What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

জন্মদিনে সমাধির গল্প - কার্ল মার্ক্স স্মরণ (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,653
Messages
117,045
Credits
1,241,450
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের পরিব্রাজন অন্যতর অর্থবহ। দর্শনের আনন্দ রূপান্তরিত হয় শ্রদ্ধার উপচারে। কার্ল মার্ক্সের সমাধি দর্শনের অনিন্দ্য অভিজ্ঞতা অতএব হয়েছে তাঁর জন্মদিনের শ্রদ্ধার্ঘ্য।

TxgUw4c.jpg


আজ ৫ মে। কালজয়ী জার্মান দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ, সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী কার্ল মার্ক্সের জন্মদিন। সম্পূর্ণ নাম কার্ল হাইনরিশ মার্ক্স। জার্মানির প্রুশিয়ায় জন্মেছেন ১৮১৮ সালের আজকের দিনে। পৃথিবীর সেরা চিন্তানায়কদের একজন। কার্ল মার্ক্স বেঁচে থাকলে আজ তাঁর বয়স হতো ২০৩ বছর। মার্ক্সবাদীদের পিতা কার্ল মার্ক্স; ‘দ্য কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’র জনক; তাঁর কমিউনিস্ট ইশতেহারের বয়স ১৭৩ বছর। যদিও রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পরিচয়ে এই মানুষটি জার্মান ছিলেন, তবে একসময় রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট সীমানা ছাড়িয়ে তিনি গোটা বিশ্ব নাগরিক হয়ে ওঠেন।

K3TQaLz.jpg


কার্ল মার্ক্সের সমাধিতে লেখক

২০১৮ সালে ইংল্যান্ড যাওয়ার পরই গুগল নিয়ে বসলাম লন্ডনে কার্ল মার্ক্সের সমাধির আদ্যোপান্ত জানতে। গুগল বলল যেতে হবে হাইগেট সিমেট্রি। ‘ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন’ ওয়েবসাইটটিতে ঢুকে কীভাবে ট্রেনে হাইগেট সিমেট্রি পর্যন্ত যাওয়া যাবে, তার একটা ধারণা নিলাম। সে মোতাবেক সকালেই বেরিয়ে পড়লাম। হাইগেট কবরস্থানের নিকটতম পাতালরেলস্টেশনে নেমে হাতের বাঁয়ে রাস্তা ধরে হাঁটছি। হাইগেট সিমেট্রি সেখান থেকে খানিক উঁচুতে। রাস্তা ক্রমশ ওপরের দিকে যাচ্ছে। সম্পূর্ণ কবরস্থান এলাকাটিই আশপাশ থেকে খানিকটা উঁচুতে।

হাইগেট সিমেট্রি ইংল্যান্ডের উত্তর লন্ডনে অবস্থিত। ৫৩ হাজার কবর আছে এতে; এ পর্যন্ত সমাধিস্থ করা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার মৃতদেহ। এটিকে একটি ঐতিহাসিক পার্ক এবং একটি প্রসিদ্ধ উদ্যানও বলা যেতে পারে। লন্ডনের সেরা এবং বৃহৎ সাতটি সমাধিক্ষেত্রের মধ্যে এটি একটি। পূর্ব-পশ্চিম দুটো অংশ আছে । কার্ল মার্ক্স ঘুমিয়ে আছেন পূর্ব অংশে। সমাধিস্থলের সম্মুখেই একটি টিকিট কাউন্টার। ঠিক কত পাউন্ড নিল টিকিট, মনে করতে পারছি না, তবে খুব বেশি নয়। টিকিটের সঙ্গে দুটো ব্রশিউর ধরিয়ে দিল। আমার লক্ষ্য স্থির এবং একটাই—কার্ল মার্ক্সের কবরটি দেখা।

2YTNHdc.jpg


হাইগেট সিমেট্রির ভেতরে

চারদিক নীরব-নিস্তব্ধ। পর্যটকের সংখ্যা স্বল্প। আমাদের নিশ্বাস আর বাতাস ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। এ যেন আমাদের সদ্য প্রয়াত শঙ্খ ঘোষের কবিতা ‘...চুপ করো, শব্দহীন হও…’। কবরস্থানেরও যে বিশেষ স্থাপত্যশৈলী থাকে, এখানে না এলে সে নান্দনিকতা সম্পর্কে আমার অজানা থেকে যেত। একেকটি কবর একেক ধরনের। অনেক কবরের ওপরেই ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। কার্ল মার্ক্সের ভাস্কর্যটিই আকারের দিক থেকে সর্ববৃহৎ। কবরটি বেশ ভেতরের দিকে। একটি ব্রোঞ্জের আবক্ষমূর্তি। পাথরের একটি উঁচু স্তম্ভের ওপর স্থাপিত হয়েছে। ভাস্কর্যের পাদদেশে বেশ কিছু ফুল, বুঝতে বাকি নেই এগুলো মার্ক্সের অনুসারী বা ভক্তদের প্রণাম।

