ব্লু অরিজিনের নিউ শেপার্ড নামের নভোযানে মহাকাশে যাবেন বেজোস, রয়টার্স
মনে করুন, ১১ মিনিটের যাত্রায় আপনি মহাকাশে যাবেন। তা-ও বেশি দূরে নয়, ভূমি থেকে ১০০ কিলোমিটারের কিছু ওপরে। নভোযানের একটি আসনের জন্য আপনি কত টাকা খরচ করতে রাজি আছেন?
ওহ, আরেকটি বিষয়, সে যাত্রায় সঙ্গে থাকবেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস।
গতকাল শনিবার আয়োজিত নিলামে এমন আসনের জন্য এক ব্যক্তি ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার খরচ করতে রাজি হয়েছেন।
জেফ বেজোসের রকেট ইঞ্জিন তৈরির প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিন আগামী ২০ জুলাই মানুষ নিয়ে প্রথমবারের মতো মহাকাশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছে। প্রথম সে যাত্রায় অংশ নিচ্ছেন জেফ বেজোস স্বয়ং, সঙ্গে থাকছেন তাঁর ছোট ভাই মার্ক বেজোস।
পাশাপাশি, নিউ শেপার্ড নামের নভোযানের একটি খালি আসনে যাত্রী নির্বাচনের জন্য গত মাসে নিলামের আয়োজন করা হয়। তিন পর্বের নিলাম শেষ হয় গতকাল শনিবার। আয়োজনটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয় অনলাইনে।
সে সময় ব্লু অরিজিনের বিক্রয় পরিচালক আরিয়েন কর্নেল বলেন, ১৫৯টি দেশ থেকে ৭ হাজার ৬০০ মানুষ নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেন। নিলামটি পরিচালনা করে বোস্টনভিত্তিক আরআর অকশন। নিলামে বিজয়ীর নাম অবশ্য প্রকাশ করা হয়নি।
অ্যাপোলো ১১ অভিযানে চাঁদে মানুষের পদার্পণের ৫২তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আগামী ২০ জুলাই দক্ষিণ টেক্সাসের ব্লু অরিজিনের নিজস্ব রকেট উড্ডয়নকেন্দ্র থেকে নিউ শেপার্ড উড্ডয়নের কথা আছে।
২০০০ সালে ব্লু অরিজিন প্রতিষ্ঠা করেন জেফ বেজোস। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে ৬০ ফুট উঁচু নিউ শেপার্ড রকেট নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা চালিয়ে আসছে। ২০১৫ থেকে মোট ১৫ বার পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন করলেও সেগুলোতে মানুষ ছিল না।
রকেট ইঞ্জিন তৈরি দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ব্লু অরিজিনের মূল লক্ষ্য হলো সাধারণ মানুষের কাছে মহাকাশ ভ্রমণের টিকিট বিক্রি। ভ্রমণে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের ভূমি থেকে উড্ডয়ন করে ১০০ কিলোমিটার ওপরে কারমান লাইনের আশপাশ থেকে ঘুরিয়ে আনা হবে।
নিউ শেপার্ডের উড্ডয়ন ও অবতরণ সম্পর্কে ধারণা পাবেন নিচের ভিডিওতে।
মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখার সৌভাগ্যের পাশাপাশি মিনিট কয়েকের ভরশূন্যতার অভিজ্ঞতা নিয়ে মাটিতে ফিরে আসবেন তাঁরা।
কারমান লাইনকে মহাকাশের সীমানা ধরা হয়। অর্থাৎ সেখান থেকে মহাকাশের শুরু।
নিউ শেপার্ডের আসন নিলাম থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্লু অরিজিনের ‘ক্লাব ফর দ্য ফিউচার’ ফাউন্ডেশনে দান করা হবে বলে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে লেখা আছে। এ তহবিল ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতে আগ্রহী করে তুলতে ব্যয় করা হবে।
ব্লু অরিজিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ভার্জিন গ্যালাকটিক এ পর্যন্ত প্রতিটি দুই থেকে আড়াই লাখ ডলারে প্রায় ৬০০টি মহাকাশ ভ্রমণের টিকিট বিক্রি করেছে। সেদিক থেকে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি মনে হতে পারে। অবশ্য ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের পরিকল্পনায় যে মহাকাশ ভ্রমণ রয়েছে, তা থেকে আবার বেশ কম।
নিউ শেপার্ড যেভাবে ভূমি থেকে উড্ডয়ন করে ভূমিতে ফিরে আসবে, ব্লু অরিজিন
আর ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার খরচ করতে না চাইলে রোলার কোস্টারে চড়তে পারেন।
স্পেসএক্সের পরিকল্পনা হলো, মানুষ নিয়ে কয়েক দিন ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা। সে পরিকল্পনায় এমনকি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকার কথাও আছে। সে যাত্রায় প্রতি আসনের জন্য খরচ কত হবে তা জানা যায়নি, তবে সরকারি এক নথি অনুযায়ী মহাকাশ স্টেশনে থাকার খরচ ছাড়াই আসনপ্রতি ৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার খরচ পড়তে পারে।
স্পেসএক্সের যাত্রার ধরনের সঙ্গে ব্লু অরিজিনের তফাত রাত–দিনের। নিউ শেপার্ড শব্দের তিন গুণ গতিতে উড্ডয়ন করবে, ঘণ্টায় প্রায় ২ হাজার ৩০০ মাইল বেগে। সরাসরি উলম্বভাবে উড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
একপর্যায়ে রকেটের জ্বালানি ফুরিয়ে এলে ক্রু ক্যাপসুল মূল রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কারমান লাইন পেরিয়ে যাবে। সেখানে ভরশূন্যতার অভিজ্ঞতা পাবেন নভোচারীরা। এরপর ফিরতি পথে ছুটে যাবে পৃথিবীর পানে। প্যারাসুটের সাহায্যে ক্যাপসুলটি নিরাপদে মাটিতে নেমে আসার কথা রয়েছে।
প্যারাসুটের সাহায্যে যাত্রীবাহী ক্যাপসুলটি নিরাপদে মাটিতে নেমে আসার কথা রয়েছে। ছবিটি নিউ শেপার্ডের পুরোনো পরীক্ষামূলক অভিযানের, ব্লু অরিজিন
আর ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার খরচ করতে না চাইলে রোলার কোস্টারে চড়তে পারেন। যেগুলো অনেক উঁচুতে উঠে কয়েক সেকেন্ড স্থির থেকে মধ্যাকর্ষের টানে মাটির দিকে ধেয়ে যায়। তাতে মহাকাশ ভ্রমণের স্বাদ মিটবে না ঠিক, তবে নিউ শেপার্ডের উড্ডয়ন ও অবতরণ সম্পর্কে ধারণা মিলবে। অবশ্য সে যাত্রায় জেফ বেজোসকেও পাশে পাবেন না।