What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

করফু দ্বীপের কল্লোল ১ (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,653
Messages
117,045
Credits
1,241,450
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
6HxxCfi.jpg


পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকা প্রশস্ত ধাপের সিঁড়ি। শ্বেতপাথরের। শতাব্দীর প্রবঞ্চনায় এখন আর ওগুলো শ্বেত নেই অবশ্য। ধূসর। দুই পাশ থেকে বৃক্ষমঞ্জরির শাখা নেমে এসে জাপটে ধরতে চেয়েছে সিঁড়ির সব কটি ধাপকে। দু–এক জায়গায় আবার পাহাড়ের ধূমল মৃত্তিকা প্লাবনধারায় ভাসিয়ে দিয়েছে সিঁড়ির জমিন। আর তাই আয়তনের দিক থেকে অনেকটা জায়গাজুড়ে থাকলেও সিঁড়ির বুকে পা ফেলার স্থান কিন্তু তেমন একটা নেই। সেটুকু অসুবিধা মেনে নিয়েই লম্বা লম্বা ধাপ পেরিয়ে যখন পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছাই, তখন দেখি, বেশ কিছু চেয়ার-টেবিল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে একটি ক্যাফে সকালের পয়লা কাস্টমার ধরার জন্য কেবল প্রস্তুত হচ্ছে। বসানো হয়েছে জল গরম করার যন্ত্র। জলের বাষ্প পাক খেয়ে ক্যাফের ছাদের যে অংশের দিকে ধেয়ে যায়, সেখানে ছোট্ট একটি টানানো সাইনবোর্ডে লেখা—স্থাপিত ১৮৬৯।

cqXcLM3.jpg


অ্যালেক্সের বিড়ালেরা

আমি পাহাড়ের ধারে রেলিং দিয়ে ঘেরা একটা স্থানে ফাঁকা টেবিল বেছে নিয়ে বসি। অবশ্য এ বেলায় সব কটি টেবিলই ফাঁকা। যেকোনো একটিতে বসলেই হতো। কিন্তু বহু নিচের দৃশ্যাবলির একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ খুঁজে পাওয়ার জন্য এই টেবিলের চেয়ে যোগ্য আর কোনো স্থান বোধ হয় আর নেই। সে অর্থে ভাগ্যবান আমি। অন্তত সকালের এই বিশেষ সময়ে।

খানিক আগে পাহাড়ের সিঁড়ি বাওয়ার সময়ে খানিকটা হাঁসফাঁস লাগছিল। মুখে কাপড়ের ঠুলি আঁটা থাকায়। একবার ভেবেছিলাম খুলে ফেলি। কিন্তু পরে দেখলাম, বহু দূরে যে ধীবর একাকী নিভৃতে বসে মাছ ধরছে, তার মুখেও ঠুলি আঁটা। অর্থাৎ এখানে সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাহলে আমিই–বা আইনভঙ্গকারী হব কেন? তবে এখানে যেহেতু মুখে তুলে নিতে হবে পানীয়, তাই অনুমান করি, ক্যাফের এই সীমানায় হয়তো মাস্কবিষয়ক আইনটি প্রযোজ্য নয়। আমি তাই মাস্কটি খুলে টেবিলে রাখি। পাশেই পড়ে থাকে জীবাণুনাশকের স্বচ্ছ বোতল। ভেতরে তুঁতরঙা তরল। শুধু এ টেবিলেই নয়, প্রতিটি টেবিলেই একটি করে রাখা। বিশ্বব্যাপী যে অতিমারির তাণ্ডব চলছে, তাতে করে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে এমন ব্যবস্থা না করেই–বা উপায় কী?
আমাকে দেখে ওয়েটার মেয়েটি এগিয়ে আসে। মেনু কার্ডটি এগিয়ে দেওয়ার আগেই আমি ঝটপট এক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে দিই। তারপর রেলিংয়ে ঝুঁকে পড়ে বহু নিচের দৃশ্যাবলি দেখায় মন দিই।

cae3twE.jpg


করফু বিমানবন্দর

গ্রিসের করফু দ্বীপে এসে পৌঁছেছি গতকাল। অনেক অনিশ্চয়তার পর এই যাত্রা। এর আগের দেড়টি বছরজুড়ে একপ্রকার অন্তরীণ অবস্থা কাটানোর পর মন চাইছিল মুক্তি, চাইছিল জনমানুষের সান্নিধ্য। বহুকাল জেলখানায় কাটানোর পর কয়েদিদের যেমনটা হয় আরকি। বিষণ্নতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে তাই দিন গুনছিলাম, কবে আবার খানিকটা নির্ভার হয়ে পৃথিবীর পথে হাঁটা সম্ভব হবে। পত্রিকায় পাতায় চোখ রাখি। খুঁজে ফিরি সংবাদ। আমেরিকাবাসীদের জন্য কোনো দেশ তাদের দোর খুলে দিচ্ছে কি? অবশেষে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে আচমকাই একটি সংবাদ নজরে এল—যেহেতু আমেরিকায় টিকার সফল প্রয়োগের ফলে সংক্রমণ অনেকটাই কমে এসেছে, তাই গ্রিস তাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। শর্ত হলো, দুই ডোজ টিকা নেওয়ার প্রমাণ দেখাতে হবে। হুর রে বলে চেঁচিয়ে উঠলাম। সেই কবে ফেব্রুয়ারি মাসেই তো টিকা নিয়ে বসে আছি। প্রমাণপত্রের কার্ডটা অবহেলায় পড়ে আছে পড়ার টেবিলের এক কোণে। ওটা দেখিয়েই যদি গ্রিসের সৈকতে পৌঁছানো যায়, তবে আর বিলম্ব করে কী লাভ!

তবে হ্যাঁ, তারপরও শঙ্কা ছিল। এখনো তো পৃথিবী থেকে অতিমারি দূর হয়ে যায়নি। কবে হবে, তারও কোনো সঠিক দিনক্ষণ নেই। হয়তো আরও দু–এক বছর এমন অবস্থার মধ্যেই পৃথিবীকে চলতে হবে। আর তেমনটা হলে কোনো দেশই স্থির সিদ্ধান্তে অবিচল থাকতে পারবে না। হয়তো আজ পরিস্থিতি ভালো; কিন্তু কয়েক সপ্তাহ বাদেই যে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেবে না, তার কী নিশ্চয়তা? এমন বেশ কিছু ঘটনা করোনা সংক্রমণের প্রথম বছরে ঘটেছে। এমন হয়েছে যে কোনো দেশ পরিস্থিতি নিরাপদ ভেবে নীতিমালা কিছুটা শিথিল করেছে, তার কিছুদিন বাদেই করোনা ক্রুদ্ধ আক্রোশে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সেখানে। তারপর আবারও সেই একই শোকগাথার পুনরাবৃত্তি। তাই মনে মনে নানা হিসাব কষে ভাবলাম, এ বেলাতেই ঘুরে আসা ভালো। অন্তত যত দিন গ্রিসে পরিস্থিতি খানিকটা অনুকূল।

cgzaJPg.jpg


জলের ধারে রানওয়ে

শেনজেনভুক্ত যেকোনো দেশে যাওয়ার আগে এই বলয়ের যে দেশটিতে প্রথম যাত্রাবিরতি থাকবে, সেখানেই ইমিগ্রেশনের যাবতীয় কার্যাদি সম্পাদন করা হয়। যেমন আমেরিকা থেকে জার্মানি যাওয়ার কালে যদি আইসল্যান্ডে থেমে আমাকে প্লেন পাল্টাতে হয়, তাহলে আইসল্যান্ডের ইমিগ্রেশন পুলিশ আমার পাসপোর্টে সিল–ছাপ্পর মেরে বলবেন, ইউরোপে স্বাগত। সেখানেই যদি আমি নেমে পড়ি, তবু কোনো সমস্যা নেই। সেভাবেই গ্রিসে যাওয়ার পথে ইমিগ্রেশন পুলিশের মুখোমুখি হলাম আমস্টারডামে। তবে আগেকার মতো চাইলেই এখানে নেমে পড়া সম্ভব নয়। কারণ, গোটা ইউরোপে একমাত্র গ্রিস, সাইপ্রাস আর আইসল্যান্ড ভিন্ন আর কোনো দেশই এখন পর্যন্ত পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানানোর সাহস করে উঠতে পারেনি। এই তিন দেশেরও সাহস করে এগিয়ে আসার পেছনে কারণ আছে। তাদের সবার জাতীয় অর্থনীতি পর্যটনের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। যেমন গ্রিসের ক্ষেত্রে, তাদের জাতীয় আয়ের ২০ শতাংশই আসে এ খাত থেকে। কাজেই দীর্ঘকাল পর্যটন বন্ধ করে বসে থাকলে করোনায় না মরলেও দারিদ্র্যের হাতে মরতে হবে।

নেদারল্যান্ডস অবশ্য ধনী দেশ। তাদের আরও কিছুদিন হয়তো এভাবে রুদ্ধদ্বার পরিস্থিতিতে কাটানোর মতো সঞ্চয় কোষাগারে আছে। এখানে তাই পুলিশের কড়া নজর—গ্রিসে যাওয়ার নাম করে কেউ আবার হুট করে শিফল এয়ারপোর্টের বহির্গমন দিয়ে বেরিয়ে না যায়!

আমস্টারডাম থেকে এথেন্স। সেখান থেকে আবার ঘণ্টাখানেক বাদের প্লেনে করফু দ্বীপে। দীর্ঘ যাত্রাপথ। এতটুকু সময়ে হয়তো আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে পৌঁছে যাওয়া যায়। দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তের হোটেলটিতে গত রাতে এসে তাই দীর্ঘ ঘুমে এলিয়ে পড়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। সেই ঘুম ভেঙেছে আজ বেশ সকালের দিকে। মোরগের ডাকে।

হোটেলটির মালিক অ্যালেক্স। পৈতৃকসূত্রে এই হোটেল ব্যবসা বুঝে পেয়েছেন। বাবা অবশ্য গত হয়েছেন কয়েক বছর আগে। এখন মা আর বউকে নিয়ে এই হোটেল সামলান। এরই একদিকে পরিবার নিয়ে থাকেন।

হোটেলটি ঠিক শহুরে হোটেলের মতো বহুতলবিশিষ্ট নয়। ঢোকার মুখেই দ্বিতল একটি বাড়ি। পেছনের দিকে উঠান। ডান দিকে সাঁতার কাটার পুকুর। আর তার বাদে দুটি একচালা ঘর। ছাদে টালি। সামনে টুকরা বারান্দা। সেখানে কাপড় শুকানোর র‍্যাক। বসার জন্য একটা ছোট্ট টেবিল। দুটি ধাতব চেয়ার। এই যে পেছনের দিককার দুটি ঘর, এরই একটিতে অ্যালেক্স আমার থাকার বন্দোবস্ত করেছে।

CzpbfLv.jpg


কাজে ব্যস্ত অ্যালেক্স

ঘরটির পাশে একটুকরা জমি। সেখানে অ্যালেক্সদের পোষা একদল মোরগ-মুরগি চরে বেড়ায়। আজ সকালে আমার ঘুম ভাঙিয়েছে এগুলোই।

অ্যালেক্সের বয়স হয়তো মধ্যচল্লিশ। গায়ের রং উজ্জ্বল গৌরবর্ণ। মাথার চুল অনেকটাই উঠে গেছে। স্নেহজাতীয় পদার্থের আধিক্য মুখায়বে স্পষ্ট। মুখটিতে সর্বদাই লেগে আছে একটুকরা সুখী সুখী হাসি। সাতসকালে আমাকে উঠান পেরিয়ে আসতে দেখে নিজের ছোট্ট অফিস থেকে ছুটে এসে বললেন, ‘কালিমেরা, কালিমেরা।’ অর্থাৎ শুভ সকাল। এটুকু বলার মাঝেই করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন। তৎক্ষণাৎ অবশ্য নিজের ভুল বুঝতে পেরে বাড়িয়ে দেওয়া হাতখানা মুষ্টিবদ্ধ করে আমার মুষ্টির সঙ্গে ঠোকাঠুকির জন্য বাড়িয়ে দিলেন। সর্বনাশা করোনা কত কেতাকেই না ধীরে ধীরে বদলে ফেলছে!

হোটেলের প্রাতরাশের ঘরটা একটা হলঘরের মতো। দুই দিকেই কাচের দেয়াল। সেগুলো আবার জানালার পাল্লার মতো করে ভাঁজ করে রাখা। ফলে সকালের মিঠে রোদের সঙ্গে সেখানে হু হু করে ঢুকে পড়ে সাগর থেকে ছুটে আসা সমুদ্রবায়ু। সে বায়ুতে স্নান করে টোস্টে মাখন লাগানোর সময় কোথা থেকে এক হুলো বিড়াল এসে জুটে যায়। সেটি আমার পায়ের কাছে এসে মিউ মিউ করে। কী জ্বালা! টোস্ট কি আমি খাব? নাকি তোকে দেব? এ নিশ্চয়ই অ্যালেক্সের পোষা বিড়াল। তাই এখানে এসে দুষ্টুমি করার জন্য জোরে যে একটা ধমক লাগাব, সেটি করতেও সংকোচ হচ্ছে। আমার এই করুণ মুহূর্তে আবারও হাজির হয় অ্যালেক্স। সকালের দিক বলেই হয়তো অফিসঘরে কাজ নেই। আর তা ছাড়া হোটেলে অতিথির সমাগমও খুব একটা নেই।

ZFsFjTy.jpg


এই তো গতকালই ওর মুখ থেকে শুনছিলাম, গেল বছরেরই পুরোটাই ব্যবসায় গেছে চূড়ান্ত মন্দা। অথচ করফু দ্বীপে করোনা পরিস্থিতি নাকি ভালোই ছিল। সপ্তাহে হয়তো দু–একটি রোগী ধরা পড়েছেন। কিন্তু তবু সতর্কতা হিসেবে সরকার ভিনদেশি পর্যটকদের দ্বীপের কাছে ভিড়তে দেয়নি। সেটিকে খানিকটা বাড়াবাড়ি হিসেবে আখ্যায়িত করে অ্যালেক্স বলছিল, ‘এভাবে আর কিছুদিন চললে ব্যবসাপাতি সব লাটে উঠত। বছরখানেক আগেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কয়েকটা গাড়ি কিনলাম ভাড়া দেব বলে। এর মধ্যেই শুরু হলো এসব। যাকগে, সবই নিয়তি। এ বছর এখন ভালোয় ভালোয় কাটলেই বাঁচি।’

দূরের এক টেবিলে থাকা ওয়াটার স্প্রেয়ার নিয়ে অ্যালেক্সের বিড়ালটাকে ধাওয়া করে। গায়ে জলের ঝাপটা লাগতেই ওটিও নিমেষেই দৌড়ে পালায়। পলায়নের এই দৃশ্য দেখে অ্যালেক্স বুড়োদের মতো খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসে। তারপর আমার টেবিলের কাছে এসে বলে, ‘তা, আজ সকালে কোথায় যাবে ভাবছ?’ (চলবে)

[FA]pen[/FA] লেখক: সঞ্জয় দে
 
চমৎকার লেখা। অজানা জায়গায় আপনার sathe মানোসভ্রমন।
 
বেশ গোছানো সুন্দর, পরের পর্ব পড়তে যাচ্ছি
 

Users who are viewing this thread

Back
Top