পৃথিবীর বুকে সর্বমোট শহরের সংখ্যা হাজারের অধিক। প্রত্যেক শহরের রয়েছে নিজস্ব জীবন ব্যবস্থা। তাদের রয়েছে নিজ নিজ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, দর্শনীয় স্থান আর আরো নানারকম বিশেষত্ব। কিন্তু একটা কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে কোন শহরই বিশেষত্বের দিক দিয়ে কিউবার ডুবন্ত শহর বা আন্ডারগ্রাউন্ড সিটির ধারে কাছেও নেই। আন্ডার গ্রাউন্ড শব্দটি শুনেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন এই শহরের অবস্থান মাটির নিচে? কি? খুব অবাক লাগছে। সবটুকু শুনলে তো আরও অবাক হয়ে যাবেন! আজ থাকছে কিউবার এই আন্ডার গ্রাউন্ড সিটির উপর প্রতিবেদন।
একটি শহরের অবস্থান মাটির নিচে। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে বলতে হয় – গোটা একটি শহর লুকিয়ে আছে পানির নিচে। অথচ ২০০১ সালের আগ পর্যন্ত মানুষ এই শহরের অবস্থান সম্পরকে জানতে পারেনি। ২০০১ সালে পশ্চিম কিউবার কাছে পানির ২,০০০ ফুট নীচে অবস্থিত একটি শহরের খোঁজ পাওয়া যায়। এই শহরকেই বলা হচ্ছে “আন্ডার গ্রাউন্ড সিটি অফ কিউবা” বা ‘কিউবার ডুবন্ত শহর’।
নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে কীভাবে এই শহর এতদিন পর আবিষ্কৃত হোল? এখন আসছি সেই প্রসঙ্গে…
কিউবার ডুবন্ত শহর এর সন্ধান কিভাবে মিলল?
২০০১ সালের ১৪ মে ছিল দিনটি। সেদিন এডভান্সড ডিজিটাল কমিউনিকেশন নামে কানাডিয়ান এক কোম্পানি ক্যারাবীয়ান সর্ববৃহৎ দ্বীপ কিউবার পশ্চিম প্রান্তের কাছে, সমুদ্রের নিচের অংশে জরিপ চালাচ্ছিল। এর জরিপের নেতৃত্বে ছিলেন উমেরিন ইঞ্জিনিয়ার পলিন ও তার স্বামী পল ওয়েজে ওয়েগ। তারা পানির নীচে এক আশ্চর্য স্থাপনা খুঁজে পান। তারা ঘটনাটি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরলে সবাই অবাক হয়ে যায়। শুরু হয় মাটির নিচে এক শহর এর অন্বেষণ।
নানারকম অনুসন্ধানের পর এই শহরে পিরামিড, বাড়িঘর, বারান্দা, রাস্তাঘাট সহ একটি সাধারন শহরে যেমন স্থাপনা থাকে, তার সবই খুজে পাওয়া গেছে। সোজা কথা, জীবন ধারনের জন্য মানুষের জা কিছু প্রয়োজন, তার সবই ছিল এই শহরে। এখানকার প্রত্যেকটি স্থাপনার গঠন আর আকৃতি দেখে মনে করা হয় যে এখানে কোন ছোটখাটো শহর নয়, বরং গোটা একটা সভ্যতাই বিকশিত হয়েছিল। এভাবেই মাটির নিচে, সমুদ্রের তলদেশে পুরোদস্তুর একটা শহরকে আবিষ্কার করে পৃথিবী।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে – এই শহর পানির নিচে তৈরি হলো কি করে?
আসলে এই কিউবার ডুবন্ত শহর পানির নিচে তৈরি হয়েছে, এমনটা ভাবলে ভুল করবেন। ভূমির আকৃতি দেখে বিশেষজ্ঞরা জানান একটা সময় মাটির ওপরেই ছিল স্থাপনাটি। তাহলে কী করে এভাবে ডুবে গেল এটি? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। বেশ কিছু বিশেষজ্ঞের মতানুসারে কিউবার ডুবন্ত শহরটির এভাবে ডুবে যেতে সময় লেগেছে প্রায় ৫০,০০০ বছর।
কিন্তু এত বছর আগে এতটা উন্নত প্রযুক্তি কিংবা চিন্তা-ভাবনা করার ক্ষমতা ছিলনা মানুষের। ছিলনা প্রকৌশলগত এতটা জ্ঞান। তাহলে কে নির্মান করেছিল এমন একটি শহর? শুনতে অদ্ভুত লাগলেও অনেকে অতি-প্রাকৃতিক বা ভিনগ্রহবাসীদের ঘাড়ে এর কৃতিত্বটা দিতে চান।
উইকিপিডিয়ায় দেওয়া আছে কিউবার এই ডুবন্ত শহরের কোরডিনেটস...
এর আগে আমরা নির্জনমেলার পক্ষ থেকে পানির নিচে হারানো শহর আটলান্টিস এর উপরে একটি প্রতিবেদন করেছিলাম। মনে আছে তো সেই হারিয়ে যাওয়া আটলান্টিস শহরের কথা? অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন সেই হারিয়ে যাওয়া আটলান্টিস শহর আসলে এই কিউবার ডুবন্ত শহর। হারানো আটলান্টিসের সাথে অনেক দিক থেকে মিল পাওয়া গেছে কিউবার মাটির নিচের শহরের। কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনও।
তাহলে সত্যিটা আসলে কি? মানুষ আজও খুজে বেড়াচ্ছে সেই উত্তর। আর নিজের রহস্যকে নিজের কাছে রেখে এখনো চুপচাপ শান্তভাবে পানির নীচে রয়েছে রহস্যাবৃত কিউবার ডুবন্ত শহরটি।