বগলাকাকু একটা মিটিং ডেকেছেন। খুব জরুরি আলোচনা আছে। কালই আমাদের পাড়ায় চোর এসেছিল ফ্যালাদার বাড়িতে। সেইসব নিয়ে আলোচনা হবে সন্ধেবেলায় বগলাকাকুর ঘরে।
সন্ধেবেলায় বগলাকাকুর ঘরে গিয়ে দেখলাম সবাই এসে গেছে। নয়-দশ জন প্রতিবেশী। শুধু ভজহরিদাকে দেখতে পেলাম না। বগলাকাকুর বসার ঘরটা বড়। একটু গ্যাপ দিয়ে দিয়ে চেয়ার পাতা হয়েছে। আমি যেতেই মিটিং শুরু হয়ে গেল।
সন্ধেবেলায় বগলাকাকুর ঘরে গিয়ে দেখলাম সবাই এসে গেছে। নয়-দশ জন প্রতিবেশী। শুধু ভজহরিদাকে দেখতে পেলাম না। বগলাকাকুর বসার ঘরটা বড়। একটু গ্যাপ দিয়ে দিয়ে চেয়ার পাতা হয়েছে। আমি যেতেই মিটিং শুরু হয়ে গেল।
বগলাকাকু গলা ঝেড়ে বললেন, "খুবই সিরিয়াস একটা বিষয়ে আলোচনার জন্য ডেকেছি। যেহেতু এই সময় ভিড় করা উচিত নয় তাই দশজনকে মাত্র ডেকেছি। ভজহরির সকাল থেকে পাত্তা নেই। কোথায় কে জানে! আমরা শুরু করে দিই।"
বগলাকাকু বলে যাচ্ছেন, "ফ্যালার ঘরে কাল চোর এসেছিল, সে কথা তো সবার জানা হয়ে গেছে নিশ্চই। সমস্যা হল ফ্যালা তাকে দেখেও ধরতে পারেনি।"
ফ্যালাদা হ্যাঁ সূচক ঘাড় নাড়ল।
বগলাকাকু বললেন, "এ এক ভয়াবহ সমস্যা। এখন আমাদের ঠিক করতে হবে আমরা কী করব। আচ্ছা ফ্যালা কী হয়েছে বলুক। তুই ইংরাজি একটু কম বলিস।"
ফ্যালাদা বেশ কায়দা মেরে শুরু করল, "মাই ডিয়ার লেডিজ অ্যান্ড জেন্টেলম্যান..."
বুন্টা ফোড়ন কাটল, "লেডিজ আবার কোথায় পেলে ফ্যালাদা?"
ফ্যালাদা বলল, "ওইভাবে স্টার্ট করলে একটা কেমন জোশ এসে যায়, ওসব তুই আন্ডারস্ট্যান্ড করতে পারবি না। তো মিডনাইটে আমি বাথরুমে গিয়েছিলাম ফর ইউরিন। হঠাৎ খুটখুট সাউন্ড শুনে অবাক হয়ে দেখলাম একজন থিফ বাসন-কোসন জড়ো করেছে। রুফ দিয়ে ঢুকেছিল সিওর। আমাকে দেখেই স্টপ হয়ে গেল। আমি ভাবলাম, কী এত বিগ সাহস! আমি ওকে ধরার জন্য কিছুটা এগিয়ে স্টপ হয়ে গেলাম। এবার আমি স্টপ হয়ে গেলাম কেন?"
প্রশ্নটা যথেষ্ট কঠিন সবাই সবার দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করল।
বুন্টা বলল, "নিশ্চই প্যান্টে হিসি হয়ে গেছিল, তাই স্টপ হয়ে গিয়েছিলেন।"
ফ্যালাদা দু-দিকে জোরে জোরে ঘাড় নেড়ে বলল, "নো ব্রাদার। রঙ অ্যানসার। আমি স্টপ হয়ে গিয়েছিলাম কেননা আমার ফেসে মাস্ক ছিল না। যদিও থিফের ফেসে গামছা জড়ানো ছিল বাট আমি ক্যাচ করব বলে এগোতেই থিফ মুখের গামছা সরিয়ে দিয়ে থুতু ছেটাতে লাগল! ব্যাস আমি চেজ করতে পারলাম না। তারপরে আমার ফ্রন্টেই থিফ রুফ দিয়ে পালাল উইথ বাসনের বস্তা। এইবার অল অফ ইউ বলো আমার কী চেজ করা উচিত ছিল? যদি ওকে আমি ধরতাম দেন করোনা হওয়ার হান্ড্রেড পার্সেন্ট চান্স ছিল।"
সভাস্থলে উপস্থিত সবাই চুপ করে গেল। সত্যি গুরুতর সমস্যা।
বগলাকাকু বললেন, "এখন চোর একবার যখন এ পাড়ায় এসে সফল হয়েছে তখন আবার আসবে। সুতরাং সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। আমাদের পাড়ায় সবই পুরনো বাড়ি, এখনকার ফ্ল্যাটের মতো নয়, ছড়ানো। তাই চোরের সুবিধা আছে পাঁচিল টপকে বা ছাদ দিয়ে ঘরে আসার।"
ভুতুদা বলল, "বিবিসিতে এই বিষয়ে একটা প্রোগ্রাম দেখছিলাম, তাতে বলছিল পোস্ট লকডাউনে চোরের সংখ্যা বাড়বে হু হু করে। বি কেয়ারফুল! এখন আমরা একটা কাজ করতে পারি। পাড়ায় কিছু হোর্ডিং দিয়ে দিতে পারি যাতে লেখা থাকবে, চোরেরা চুরি করতে এলে মাস্ক পরে আসুন, তাতে আপনারও ভাল।"
ভুতুদা উদ্ভট উদ্ভট কথা বলে। কেউ কোনও উত্তর দিল না, সবাই চিন্তিত মুখে বসে রইল।
ভজহরিদা এইসময় হন্তদন্ত হয়ে ঢুকল। বলল, "সরি একটু দেরি হয়ে গেল। ভোর থেকে মেসোকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে। মেসো হঠাৎ করে পড়ে কোমর ভেঙেছে। এখন বলুন কী হয়েছে।"
পুরো বিষয়টা বগলাকাকু আবার বলল ভজহরিদাকে।
চুপচাপ শুনল ভজহরিদা। তারপর বলল, "কিচ্ছু করতে হবে না। ও চোর এখন আর কয়েকদিন শিকারে বেরোতে পারবে না।"
ভুতুদা বলল, "চোর কি তোর বন্ধু নাকি রে?"
ভজহরিদা ভুতুদার কথা পাত্তা না দিয়ে বলল, "কাল ফ্যালার ঘরে চুরি করার পর আমার ঘরেও গেছিল। সাহস পেয়ে গিয়েছিল আরকি! আমার রাতে ঘুম আসছিল না। হঠাৎ মাঝরাতে ধুপ্-ধাপ্ আওয়াজ শুনে উঠে দেখলাম এক চোর আমার ঘরের বারান্দায় জিনিসপত্র জড়ো করছে। আমাকে দেখেই শালা মুখের গামছা সরিয়ে থুঃ থুঃ করে থুতু ছেটাতে লাগল। ও আমাকে ফ্যালা ভেবেছে! কিন্তু আমি হলাম গিয়ে ভজহরি ভটচাজ! আমাকে চমকানো অত সোজা না। তো আমি ওই থুতু-ফুতু কিছু না মেনে দৌড়ালাম ধরব বলে! শালা ঘাবড়ে গিয়ে পাঁচিলে উঠে লাফ দিল। বাইরে বেরিয়ে দেখি সেই যে পড়েছে আর উঠে দাঁড়াতে পারছে না। পা ভেঙেছে। আমি আর ধরিনি! শালা ছিঁচকে চোর, ভগবানই শাস্তি দিয়েছে। ফ্যালাদের ঘর থেকে চুরি করা বাসনের বস্তাটা পাঁচিলের ধারে রেখে বোধহয় আমার ঘরে ঢুকেছিল। ওই বস্তাটা নিয়ে এসে ঘরে রেখে দিলাম। ফ্যালা তুই নিয়ে নিস আমার বাড়ি থেকে। সকাল থেকে মেসোকে নিয়ে যা গেল তোকে আর বলতে পারিনি।"
ঘরে উপস্থিত সবাই হইহই করে উঠল। বগলাকাকু বলল, "একদমই উচিত হয়নি তোমার এটা। এত বড় রিস্ক নিয়ে খুব ভুল করেছ। চোরটা থুতু ছেটাচ্ছিল, যদি ওর করোনা থাকে? না না এ বাহাদুরি নয় উল্টে খুব মুর্খামির কাজ হয়েছে।"
ভজহরিদা বলল, "আমি কোনও রিস্ক-ফিস্ক নিইনি।"
ভুতুদা বলল, "পাড়ার সবার জন্য ব্যাপারটা খুব খারাপ হয়েছে। এটা রিস্ক নয় মানে? বাসন এত বড় হল মানুষের জীবনের চেয়েও? তোর জন্য আমরা সবাই বিপদে পড়ব। মাস্ক ছাড়া খালি মুখে তুই তাড়া করলি কেন?"
ভজহরিদা বলল, "আমার মুখ বাঁধা ছিল। তাই রিস্ক নেওয়ার প্রশ্ন নেই।"
ফ্যালাদা বলল, "তার মানে তুই সেয়িং তুই মিডনাইটে মাস্ক পরে বেরিয়েছিলি?"
ভজহরিদা বলল, "ধুস্ শালা মাস্ক পরে কে বেরিয়েছিল! কাপড় বলতে আমার শরীরে লুঙ্গিটাই শুধু ছিল। আমি চোরকে থুতু ছেটাতে দেখে লুঙ্গি খুলে মুখে বেঁধে নিয়ে ছিলাম। আমাকে ওইরকম দেখে শালা চোর এমন ভড়কে গেল যে পাঁচিল টপকাতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে গিয়ে পা ভাঙল! হাসপাতালে দেখেই শালাকে চিনতে পেরেছি। মেঝেতে পড়ে আছে। পায়ে প্লাস্টার! তাই ও এখন আর চুরি করতে আসতে পারবে না।"
চোরের ভয় দূর হল। চা এসে গেছে।
ফ্যালাদা চা খেতে খেতে হঠাৎ হো হো করে হেসে ভজহরিদাকে বলল, "আমি ভাবছি তোকে নেকেড হয়ে যেতে দেখে থিফটার অবস্থা... তুই কী ডেঞ্জারাস ম্যান মাইরি!"