What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected লিও তলস্তয় এর গল্প (1 Viewer)

ejekbd

New Member
Joined
Aug 10, 2020
Threads
1
Messages
4
Credits
409
তিনটি প্রশ্ন

“একদিন এক রাজা ভাবলেন, ‘আচ্ছা, যদি আমি জানতাম কোনো কাজ শুরু করার সঠিক সময়টা কখন? যদি জানতাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটা কে? আর সর্বোপরি, কোন কাজটা করা সবেচেয়ে বেশি প্রয়োজন? তাহলে আমার রাজ্যচালনার কাজে, সেই সাথে ব্যক্তিগত জীবনে কোনো ভুল হতো না!’

তিনি তাঁর রাজ্যজুড়ে ঘোষণা দিয়ে দিলেন যে, যে তাঁর এই প্রশ্ন তিনটির উত্তর খুঁজে দিতে পারবে তাকে তিনি পুরস্কৃত করবেন। রাজ্যের সব জ্ঞানী-পণ্ডিত এসে উপস্থিত হলো কিন্তু তাদের সবার কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন উত্তর পাওয়া গেলো।

প্রথম প্রশ্নের জবাবে তারা কেউ কেউ বললো, সঠিক কাজ সঠিক সময়ে করার জন্য আগে থেকেই দিন-তারিখের ছক করে কার্যসূচী লিখে রাখতে হবে এবং তা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। কেউ আবার বললো, প্রতিটা কাজের সঠিক সময় আগে থেকে জানা কখনোই সম্ভব না। যা করতে হবে তা হলো অলস অবসর না কাটিয়ে সময়ের সাথে এগিয়ে যাওয়া। আর যখন যেটি করা প্রয়োজন সেটি করতে হবে।

এবার কেউ কেউ পরামর্শ দিলো, চোখ কান যতই খোলা রাখা হোক না কেন, তবু একার পক্ষে সবসময় কাজের সঠিক সময় নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, তাই জ্ঞানী লোকের পরামর্শ নিতে হবে।

কেউ আবার প্রতিবাদ করে বললো, জীবনে কিছু কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মাত্র কয়েক মুহূর্ত সময় বরাদ্দ থাকে। সেক্ষেত্রে জ্ঞানী লোকের পরামর্শ নেয়ার মতো যথেষ্ট সময় হাতে থাকে না। সুতরাং সব কাজের সঠিক সময় জানতে জ্যোতিষীদের নিকট পরামর্শ চাইতে হবে।

একইভাবে দ্বিতীয় প্রশ্নের জন্যেও ভিন্ন ভিন্ন মতামত আসলো। কেউ বললো রাজার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তার পরামর্শদাতারা। কেউ বললো যাজক, কেউ ডাক্তার আবার কেউ বা বললো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ তাঁর সৈন্যদল।

তৃতীয় প্রশ্নের জন্য উত্তর আসলো, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিজ্ঞান শিক্ষা, কেউ বললো যুদ্ধবিদ্যা শেখা আবার কেউ বললো ধর্মীয় আরাধনা।

রাজা সকলের উত্তরের এই বৈচিত্র্যের কারণে কারও সাথেই একমত হতে পারলেন না এবং কাউকে পুরস্কৃতও করলেন না। তবুও তাঁর প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলবে সেই আশায় এক সন্ন্যাসীর নিকট যেতে মনস্থির করলেন, যার জ্ঞান ও বুদ্ধির সুনাম রয়েছে রাজ্যজুড়ে।

সেই সন্ন্যাসী বহুদিন যাবৎ এক বনে বাস করতো এবং খুব সাধারণ মানুষ ব্যতীত কেউ সেখানে যেত না। তাই রাজা সাধারণ সাদাসিধে বেশ নিয়ে গেলেন তাঁর কাছে। তাঁর ঘরের অনেক দূরেই ঘোড়া থেকে নামলেন এবং তাঁর দেহরক্ষীদের তাঁর সাথে আসতে মানা করলেন

রাজা কাছে গিয়ে দেখলেন সন্ন্যাসী তার কুঁড়েঘরের সামনে মাটি খনন করছে। রাজাকে দেখে সে সালাম দিয়ে আবার মাটি কাটতে লাগলো। তাকে খুব ক্লান্ত লাগছিল, প্রতিবার মাটিতে কোঁদাল দিয়ে আঘাত করার সময় সে ভারী নিঃশ্বাস ফেলছিল।

রাজা বললেন, ‘হে জ্ঞানী সন্ন্যাসী! আমি তোমার কাছে এসেছি আমার তিনটি প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানে। বলতে পারো, আমি কোনো কাজের সঠিক সময়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি কী তা কীভাবে জানবো?’

সন্ন্যাসী তাঁর কথা শুনলো কিন্তু কিছুই বললো না। সে মাটি কাটা চালিয়ে গেলো।

রাজা বললেন, ‘তোমাকে খুব ক্লান্ত লাগছে। তোমার কোদাল দাও, আমি কিছুক্ষণ কাজ করি’।

সন্ন্যাসী তাঁকে ধন্যবাদ জানালো এবং কোদালটি তাঁর হাতে দিয়ে মাটিতে বসে পড়লো। বেশ কিছুক্ষণ কাজ করার পর রাজা থামলেন এবং তাঁর প্রশ্নগুলো আবার করলেন। কিন্তু এবারও সন্ন্যাসী কিছু বললো না। সে কোদাল চেয়ে বললো, ‘আপনি এবার বিশ্রাম নিন আর আমাকে কাজ করতে দিন।’

কিন্তু রাজা তাকে কোদাল না দিয়ে কাজ করতেই লাগলেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অতিবাহিত হয়ে গেলো। গাছের আড়ালে অস্তায়মান সূর্য উঁকি দিচ্ছিলো। অবশেষে রাজা থামলেন এবং বললেন, ‘হে জ্ঞানী সন্ন্যাসী! আমি তোমার কাছে এসেছিলাম উত্তরের জন্য। তুমি যদি প্রশ্নগুলোর উত্তর না জানো তাহলেও বলো, আমি বাড়ি ফিরে যাই’।

সন্ন্যাসী বললো, ‘কে যেন আসছে! দেখা যাক সে কে!’

