অনেকেই বলে থাকেন, আমার তো এটা-ওটা খাওয়া নিষেধ, কারণ ইউরিক অ্যাসিড বেশি। ইউরিক অ্যাসিড আসলে কী, কেন বাড়ে আর বাড়লে কী করণীয়—তা জেনে-বুঝে নেওয়াই ভালো।
রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়লে তাকে হাইপারইউরিসেমিয়া বলা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই বাড়তি ইউরিক অ্যাসিড বড় ধরনের কোনো ক্ষতি বা সমস্যা করে না আর সামান্য বাড়লে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। এর কোনো চিকিৎসারও প্রয়োজন নেই। তবে অল্প কিছু ক্ষেত্রে এই বাড়তি ইউরিক অ্যাসিড গাউট বা গেঁটে বাত, কিডনির সমস্যা বা কিডনির পাথরের জন্য দায়ী হতে পারে এবং তখন এর চিকিৎসা দরকার হয়। তবে ইউরিক অ্যাসিডের চিকিৎসা ও ডায়েট নিয়ে অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে।
ইউরিক অ্যাসিড কেন বাড়ে
আমাদের শরীরে যে ইউরিক অ্যাসিড আছে, তার এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদিত হয় আমিষজাতীয় খাবার থেকে আর দুই–তৃতীয়াংশই কিন্তু কোষের নানা বিপাক ক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়। কোনো কারণে যদি কিডনি ইউরিক অ্যাসিড নিষ্কাশন না করতে পারে বা ইউরিক অ্যাসিড বিপাকের এনজাইমে ঘাটতি থাকে, কিংবা অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হতে থাকে, তবে তা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হতে পারে। আবার কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে।
বাড়লে কী হয়
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইউরিক অ্যাসিড বাড়তি থাকার কারণে কোনো উপসর্গ বা সমস্যা হয় না। তবে দীর্ঘদিন রক্তে দ্রবীভূত ইউরিক অ্যাসিড মাত্রাতিরিক্ত থাকলে তা সন্ধির মধ্যে স্ফটিক (ক্রিস্টাল) হিসেবে জমা হয় আর সন্ধিতে প্রদাহ তৈরি করতে পারে। ফলে হঠাৎ করে সন্ধিটা লাল হয়ে ফুলে উঠতে পারে বা ব্যথা করতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে এই গাউট বা গেঁটে বাত সন্ধির স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে, কিডনিতে সমস্যা বা পাথর সৃষ্টি করতে পারে।
গাউট বা গেঁটে বাতে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি হঠাৎ লাল হয়ে ফুলে যায় ও ব্যথা করতে থাকে। সাধারণত ভোররাতে শুরু হয়ে ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টায় ব্যথাটা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে আবার কমে যায়। মনে রাখবেন, শরীরের গিরায় গিরায় ব্যথা, সারা শরীর ব্যথা বা কামড়ানো ইত্যাদি ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার লক্ষণ নয়।
যা করবেন
যাঁদের ইউরিক অ্যাসিড বেশি, তবে কোনো সন্ধি প্রদাহ বা কিডনি সমস্যা নেই, তাঁরা এ নিয়ে বেশি আতঙ্কিত হবেন না। বারবার রক্ত পরীক্ষা করা বা অকারণ ওষুধ সেবনেরও দরকার নেই। স্থূল বা মোটা মানুষদের ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকে, তাই ওজন কমালে উপকার পাওয়া যায়।
খাবারদাবার নিয়ে বাড়াবাড়ি নিয়ন্ত্রণেরও দরকার নেই। তবে অতিরিক্ত পিউরিন জাতের খাবার, যেমন লাল মাংস, কলিজা, কিছু সামুদ্রিক মাছ, বিয়ার বা অ্যালকোহল সেবন এড়িয়ে চলুন। নানা রকমের শাকসবজি, ডাল, শিম বা বীজজাতীয় খাবার, ডিম, মুরগি ইত্যাদি খেতে বাঁধা নেই।
ভিটামিন সি–যুক্ত খাবার আর ওমেগা ৩ চর্বি কিছু উপকারে আসে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ইউরিক অ্যাসিড কমানোর জন্য ওষুধ সব সময় প্রয়োজন হয় না। বিশেষ করে অ্যাকিউট অ্যাটাক বা হঠাৎ সন্ধি প্রদাহের সময় ওষুধ দেওয়া হয় না। আবার দীর্ঘ মেয়াদে এসব ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। তাই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ না করে ওষুধ শুরু করা, কমানো–বাড়ানো বা বন্ধ করতে যাবেন না। আদর্শ ওজন বজায় রাখুন আর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।
* অধ্যাপক ডা. রওশন আরা, মেডিসিন ও বাতরোগ বিশেষজ্ঞ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা