দুয়ারে কড়া নাড়ছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। কার হাতে উঠবে ২১তম বিশ্বকাপ ট্রফি। বিশ্বসেরা হবেন কারা? জ্বলে উঠবেন কোন তারকা। চলছে এমন অনেক হিসাব-নিকাশ। সব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আর মাত্র ১১ দিন পর শুরু হওয়া বিশ^কাপে নজর রাখতে হবে। রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্যবহার হচ্ছে ভিএআর প্রযুক্তি। যার পুরো নাম হলো ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারি। এ ছাড়া আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচে কার্যকর হবে গোললাইন প্রযুক্তি। ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফ্রান্স এবং হন্ডুরাসের মধ্যকার ম্যাচে গোললাইন ব্যবহৃত হয়েছিল। তবে এবার প্রতিটি ম্যাচেই গুরুত্বের সঙ্গে এ প্রযুক্তির প্রয়োগ দেখা যাবে। মাঠের ভেতর ফুটবল ২২ জনের খেলা হলেও বাইরে থেকে কলকাঠি নাড়েন দুজন ব্যক্তি। এ কলকাঠি নাড়ার ওপর নির্ভর করে দলের জয়-পরাজয়। মোদ্দা কথা বিশ্বকাপ জয়ের এই মহারণের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে পরিকল্পনা সবই করেন দলের কোচরা। এমনকি মাঠের নব্বই মিনিটের লড়াইয়েও থাকে তাদের মস্তিষ্ক উৎসারিত নানা পরিকল্পনা ও দ্রুত কৌশল পাল্টানোর খেলা। বিশ্বকাপ মানে নানামুখী সমীকরণ। একজনের সঙ্গে আরেক জনকে জড়িয়ে মুখোমুখি লড়াইয়ের ছক কষা। বিশ্বকাপ মানে ময়দানের লড়াইকে বাইরেও টেনে নিয়ে যাওয়া।
২০১৪ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানির সামনে পঞ্চম শিরোপা জয়ের হাতছানি। ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে ইতালি (১৯৩৪ এবং ১৯৩৮) ও ব্রাজিল (১৯৫৮ এবং ১৯৬২) টানা দুবার শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছে। তৃতীয় দল হিসেবে এবার সে রেকর্ড স্পর্শ করার সুযোগ এসেছে জার্মানির সামনে। ইতালির তিতোরিও কোচ হিসেবে দলকে টানা দুই শিরোপা জিতিয়েছিলেন। জার্মান কোচ জোয়াকিম লোর সামনে দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের হাতছানি। জর্জ সাম্পাওলি আর্জেন্টিনাকে তৃতীয় শিরোপা এনে দিয়ে নাকি আদেনর লিওনার্দো বাচ্চি তিতে ব্রাজিলকে ষষ্ঠ শিরোপা জিতিয়ে নায়ক বনে যাবেন? এ ছাড়া ফার্নান্দো সান্তোস, রবার্তো মার্টিনেজ, জুলান লোপেতেগুই, ভ্লাদিমির প্যাটকোভিক, দিদিয়ের দেশ্যাম, জস প্যাকারম্যান, গ্যারেথ সাউদগেট, ওসকার তাব্রারেজ অ্যাডাম নাওয়ালকাসহ অন্যরাও কলকাঠি নাড়তে বেশ পটু।
তিতে ব্রাজিলের কোচ হওয়ার আগে নেইমার-কুতিনহোরা বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে তখন রীতিমতো ধুঁকছিলেন। তিতের অধীনে সর্বশেষ দুই বছরে ১৯ ম্যাচে মাত্র একটিতে হেরেছে ব্রাজিল। ৪২ গোলের বিপরীতে নিজেদের জালে গোল মাত্র ৫টি। ব্রাজিলের ছন্দময় ফুটবলের সোনালি অতীতটাও যেন ফিরিয়ে আনছেন ৫৫ বছর বয়সী এ কোচ। তার অধীনে প্রথম দল হিসেবে রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকেট লাভ করে ব্রাজিল। ১৯৫৮ সালের পর আবার ইউরোপে হওয়া বিশ্বকাপে ইউরোপের বাইরের দেশ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে এবার এগিয়ে রয়েছে ব্রাজিল।
আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হেড কোচ জর্জ সাম্পাওলি ১৯৬৩ সালের ১৩ মার্চ আর্জেন্টিনার সান্তাফি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। সাম্পাওলি ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিন্তু ইনজুরিতে পড়ার পর খেলা ছেড়ে দেন। এরপর কোচের পেশায় যুক্ত হন। ২০০২ সালে তিনি প্রফেশনাল কোচের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ক্লাবের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। আর্জেন্টিনা ছাড়াও চিলির হেড কোচের দায়িত্ব পালন করেন সাম্পাওলি। ২০১২-২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি চিলির হয়ে কাজ করেন। এরপর সেভিয়ার সঙ্গে যুক্ত হন। সেভিয়াতে এক বছর কাটানোর পর নিজ দেশ আর্জেন্টিনার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। তার নেতৃত্বে আর মাঠে তার শিষ্য মেসির নেতৃত্বে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা অর্জন করতে আশাবাদী সাম্পাওলি।
ফ্রান্স জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার দিদিয়ের দেশ্যাম বর্তমানে সেদেশের ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশ্যাম ১৯৬৮ সালের ১৫ আগস্ট ফ্রান্সের বায়োন্নে শহরে জন্মগ্রহণ করেন। মাতৃভ‚মির ক্লাব বায়োন্নের হয়ে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয়। ফ্রান্স দলে তিনি মধ্য মাঠে খেলতেন। ২০১২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে ফ্রান্সের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
ইংল্যান্ড ফুটবল দলের সাবেক মিডফিল্ডার গ্যারেথ সাউদগেট যুক্তরাজ্যের ওয়াটফোর্ড শহরে ১৯৭০ সালের ৩ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে মাঠে প্রতিনিধিত্ব করেন। ইংলিশ ফুটবলারদের কোচ হিসেবে ২০১৬ সালে নিযুক্ত হন।
ফার্নান্দো সান্তোস বর্তমানে পর্তুগাল জাতীয় দলের কোচের দায়িত্বে আছেন। তার দল পর্তুগাল বর্তমানে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ৩ নম্বরে অবস্থান করছে। স্বদেশ পর্তুগালের সঙ্গে চুক্তি করেন ২০১৪ সালে। এ পর্যন্ত স্বদেশের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন সান্তোস। অনেকেই আশা করছেন রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড ক্রিশ্চিয়ানোর হাত ধরে শিরোপার দেখা পাবে ফার্নান্দো সান্তোস।
স্পেন দলের কোচের দায়িত্ব পালন করছেন স্পেন দলের সাবেক গোলকিপার জুলান লোপেতেগুই। কোচ জীবনে দীর্ঘদিন স্পেনের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে কাজ করেছেন। এরপর ২০১৬ সালে স্পেন জাতীয় দলের হয়ে কাজ করার সুযোগ পান। জুলান লোপেতেগুইয়ের হাত ধরে রাশিয়া বিশ্বকাপ জিতে দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন হতে চায় সার্জিও রামোসরা।
জস প্যাকারম্যান কলম্বিয়ার কোচ হওয়ার আগে ২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে কাজ করেছেন। জেমস রদ্রিগেজেদের সঙ্গে ২০১২ সাল থেকে কাজ করছেন।
উরুগুয়ে জাতীয় দলের কোচ ওসকার তাব্রেজ ১৯৪৭ সালের ৩ মার্চ উরুগুয়ের মন্টেভিডিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ^কাপে চতুর্থ স্থান হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে দুবারের চ্যাম্পিয়নরা। যে কোচ কলকাঠি নাড়তে কম ভুল করবেন তার দলই শিরোপা জয়ে সক্ষম হবে।