ভাস্কর্যের সামনে লেখা কমিউনিস্ট ইশতেহারের শেষ আহ্বান, যা বাংলা করলে দাঁড়ায়: ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’। ভাস্কর্যের সামনের নিচের অংশে লেখা: ‘The philosophers have only interpreted the world in various ways. The point however is to change it.’ এটি মূলত কার্ল মার্ক্সের ১১তম থিসিস বা অভিসন্দর্ভের (‘ফয়েরবাখ’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ) এঙ্গেলীয় সংস্করণের বিখ্যাত উক্তি। তিনি বলতে চেয়েছেন, দার্শনিকেরা কেবল বিভিন্ন সময় পৃথিবীটাকে ব্যাখ্যা করেছেন, আসল কাজ হলো এটিকে বদলানো।

t1SuIGY.jpg


ভাস্কর্যটির গড়েন লরেন্স ব্র্যাডশ

ভাস্কর্যটির গড়েন লরেন্স ব্র্যাডশ। একটি অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে এঙ্গেলসসহ ১১ জন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন মার্ক্সের শেষকৃত্যে। কার্ল মার্ক্সের মৃত্যু সম্পর্কে বন্ধু এঙ্গেলস লেখেন: ‘১৪ মার্চ বেলা পৌনে তিনটায় জীবিতদের মাঝে সেরা চিন্তাবিদ তাঁর চিন্তার পরিসমাপ্তি ঘটান। মাত্র দুই মিনিটের জন্য আমরা তাঁকে রেখে বাইরে গিয়েছিলাম, ফিরে এসে তাঁকে তাঁর আর্মচেয়ারে বসা অবস্থায় পেলাম, তিনি ততক্ষণে শান্তিতে নিদ্রায় গিয়েছেন—চিরদিনের জন্য।’

আমার পাশে একজন চৈনিক পর্যটক ছিলেন, কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন, দেখলাম দাঁড়িয়ে স্যালুট জানালেন। আলাপ হলো তাঁর সঙ্গে। কার্ল মার্ক্সকে প্রথম সমাহিত করা হয়েছিল ১৭ মার্চ, ১৮৮৩ সালে তাঁর স্ত্রীর কবরে। পরে ব্রিটিশ কমিউনিস্ট পার্টির সহায়তায় কবরটিকে বর্তমানের দৃষ্টিনন্দন স্থানে স্থানান্তর করা হয়। দুর্ভাগ্য আমাদের, ১৯৭০ সালে বোমা নিক্ষেপের মাধ্যমে এই সমাধিটি ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

jrT80ro.jpg


হাইগেট সিমেট্রিতে অন্তিম ঠিকানা হয়েছে অসংখ্য মানুষের, ছবি: উইকিপিডিয়া

সমাজ ও পুঁজিবাদ সম্পর্কে কার্ল মার্ক্সের যে তত্ত্ব, তা এখনো এ পৃথিবীর মৌলিক আলোচনাগুলোর একটি। পুঁজিবাদের এক কট্টর সমালোচক ছিলেন এই পণ্ডিত। পুঁজিপতি ও শ্রমিকশ্রেণির মধ্যকার দ্বন্দ্ব, বৈষম্য তাঁর প্রধান আলোচনার বিষয় ছিল। মার্ক্স বিশ্বাস করতেন, সমাজব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে শ্রেণিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে। এই শ্রেণিসংগ্রাম সংঘটিত হয় মূলত শাসকশ্রেণি আর শ্রমজীবী শ্রেণির মধ্যে। শাসকশ্রেণি বলতে তিনি রাষ্ট্র এবং কারখানার নিয়ন্ত্রকদের বুঝিয়েছেন। শ্রমজীবী শ্রেণি বলতে বুঝিয়েছেন যারা ন্যূনতম মজুরিতে শ্রম বিক্রি করে পুঁজিপতিদের কারখানায়। মার্ক্স বলতে চেয়েছেন, উৎপাদন ব্যবস্থায় শ্রমিকশ্রেণি যে মূল্য সৃষ্টি করে, তার কিঞ্চিৎমাত্র মজুরি হিসেবে গ্রহণ করে। তিনি মনে করেন, বিদ্যমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে শ্রমিকশ্রেণির সশস্ত্র বিপ্লব অপরিহার্য।

তিনি বিশ্বাস করতেন আধুনিক পুঁজিবাদ একটি স্বার্থপর বিষয়, আধুনিক পেশাজীবন একটি নিরাপত্তাহীন জীবন। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় শ্রমের মূল্য অতি নগণ্য, পুঁজিপতিদের লভ্যাংশ শ্রমিকের মজুরি থেকে বহু বেশি। শ্রমজীবীদের একটি দরিদ্রের চক্রের মধ্যে রাখাই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মূল কাজ; শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি হরণ করা, তাদের দমিয়ে রাখা, তাদের অধিকার আদায়কে রহিত করা পুঁজিপতিদের প্রধান ব্রত বলে মনে করতেন তিনি।

NJhmBkK.jpg


হাইগেট সিমেট্রির ভেতরে এভাবে রয়েছে সারি সারি সমাধি, ছবি: উইপিডিয়া

বৈচিত্র্যময় ছিল তাঁর ব্যক্তিজীবন। বন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। কথিত আছে, সে সময় দেনার দায়ে তাঁকে হাজতবাস করতে হয়েছে। নাট্যসমালোচক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। একসময় পিতা বিরক্ত হয়ে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তী সময়ে তিনি একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দেন, নাম তার কমিউনিস্ট পার্টি। কমিউনিস্ট পার্টিতে তিনি এক গোপন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন। সে সময় জেনি ভনের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন; তাঁকে বিয়ে করেন ১৮৪৩ সালে। বিয়ের পরপরই ১৮৪৩ সালে মার্ক্স ফ্রান্সে যান একটি পত্রিকা প্রকাশের জন্য। শহরটি তখন জার্মান, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও আরও দেশের বিপ্লবীদের প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। ১৮৪৪ সালে এঙ্গেলস প্যারিসে আসেন, তখন থেকেই তাঁদের গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে; তাঁরা দুজন সমাজতন্ত্রের তত্ত্ব রচনায় আত্মনিয়োগ করেন; এই দুজন সৃষ্টি করলেন বস্তুবাদের তত্ত্ব, শ্রেণিসংগ্রামের তত্ত্ব—কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার।

১৮৪৫ সলে মার্ক্সকে প্যারিস থেকে নির্বাসিত করা হয় প্রুশিয়ান সরকারের চাপে। কারণ হিসেবে দেখানো হয়, মার্ক্স একজন বিপজ্জনক বিপ্লবী। তিনি এরপর ব্রাসেলসে চলে যান। ১৮৪৮ সালে ইউরোপব্যাপী বেশ কিছু বিপ্লব সংঘটিত হয়। কার্ল মার্ক্স সে সময় বন্দী হন এবং সে বছরই বেলজিয়াম থেকে নির্বাসিত হন। এবার বিপ্লবীদের সহায়তায় ফ্রান্সের রাজার আমন্ত্রণেই তিনি আবার অবস্থান নেন প্যারিসে। সে সময় ফ্রান্সে জুন ডেইস আপরাইজিং নামে একটি বিপ্লব সংঘটিত হয়। এরপর ১৮৪৯ সালে জার্মানির কোলনে ফিরে আসেন কিন্তু জার্মানি থেকেও তাঁকে নির্বাসিত করা হয়।

cbbKJXC.jpg


এমন অসংখ্য স্থাপনা ও ভাষ্কর্য আছে সেখানে

এরপর আবার প্যারিসে, অতঃপর সেখান থেকে আবার নির্বাসিত হয়ে লন্ডনে। সে সময় লন্ডন তাঁকে গ্রহণ করে একজন ইউরোপীয় শরণার্থী হিসেবে। প্রতিটি নির্বাসন ছিল রাজনৈতিক নির্বাসন। তাঁকে চরম আর্থিক দৈন্যে জীবন কাটাতে হয়েছে। এ সময় এঙ্গেলস নিঃস্বার্থভাবে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করতেন। মার্ক্স ছিলেন একজন দক্ষ নেতা ও অগ্রসর বিপ্লবী। বিপ্লব সংঘটিত করার লক্ষে তিনি বারবার শ্রমিকশ্রেণিকে সংঘটিত করার কাজে ব্রতী ছিলেন।

যদি কেউ লন্ডন ভ্রমণে যান এবং যদি তাঁর ইতিহাস, দর্শন, ঐতিহ্য, স্থাপত্য বিষয়ে দুর্বলতা থাকে, তবে তিনি একবার সাক্ষাৎ করতে পারেন এই ইতিহাসবেত্তা, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক ও মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব মার্ক্সকে। আমার কৈশোরের মার্ক্স ! অমর মার্ক্স!

লেখক: মহুয়া রউফ | গবেষক ও পরিব্রাজক এবং সদস্য, বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন
 
তথ্য সমৃদ্ধ লেখা, অনেক জানা হলো এই দার্শনিক সম্পর্কে।
 
কার্ল মার্কস এক বিরাট ব্যক্তিত্ব, সে যাই বলুন না কেন!
 
আপনার সৌজন্যে ছবির মাধ্যমে হলেও মার্ক্সের সমাধি দেখা হল। তথ্য বহুল পোস্ট। ধন্যবাদ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top