রাজা ঘুরে তাকিয়ে দেখলেন একজন দাড়িওয়ালা লোক তার রক্তাক্ত পেটে দু’হাত চেপে দৌঁড়ে আসছে। লোকটি তাদের কাছে এসেই মাটিতে আছড়ে পড়লো। রাজা ও সন্ন্যাসী তার গায়ের পোশাক খুলে দেয়ার পর তার পেটে এক প্রকাণ্ড ক্ষত আবিষ্কার করলেন। রাজা যতটা সম্ভব ভালো করে জায়গাটা পরিষ্কার করে তাঁর নিজের রুমাল ও সন্ন্যাসীর তোয়ালে দিয়ে বেঁধে দিলেন। তাকে পানি পান করালেন।

সন্ধ্যা হয়ে এলে লোকটিকে ঘরে নিয়ে গেলেন। লোকটি কোনো কথা বললো না। রাজা ক্লান্তি বোধ করলেন এবং অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়লেন।

সকালে উঠে রাজা নিজে কোথায় তা আবিষ্কার করতে খানিকটা বেগ পেতে হলো। তিনি দেখলেন এক দাঁড়িওয়ালা অচেনা লোক তাঁর দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।

লোকটি ক্ষীণকণ্ঠে বললো, ‘আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন।’ রাজা অবাক হয়ে জবাব দিলেন, ‘আমি আপনাকে চিনি না। আপনাকে ক্ষমা করার মতো কিছু ঘটেও নি।’ লোকটি বললেন ‘আপনি আমাকে না চিনলেও আমি আপনাকে চিনি। আমি হচ্ছি আপনার সেই শত্রু যে আপনার উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল। কারণ আপনি তার ভাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন এবং তার সম্পত্তি জব্দ করেছিলেন।

আমি জানতাম আপনি সন্ন্যাসীর সাথে একা দেখা করতে এসেছেন, তাই আমি আপনাকে ফেরার পথে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু গতকাল আপনি আর ফিরলেন না। আপনাকে খুঁজতে আড়াল থেকে বের হলাম এবং আপনার দেহরক্ষীদের কবলে পড়লাম। তারা আমাকে চিনতে পেরে আমাকে আক্রমণ করলো। আপনি আমার ক্ষত বেঁধে আমাকে বাঁচালেন। আপনি যদি চান আমি বাকি জীবন আপনার বিশ্বস্ত দাস হতে পারি। আমি আবারও ক্ষমাপ্রার্থী।’

শত্রুর সাথে এতো সহজেই মিটমাট হওয়াতে রাজা খুব আনন্দিত হলেন। তিনি কেবল তাকে ক্ষমাই করলেন না বরং তার সমুদয় সম্পত্তি ফিরিয়ে দিলেন এবং তাকে নিজের দাস ও চিকিৎসকদের অংশীদারি দিলেন।

ঘর থেকে বেরিয়ে রাজা আরেকবার তার প্রশ্নগুলোর উত্তর চেয়ে সন্ন্যাসীর খোঁজ করলেন। সন্ন্যাসী ঘরের বাইরেই হাঁটু গেড়ে বীজ বপন করছিলো। রাজা বললেন, ‘আমি শেষবারের মতো তোমার কাছে আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রার্থনা করছি।’

সন্ন্যাসী মুখ ঘুরিয়ে বললো, ‘উত্তরগুলো তো আপনি ইতোমধ্যে পেয়েই গেছেন।’

রাজা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘উত্তরগুলো পেয়েছি? কীভাবে?’

সন্ন্যাসী বর্ণনা করলো, ‘লক্ষ্য করুন, আপনি যদি কাল আমাকে মাটি খননে সাহায্য না করে প্রাসাদে ফিরে যেতেন তাহলে ঐ লোক আপনাকে হত্যা করতো।সুতরাং তখন আপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল যখন আপনি মাটি খনন করছিলেন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলাম আমি। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল আমাকে মাটি খননে সাহায্য করা। যেহেতু তা আপনার জীবন বাঁচিয়েছে!’

একটু থেমে সন্ন্যাসী আবার বললো, ‘আবার আপনি যখন লোকটির ক্ষত বেঁধে দিচ্ছিলেন তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল সেটা আর ব্যক্তি ঐ লোক। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল তাকে সাহায্য করা, যেহেতু তা না হলে সে বাঁচতো না আর আপনাদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠাও হতো না!’

সন্ন্যাসী আবারও একটু বিরতি নিয়ে বললো, ‘সুতরাং, মনে রাখবেন, আপনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হলো বর্তমান মুহূর্তটি কারণ শুধুমাত্র এর উপরই আপনার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলো যে মানুষটার সাথে আপনি এই মুহূর্তে আছেন কারণ আপনি কখনোই জানেন না সেই মানুষটাই আপনার জীবনের শেষ মুহূর্তের সাক্ষী হতে যাচ্ছে কিনা। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো তার জন্য ভালো কিছু করা কেননা এই উদ্দেশ্যেই আমরা এই পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছি!’

লিও তলস্তয় এর গল্প তিনটি প্রশ্ন সমাপ্ত
 

Users who are viewing this thread

Back
Top