কমিউনিটি সার্ভিস by riddle
আসরের ওয়াক্তে দানিয়েল ভাইকে দেখলাম আমার কাতারে, ডানদিকে। বেশ পেরেশান লাগছিল ওনাকে। খেয়াল করলাম ফরয পড়েই উঠে পড়লেন, বসলেন না।
আমি ইমামের সঙ্গে দোয়া পড়ে আস্তে ধীরে মসজিদের বারান্দায় গিয়ে ভাইকে পেলাম। আনমনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন।
- কেমন আছেন ভাই? কোন ঝামেলা হলো নাকি?
দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো, আমার প্রশ্নে সচেতন হলেন।
- হামিদুল, কি খবর তোমার?
- আলহামদুলিল্লাহ। দেখা সাক্ষাৎ নেই, থাকেন কই?
- আর বলোনা, ফ্যামিলি ইস্যু নিয়ে ঝামেলায় আছি।
বলার ধরণে মনে হল বেশ চিন্তিত।
- কি হলো? আপনাদের তো হ্যাপী ফ্যামিলি।
আমি কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করি। দানিয়েল ভাইয়ের বয়স ত্রিশ-বত্রিশ, সুদর্শন। আমার চেয়ে বছর ছয়-সাত বড়। লম্বা চওড়া, মুখে খোঁচা খোঁচা চাপদাঁড়ি। একটা পাবলিকেশন্সে চাকরি করেন। জামাই-বৌয়ের ছোট পরিবার।
- কাজটাজ আছে তোমার আজ কোন?
আমার কথা শুনতে পাননি এমন করে জিজ্ঞেস করে ভাই।
- না, আমার আর কাজ কি। মাগরিবের আগে একটা প্রাইভেট পড়াতে হবে। ...আপনি যান নাই অফিসে?
- যাইনি আজ.. মাগরিবের পর একটু আমার সঙ্গে বেরোতে পারবে?
- পারব তো.. কেউ কিছু বলেছে নাকি?
- হাহাহ... আরে না। কেন?
দানিয়েল ভাই সব সময় দাঁড়ি-টুপিতে থাকেন, সুন্নতী লেবাস থাকে গায়ে। কেউ কোন ঝামেলা করল কিনা ভাবছিলাম।
- মনে হল ভয়ে ভয়ে আছেন।
- একটু দুশ্চিন্তায় আছি, আর কিছুনা। সন্ধ্যায় বের হয়ো আমার সঙ্গে, ইনশাল্লা সমাধান হয়ে যাবে।
প্রাইভেট পড়ানো শেষ করে মাগরিবের সময় মসজিদে এসে দেখি বারান্দায় দানিয়েল ভাই দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখে চোখ ঝিলিক দিয়ে উঠল। মনে হলো অপেক্ষা করছিলেন।
ভেতরে ঢুকে ভাই ডেকে নিয়ে গেলেন এক কোণে। কয়েকজন বসে আছে সেখানে।
- আসসালামু আলাইকুম মওলানা সাহেব।
লোকাল মাদ্রাসার পরিচালক আরো তিনজনকে নিয়ে গোল হয়ে বসে আছেন। আমি গিয়ে সালাম জানালাম। সবাই জবাব দিল সালামের।
- কেমন আছেন হামিদুল ভাই?
কাঁচা দাঁড়িঅলা কম বয়সী একজন জিজ্ঞেস করল।
- আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা গোলমিটিংয়ে বসলেন যে নামাজের আগে? দানিয়েল ভাই ধরে নিয়ে এল নাকি?
মজা করে জিজ্ঞেস করি।
- হ্যাঁ, বলতে পারেন। ...মওলানা সাহেব, এখন আলাপ করবেন?
সফেদ জোব্বা, সফেদ দাঁড়িতে শোভিত বয়ষ্ক মওলানা এতক্ষণ চুপচাপ তজবি জপছিলেন। প্রশ্ন আসতে মুখ খুললেন।
- জামাত হোক। বেরিয়ে আলাপ আলোচনা হবে।
মওলানার কথার পর আর কোন কথা নেই। কি হচ্ছে, আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া বোধহয় গতি নেই।
অন্যদিন মাগরিবের পর মসজিদে আমরা যারা থাকি একটু বসা হয়। আজ সুন্নত পড়েই দানিয়েল ভাই আমাকে আর মওলানা সাহেবদের দলটাকে নিয়ে বেরোল দ্রুত।
- বাবুল ভাই, কি হচ্ছে বলেন তো? বড়সড় দাওয়াত আছে নাকি?
