What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

কোয়ারেন্টিনের অতীত থেকে বর্তমান (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,653
Messages
117,045
Credits
1,241,450
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
0D7h0HU.jpg


বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী বহুল আলোচিত দুইটি শব্দ- করোনা এবং কোয়ারেন্টিন। কোভিড-১৯ নামক ভাইরাস প্রতিরোধে কোয়ারেন্টিন শব্দটি আজ মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছে। যেসব ব্যক্তিকে আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মনে হয়, কিন্তু তিনি সুস্থ হতে পারেন, আবার নাও পারেন, তার মধ্যে হয়তো জীবাণু আছে কিন্তু কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়নি— এমন ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।

করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে একজন মানুষকে প্রাথমিকভাবে ১৪ দিন এভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা হয়। কিন্তু কেন এ প্রক্রিয়ার নাম কোয়ারেন্টিন? কোথা থেকে হলো এর উৎপত্তি? এ সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ৭০০ বছর পেছনে।

চতুর্দশ শতক, এশিয়া মহাদেশ থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপের গ্রিস এবং ইতালি পর্যন্ত জলপথে বিস্তৃত ‘সিল্ক রুট’ তখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অন্যতম মাধ্যম। ১৩৪০ সালে সম্ভবত মধ্য এশিয়া থেকে এই সিল্ক রুটের বাণিজ্যপথ ধরেই ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে এক মরণরোগ, নাম তার ‘বিউবোনিক প্লেগ’। যে দুরারোগ্য ব্যাধিকে অভিহিত করা হয় ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামে।

UwWwNBX.jpg


চতুর্দশ শতকে ইউরোপের একটি হাসপাতাল যেখানে আক্রান্তদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে

প্রতি দশকেই ইউরোপে ফিরে আসত এই ভয়ঙ্কর ‘ব্ল্যাক ডেথ’, আকার নিত মহামারির, প্রাণ যেত অগণিত মানুষের। ১৩৪৮ সালের শুরুতে যখন ইউরোপে ফের প্রাদুর্ভাব ঘটল এই রোগের, ইতালির বন্দরনগরী ভেনিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, বাইরে থেকে আসা কোনও জাহাজে প্লেগে আক্রান্ত কোনও রোগী রয়েছেন, এমন সন্দেহ হওয়া মাত্রই সেই জাহাজের ভেনিসে ঢোকার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। সংশ্লিষ্ট জাহাজকে ভেনিসে ঢোকার আগে একটি দ্বীপে চল্লিশ দিন অপেক্ষা করতে হবে।এছাড়া সারা নগরীতে জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণের জন্য সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করার আদেশ দেন যাতে সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব হ্রাস পায়।

“ইউরোপে যখন প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে ব্যবসা বাণিজ্যও অচল হয়ে পড়েছিল। কারণ প্লেগের জীবাণু যে সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছিল। ধারণা করা হত, ক্রয়কৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র এমনকি খোলা স্থানেও এর জীবাণু থাকত। পরবর্তীতে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ত জীবাণু। সে সময় সামাজিক যোগাযোগ সীমাবদ্ধ করতে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা চালু হয়” বলেছেন অক্সফোর্ড ব্রুকস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক ইউরোপীয় ইতিহাসের প্রবীণ প্রভাষক জেন স্টিভেনস ক্র্যাশওয়া।

প্রথম কোয়ারেন্টিন

অ্যাড্রিয়াটিক বন্দর শহর রাগুসায় (আধুনিক ডুব্রোভনিক) সর্বপ্রথম কোয়ারেন্টিনের আইনটি পাস হয়। রাগুসায় বাণিজ্যিক জাহাজ আসা যাওয়া করত। মহামারির সময় কোনো জাহাজ ওই বন্দরে আসলে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখা হত। এমনকি ওই অঞ্চলে যারা থাকতেন তাদেরও শহরের অন্যান্য স্থানে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। সেখান থেকেই শুরু হয় বিশ্বের প্রথম কোয়ারেন্টিন পদ্ধতি।

ডুব্রোভনিক আর্কাইভে অবিশ্বাস্যভাবে টিকে যাওয়া প্রজ্ঞাপনে ২৭ জুলাই ১৩৭৭ সালের উল্লেখ পূর্বক শহরের মেজর কাউন্সিলের আইনে লেখা ছিল, যারা প্লেগ আক্রান্ত অঞ্চল থেকে এসেছে শহরে তাদের প্রবেশ করানো হবেনা বা আলাদাভাবে মার্কান দ্বীপে বা কাভটাট শহরে জীবাণুনাশের উদ্দেশ্যে একমাস থাকতে হবে।

ইতিহাসবিদরা জানায়, এই উপায়ের মাধ্যমেই রাগুসা থেকে পরবর্তীতে প্লেগ ছড়ানো অনেকটা কমে যায়। এদিকে বন্দরের জাহাজগুলোর পৃথকীকরণ নির্দেশকে মধ্যযুগীয় চিকিৎসকরা তাদের অন্যতম অর্জন বলে মনে করেন। জাহাজেই অন্তত ৩০ দিনের জন্য তখন নাবিক ও ব্যবসায়ীদেরকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হত। ১৩৭৭ সালের কোয়ারেন্টিন অর্ডারে নির্ধারিত ৩০ দিনের মেয়াদটি ইতালীয় ভাষায় ট্রেন্টিনো হিসাবে পরিচিত ছিল।

এরপর শুরু হয় ৪০ দিনের কোয়ারেন্টিন

১৩৭৭ সালে ৩০ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে থাকার যে বিধানটি তার নাম কোয়ারেন্টিন নয় বরং ছিল “ত্রেনত্রিনো”। কিন্তু স্টিভেন ক্র্যাশওয়া বলেন যে চিকিৎসকরা বুঝতে পেরেছিলেন এই সময়ব্যাপ্তি রোগ প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত ছিলনা। ইতালীয় ভাষায় চল্লিশকে বলা হয় ‘কোয়ারান্তেনা’। সংক্রমণ-প্রতিরোধে ওই চল্লিশ দিনের দূরবর্তী অপেক্ষার সময়কে বলা হত ‘কোয়ারান্তিনো’। সেই থেকেই ইংরেজি শব্দ ‘কোয়ারেন্টিন’-এর উৎপত্তি।

স্বাস্থ্যবিদরা এরপর ৪০ দিনের পৃথকীকরণের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কারণ মধ্যযুগীয় খ্রিস্টানদের কাছে এই সংখ্যাটির মহাত্ম ছিল অনেক। এটি তাদের একটি ধর্মীয় তাৎপর্যপূর্ণ প্রতীকী সংখ্যা! ঈশ্বর পৃথিবীতে নাকি একবার টানা ৪০ দিন বন্যা দিয়েছিলেন আবার ৪০ রাত বৃষ্টি হয়েছিল এবং যীশুখ্রীষ্টও নাকি ৪০ দিন একাধারে উপবাস করেছিলেন। স্টিভেনস ক্র্যাশওয়া বলেন, বাইবেলের এই ব্যাখ্যা অনুযায়ীই প্লেগ যাতে আর না ছড়িয়ে পড়ে এজন্য ৪০ দিনের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা চালু করা হয়। এমনকি তখনকার সময় কোনো মা সদ্য প্রসব করলে সেও ৪০ দিনের জন্য বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারত।

কোয়ারেন্টিন আইন কি কাজ করেছিল?

মাঝে কিছু প্লেগের প্রাদুর্ভাব কমলেও রাগুসা বন্দরটি ১৩৯১ থেকে ১৩৯৭ সালে আবারো প্লেগের আঁতুরঘর হিসেবে পরিণত হয়। কারণ এটি ছিল একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র। সেই বন্দর থেকেই নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল আনা নেয়া করা হত। কোয়ারেন্টিন চলাকালীন সময়ে অন্যান্য দেশের জাহাজ সেখানে ভিড়তে না পাড়ায় অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিতে পড়েছিল গোটা ইউরোপ। এ কারণেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট এড়াতে ঠিক যখনই অন্যান্য জাহাজ বন্দরে ভিড়তে শুরু করে তখন প্লেগ আবারো মহামারি আকার ধারণ করে। সে সময় রাগুসা বন্দর সম্পূর্ণভাবে প্লেগমুক্ত করা যেন অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল।

পৃথিবীর প্রথম প্লেগ হাসপাতালটিও ছিল রাগুসায়

১৭ শতাব্দীতে ইউরোপে চলমান প্লেগের সঙ্গে লড়াইয়ের একমাত্র হাতিয়ার ছিল কোয়ারেন্টিন। এই উপায় ছাড়া হয়ত মহাদেশটি ধ্বংস হয়ে যেত প্লেগের কবলে পড়ে। এরপরই রাগুসা শহরেই প্রথম প্লেগ হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। মেলজেট নামক একটি দ্বীপে অস্থায়ীভাবে প্লেগ হাসপাতালটির কাজ শুরু হয়। রাষ্ট্রীয় অনুদানেই তৈরি করা হয় হাসপাতালটি। নাম দেয়া হয় ‘লেজারেত্ত’। যা দ্রুতই পুরো ইউরোপে পরিচিতি পায়।

এই চিকিৎসা কেন্দ্রের প্লেগে আক্রান্ত রোগীদেরও যেমন চিকিৎসা দেয়া হত তেমনই অন্যদেরকেও আলাদাভাবে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা ছিল। যেমন- নতুন আগত এবং স্থানীয় নাগরিকদের উভয়য়ের জন্য হাসপাতালের একপাশ বরাদ্দ ছিল। আর প্লেগে আক্রান্ত বা সম্ভাবনা রয়েছে এমন রোগীদের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। হাসপাতালটি সর্বোচ্চভাবে নিশ্চিত করেছিল যাতে সেখান থেকে প্লেগ না ছড়াতে পারে। এমনকি সেখানে প্লেগ আক্রান্তদেরও অত্যন্ত ভালোভাবে সেবা করা হত। তাদেরকে ভালো ও পুষ্টিকর খাবার, পরিষ্কার বিছানাপত্র এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক সব ব্যবস্থায় রাষ্ট্র বহন করত।

ইতিহাসবিদের মতে, মহামারীর চূড়ান্ত পর্যায়ে সেখানে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার মানুষ মারা যেত। প্রায় ৫০ বছর ধরে বিশ্বে টিকে ছিল এই মহামারি রোগটি। এতে বিশ্বব্যাপী আড়াই কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। তবে কিছু কিছু উৎসে সংখ্যাটা ১০ কোটিতেও ঠেকেছে। প্রাচীন পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক এ মহামারিই ইউরোপে ‘ডার্ক এজ’র সূচনা করেছিল।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top