেকে ১১ কিলোমিটার
উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত এ
পটভূমিকে মহাস্থান গড় বলা হয়। এখানে
শায়িত আছেন হযরত শাহ্ সুলতান বলখী
(রহঃ)। আছে তাহার স্মৃতি বিজরীত
মাজার ও মসজিদ, আসে হাজার হাজার
মাজার জিয়ারতকারী ও ভক্ত-আশেকান,
এ পটভূমিতে অবস্থিত প্রত্মতাত্ত্বিক
যাদুঘর, বহুল আলোচিত বেহুলার বাসরঘর,
ভাসুবিহার, হিন্দু সম্পদায়ের তীর্থস্থান
শিলাদেবীর ঘাট, রয়েছে জীবন্তকুপ যে
কুপে মৃত্যূ মানুষ ফেলে দিলে জীবিত হত
বলে প্রবাদ রয়েছে। মহাস্থানগড়ের
পশ্চিম দিকে কালীদহ সাগর, এ সাগরকে
কেন্দ্র করে পদ্মাদেবীর ইতিহাস রচনা
করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে নানা
নিদর্শন। এ নিদর্শন গুলো দেখার জন্য দেশ-
বিদেশ থেকে আসে হাজার হাজার
দর্শনার্থী। প্রাচীন সভ্যতার মূল পটভূমি এই
মহাস্থান নগরী, যাকে বলা হয় পূন্ড্রবর্ধন
বা পূণ্ড্রনগরী। এ পুণ্ড্রনগরী প্রাচীন
বাংলা রাজধানী ছিল। এখানে অনেক
রাজা রাজত্ব করেছেন। এখানে ৬৫০
খ্রীঃ থেকে ১২০৫ খ্রীঃ পর্যন্ত ৮ রাজ
পরিবার রাজত্ব করেছেন। হিন্দু শাসক
রাজা পশুরামের ১১৮০-১২০০ খ্রীঃ মধ্যে
আগমন ঘটে। তার পর একজন মুসলিম
ধর্মযাজকের আগমন ঘটে তিনি আসেন সুদুর
বল্লখ শহর থেকে মাছের পিঠে সওয়ার
হয়ে। তথকালীন রাজা পশুরাম এর অন্যয়
অবিচারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে যুদ্ধ
ঘোষনা করে এ পটভূমিকে মুক্ত করে
ইসলামের ঝান্ডা উড্ডয়ন করেন। সেই
থেকে এই নগরীতে ইসলামের পতাকা
পতপত করে উড়ছে। প্রাচীনকাল থেকে এই
পটভূমিকে মহাস্থনগড় নামে আখ্যায়ীত
করা হয়। মুরব্বীদের মুখে শোনা যায়
মহাস্থান গড়ে সারা বিশ্বের আড়াই
দিনের খাবার রয়েছে। বর্তমানে
মহাস্থান গড়কে উত্তর বঙ্গের গেটওয়ে
বলা হয়। ঐতিহাসিক নিদার্শন ছাড়াও
বর্তমানে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম
মসলা গবেষনা কেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয়
কলেজ, আলীম মাদ্রাসা, বিপিএড কলেজ,
বিএম কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী
প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেসরকারী
কিন্ডার গার্টেন স্কুলসহ অনেক
বিদ্যাপিঠ, ব্যাংক বীমা সহ অসংখ্য
সরকারী/বেসরকারী নানামুখি
প্রতিষ্ঠান। তবুও ঐতিহাসিক এ মহাস্থান
নগরী যেন অপরিপূর্ণ! কোথাও যেন কি
নেই? এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার
দর্শনার্থী দেখতে আসে এ নিদের্শন
গুলো কিন্তু বিশ্রাম নেওয়ার মত তাদের
কোন আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র,
আবাসিক হোটেল বা কোন একাডেমী
ভবন নেই।
বর্তমান সরকার দেশের প্রত্মতাত্ত্বিক
নিদের্শন দর্শনীয় স্থান গুলো সংঙ্করণ ও
সংরক্ষন করে অধুনিক রূপে আন্তজাতিক
মান সম্পূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার
প্রকল্প হাতে নেওয়ায় এ এলাকার
জনসাধারণের মধ্যে আশার আলো
প্রতিফলিত লক্ষ করা যাচ্ছে। এ
ব্যাপারে সংসদ ও সংসদের বাহিরে
সরকারের উর্দ্ধতন নীতি নিদ্ধারকরা
তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে এ আশার
সংচলনকে আরো বেগবান করে
তুলেছে। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে
বাজেটের একটি অংশও নিধারণ করতে
দেখা গেছে মহাস্থান যাদুঘরে একটি
ওভার ব্রীজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
আশা করা যাচ্ছে সরকার ও বিরোধী
দলের যৌথ্য প্রচেষ্টায় মহাস্থানগড়কে
নতুন রূপে সু-সজ্জিত করে আন্তজাতিক
মানে রূপান্তরিত করবে। এ ব্যাপারে
সবকিছু বিশ্লেষন করে বর্তমানে
এলাকার সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা
শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ্ বিরোধী দলীও
সাংসদ হলেও তার উদার মুক্ত
চিন্তাধারায় মহাস্থানগড়কে কেন্দ্র
করে নানামুখী উন্নয়ন মূলক কাজ হাতে
নিয়েছেন বলে জানা যায়। তারি
ধারাবাহিকতায় সংসদে তিনি একটি
আলোচনাও উত্থাপন করেন। আগামীতে
এ ব্যপারে আরো জোরালো ভূমিকা
রাখবেন বলে এলাকার জনসাধারণ মনে
করেন।
তথকালীন জাতীয় পার্টির সরকারের
আমলে শাসক প্রধান হুসাইন মোহাম্মাদ
এরশাদ এই নগরীকে এশিয়া মহাদেশের
ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন করা
প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। কিন্তু কালের
বিবর্তনে তা হয়ে উঠেনি। বর্তমানে
তারা বিরোধীদল হিসেবে জাতীয়
সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাই
মহান সংসদে এ বিষয় পূণরায় তাদের পক্ষ
থেকে সরকারের কাছে দাবী উত্থাপন
করবে বলে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা
আশা প্রকাশ করেন।
এই মহাস্থানগড় এলাকায় অনেক
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। তাদের
স্মৃতি ধরে রাখার মত কোন শহীদ
স্মৃতিসৌদ্ধ নেই বা কোন শহীদ
স্মৃতিস্তম্ভ নেই। যা শহীদ চেতনাকে
চিরজীবী করে রাখবে। শহীদ পরিবার
ও মুক্তিযোদ্ধাদের নেই কোন সংগঠন
বা সংসদ, না আছে কোন বসার জায়গা।
এই মহাস্থান গড় নগরীতে ১৯৭১ইং
সালের মহান মুক্তিযোদ্ধ চলাকালীন
সময়ে পাক হানাদার বাহিনী
মহাস্থান গড়ের পাদমূলে মহাসড়কের
ধারে বাঙ্কার খুরে অবস্থান নিয়ে
তারা অত্র এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের
নিঃশেষ করার প্রয়াস চালালে তা
প্রতিরোধ ও প্রতিহত করতে তাদের
সাথে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয়
মিত্রবাহিনীর তিন দিন
সমুক্ষেযোদ্ধা সংগঠিত হয়।
মুক্তিযোদ্ধা, মিত্রবাহিনীর সদস্য সহ
সাধারণ মানুষ প্রায় অর্ধশতাধিক শহীদ
হন এবং অনেকে আহত হন। কিন্তু সেই
শহীদের স্মৃতির স্মরণে কোন স্মৃতিস্তম্ভ
অধ্যবধি ঐতিহাসিক মহাস্থান গড়
নগরীতে নির্মিত হয় নাই। মহান
স্বাধীনতা যুদ্ধে অত্র এলাকার
উৎসর্গকারী বীর শহীদের স্মৃতির চির
অম্লান করে রাখার মহান লক্ষে উত্তর
বঙ্গের গেটওয়ে ঐতিহাসিক মহাস্থান
গড়ের পদমূলে একটি শহীদ স্মৃতিসৌদ্ধ বা
শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান ও পাশে
মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধার
স্বজনদের বসার জন্য একটি শহীদ
মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন বা সংসদ নির্মাণ
করার ব্যবস্থা গ্রহন করিতে বর্তমান বীর
মুক্তিযোদ্ধ সংসদ সদস্যকে সু-দৃষ্টি আকর্ষণ
করেন। প্রাচীন সভ্যতার মূল পটভূমি এই
মহাস্থান নগরীতে উপরোক্ত অসমাপ্ত
কাজ গুলো সমাপ্ত হলে এ নিদর্শন গুলো
দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে আসা
দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে। ফলে
এ নগরী বানিজ্যিক নগরী তথা প্রাচীন
রাজধানী হিসাবে রূপান্তিত হবে।
ব্যবসা-বানিজ্য প্রসারিত হবে।
সরকাররের রাজস্ব বাড়বে।
দর্শনীয় স্থান সমূহ
মহাস্থান গড় বাংলাদেশের অন্যতম
একটি প্রাচীন পর্যটন কেন্দ্র। এখানে
মাজার জিয়ারত করতে এবং ভ্রমণের
উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান
হতে বহু লোক সমাগম ঘটে। এখানকার
দানবাক্সে সংরক্ষিত অর্থের
পরিমাণ বার্ষিক প্রায় ৭০ হাজার
টাকা যা মাজার মসজিদের
কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য উন্নয়ন
কাজে ব্যবহৃত হয়।
মাজার শরীফ
মহাস্থান বাস স্ট্যান্ড থেকে
কিছুটা পশ্চিমে হযরত শাহ সুলতান
মাহমুদ বলখী (র এর মাজার শরীফ
অবস্থিত। কথিত আছে মাছের পিঠে
আরোহন করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে
আসেন। তাই তাকে মাহী সওয়ার
বলা হয়। কথিত আছে হযরত মীর
বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে
বাস করতেন। পুত্র মানত করে গরু
কোরবানী দেয়ার অপরাধে রাজা
পরশুরাম তার বলির আদেশ দেন এবং
তাকে সাহায্য করতেই মাহী
সওয়ারেরর আগমন ঘটে।
কালীদহ সাগর
গড়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে
ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর এবং
পদ্মাদেবীর বাসভবন ।
শীলাদেবীর ঘাট
গড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া
নদী এর তীরে ' শীলাদেবীর ঘাট '।
শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের
বোন। এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের
স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা
বসে।
জিউৎকুন্ড
এই ঘাটের পশ্চিমে জিউৎকুন্ড নামে
একটি বড় কুপ আছে। কথিত আছে এই
কুপের পানি পান করে পরশুরামের
আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত। যদিও এর
কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া
যায়নি।"
মিউজিয়াম
মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত,
পাল ও সেন যুগের বিভিন্ন
দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি
পাওয়া গেছে যা গড়ের উত্তরে
অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
মহাস্থান গড় ছাড়াও আরও বিভিন্ন
স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
এখানে সংরক্ষিত আছে।
বেহুলার বাসর ঘর
মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে
প্রায় ২কি.মি দক্ষিণ পশ্চিমে একটি
বৌদ্ধ স্তম্ভ রয়েছে যা সম্রাট অশোক
নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করা
হয়। স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট।
স্তম্ভের পূর্বার্ধে রয়েছে ২৪ কোন
বিশিষ্ট চৌবাচ্চা সদৃশ একটি গোসল
খানা ।এটি বেহুলার বাসর ঘর নামেই
বেশি পরিচিত। [৪]
গোবিন্দ ভিটা
মহাস্থানগড় জাদুঘরের ঠিক সামনেই
গোবিন্দ ভিটা অবস্থিত।১৯২৮-২৯
সালে খনন করে গোবিন্দ ভিটায় দূর্গ
প্রাসাদ এলাকার বাইরে উত্তর
দিকে অবস্থিত।
ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ এ দুর্গ নগরীর
আশপাশে খনন কাজে এখনো
বেরিয়ে আসছে অনেক নিদর্শন।
এদিকে, সমৃদ্ধ ইতিহাস জানার জন্য
খনন কাজ অব্যাহত রাখার কথা
জানালেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
স্বাধীনতার পর বগুড়া থেকে ১৭
কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জের
মহাস্থানে পুণ্ড্রবর্ধন নগরীর
আশপাশের এলাকায় থেমে থেমে
খনন কাজ হয়েছে। দেশী-বিদেশী
অর্থায়নে এসব খনন কাজে
বেরিয়ে আসে নানা মূল্যবান
ঐতিহাসিক নিদর্শন।
বর্তমানে খনন কাজ চলছে পুণ্ড্রবর্ধন
নগরীর ৮ কিলোমিটার দূরে
ভাসুবিহার গ্রামের একটি
বৃহদাকার উঁচু ঢিবি। এই বিহারে
প্রথমবার খননে পাওয়া গেছে ২টি
বৌদ্ধ বিহার ও দুটি বৌদ্ধ
মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ও মূল্যবান
প্রত্নসম্পদ।
এ বছর প্রত্নতাত্ত্বিক খননে
বেরিয়ে এসেছে একটি বৌদ্ধ
মন্দিরের সম্মুখভাগ, সিঁড়িপথ,
বৌদ্ধ স্তূপ ও নানা নিদর্শন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এটি পাল
যুগের হতে পারে।
পুণ্ড্রবর্ধন নগরীর আশপাশের
প্রাচীন নিদর্শনগুলো যদি দর্শকদের
সামনে উপস্থাপন করা যায়
তাহলে দর্শক সমাগম আরও বাড়তো
বলে মনে করেন এখানে বেড়াতে
আসা দর্শকরা।
তারা বলেন, 'সবুজের মাঝে অনেক
সুন্দর একটা জায়গা। এখানে খনন
কাজ চলছে অনেক সুন্দর সুন্দর
জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। বাইরের
দেশ থেকে যদি পর্যটকরা আসে
তাহলে অনেক আনন্দ পাবে। এতে
আমাদের দেশের অনেক উন্নয়ন
হবে।'
এ এলাকার সমৃদ্ধ ইতিহাস জানার
জন্য ও তা দর্শনার্থীদের সামনে
তুলে ধরতে খনন কাজ অব্যাহত
রাখার কথা জানালেন
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক
পরিচালক মোছা. নাহিদ
সুলতানা।
তিনি বলেন, 'এই প্রত্নস্থলে সম্পূর্ণ
ইতিহাস জানার জন্য আমরা আরও
কয়েক বছর খনন করবো। প্রত্নতত্ত্ব
অধিদপ্তর সেই রকম একটা উদ্যোগ
নিয়েছে। আর সম্পূর্ণ জায়গা খনন
করার ফলে যে সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং
ঐতিহ্য যেমন বেরিয়ে আসবে
তেমনি আমরা দর্শক ও পর্যটকদের
জন্য এইটা উন্মুক্ত করে দিতে
পারবো। '
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্য মতে,
মহাস্থানের পুণ্ড্র নগরীর ১৫
কিলোমিটারের মধ্যে সমৃদ্ধ
জনপদে রয়েছে ৩৭টি সংরক্ষিত
স্থান
বগুড়া শহর থেকে ১১ কিলোমিটার
উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত এ
পটভূমিকে মহাস্থান গড় বলা হয়। এখানে
শায়িত আছেন হযরত শাহ্ সুলতান বলখী
(রহঃ)। আছে তাহার স্মৃতি বিজরীত
মাজার ও মসজিদ, আসে হাজার হাজার
মাজার জিয়ারতকারী ও ভক্ত-আশেকান,
এ পটভূমিতে অবস্থিত প্রত্মতাত্ত্বিক
যাদুঘর, বহুল আলোচিত বেহুলার বাসরঘর,
ভাসুবিহার, হিন্দু সম্পদায়ের তীর্থস্থান
শিলাদেবীর ঘাট, রয়েছে জীবন্তকুপ যে
কুপে মৃত্যূ মানুষ ফেলে দিলে জীবিত হত
বলে প্রবাদ রয়েছে। মহাস্থানগড়ের
পশ্চিম দিকে কালীদহ সাগর, এ সাগরকে
কেন্দ্র করে পদ্মাদেবীর ইতিহাস রচনা
করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে নানা
নিদর্শন। এ নিদর্শন গুলো দেখার জন্য দেশ-
বিদেশ থেকে আসে হাজার হাজার
দর্শনার্থী। প্রাচীন সভ্যতার মূল পটভূমি এই
মহাস্থান নগরী, যাকে বলা হয় পূন্ড্রবর্ধন
বা পূণ্ড্রনগরী। এ পুণ্ড্রনগরী প্রাচীন
বাংলা রাজধানী ছিল। এখানে অনেক
রাজা রাজত্ব করেছেন। এখানে ৬৫০
খ্রীঃ থেকে ১২০৫ খ্রীঃ পর্যন্ত ৮ রাজ
পরিবার রাজত্ব করেছেন। হিন্দু শাসক
রাজা পশুরামের ১১৮০-১২০০ খ্রীঃ মধ্যে
আগমন ঘটে। তার পর একজন মুসলিম
ধর্মযাজকের আগমন ঘটে তিনি আসেন সুদুর
বল্লখ শহর থেকে মাছের পিঠে সওয়ার
হয়ে। তথকালীন রাজা পশুরাম এর অন্যয়
অবিচারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে যুদ্ধ
ঘোষনা করে এ পটভূমিকে মুক্ত করে
ইসলামের ঝান্ডা উড্ডয়ন করেন। সেই
থেকে এই নগরীতে ইসলামের পতাকা
পতপত করে উড়ছে। প্রাচীনকাল থেকে এই
পটভূমিকে মহাস্থনগড় নামে আখ্যায়ীত
করা হয়। মুরব্বীদের মুখে শোনা যায়
মহাস্থান গড়ে সারা বিশ্বের আড়াই
দিনের খাবার রয়েছে। বর্তমানে
মহাস্থান গড়কে উত্তর বঙ্গের গেটওয়ে
বলা হয়। ঐতিহাসিক নিদার্শন ছাড়াও
বর্তমানে রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম
মসলা গবেষনা কেন্দ্র, বিশ্ববিদ্যালয়
কলেজ, আলীম মাদ্রাসা, বিপিএড কলেজ,
বিএম কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী
প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেসরকারী
কিন্ডার গার্টেন স্কুলসহ অনেক
বিদ্যাপিঠ, ব্যাংক বীমা সহ অসংখ্য
সরকারী/বেসরকারী নানামুখি
প্রতিষ্ঠান। তবুও ঐতিহাসিক এ মহাস্থান
নগরী যেন অপরিপূর্ণ! কোথাও যেন কি
নেই? এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার
দর্শনার্থী দেখতে আসে এ নিদের্শন
গুলো কিন্তু বিশ্রাম নেওয়ার মত তাদের
কোন আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র,
আবাসিক হোটেল বা কোন একাডেমী
ভবন নেই।
বর্তমান সরকার দেশের প্রত্মতাত্ত্বিক
নিদের্শন দর্শনীয় স্থান গুলো সংঙ্করণ ও
সংরক্ষন করে অধুনিক রূপে আন্তজাতিক
মান সম্পূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার
প্রকল্প হাতে নেওয়ায় এ এলাকার
জনসাধারণের মধ্যে আশার আলো
প্রতিফলিত লক্ষ করা যাচ্ছে। এ
