What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মাদক পাপের আকর, মানবতার চিরশত্রু (1 Viewer)

7FqJSe7.png


ইসলামি বিধানের দর্শনকে ‘মাকাসিদে শরিয়া’ নামে অভিহিত করা হয়। শরিয়তের উদ্দেশ্য পাঁচটি—জীবন রক্ষা, সম্পদ রক্ষা, জ্ঞান রক্ষা, বংশ রক্ষা, বিশ্বাস বা ধর্ম রক্ষা। সেখানে সব ধরনের মাদক বা নেশাকে হারাম করা হয়েছে জ্ঞান বা বুদ্ধি-বিবেক সুরক্ষার জন্য। কারণ, মানুষের ‘আকল’ বা সুষ্ঠু স্বাভাবিক জ্ঞান সুরক্ষিত না হলে সে নিজের, পরিবারের, দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রের সবার ক্ষতি করবে।

সব ধরনের মাদক পাপের আকর। ইসলামের মৌলিক পাঁচটি নিষিদ্ধ কাজের অন্যতম হলো নেশা বা মাদকদ্রব্য। এর মধ্যে মাদক ছাড়া অন্য চারটি অপরাধ নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে, অর্থাৎ ইচ্ছা করলে তা ছাড়া যায়। কিন্তু মাদক গ্রহণ এমন এক অপরাধ, যা নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না; বরং সে নিজেই মাদক বা নেশার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ফলে চাইলেই যখন-তখন সেখান থেকে বের হয়ে আসা যায় না। অর্থাৎ অনেক সময় সে নেশাকে ছাড়তে চাইলেও নেশা তাকে সহজে ছাড়ে না বা ছাড়তে চায় না। মদ্যপ বা মাদকাসক্ত ব্যক্তি তওবা করারও সুযোগ পায় না এবং মাদক না ছেড়ে তওবা করলেও তা কবুল হয় না। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১০২; তাফসিরে আজিজি ও তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন)।

ইসলামে মদ নিষিদ্ধের বিষয়টি কোরআন কারিমে তিনটি পর্বে এসেছে। প্রথমে বলা হয়েছে, ‘লোকেরা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, উভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও; কিন্তু এগুলোর পাপ উপকার অপেক্ষা অধিক। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২১৯)।’

দ্বিতীয় ধাপে বলা হলো, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্যনির্ণায়ক তির (লটারি) ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কার্য। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো। (সুরা-৫ মায়েদা, আয়াত: ৯০)।’ চূড়ান্ত পর্যায়ে বলা হলো, ‘শয়তান তো মদ ও
জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না (সুরা-৫ মায়েদা, আয়াত: ৯১)?’

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হলো ইলম বিলুপ্ত হবে, মূর্খতার বিস্তার ঘটবে, মদ্যপান ও মাদকের প্রসার হবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে (বুখারি, প্রথম খণ্ড, হাদিস: ৮০)।’

নবী কারিম (সা.) রবিআহ গোত্রের প্রতিনিধিদের চারটি কাজের নির্দেশ দিলেন এবং চারটি কাজ বারণ করলেন। আল্লাহর ওপর ইমান আনা, সালাত কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা, রমজান মাসে সিয়াম পালন করা, গনিমতের এক-পঞ্চমাংশ দান করা। নিষেধ করলেন: শুকনা লাউয়ের খোল, সবুজ কলসি ও আলকাতরার পালিশ করা পাত্র ব্যবহার (বুখারি, প্রথম খণ্ড, হাদিস: ৮৭)।

মিরাজ রজনীতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বিভিন্ন অপরাধে শাস্তি দেখানো হলো। তিনি মদ, মাদক ও নেশা গ্রহণকারীদের শাস্তি দেখলেন। তারা জাহান্নামিদের শরীর থেকে নির্গত বিষাক্ত নোংরা পুঁজ পান করছে (নাউজুবিল্লাহ) (বুখারি ও মুসলিম)।

মদ্যপ ও মাদকসেবীর দোয়া শবে বরাত, শবে কদরেও কবুল হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন অর্ধ শাবানের রাত আসে, তখন আল্লাহ তাআলা মাখলুকাতের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান; মুমিনদের ক্ষমা করে দেন, কাফিরদের ফিরে আসার সুযোগ দেন এবং মদ্যপায়ীদের মদ্যপান পরিত্যাগ ছাড়া ক্ষমা করেন না (কিতাবুস সুন্নাহ, শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)।

কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম (সুরা-৯৭ কদর, আয়াত: ৩)। এ রাতে সন্ধ্যালগ্নে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, ‘কে আছ ক্ষমাপ্রার্থী? আমি ক্ষমা করে দেব।’ এভাবে সকাল পর্যন্ত ডেকে ডেকে ক্ষমা করতে থাকেন। কিন্তু এই পবিত্র ও মহিমান্বিত কদরের রাতেও আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত থেকে যে পাঁচ প্রকার লোক বঞ্চিত থাকবে, তাদের মধ্যে প্রথম হলো মদ্যপায়ী ও মাদকসেবীরা (নাউজুবিল্লাহ)। ওই পাঁচ প্রকার লোক হলো মদ্যপায়ী বা মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, ইচ্ছাকৃত নামাজ তরককারী, বিনা কারণে অপর মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নকারী (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা; তাফসিরে কাশফুল আসরার, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৫৬৪)।

● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top