শিরোনামটির অর্থ হল- একটা সহজ সরল সত্যকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে মানুষের সামনে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করা যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয় এবং ভুল বার্তা গ্রহণ করে।
সাধারণ মানুষকে *বোকা* বানানো যে কত সহজ, তা পরীক্ষামূলক ভাবে প্রমাণ করেন নাথান জোহনার।
ছাত্রাবস্থায় তিনি তাঁর সহপাঠীদের সামনে একটা সায়েন্স প্রজেক্টের উপস্থাপনা করেন।
বিষয় ছিল দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত কোন বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধ করার দাবী।
রাসায়নিকটার নাম হল ডাইহাইড্রোজেন মনোক্সাইড (dihydrogen monoxide)
তাঁর পুরো বক্তৃতায় তিনি সম্পুর্ণ সঠিক বৈজ্ঞানিক যুক্তি সাজিয়ে ব্যাখ্যা করলেন, কেন এই রাসায়নিকের ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করা উচিৎ।
তিনি বললেন যে ডাইহাইড্রোজেন মনোক্সাইড -
১. গ্যাসীয় অবস্থায় ভয়ংকর ভাবে চামড়া পুড়িয়ে দিতে পারে।
২. ধাতুর ক্ষয় ও মরচে সৃষ্টি করে।
৩. প্রতি বছর অগণিত মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়।
৪. টিউমার, ফোড়া ও এসিড রেইনের মধ্যে রাসায়নিকটা পাওয়া যায়।
৫. অধিক পেটে গেলে বারে বারে প্রস্রাব ও উদরপীড়া হয়।
৬. তিনি এও বলেন যে তুমি যদি রাসায়নিকটার ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাও আর বেশ কিছুদিন রাসায়নিকটাকে বর্জন করে থাকো তাহলে তোমার মৃত্যুও হতে পারে।
বক্তৃতা শেষে তিনি সহপাঠীদের জিজ্ঞাসা করেন, "এবার বলো তোমরা কে কে এই রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধ হওয়া উচিৎ বলে মনে করো? "
দেখা যায় পঞ্চাশ জনের মধ্যে তেতাল্লিশ জনই হাত তোলে।
( বাকীটা পড়ার আগে এই ব্যাপারে নিজের মতামত তৈরী করুন )
এতক্ষণে অনেকেই নিশ্চয়ই রাসায়নিকটাকে চিনে ফেলেছেন।
হ্যাঁ, ওটা মোটেই বিষাক্ত বা সাংঘাতিক কোন রাসায়নিক নয়। 'ডাইহাইড্রোজেন মনোক্সাইড' হল আসলে আমাদের অতি পরিচিত 'জল'।
মজার ব্যাপার হল, জোহনার কিন্তু একটা কথাও মিথ্যে বলেন নি। বরং তাঁর প্রত্যেকটা কথাই ছিল ১০০% খাঁটি বৈজ্ঞানিক সত্য।
জল ফুটে যে বাষ্প বা স্টীম হয় তা সত্যিই চামড়া পোড়াতে পারে।
লোহার মরচে আর অন্য ধাতুর ক্ষয় জল আর বাতাসের অক্সিজেন দিয়েই হয়।
বন্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়।
টিউমার, ফোড়া ইত্যাদিতে জল তো থাকবেই! রক্ত, প্লাজমা, লসিকা ইত্যাদি যে কোন দেহরসেরই তো জল প্রধান উপাদান।
এসিড রেইন মানে তো জল থাকবেই।
বেশি খেলে বারে বারে প্রস্রাব আর পেটে ব্যথাও হবে।
আর কে না জানে জলের ওপর আমরা সবাই নির্ভরশীল। বেশি দিন জল ছাড়া কেউ বাঁচে নাকি?
তাহলে দেখুন, এই সহজ সত্যিগুলোকেই জোহনার এমনভাবে উপস্থাপন করলেন যে সবার মনে হল, জল একটা মারাত্মক বিষাক্ত রাসায়নিক।
তবে জোহনার শুধু পরীক্ষামূলক ভাবেই এই বক্তৃতাটি দিয়েছিলেন।
তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন *বিজ্ঞান না জানা সাধারণ মানুষের* সামনে যদি কোন বৈজ্ঞানিক বিষয়কে *ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে* বলা হয়, তাহলে তাদের মনে বিষয় টা সম্পর্কে সম্পুর্ণ ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করে দেয়।
দেখবেন, প্রায়শই এরকম শিরোনামে খবর আসে -
১. পৃথিবীর দিকে তীব্র গতিতে ধেয়ে আসছে বিশালাকার গ্রহাণু।
২. ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের সম্ভাবনা ; প্রলয় কি তবে আসন্ন?
৩. আগামী দশকেই ধ্বংস হবে পৃথিবী : শুনুন কি বলছেন বিজ্ঞানীরা।
এগুলো সবই একধরনের জোহনারিজম। বলাই বাহুল্য TRP বাড়ানোর জন্য। টেকনিকালি বা লিগালি ভুল বলা যাবে না, কিন্তু *মিসলিডিং*। আর এথিকালি / নৈতিকভাবে সঠিক নয়, কারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায়।
সাম্প্রতিক খবরগুলোর অধিকাংশই *উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জোহনারিজম* । তলিয়ে ভাবতে না জানা সাধারণ মানুষকে মুর্গী বানানো।
আর পরিসংখ্যান দিয়ে যে কোন্ লেভেলের জোহনারিজম করা সম্ভব, তা অঙ্ক না জানা সাধারণ মানুষ কল্পনাই করতে পারবে না।
একটা খুব সহজ উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি।
ধরা যাক কোন একদিনে পথ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা হল একশো। পরের দিন হল পঞ্চাশ জন।
এখন এই পরিসংখ্যান টা একজন সংবাদ পরিবেশক দু ভাবে উপস্থাপন করতে পারে।
১. গতকাল একশো জনের মৃত্যুর পর, আজও পথদুর্ঘটনায় পঞ্চাশ জনের মৃত্যু হয়েছে।
২. ট্রাফিক পুলিশদের বিশেষ সতর্কতায় আজ পথদুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে।
দুটো খবরই কিন্তু ১০০% সঠিক।
অথচ সাধারণ মানুষের মনে সম্পুর্ণ বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।
(সংগৃহীত)
সাধারণ মানুষকে *বোকা* বানানো যে কত সহজ, তা পরীক্ষামূলক ভাবে প্রমাণ করেন নাথান জোহনার।
ছাত্রাবস্থায় তিনি তাঁর সহপাঠীদের সামনে একটা সায়েন্স প্রজেক্টের উপস্থাপনা করেন।
বিষয় ছিল দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত কোন বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধ করার দাবী।
রাসায়নিকটার নাম হল ডাইহাইড্রোজেন মনোক্সাইড (dihydrogen monoxide)
তাঁর পুরো বক্তৃতায় তিনি সম্পুর্ণ সঠিক বৈজ্ঞানিক যুক্তি সাজিয়ে ব্যাখ্যা করলেন, কেন এই রাসায়নিকের ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করা উচিৎ।
তিনি বললেন যে ডাইহাইড্রোজেন মনোক্সাইড -
১. গ্যাসীয় অবস্থায় ভয়ংকর ভাবে চামড়া পুড়িয়ে দিতে পারে।
২. ধাতুর ক্ষয় ও মরচে সৃষ্টি করে।
৩. প্রতি বছর অগণিত মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়।
৪. টিউমার, ফোড়া ও এসিড রেইনের মধ্যে রাসায়নিকটা পাওয়া যায়।
৫. অধিক পেটে গেলে বারে বারে প্রস্রাব ও উদরপীড়া হয়।
৬. তিনি এও বলেন যে তুমি যদি রাসায়নিকটার ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাও আর বেশ কিছুদিন রাসায়নিকটাকে বর্জন করে থাকো তাহলে তোমার মৃত্যুও হতে পারে।
বক্তৃতা শেষে তিনি সহপাঠীদের জিজ্ঞাসা করেন, "এবার বলো তোমরা কে কে এই রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধ হওয়া উচিৎ বলে মনে করো? "
দেখা যায় পঞ্চাশ জনের মধ্যে তেতাল্লিশ জনই হাত তোলে।
( বাকীটা পড়ার আগে এই ব্যাপারে নিজের মতামত তৈরী করুন )
এতক্ষণে অনেকেই নিশ্চয়ই রাসায়নিকটাকে চিনে ফেলেছেন।
হ্যাঁ, ওটা মোটেই বিষাক্ত বা সাংঘাতিক কোন রাসায়নিক নয়। 'ডাইহাইড্রোজেন মনোক্সাইড' হল আসলে আমাদের অতি পরিচিত 'জল'।
মজার ব্যাপার হল, জোহনার কিন্তু একটা কথাও মিথ্যে বলেন নি। বরং তাঁর প্রত্যেকটা কথাই ছিল ১০০% খাঁটি বৈজ্ঞানিক সত্য।
জল ফুটে যে বাষ্প বা স্টীম হয় তা সত্যিই চামড়া পোড়াতে পারে।
লোহার মরচে আর অন্য ধাতুর ক্ষয় জল আর বাতাসের অক্সিজেন দিয়েই হয়।
বন্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়।
টিউমার, ফোড়া ইত্যাদিতে জল তো থাকবেই! রক্ত, প্লাজমা, লসিকা ইত্যাদি যে কোন দেহরসেরই তো জল প্রধান উপাদান।
এসিড রেইন মানে তো জল থাকবেই।
বেশি খেলে বারে বারে প্রস্রাব আর পেটে ব্যথাও হবে।
আর কে না জানে জলের ওপর আমরা সবাই নির্ভরশীল। বেশি দিন জল ছাড়া কেউ বাঁচে নাকি?
তাহলে দেখুন, এই সহজ সত্যিগুলোকেই জোহনার এমনভাবে উপস্থাপন করলেন যে সবার মনে হল, জল একটা মারাত্মক বিষাক্ত রাসায়নিক।
তবে জোহনার শুধু পরীক্ষামূলক ভাবেই এই বক্তৃতাটি দিয়েছিলেন।
তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন *বিজ্ঞান না জানা সাধারণ মানুষের* সামনে যদি কোন বৈজ্ঞানিক বিষয়কে *ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে* বলা হয়, তাহলে তাদের মনে বিষয় টা সম্পর্কে সম্পুর্ণ ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করে দেয়।
দেখবেন, প্রায়শই এরকম শিরোনামে খবর আসে -
১. পৃথিবীর দিকে তীব্র গতিতে ধেয়ে আসছে বিশালাকার গ্রহাণু।
২. ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের সম্ভাবনা ; প্রলয় কি তবে আসন্ন?
৩. আগামী দশকেই ধ্বংস হবে পৃথিবী : শুনুন কি বলছেন বিজ্ঞানীরা।
এগুলো সবই একধরনের জোহনারিজম। বলাই বাহুল্য TRP বাড়ানোর জন্য। টেকনিকালি বা লিগালি ভুল বলা যাবে না, কিন্তু *মিসলিডিং*। আর এথিকালি / নৈতিকভাবে সঠিক নয়, কারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায়।
সাম্প্রতিক খবরগুলোর অধিকাংশই *উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জোহনারিজম* । তলিয়ে ভাবতে না জানা সাধারণ মানুষকে মুর্গী বানানো।
আর পরিসংখ্যান দিয়ে যে কোন্ লেভেলের জোহনারিজম করা সম্ভব, তা অঙ্ক না জানা সাধারণ মানুষ কল্পনাই করতে পারবে না।
একটা খুব সহজ উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি।
ধরা যাক কোন একদিনে পথ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা হল একশো। পরের দিন হল পঞ্চাশ জন।
এখন এই পরিসংখ্যান টা একজন সংবাদ পরিবেশক দু ভাবে উপস্থাপন করতে পারে।
১. গতকাল একশো জনের মৃত্যুর পর, আজও পথদুর্ঘটনায় পঞ্চাশ জনের মৃত্যু হয়েছে।
২. ট্রাফিক পুলিশদের বিশেষ সতর্কতায় আজ পথদুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে।
দুটো খবরই কিন্তু ১০০% সঠিক।
অথচ সাধারণ মানুষের মনে সম্পুর্ণ বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।
(সংগৃহীত)