কোক বা কোকাকোলা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সফট ড্রিংক্স। কিন্তু এই কোকাকোলার সাথে জড়িয়ে আছে নানান চমকপ্রদ ব্যাপার, যা অনেকের কাছেই অজানা। আজ আসুন জেনে নেই, কোকাকোলা সম্পর্কে পাঁচটি সিক্রেট ব্যাপার, যা শুনলে হয়ত আপনার পিলে চমকে যাবে।
১. কোকেন থেকে কোকাকোলা
আপনি কি জানেন ভয়ংকর নেশার দ্রব্য কোকেন থেকে কোক আবিস্কার হয়? ১৮৮০ সালের দিকে আটলান্টায় “পেমবারটন’স ফ্রেঞ্চ ওয়াইন কোকা” (Pemberton’s French Wine Coca) নামক একটা অ্যালকোহলিক ড্রিংস তৈরি করেছিলেন জন স্টিথ পেমবারটন নামে একজন ব্যক্তি। এটা তৈরিতে কোকেন, অ্যালকোহল এবং ইউফোরিয়ার (Euphoria) নির্যাস ব্যবহার করা হয়েছিল। এর ক্ষতিকারক দিক বিবেচনায় এনে ১৮৮৫ সালে এটিকে আটলান্টাতে নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু পেমবারটন ছিলেন খুব চালাক। তিনি খুব তাড়াতাড়ি এটির ফর্মুলা পাল্টে সুগার সিরাপ দিয়ে নতুন করে প্রোডাকশন শুরু করে। তখন এটির নাম দেয়া হয়েছিল “Coca-Cola: the temperance drink”। ১৮৮৯ সালে এটির দাম কমিয়ে প্রতি বোতল মাত্র ১ নিকেলে নিয়ে আসা হয়। এত কমদাম হওয়ার কারনে তৎকালীন আফ্রিকান আমেরিকানরা কোকেনের বদলে নেশাদ্রব্য হিসেবে এটি ব্যাপকহারে সেবন করতে থাকে ও সমাজে অপরাধ প্রবণতা বিপদজনকভাবে বাড়তে থাকে। চাপের মুখে কোম্পানি ১৯০৩ সাল থেকে কোকাকোলা তৈরীতে কোকেনের ব্যবহার কমিয়ে দিতে শুরু করে। এভাবেই আমরা পাই আধুনিক কোকাকোলা। কোকেইন থেকে কোকাকোলার এই ইতিহাস সম্পর্কে আরও বর্ননা করা হয়েছে বিজনেস ইনসাইডার এর আর্টিকেলে।
২. মার্চেন্ডাইজ নং ৫
১৯২৯ সালে কোকাকোলা সম্পুর্ণরুপে কোকেন মুক্ত হয়। কিন্তু এখনও কোকাকোলাতে সামান্য পরিমানে কোকা-পাতার নির্যাস দেয়া থাকে। এই কোকা-পাতার নির্যাস দেওয়ার সম্পুর্ণ প্রসেসিং করা হয় নিউ জার্সির স্টেপান (Stepan) নামক একটি কোম্পানির ক্যামিকেল ফ্যাসিলিটিতে। জেনে রাখা জরুরী- সমগ্র আমেরিকায় এই মাত্র একটি কোম্পানিই কোকা-পাতার আমদানি ও প্রসেসিং এর লাইসেন্সপ্রাপ্ত। ২০০৩ সালে স্টেপান কোম্পানি মাঞ্চেন্ডাইজ নং ৫ থেকে কোকাকোলার জন্য ১,৭৫,০০০ (এক লক্ষ পচাত্তুর হাজার) কেজি কোকা-পাতা আমদানি করেছিল। কোকে ব্যবহার করা এই সামান্য কোকা-পাতা থেকে প্রায় ২০ কোটি ডলার মূল্যের কোকেন তৈরী করা সম্ভব। ভাবতে পারেন, কি পরিমান কোকাকোলা তৈরি হয় প্রতি বছর?