ব্যাপারে সংসদ ও সংসদের বাহিরে
সরকারের উর্দ্ধতন নীতি নিদ্ধারকরা
তাদের বক্তব্যের মাধ্যমে এ আশার
সংচলনকে আরো বেগবান করে
তুলেছে। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে
বাজেটের একটি অংশও নিধারণ করতে
দেখা গেছে মহাস্থান যাদুঘরে একটি
ওভার ব্রীজ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।
আশা করা যাচ্ছে সরকার ও বিরোধী
দলের যৌথ্য প্রচেষ্টায় মহাস্থানগড়কে
নতুন রূপে সু-সজ্জিত করে আন্তজাতিক
মানে রূপান্তরিত করবে। এ ব্যাপারে
সবকিছু বিশ্লেষন করে বর্তমানে
এলাকার সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা
শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ্ বিরোধী দলীও
সাংসদ হলেও তার উদার মুক্ত
চিন্তাধারায় মহাস্থানগড়কে কেন্দ্র
করে নানামুখী উন্নয়ন মূলক কাজ হাতে
নিয়েছেন বলে জানা যায়। তারি
ধারাবাহিকতায় সংসদে তিনি একটি
আলোচনাও উত্থাপন করেন। আগামীতে
এ ব্যপারে আরো জোরালো ভূমিকা
রাখবেন বলে এলাকার জনসাধারণ মনে
করেন।
তথকালীন জাতীয় পার্টির সরকারের
আমলে শাসক প্রধান হুসাইন মোহাম্মাদ
এরশাদ এই নগরীকে এশিয়া মহাদেশের
ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন করা
প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। কিন্তু কালের
বিবর্তনে তা হয়ে উঠেনি। বর্তমানে
তারা বিরোধীদল হিসেবে জাতীয়
সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাই
মহান সংসদে এ বিষয় পূণরায় তাদের পক্ষ
থেকে সরকারের কাছে দাবী উত্থাপন
করবে বলে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা
আশা প্রকাশ করেন।
এই মহাস্থানগড় এলাকায় অনেক
মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। তাদের
স্মৃতি ধরে রাখার মত কোন শহীদ
স্মৃতিসৌদ্ধ নেই বা কোন শহীদ
স্মৃতিস্তম্ভ নেই। যা শহীদ চেতনাকে
চিরজীবী করে রাখবে। শহীদ পরিবার
ও মুক্তিযোদ্ধাদের নেই কোন সংগঠন
বা সংসদ, না আছে কোন বসার জায়গা।
এই মহাস্থান গড় নগরীতে ১৯৭১ইং
সালের মহান মুক্তিযোদ্ধ চলাকালীন
সময়ে পাক হানাদার বাহিনী
মহাস্থান গড়ের পাদমূলে মহাসড়কের
ধারে বাঙ্কার খুরে অবস্থান নিয়ে
তারা অত্র এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের
নিঃশেষ করার প্রয়াস চালালে তা
প্রতিরোধ ও প্রতিহত করতে তাদের
সাথে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয়
মিত্রবাহিনীর তিন দিন
সমুক্ষেযোদ্ধা সংগঠিত হয়।
মুক্তিযোদ্ধা, মিত্রবাহিনীর সদস্য সহ
সাধারণ মানুষ প্রায় অর্ধশতাধিক শহীদ
হন এবং অনেকে আহত হন। কিন্তু সেই
শহীদের স্মৃতির স্মরণে কোন স্মৃতিস্তম্ভ
অধ্যবধি ঐতিহাসিক মহাস্থান গড়
নগরীতে নির্মিত হয় নাই। মহান
স্বাধীনতা যুদ্ধে অত্র এলাকার
উৎসর্গকারী বীর শহীদের স্মৃতির চির
অম্লান করে রাখার মহান লক্ষে উত্তর
বঙ্গের গেটওয়ে ঐতিহাসিক মহাস্থান
গড়ের পদমূলে একটি শহীদ স্মৃতিসৌদ্ধ বা
শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান ও পাশে
মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধার
স্বজনদের বসার জন্য একটি শহীদ
মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন বা সংসদ নির্মাণ
করার ব্যবস্থা গ্রহন করিতে বর্তমান বীর
মুক্তিযোদ্ধ সংসদ সদস্যকে সু-দৃষ্টি আকর্ষণ
করেন। প্রাচীন সভ্যতার মূল পটভূমি এই
মহাস্থান নগরীতে উপরোক্ত অসমাপ্ত
কাজ গুলো সমাপ্ত হলে এ নিদর্শন গুলো
দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে আসা
দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে। ফলে
এ নগরী বানিজ্যিক নগরী তথা প্রাচীন
রাজধানী হিসাবে রূপান্তিত হবে।
ব্যবসা-বানিজ্য প্রসারিত হবে।
সরকাররের রাজস্ব বাড়বে।
দর্শনীয় স্থান সমূহ
মহাস্থান গড় বাংলাদেশের অন্যতম
একটি প্রাচীন পর্যটন কেন্দ্র। এখানে
মাজার জিয়ারত করতে এবং ভ্রমণের
উদ্দেশ্যে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান
হতে বহু লোক সমাগম ঘটে। এখানকার
দানবাক্সে সংরক্ষিত অর্থের
পরিমাণ বার্ষিক প্রায় ৭০ হাজার
টাকা যা মাজার মসজিদের
কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য উন্নয়ন
কাজে ব্যবহৃত হয়।
মাজার শরীফ
মহাস্থান বাস স্ট্যান্ড থেকে
কিছুটা পশ্চিমে হযরত শাহ সুলতান
মাহমুদ বলখী (র এর মাজার শরীফ
অবস্থিত। কথিত আছে মাছের পিঠে
আরোহন করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে
আসেন। তাই তাকে মাহী সওয়ার
বলা হয়। কথিত আছে হযরত মীর
বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে
বাস করতেন। পুত্র মানত করে গরু
কোরবানী দেয়ার অপরাধে রাজা
পরশুরাম তার বলির আদেশ দেন এবং
তাকে সাহায্য করতেই মাহী
সওয়ারেরর আগমন ঘটে।
কালীদহ সাগর
গড়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে
ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর এবং
পদ্মাদেবীর বাসভবন ।
শীলাদেবীর ঘাট
গড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া
নদী এর তীরে ' শীলাদেবীর ঘাট '।
শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের
বোন। এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের
স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা
বসে।
জিউৎকুন্ড
এই ঘাটের পশ্চিমে জিউৎকুন্ড নামে
একটি বড় কুপ আছে। কথিত আছে এই
কুপের পানি পান করে পরশুরামের
আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত। যদিও এর
কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া
যায়নি।"
মিউজিয়াম
মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত,
পাল ও সেন যুগের বিভিন্ন
দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি
পাওয়া গেছে যা গড়ের উত্তরে
অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
মহাস্থান গড় ছাড়াও আরও বিভিন্ন
স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
এখানে সংরক্ষিত আছে।
বেহুলার বাসর ঘর
মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে
প্রায় ২কি.মি দক্ষিণ পশ্চিমে একটি
বৌদ্ধ স্তম্ভ রয়েছে যা সম্রাট অশোক
নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করা
হয়। স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট।
স্তম্ভের পূর্বার্ধে রয়েছে ২৪ কোন
বিশিষ্ট চৌবাচ্চা সদৃশ একটি গোসল
খানা ।এটি বেহুলার বাসর ঘর নামেই
বেশি পরিচিত। [৪]
গোবিন্দ ভিটা
মহাস্থানগড় জাদুঘরের ঠিক সামনেই
গোবিন্দ ভিটা অবস্থিত।১৯২৮-২৯
সালে খনন করে গোবিন্দ ভিটায় দূর্গ
প্রাসাদ এলাকার বাইরে উত্তর
দিকে অবস্থিত।
ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ এ দুর্গ নগরীর
আশপাশে খনন কাজে এখনো
বেরিয়ে আসছে অনেক নিদর্শন।
এদিকে, সমৃদ্ধ ইতিহাস জানার জন্য
খনন কাজ অব্যাহত রাখার কথা
জানালেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
স্বাধীনতার পর বগুড়া থেকে ১৭
কিলোমিটার দূরে শিবগঞ্জের
মহাস্থানে পুণ্ড্রবর্ধন নগরীর
আশপাশের এলাকায় থেমে থেমে
খনন কাজ হয়েছে। দেশী-বিদেশী
অর্থায়নে এসব খনন কাজে
বেরিয়ে আসে নানা মূল্যবান
ঐতিহাসিক নিদর্শন।
বর্তমানে খনন কাজ চলছে পুণ্ড্রবর্ধন
নগরীর ৮ কিলোমিটার দূরে
ভাসুবিহার গ্রামের একটি
বৃহদাকার উঁচু ঢিবি। এই বিহারে
প্রথমবার খননে পাওয়া গেছে ২টি
বৌদ্ধ বিহার ও দুটি বৌদ্ধ
মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ও মূল্যবান
প্রত্নসম্পদ।
এ বছর প্রত্নতাত্ত্বিক খননে
বেরিয়ে এসেছে একটি বৌদ্ধ
মন্দিরের সম্মুখভাগ, সিঁড়িপথ,
বৌদ্ধ স্তূপ ও নানা নিদর্শন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এটি পাল
যুগের হতে পারে।
পুণ্ড্রবর্ধন নগরীর আশপাশের
প্রাচীন নিদর্শনগুলো যদি দর্শকদের
সামনে উপস্থাপন করা যায়
তাহলে দর্শক সমাগম আরও বাড়তো
বলে মনে করেন এখানে বেড়াতে
আসা দর্শকরা।
তারা বলেন, 'সবুজের মাঝে অনেক
সুন্দর একটা জায়গা। এখানে খনন
কাজ চলছে অনেক সুন্দর সুন্দর
জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। বাইরের
দেশ থেকে যদি পর্যটকরা আসে
তাহলে অনেক আনন্দ পাবে। এতে
আমাদের দেশের অনেক উন্নয়ন
হবে।'
এ এলাকার সমৃদ্ধ ইতিহাস জানার
জন্য ও তা দর্শনার্থীদের সামনে
তুলে ধরতে খনন কাজ অব্যাহত
রাখার কথা জানালেন
রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক
পরিচালক মোছা. নাহিদ
সুলতানা।
তিনি বলেন, 'এই প্রত্নস্থলে সম্পূর্ণ
ইতিহাস জানার জন্য আমরা আরও
কয়েক বছর খনন করবো। প্রত্নতত্ত্ব
অধিদপ্তর সেই রকম একটা উদ্যোগ
নিয়েছে। আর সম্পূর্ণ জায়গা খনন
করার ফলে যে সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং
ঐতিহ্য যেমন বেরিয়ে আসবে
তেমনি আমরা দর্শক ও পর্যটকদের
জন্য এইটা উন্মুক্ত করে দিতে
পারবো। '
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্য মতে,
মহাস্থানের পুণ্ড্র নগরীর ১৫
কিলোমিটারের মধ্যে সমৃদ্ধ
জনপদে রয়েছে ৩৭টি সংরক্ষিত
স্থান