মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া রাষ্ট্র ইসরায়েল তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিভিন্ন কারণে আলোচিত সমালোচিত হয়ে আসছে। উগ্র জায়নবাদী এই রাষ্ট্র মূলত চারদিকে নিন্দিত হয়ে আসছে তার প্যালেস্টাইন নীতির কারণে। দিনের পর দিন অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করে ফিলিস্তিনিদের এক ধরণের একঘরে করে রেখেছে তারা। এছাড়া সময়ে সময়ে নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের হত্যা নির্যাতন চালিয়েই যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের ক্যান্সার খ্যাত এ দেশটি৷ কাউকে পরোয়া না করে তার পশ্চিমা বন্ধুদের মদদে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। আর এ কাজে তারা সৃষ্টি করে চলেছে অনেক লজ্জাজনক কাজও। ইসরায়েল এর অন্ধকার এমন কিছু দিকগুলোই তুলে ধরা হবে এই লেখায়।
মোসাদের গুপ্তহত্যা
Source: Veterans Today
ইসরায়েল রাষ্ট্রটির নাম নিলেই অবধারিতভাবে চলে আসবে দেশটির প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের নাম। এই গ্রুপটি দেশে বিদেশে প্রচুর গুপ্তহত্যার কাজে জড়িত। বিভিন্ন সময়ে সুকৌশলে ভিনদেশে গিয়ে শিকারকে হত্যা করতে ওস্তাদ মোসাদের গোয়েন্দারা। কখনো বিষপান করিয়ে, কখনো আকস্মিক গুলি কখনোবা নারী দিয়ে ফাঁসিয়ে গুপ্তহত্যা করে থাকে তারা। গত বছরের এপ্রিলে ফিলিস্তিনের রকেট বিজ্ঞানী ও হামাসের সদস্য মোহাম্মদ আল বাতাশকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মোসাদের গোয়েন্দারা গুলি করে হত্যা করে৷ এভাবে দেশে দেশে মোসাদ অভিনব কায়দায় নিজেদের মিশন পরিচালনা করে থাকে।
গাজায় পুনঃপুন সামরিক হামলা
Source: Common Dreams
২০০৪ সাল থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল এর সেনারা প্রকাশ্য, গোপনে সম্ভব অসম্ভব সকল ধরণের হামলা চালানো শুরু করে। ২০০৮ সালে হামাসকে শায়েস্তা করার নামে গাজায় বেসামরিক জনগণের উপর অভিযানে নামে ইসরায়েল। ২০০৯ সালে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ক্ষমতায় আসার পর আরো বিধ্বংসী সব পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেন। এর পর থেকে গাজা উপত্যকায় নানান ছুতোয় জলে স্থলে হামলা হতে থাকে৷ ২০১৪ সালের ৮ জুলাই হামাসের রকেট হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজায় বৃহৎ পরিসরে আক্রমণ শুরু করে। প্রায় দুইমাসের কাছাকাছি চলা এ যুদ্ধে প্রায় লক্ষাধিক বেসামরিক নারী ও শিশু নিহত হয়। প্রায় প্রতিবছরই বিভিন্ন কারণে গাজায় হামলা করে বেসামরিক মানুষ নিহত করছে উগ্র জায়নবাদী এই রাষ্ট্রটি।
সাদ্দাম হোসাইনকে হত্যাচেষ্টার তথ্য ফাঁস!
ইসরায়েল যাদের শত্রু মনে করে তাদের গ্রেফতার কিংবা কোন মহলে অভিযোগ জানানোর চেয়ে নিজেরাই হত্যা করা সমীচীন বলে মনে করে৷ আর এ কাজ সম্পাদনে রয়েছে মোসাদের সুপ্রশিক্ষিত খুনির দল। ১৯৭০ সালে ইরাকের স্বাধীনতাকামী কুর্দিদের সমর্থন দেয় ইসরাইল। ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে নিজেদের সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করত তারা। আর এজন্য মোসাদের একটি ঘাতক দল সাদ্দাম হোসেনকে হত্যা করতে বিস্ফোরকধারী একটি বইয়ের সাহায্য নেয়। কিন্তু সেই তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।
দেইর ইয়াসিন গণহত্যা
১৯৪৮ সালের এপ্রিলে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাসখানেক আগে জায়নবাদী সন্ত্রাসী দলের দুই সদস্য ইরগুন এবং লেহি প্যালেস্টাইনের দেইর ইয়াসিন গ্রামে রাতের আধারে এক হত্যাকাণ্ড চালায়। মহিলা ও শিশুসহ সেই হামলায় প্রায় ১০০-১৫০ প্যালেস্টানিয়ান নিহত হয়। এছাড়া আরো ৮০ জন নিহতের কোন হদিস পাওয়া যায়নি।
মার্চেডাই ভান্নুকে গ্রেফতার!
১৯৫৪ সালে মরক্কোয় জন্ম নেয়া মার্চেডাই ভান্নু ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার। আশির দশকে টেকনিশিয়ান হিসেবে ইসরায়েলের পরমাণু কর্মসূচিতে তার চাকরি হয়। নামে পরমাণু কর্মসূচি হলেও ইসরায়েল আসলে এগিয়ে চলেছিল মানব বিধ্বংসী পরমাণু অস্ত্র বিনির্মাণে। মার্চেডাই ভান্নুর এ কাজ পছন্দ হল না। তিনি ইসরায়েলের প্রতি যথেষ্ট অনুগত না এই দোহাই দিয়ে ১৯৮৫ সালে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই বছর লেবার ইউনিয়নের সুপারিশে চাকরি ফিরে পেয়ে এক সাহসী কাণ্ড ঘটান ভান্নু। গোপণে ধারণ করেন পরমাণু কর্মসূচির গোপন পঞ্চাশের অধিক ছবি। ফিলিস্তিনদের প্রতি অনুরাগী এমন অভিযোগ তোলে তাকে আবার চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তিনি চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। ইহুদি থেকে গ্রহণ করেন খ্রিস্টধর্ম। অস্ট্রেলিয়ায় থাকাকালে ভান্নুর সাথে পরিচয় হয় ওসাকা গুইরিরো নামের এক কলম্বিয়ান সাংবাদিকের। তিনি এ সাংবাদিকের সাথে চুক্তিতে আসেন। প্রায় ৮ কোটি টাকার বিনিময়ে গোপন ছবিগুলো বিক্রি করে দেন ভান্নু। ১৯৮৬ সালের ৫ অক্টোবর সানডে টাইমস পত্রিকায় ছাপা হয় ইসরায়েলের পরমাণু কর্মসূচির ৫৭ ছবি। পুরো বিশ্বের চোখের সামনে চলে আসে ইসরায়েল এর দুরভিসন্ধি। ভান্নু তখন লন্ডনে। ভান্নুকে ধরতে মোসাদের জোর তৎপরতা শুরু হয়। কিন্তু কূটনৈতিক কারণে লন্ডন থেকে গ্রেফতার না করতে পেরে অভিনব কায়দার আশ্রয় নেয় ইহুদি রাষ্ট্রের এই প্রশিক্ষিত গোয়েন্দা দল। ভান্নুর পেছনে লেলিয়ে দেয়া হয় সিন্ডি নামের এক সুন্দরী তরুণীকে। সিন্ডির প্রেমের ফাঁদে পড়ে ইতালি বেড়াতে যান ভান্নু। ইতালির সমুদ্রবন্দরে তখন অপেক্ষা করছিল মোসাদের জাহাজ। গ্রেফতার করা হয় ভান্নুকে। ১৮ বছর সাজার পর ২০০৪ সালে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি মেলে তার।