বাবুল ভাই, দানিয়েল ভাইয়ের ভাল বন্ধু। দুজনেই বেশ লেবাসধারী এবং ধার্মিক মনষ্ক। দানিয়েল ভাই দাঁড়িতে একটা পরিষ্কার কাটিং দিয়ে রাখলেও বাবুল ভাই বাড়তে দিয়েছেন, ফলে ঝাড়ুর মত দেখায়। দেখে যাই মনে হোক, উনি একটা আইটি কোম্পানিতে ভাল পদে আছেন।
- আজ খাওয়াদাওয়ার আয়োজন তেমন নেই।
খাওয়াদাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করার কারণ, মাঝে মাঝেই মাদ্রাসায়, ব্যবসায়ের মিলাদে বা কারো বাসা-বাড়িতে দাওয়াত থাকে হুজুরগোছের মানুষের। মওলানা সাহেবের সঙ্গে সেরকম দাওয়াতে আগেও গিয়েছি।
ভাই মাথা নেড়ে বলে আমার হাত ধরলেন। বাবুল ভাই নিশ্চই কিছু বলবেন। হাতের তালুয় তালু চেপে ধরেছেন, হাঁটছি আমরা অন্যদের পিছু পিছু। অন্যদের বলতে মওলানা সাহেব, আর তার সঙ্গে আমার মুখচেনা দুজন পয়ত্রিশ-ছত্রিশ বছর বয়সী লোক।
- যাচ্ছি কোথায় বলুন তো, কমিউনিটির দিকে?
- জ্বি, জ্বি।
ব্যস্ত শহরের এই এলাকায় কয়েকটা গলি আছে বেশ ঠান্ডা। কোয়ার্টার এরিয়া বলে বাড়তি মানুষ কম, কম বয়সী ছেলেমেয়ে বেশি।
সরকারি কোয়ার্টারগুলোর পেছনে দুটো বহুতল বিল্ডিং দানিয়েল ভাইদের কমিউনিটি। ধর্মীয় চেতনাসম্পন্ন লোকজন একসঙ্গে বিল্ডিং দুটিতে ভাড়া থাকছেন বেশ কবছর ধরে। কমিউনিটি ক্রমাগত বড় হচ্ছ।
- হামিদুল ভাই কোন মাসে যেন উঠছেন আমাদের বিল্ডিংয়ে?
বাবুল ভাই জিজ্ঞেস করেন।
- দুমাস পরই উঠছি।
আমি আপাতত এক রুমের বাসা নিয়ে মেসের মত থাকছি মসজিদের কাছে। এপার্টমেন্ট ভাড়া নেয়া হয়েছে দানিয়েল ভাইদের কমিউনিটিতে বাস করার তাগিদে। এতদিন একা একা মুভ করা সম্ভব ছিলনা। এবার গ্রাম থেকে বৌকে নিয়ে আসব পাকা করেছি।
- দানিয়েল কিছু বলেছে ওর বিপদের কথা?
বাবুল ভাই জিজ্ঞেস করে কিছুক্ষণ নীরবতার পর।
- না, কি হয়েছে বলুন তো।
- পারিবারিক ঝামেলা।
- কি, ভাবী রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে নাকি?
একটু মজা করেই বলি।
- তা গেছে, কিন্ত আগে ঝগড়া হয়েছে দুজনের বেশ বড়সড়।
- ওহ, কি নিয়ে?
- বিস্তারিত তো জানিনা। তবে সমস্যা হয়েছে, ঝগড়া ছাড়াছাড়িতে গিয়ে ঠেকেছে। তালাক হয়ে গেছে!
বাবুল ভাই এটুকু বলেই চুপ হয়ে গেলেন।
- আজব মানুষ.. দুজনের না কত মিল-মহব্বত?
আমি অবাক হলাম তালাকের কথা শুনে।
- মহব্বত বেশি হলে তিক্ততাও বেশি হয়। সে যাই হোক, আজ সমাধান করার চেষ্টা চলছে।
- কোথায় যাচ্ছি তাহলে এখন, ভাইয়ের বাসায়?
