What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০১ : বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি (1 Viewer)

Joined
Aug 2, 2018
Threads
244
Messages
21,963
Credits
140,759
Guitar
Statue Of Liberty
Helicopter
Television
Laptop Computer
Lollipop
Baliapara-Jomidar-Bari-0-11.jpg

বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি / বাইল্যাপাড়া জমিদার বাড়ি
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন। সেই সমস্ত ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে একটি বিশেষ অবস্থান দখল করে আছে জমিদার বাড়িগুলি। এই জমিদার বাড়িগুলি বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ সহ ভারত উপমহাদেশে মুঘল ও ব্রিটিশ শাসনামলে জমিদারি প্রথা চালু ছিল। মুঘলামলে ছিলো "জায়গীরদারি" প্রথা। ব্রিটিশ শাসনামলে জমিদারী প্রথা চালু হয়। তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিশ "চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত" নামে ১৭৯৩ সালে জায়গিরদারি প্রথা বিলুপ্ত করে জমিদারী প্রথা চালু করেন। জমিদারী প্রথা চালু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল পুরো ভারতবর্ষ থেকে সহজে সরকারি খাজনা আদায় করা।

সেই সময় যারা ব্রিটিশদের কাছ থেকে জমিদারী ক্রয় করেন তারা জমিদার হিসেবে পরিচিত হন। জমিদাররা তাদের জমিদারীর কাজ দেখাশোনা ও বসবাসের জন্য যে প্রাসাদ বা বাড়ি তৈরি করতেন সেটিকে জমিদার বাড়ি বলা হয়। জমিদাররা ছিলেন অনেক ধন-সম্পদের মালিক। তাই তাদের বাড়িগুলো অপূর্ব কারুকাজ ও বেশ বড়সড়ো করে তৈরি করতে। সেগুলিছিলো দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয়।

নানান যায়গায় বেড়াবার সময় বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট-বড় নানান ধরনের রাজবাড়ি, জমিদার বাড়ি, নবাব বাড়ি, পোদ্দার বাড়ি, বনিক বাড়ি, বাবুর বাড়ি, ঠাকুর বাড়ি, কুঠি বাড়ি, কাচারি বাড়ি, চৌধুরী বাড়ি সহ শত-শত পুরনো বাড়ি ঘর দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। আমার দেখা সেই সমস্ত বাড়িগুলি আমি একে একে শেয়ার করবো।

 
বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি / বাইল্যাপাড়া জমিদার বাড়ি
Baliapara-Jomidar-Bari-0-12.jpg


বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মণদি ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামের মূল সড়কের ঠিক উত্তর পাশে অবস্থিত। গ্রামের নামেই জমিদার বাড়িটির পরিচিতি। তবে স্থানীয় লোকজন আঞ্চলিক টোনে বাইল্যাপাড়া জমিদার বাড়ি বলে।

বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়িটির ইতিহাস শত বছরের পুরনো। এই বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মুকুন্দ মুরালী। যতদূর জানা যায় ১৯০০ সালের আগে মুকুন্দ মুরালী প্রথম জীবনে জমিদার কিশোরী পোদ্দারের খাজাঞ্চি (খাজনা আদায়কারী) ছিলেন। পরে তিনি ঢাকা- নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবসা শুরু করেন। একসময় তিনি একজন সফল ধনী ব্যবসায়ী হয়ে উঠেন। পরবর্তীতে মুকুন্দ মুরালী ব্রিটিশদের কাছ থেকে জমিদারী কিনেন।

ধারনা করা হয় ১৯০০ শতকের দিকে জমিদার মুকুন্দ মুরালী এই বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন। ঐতিহ্যবাহী এই জমিদার বাড়িটিন অনুপম স্থাপত্যশৈলীর চোখে লেগে থাকার মতো। জমিদার বাড়িটির বেশ বড় একটি যায়গা জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে ছিলো। সামনের মূল তিন তলা এল প্যাটার্ণের বাড়িটির পিছনে আরো একটি দোতালা ভবন ছিলো।

জমিদার মুকুন্দ মুরালী ছিলেন খুবই ভালো মানুষ ও প্রজাবৎসল জমিদার। অন্যান্য জমিদারদের মত তিনি প্রজাদের অত্যাচার নিপীড়ন করতেন না। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পরপরই মুকুন্দ মুরালীর জমিদারীর সমাপ্তি ঘটে। তিনি তার জমিদারীর সকল সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে স্বপরিবারে ভারতে চলে যান। কিন্তু তার এক মেয়েকে নারায়ণগঞ্জে বিয়ে দেওয়ার কারণে বালিয়াপাড়ার জমিদারবাড়িটি তিনি বিক্রি করেননি। জানা যায় ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত মুকুন্দ মুরালী ও তার পরিবাবের লোকজন মাঝে মধ্যে বালিয়াপাড়ায় এসে এই বাড়িটিতে থাকতেন।

১৯৬৫ সালের পরে এক প্রচন্ড ঘুর্নিঝড়ে বালিয়াপাড়া হাইস্কুলটির টিনসেড ঘর ভেঙ্গে গেলে এলাকাবাসী জমিদার মুকুন্দ মুরালী কাছে স্কুলটি চালু করার জন্য অনুরোধ করলে মুকুন্দ মুরালী জমিদার বাড়িটিতেই স্কুল চালু করার প্রস্তাব দেন। ১৯৬৬ সালে জমিদার মুকুন্দ মুরালী পাঁচ হাজার টাকা দলিল মূলে বালিয়াপাড়া হাইস্কুল পরিচালনা কমিটির কাছে জমিদার বাড়িটি লীজ প্রদান করেন। বর্তমাণে বাড়িটি কাদের আন্ডারে আছে আমার জানা নেই। তবে জমিদারদের কেউ এখানে থাকে না এটি নিশ্চিত।

বর্তমাণে বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়ি অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে। মূল বাড়ির অনেকটাই এখন ধ্বংসের মুখে। অনেকটা অংশ শ্যাওলায় ঢাকা পড়েছে, দালানের গায়ে গজিয়েছে বট-পাকুরের ঝোপ। বেশ কয়েক বছর আগে ভূমিকম্পে মূল দালানের বাম পাশের দোতলার ছাদ ভেঙে পড়ে। তখন থেকে এটি পরিত্যক্ত হয়ে এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পরেছে। বাড়ির বাম দিকের অংশ এবং পিছনের অংশে নানা ধরনের গাছ-গাছালি ঝোপ-ঝাড়ে প্রায় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। ঐতিহ্যের স্মৃতি বুকে নিয়ে লাল ইট ও চুন সুরকির মিশ্রণে তৈরি বাড়িটি এখনো কালের স্বাক্ষী হয়ে কোনো রকমর টিকে আছে সত্যি তবে এখনই সংরক্ষণ করতে না পারলে আর কয়েক বছর পরে হয়তো বিশাল এই জমিদার বাড়িটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top