৩. কলম্বিয়া মামলাঃ
২০০১ সালে কলম্বিয়ান লেবার ইউনিয়ন, সিনাল্ট্রেইনাল (SINALTRAINAL) কোকাকোলা ও কোকাকোলার কলম্বিয়ান বোতল প্রস্তুতকারী পার্টনারদের বিরুদ্ধে ইউএস ডিস্ট্রিকট কোর্টে একটি মামলা দায়ের করে। এজহারে বলা হয়, কোকাকোলা ও কোকাকোলার কলম্বিয়ান বোতল প্রস্তুতকারী পার্টনারেরা লেবার ইউনিয়নের নেতাদের খুন, গুম ও টর্চার করার সাথে জড়িত। কোর্টে এ্টা প্রমানিত হয় যে কোম্পানি ৯ জন ইউনিয়ন মেম্বারদের খুন করতে কিছু লোক ভাড়া করেছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ২০০৫ সালে কোকা-কোলা কোম্পানির বিরুদ্ধে দাখিলকৃত চার্জ খালাস করে দেয়া হয়। কারন হিসেবে রিপোর্টে দেখানো হয় বোতল প্রস্তুতকারক কোম্পানিটি কোকা-কোলার নিজস্ব কোন কোম্পানি নয়।
৪. ফান্টা আবিষ্কারের মজার ঘটনা
১৯৩৯ সালে Coca-Cola Deutschland (দসল্যান্ড) ছিল কোকাকোলার এক নম্বর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান, যারা সারা জার্মানিতে প্রায় ৪৩টি বোতল প্রস্তুতকারক প্ল্যান্ট স্থাপন করেছিল ও রেকর্ড পরিমানে বিক্রি করেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সাথে সাথে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা ও যাতায়াত ব্যাবস্থার অপ্রতুলতার জন্য কোকা-কোলার প্রোডাকশন বন্ধের সম্মুখীন হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে কোকা-কোলা কোম্পানির জার্মান অপারেশন হেড ম্যাক্স কেইথ, তখন জার্মানিতে যেসব উপকরন পাওয়া যেত, তাই দিয়েই নতুন এক পানীয়ের প্রোডাকশন শুরু করেন। উপকরণের ভেতরে ছিল ঘোল ও আপেলের মাঝখানের অংশ। নতুন এই পানীয়ের নাম দেয়া হয় Fanta, জার্মান ভাষায় যার মানে ফ্যান্টাসি বা কল্পনা। পরবর্তিতে এই ফান্টা হয়ে ওঠে জনপ্রিয় পানিয় যা এখন সারা বিশ্বের মানুষের পছন্দ।
৫. কোকাকোলা যখন নেশার বস্তু
অতিরিক্ত কোকাকোলা পান করলে যে তা নেশার বস্তুতে পরিণত হতে পারে, তা কি আপনি জানেন? ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডে ৩১ বছর বয়সী নাতাসা হ্যারিস নামে একজনের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর রিপোর্টে লেখা হয়েছিল, “নাতাসার মৃত্যুর পেছনে একটি উল্লেখযোগ্য কারন হচ্ছে কোকাকোলা…”। নাতাসা দিনে প্রায় ১০ লিটার কোকা-কোলা পান করত। ফলে দৈনিক প্রায় এক কেজি সুগার ও এক গ্রামের বেশি ক্যাফেইন তার শরীরে প্রবেশ করত। এই কারনে কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়াতে আক্রান্ত হয়ে নাতাসা মারা যায়। পরিবারের লোকজন জানায় সে কোকাকোলার প্রতি এতই আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল যে প্রায় নেশার মত কোক পান করত। আর যদি কোন সময় হাতের কাছে কোকাকোলা না পেত তখন পাগলের মত হয়ে যেত। অতএব, সাবধান! অতিরিক্ত কোকাকলা পান করবেন না। তাতে এটা নেশায় পরিণত হবে যা ডেকে আনতে পারে করুন পরিনতি।