- দেখি ওনারা কোনদিকে যায়।
আমরা দুজনে আস্তে আস্তে হেঁটে কথা বলতে বলতে পিছিয়ে পড়েছি। সামনে চারজনের দলটা বেশ এগিয়ে গেছে।
আমরা কোয়ার্টার আর কমিউনিটির বিল্ডিংদুটো ছাড়িয়ে আরেকটা গলি ধরে এগোচ্ছি। এদিকে ঢোকার মানে হল মাদ্রাসায় যাচ্ছি।
মওলানা সাহেব পরিচালনার দায়িত্বে আছেন মাদ্রাসাটির। কমিউনিটির বাচ্চাকাচ্চা ছাড়াও সরকারি কোয়ার্টারের লোকজন বাচ্চাদের পড়ায় এখানে।
ইদানিং বাচ্চাদের মাদ্রাসায় পড়ানোর ট্রেন্ড চালু হয়েছে খুব। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার যা-ই বানাক, আগে মাদ্রাসায় পড়িয়ে কোরান-হাদিসের প্রাথমিক পাঠ শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন অবিভাবকরা।
মাদ্রাসার পকেট গেট দিয়ে ঢুকতে গিয়ে ঠান্ডা বাতাসের দমকে পাতলা পাঞ্জাবি পড়া শরীরে কাঁটা দিল। ভেতরে তিন-চারটা লম্বা লম্বা টিনশেড ঘরে পাঠদান চলে। দেখলাম শিশু থেকে কিশোর বয়সী কিছু ছেলে ভেতরে ঘোরাঘোরি করছে। ক্লাসরুমে ক্লাসরুমে জোরে জোরে পড়ার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। রাতের পড়া চলছে পুরোদমে।
সকালে কম বয়সী নাবালিকা মেয়েদেরও পড়ানো হয় এখানে। একটা মহিলা মাদ্রাসার জন্য জমি সংগ্রহে বেশ দৌড়াদৌড়ি করছে মওলানা সাহেব।
আসরের ওয়াক্তে দানিয়েল ভাইকে দেখলাম আমার কাতারে, ডানদিকে। বেশ পেরেশান লাগছিল ওনাকে। খেয়াল করলাম ফরয পড়েই উঠে পড়লেন, বসলেন না।
আমি ইমামের সঙ্গে দোয়া পড়ে আস্তে ধীরে মসজিদের বারান্দায় গিয়ে ভাইকে পেলাম। আনমনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছেন।
- কেমন আছেন ভাই? কোন ঝামেলা হলো নাকি?
দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো, আমার প্রশ্নে সচেতন হলেন।
- হামিদুল, কি খবর তোমার?
- আলহামদুলিল্লাহ। দেখা সাক্ষাৎ নেই, থাকেন কই?
- আর বলোনা, ফ্যামিলি ইস্যু নিয়ে ঝামেলায় আছি।
বলার ধরণে মনে হল বেশ চিন্তিত।
- কি হলো? আপনাদের তো হ্যাপী ফ্যামিলি।
আমি কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করি। দানিয়েল ভাইয়ের বয়স ত্রিশ-বত্রিশ, সুদর্শন। আমার চেয়ে বছর ছয়-সাত বড়। লম্বা চওড়া, মুখে খোঁচা খোঁচা চাপদাঁড়ি। একটা পাবলিকেশন্সে চাকরি করেন। জামাই-বৌয়ের ছোট পরিবার।
- কাজটাজ আছে তোমার আজ কোন?
আমার কথা শুনতে পাননি এমন করে জিজ্ঞেস করে ভাই।
- না, আমার আর কাজ কি। মাগরিবের আগে একটা প্রাইভেট পড়াতে হবে। ...আপনি যান নাই অফিসে?
- যাইনি আজ.. মাগরিবের পর একটু আমার সঙ্গে বেরোতে পারবে?
- পারব তো.. কেউ কিছু বলেছে নাকি?
- হাহাহ... আরে না। কেন?
দানিয়েল ভাই সব সময় দাঁড়ি-টুপিতে থাকেন, সুন্নতী লেবাস থাকে গায়ে। কেউ কোন ঝামেলা করল কিনা ভাবছিলাম।
- মনে হল ভয়ে ভয়ে আছেন।
- একটু দুশ্চিন্তায় আছি, আর কিছুনা। সন্ধ্যায় বের হয়ো আমার সঙ্গে, ইনশাল্লা সমাধান হয়ে যাবে।
প্রাইভেট পড়ানো শেষ করে মাগরিবের সময় মসজিদে এসে দেখি বারান্দায় দানিয়েল ভাই দাঁড়িয়ে। আমাকে দেখে চোখ ঝিলিক দিয়ে উঠল। মনে হলো অপেক্ষা করছিলেন।
ভেতরে ঢুকে ভাই ডেকে নিয়ে গেলেন এক কোণে। কয়েকজন বসে আছে সেখানে।
- আসসালামু আলাইকুম মওলানা সাহেব।
লোকাল মাদ্রাসার পরিচালক আরো তিনজনকে নিয়ে গোল হয়ে বসে আছেন। আমি গিয়ে সালাম জানালাম। সবাই জবাব দিল সালামের।
- কেমন আছেন হামিদুল ভাই?
কাঁচা দাঁড়িঅলা কম বয়সী একজন জিজ্ঞেস করল।
- আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা গোলমিটিংয়ে বসলেন যে নামাজের আগে? দানিয়েল ভাই ধরে নিয়ে এল নাকি?
মজা করে জিজ্ঞেস করি।
- হ্যাঁ, বলতে পারেন। ...মওলানা সাহেব, এখন আলাপ করবেন?
সফেদ জোব্বা, সফেদ দাঁড়িতে শোভিত বয়ষ্ক মওলানা এতক্ষণ চুপচাপ তজবি জপছিলেন। প্রশ্ন আসতে মুখ খুললেন।
- জামাত হোক। বেরিয়ে আলাপ আলোচনা হবে।
মওলানার কথার পর আর কোন কথা নেই। কি হচ্ছে, আমার জানতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া বোধহয় গতি নেই।
অন্যদিন মাগরিবের পর মসজিদে আমরা যারা থাকি একটু বসা হয়। আজ সুন্নত পড়েই দানিয়েল ভাই আমাকে আর মওলানা সাহেবদের দলটাকে নিয়ে বেরোল দ্রুত।
- বাবুল ভাই, কি হচ্ছে বলেন তো? বড়সড় দাওয়াত আছে নাকি?
বাবুল ভাই, দানিয়েল ভাইয়ের ভাল বন্ধু। দুজনেই বেশ লেবাসধারী এবং ধার্মিক মনষ্ক। দানিয়েল ভাই দাঁড়িতে একটা পরিষ্কার কাটিং দিয়ে রাখলেও বাবুল ভাই বাড়তে দিয়েছেন, ফলে ঝাড়ুর মত দেখায়। দেখে যাই মনে হোক, উনি একটা আইটি কোম্পানিতে ভাল পদে আছেন।
- আজ খাওয়াদাওয়ার আয়োজন তেমন নেই।
খাওয়াদাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করার কারণ, মাঝে মাঝেই মাদ্রাসায়, ব্যবসায়ের মিলাদে বা কারো বাসা-বাড়িতে দাওয়াত থাকে হুজুরগোছের মানুষের। মওলানা সাহেবের সঙ্গে সেরকম দাওয়াতে আগেও গিয়েছি।
ভাই মাথা নেড়ে বলে আমার হাত ধরলেন। বাবুল ভাই নিশ্চই কিছু বলবেন। হাতের তালুয় তালু চেপে ধরেছেন, হাঁটছি আমরা অন্যদের পিছু পিছু। অন্যদের বলতে মওলানা সাহেব, আর তার সঙ্গে আমার মুখচেনা দুজন পয়ত্রিশ-ছত্রিশ বছর বয়সী লোক।
- যাচ্ছি কোথায় বলুন তো, কমিউনিটির দিকে?
