ইয়াহিয়া ইবনে উরওয়া তাঁর বাবার সূত্রে আমাকে বলেছেন যে মক্কায় রাসুলে করিম (সা.)–এর পর আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ উচ্চকণ্ঠে কোরআন শরিফ পড়েন। একদিন রাসুলে করিম (সা.)–এর সাহাবিরা একত্র হয়ে আলোচনা করছিলেন এবং তখনই ধরা পড়ল যে কোরাইশরা উচ্চস্বরে কোরআন পাঠ এখনো শোনেনি। প্রশ্ন উঠল, তাদের কে জোরে কোরআন পাঠ করে শোনাবে? তখন আবদুল্লাহ বললেন, সে কাজটি তিনি করবেন। সবাই বলল, তাঁকে দিয়ে এ কাজ করাতে ভরসা পাচ্ছেন না। তাঁরা এমন একজন প্রভাবশালী বংশের লোক চান, যিনি ওরা সবাই মিলে আক্রমণ করলে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। আবদুল্লাহ জবাব দিলেন, ‘আমাকে একা সে কাজ করতে দিন, কারণ আল্লাহ আমাকে রক্ষা করবেন।’
পরদিন সকালে তিনি গেলেন পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে। কোরাইশরা তখন সভায় বসেছিল। তিনি মাকামে ইবরাহিমে পৌঁছে পড়লেন, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।’ পড়লেন গলা চড়িয়ে। পড়লেন, ‘তিনি পরম দয়ালু, যিনি কোরআন শিখিয়ে দিলেন।’ এরপর তিনি তাদের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন, যাতে সবাই তাঁকে দেখতে পায়। তারা বলল, ‘এই দাসীর পুত্র কী বলছে?’
ওরা সবাই যখন উপলব্ধি করল, মুহাম্মদ (সা.) যা আবৃত্তি করে নামাজ পড়েন, তা-ই তিনি পাঠ করে যাচ্ছেন, সঙ্গে সঙ্গে তারা উঠে তার মুখে সমানে কিল-ঘুষি চালাতে লাগল। তিনি ভ্রুক্ষেপ করলেন না, পড়েই যেতে লাগলেন। কারণ, আল্লাহর ইচ্ছা হয়েছে, তাকে পড়ে যেতেই হবে। এরপর তিনি গেলেন তাঁর সঙ্গীদের কাছে, মুখে মারের দাগ নিয়ে। তাঁরা বললেন, ‘ঠিক যা আমরা আশঙ্কা করেছি, তা-ই হয়েছে।’
তিনি বললেন, ‘আল্লাহর দুশমনদের এর আগে কোনো দিন এত ঘৃণ্য মনে হয়নি আমার কাছে। তোমরা যদি বলো, তাহলে আমি কাল আবার যাব, আবার তাদের সামনে একই কাজ করব।’
তাঁরা বললেন, ‘না, যথেষ্ট করেছেন আপনি। ওরা যা শুনতে চায় না, আপনি তাদের তা শুনিয়ে দিয়ে এসেছেন।’
* ইবনে ইসহাক: ইবনে ইসহাকের পুরো নাম আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক বিন ইয়াসার। জন্ম ৭০৪ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায়। তাঁর জীবনের সাধনা ছিল মহানবী (সা.)–এর জীবনী এবং তাঁর জীবৎকালে ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় ঘটনার তথ্য সংগ্রহ ও সংকলন। সেই সাধনার ফসল তাঁর লিখিত গ্রন্থ ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)’। এই লেখাটি এই গ্রন্থেরই আলফ্রেড গিয়োমের ইংরেজি অনুবাদ থেকে শহীদ আখন্দের অনুবাদ করা। বাংলায় অনূদিত বইটির প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন।