২০২১ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘Un Certain Regard’ ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন (অফিশিয়াল সিলেকশন) পেয়েছে ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’ খ্যাত পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘রেহানা মরিয়ম নূর’।
উক্ত ক্যাটাগরিতে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’ সহ মোট ১৮টি চলচ্চিত্র মনোনয়ন পেয়েছে। অত্যন্ত প্রচারবিমুখ এই মানুষটির জন্য রইলো প্রাণঢালা অভিনন্দন!
ওনার এই অর্জনের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্র নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হলো। এর আগে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশি চলচ্চিত্র কান উৎসবে গিয়েছে, তবে কখনোই কোনো মূল ক্যাটাগরিতে সরাসরি অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায়নি।
এর আগে আমাদের সর্বোচ্চ সাফল্য এসেছিল বিখ্যাত নির্মাতা তারেক মাসুদের হাত ধরে। তার পরিচালিত ‘মাটির ময়না’ কান ফেস্টিভ্যালের প্যারালাল অংশে অংশগ্রহণ করেছিল।
প্যারালাল অংশে দুইটি বিভাগ রয়েছে—
১. ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিক’স উইক।
২. ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইট।
‘মাটির ময়না’ কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের প্যারালাল অংশের ‘ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইট’ বিভাগে অংশগ্রহণ করেছিল। উক্ত সাব ক্যাটাগরিতে সারা বিশ্বের মোট ২৪টি চলচ্চিত্র অংশগ্রহণ করেছিল এবং বাকি ২৩টি চলচ্চিত্রকে পেছনে ফেলে ‘মাটির ময়না’ ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইট পুরস্কারটি অর্জন করেছিল!
আসল কনফিউশন তৈরি হয় যখন আমাদের দেশের চলচ্চিত্রগুলো বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে হল ভাড়া করে কানে মুক্তি দেওয়া শুরু হয়। অনন্ত জলিলের ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ কিংবা জাজ মাল্টিমিডিয়ার ‘পোড়ামন ২’; এরা কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি দিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়ায় প্রচার করেছিলেন যে, তাদের চলচ্চিত্র অফিশিয়ালি সিলেক্ট হয়েছে, যেটা আদতে পুরোটাই মার্কেটিং স্ট্যান্ডবাজি ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
এটা আমরা বুঝতে পারি যখন একইভাবে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘অজ্ঞাতনামা’ এবং অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজি’ বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে হল ভাড়া করে কানে মুক্তি পেলো।
তৌকীর আহমেদ ও অমিতাভ রেজা উভয়ই মিডিয়ার সামনে বিষয়টি ক্লিয়ার করেছিলেন। তারা যেভাবে মুক্তি দিয়েছেন এভাবে চাইলে যে কোনো বাংলাদেশি চলচ্চিত্র কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে মুক্তি পেতে পারে। এটা কোনো অফিশিয়াল সিলেকশন নয়, কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াও নয়। শুধুমাত্র হল ভাড়া করে সিনেমাটা রিলিজ করা।
কান নিয়ে কিছু অসাধু চলচ্চিত্রকর্মীদের এতো জলঘোলা করার কারণে এখন আমাদের কাছে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের অর্জনকে খুব একটা বড় কিছু মনে হচ্ছে না। অথচ এ রকম খবর যদি প্রথমবার শোনা যেতো, তবে ততটাই আলোড়ন দেখা যেতো, যতটা তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’র সময় দেখা গিয়েছিল।
২০০২ এ আমাদের চলচ্চিত্র যেরকম একটা বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, ওই সময়ে কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া, অস্কার পাওয়া থেকে কোনো অংশে কম না! তাই আজকের এই অর্জনের পর থেকে তারেক মাসুদের সেই অর্জনকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বরং আমাদের বোঝা উচিত, কারা আমাদের বিভ্রান্ত করেছে, আর কারা সত্যিকার অর্থেই দেশকে গৌরব এনে দিতে পেরেছে।
বাংলা চলচ্চিত্র এই গৌরবগাথার পথে নিয়মিত চলাচল করুক, এই প্রত্যাশা রইলো।