- জ্বি, জ্বি।
ব্যস্ত শহরের এই এলাকায় কয়েকটা গলি আছে বেশ ঠান্ডা। কোয়ার্টার এরিয়া বলে বাড়তি মানুষ কম, কম বয়সী ছেলেমেয়ে বেশি।
সরকারি কোয়ার্টারগুলোর পেছনে দুটো বহুতল বিল্ডিং দানিয়েল ভাইদের কমিউনিটি। ধর্মীয় চেতনাসম্পন্ন লোকজন একসঙ্গে বিল্ডিং দুটিতে ভাড়া থাকছেন বেশ কবছর ধরে। কমিউনিটি ক্রমাগত বড় হচ্ছ।
- হামিদুল ভাই কোন মাসে যেন উঠছেন আমাদের বিল্ডিংয়ে?
বাবুল ভাই জিজ্ঞেস করেন।
- দুমাস পরই উঠছি।
আমি আপাতত এক রুমের বাসা নিয়ে মেসের মত থাকছি মসজিদের কাছে। এপার্টমেন্ট ভাড়া নেয়া হয়েছে দানিয়েল ভাইদের কমিউনিটিতে বাস করার তাগিদে। এতদিন একা একা মুভ করা সম্ভব ছিলনা। এবার গ্রাম থেকে বৌকে নিয়ে আসব পাকা করেছি।
- দানিয়েল কিছু বলেছে ওর বিপদের কথা?
বাবুল ভাই জিজ্ঞেস করে কিছুক্ষণ নীরবতার পর।
- না, কি হয়েছে বলুন তো।
- পারিবারিক ঝামেলা।
- কি, ভাবী রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে নাকি?
একটু মজা করেই বলি।
- তা গেছে, কিন্ত আগে ঝগড়া হয়েছে দুজনের বেশ বড়সড়।
- ওহ, কি নিয়ে?
- বিস্তারিত তো জানিনা। তবে সমস্যা হয়েছে, ঝগড়া ছাড়াছাড়িতে গিয়ে ঠেকেছে। তালাক হয়ে গেছে!
বাবুল ভাই এটুকু বলেই চুপ হয়ে গেলেন।
- আজব মানুষ.. দুজনের না কত মিল-মহব্বত?
আমি অবাক হলাম তালাকের কথা শুনে।
- মহব্বত বেশি হলে তিক্ততাও বেশি হয়। সে যাই হোক, আজ সমাধান করার চেষ্টা চলছে।
- কোথায় যাচ্ছি তাহলে এখন, ভাইয়ের বাসায়?
- দেখি ওনারা কোনদিকে যায়।
আমরা দুজনে আস্তে আস্তে হেঁটে কথা বলতে বলতে পিছিয়ে পড়েছি। সামনে চারজনের দলটা বেশ এগিয়ে গেছে।
আমরা কোয়ার্টার আর কমিউনিটির বিল্ডিংদুটো ছাড়িয়ে আরেকটা গলি ধরে এগোচ্ছি। এদিকে ঢোকার মানে হল মাদ্রাসায় যাচ্ছি।
মওলানা সাহেব পরিচালনার দায়িত্বে আছেন মাদ্রাসাটির। কমিউনিটির বাচ্চাকাচ্চা ছাড়াও সরকারি কোয়ার্টারের লোকজন বাচ্চাদের পড়ায় এখানে।
ইদানিং বাচ্চাদের মাদ্রাসায় পড়ানোর ট্রেন্ড চালু হয়েছে খুব। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার যা-ই বানাক, আগে মাদ্রাসায় পড়িয়ে কোরান-হাদিসের প্রাথমিক পাঠ শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন অবিভাবকরা।
মাদ্রাসার পকেট গেট দিয়ে ঢুকতে গিয়ে ঠান্ডা বাতাসের দমকে পাতলা পাঞ্জাবি পড়া শরীরে কাঁটা দিল। ভেতরে তিন-চারটা লম্বা লম্বা টিনশেড ঘরে পাঠদান চলে। দেখলাম শিশু থেকে কিশোর বয়সী কিছু ছেলে ভেতরে ঘোরাঘোরি করছে। ক্লাসরুমে ক্লাসরুমে জোরে জোরে পড়ার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। রাতের পড়া চলছে পুরোদমে।
সকালে কম বয়সী নাবালিকা মেয়েদেরও পড়ানো হয় এখানে। একটা মহিলা মাদ্রাসার জন্য জমি সংগ্রহে বেশ দৌড়াদৌড়ি করছে মওলানা সাহেব।