শিল্পীর কোনো সীমারেখা নেই। শিল্পের টানে শিল্পী ছুটে চলেন এক দেশ থেকে অন্য দেশে আর সীমানা ছাড়িয়ে সুবাস ছড়ান নিজের দেশের। শিল্প আর শিল্পীর সঙ্গে দেশের নাম উচ্চারিত হয় গর্বের সঙ্গে। শিল্পীরাও নিজের দেশের চেতনাকে ধারণ করেই উজাড় করে মেলে ধরেন সিনেমায়। জায়গা করে নেন দর্শকের মনে। ভিনদেশে দর্শকচাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার প্রযোজক-পরিচালকেরা তারকাদের পেছনে অর্থলগ্নি করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
‘জয়া খুব সংবেদনশীল শিল্পী। অনেক যত্ন করে, ভাবনাচিন্তা করে, হোমওয়ার্ক করে একটা চরিত্রকে রূপ দেয়।’ - অতনু ঘোষ
জয়া আহসান, ফেসবুক
অতনু ঘোষ জয়া আহসানকে নিয়ে বানিয়েছেন ‘রবিবার’। এই ছবির হাত ধরেই স্পেনের মাদ্রিদ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশের জয়া আহসান। ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহেও মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। এই পরিচালক প্রথম আলোকে বললেন, ‘এ দেশের মানুষের কাছে চাহিদা আছে বলেই বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীরা কাজ করছেন। এখানকার ছবিতে বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীরা বড় পর্দায় দুর্দান্ত কিছু চরিত্র করে দর্শকদের মনে স্থান করে নিয়েছেন। অভিনয়গুণের পাশাপাশি দর্শকচাহিদার কারণে এ দেশের প্রযোজক ও পরিচালকেরা তাঁদের কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন।’ জয়া সম্পর্কে এই পরিচালক বলেন, ‘জয়া খুব সংবেদনশীল শিল্পী। অনেক যত্ন করে, ভাবনাচিন্তা করে, হোমওয়ার্ক করে একটা চরিত্রকে রূপ দেয়।’
রবিবার ছবির ট্রেলার প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর ক্যামেরায় এভাবেই ধরা দিয়েছিলেন প্রসেনজিৎ ও জয়া
আট বছর ধরে ভারতের চলচ্চিত্রে কাজ করছেন জয়া আহসান। সেখানে তাঁর প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবি ‘আবর্ত’। ‘রাজকাহিনি’, ‘কণ্ঠ’, ‘ভালোবাসার শহর’, ‘বিজয়া’, ‘বিসর্জন’সহ যেসব ছবি মুক্তি পেয়েছে, সব কটিই প্রশংসিত হয়েছে। কলকাতায় জয়ার জনপ্রিয়তা, সিনেমায় তাঁর চাহিদা সেখানকার যেকোনো অভিনেত্রীর জন্য ঈর্ষণীয়। যদিও জয়ার কাছে সফলতা কেবলই এক গন্তব্য। সবাইকে ছাপিয়ে একা হাঁটা নয়, বরং সবাইকে জড়িয়ে থাকা। তাই তো তিনি সফল নন, তিনি স্বার্থক। ওপার বাংলা, এপার বাংলা—দুই বাংলায়ই স্বার্থক।
‘শিল্পে সফলতা বলে কোনো বিষয়ই নেই। সফলতা একটা গন্তব্য। শিল্পে তো কোনো তৈরি হওয়া পথ বা রাস্তা থাকে না। তাহলে সেই পথের কোনো গন্তব্যও নেই। এখানে যেটা আছে, সেটা হলো অবিরাম পথচলা।’ - জয়া আহসান
জয়া আহসান, ফেসবুক
বিষয়টা ব্যাখ্যা করে বললেন, ‘শিল্পে সফলতা বলে কোনো বিষয়ই নেই। সফলতা একটা গন্তব্য। শিল্পে তো কোনো তৈরি হওয়া পথ বা রাস্তা থাকে না। তাহলে সেই পথের কোনো গন্তব্যও নেই। এখানে যেটা আছে, সেটা হলো অবিরাম পথচলা। সফলতা হলো একার। সবাইকে পেছনে ফেলে একাই এগিয়ে যাওয়া। মানে একাই সবকিছু নিয়ে নেওয়া। সার্থকতার অনুভূতি হলো সবাইকে জড়িয়ে থাকো। এর মধ্যেই শান্তি। আমি যে অভিনয়ে এসেছি, এর মস্ত বড় একটা কারণ হলো আমি এর মাধ্যমে মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পাই। নিজের মধ্যে গভীর প্রশান্তি পাই। যার সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় নেই, একটা নিঃস্বার্থ ভালোবাসা তেমন মানুষের কাছ থেকে পাচ্ছি। এটা একটা অসাধারণ ব্যাপার। একটা ছোট্ট মানবজীবনে আর কতটাই–বা পাওয়ার থাকতে পারে।’
জয়া আহসান, ইনস্টাগ্রাম
এই মুহূর্তে সেখানে যেসব পরিচালক ও প্রযোজক ভালো কাজ করছেন, তাঁদের আস্থার শিল্পী তিনি। শিল্প আর শিল্পীকে বাংলাদেশ আর ভারতের সীমারেখা দিয়ে না টেনে জয়া বললেন, ‘শিল্পীর কোনো সীমারেখা নেই। বাইরের একটা দেশে তত দিন কাজ করা যায়, যত দিন ওই দেশের দর্শকেরা সেই শিল্পীকে গ্রহণ করেন। সেখানকার দর্শক আমাকে ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন। এর চেয়ে বড় পাওয়া হয় না। ভারতের ফিল্ম ফ্যাটার্নিটির কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাঁরা আমাকে যেভাবে উপস্থাপন করেন, আরেক দেশ থেকে এসেছি, এটা কখনোই বুঝতে দেন না। এটা আসলে অর্জনও করতে হয়। আর শিল্প মানেই তো কোথাও আটকে না থেকে অবিরাম ছুটে চলা।’
‘কণ্ঠ’ ছবিতে অভিনয় করেছেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও জয়া আহসান, সংগৃহীত
‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবিটি দিয়ে প্রথম আলোচনায় আসেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। একটা সময় তো এমনও হয়েছিল, বাংলাদেশের চেয়ে বেশির ভাগ সময় ফেরদৌসকে কলকাতায় থাকতে হয়। ভারতীয় বাংলা ছবিতে ফেরদৌসের জনপ্রিয়তা তাঁকে বলিউড পর্যন্ত নিয়ে যায়। ‘মিট্টি’ নামের একটি হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেন এই অভিনয়শিল্পী। ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার আগপর্যন্ত নিয়মিত বাংলাদেশ ও ভারতের ছবিতে কাজ করে গেছেন ফেরদৌস।
নাচ নিয়ে মঞ্চে চিত্রনায়ক ফেরদৌস
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পীরা যে ভারতেও জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন, তা ফেসবুক ও ইউটিউবের মন্তব্যের ঘরে ঢুঁ মারলেই টের পাওয়া যায়। ভারতের ছবিতে অভিনয় করে একসময় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠেন ববিতার মতো বরেণ্য অভিনয়শিল্পীও। একটা সময় অভিনয় করেছেন রাজ্জাক, শাবানা, আলমগীর, রোজিনা, অঞ্জু ঘোষের মতো তারকারা। আজকের জয়া আহসান, শাকিব খান, মোশাররফ করিমেরা তাঁদেরই উত্তরসূরি।