What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ইসলামের আলোকে স্বাধীনতার তাৎপর্য (1 Viewer)

aO1d5ER.jpg


মানুষ মনোজগতে সব সময় স্বাধীন। তাই সে বস্তুজগতেও স্বাধীন থাকা পছন্দ করে। মানুষ আল্লাহ ছাড়া কারও গোলামি করবে না, কারও দাসত্ব করবে না। এক আল্লাহর প্রভুত্ব ছাড়া কারও প্রভুত্ব স্বীকার করবে না, কোনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করবে না। ইসলামের পরিভাষায় এটাই স্বাধীনতা।

ইসলামের প্রথম বাক্য কালিমা তাইয়েবা তথা পবিত্র বাণীতে স্বাধীনতার ঘোষণাই দেওয়া হয়েছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ অর্থাৎ ‘এক আল্লাহ ছাড়া আর কোনো প্রভু নাই, হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল।’ এ ঘোষণার পর মানুষ মানব-দানব সব ধরনের প্রভুর গোলামি থেকে মুক্ত হয়ে যায় এবং সে আদর্শ হিসেবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে বরণ করে। এই কালিমা দ্বারা মানুষ সব সৃষ্টির পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ করে।

ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যা ও ন্যায়-অন্যায় বোঝার জন্য আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান দিয়েছেন। চিন্তা ও কাজের স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং কর্ম অনুযায়ী পরকালে মানুষের বিচার হবে। কর্মফল অনুসারে জান্নাত বা জাহান্নামের অধিকারী হবে। তাই আল্লাহ এই জগতে মানুষকে চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতা দিয়েছেন। এমনকি ধর্ম-কর্ম বিষয়েও বাধ্য করা হয়নি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইসলামে জবরদস্তি নাই, সত্যাসত্য সুস্পষ্ট পার্থক্য হয়ে গেছে। যারা অশুভ শক্তিকে অস্বীকার করে মহান আল্লাহর প্রতি ইমান আনল; তারা মজবুত হাতল দৃঢ়ভাবে ধারণ করল, যা কখনো ভাঙার নয়; আল্লাহ সর্বশ্রোতা মহাজ্ঞানী।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৫৬)।

স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি কি তাকে তার জন্য দুটি চক্ষু সৃষ্টি করিনি? আর জিহ্বা ও অধরদ্বয়? সে তো বন্ধুর গিরিপথে প্রবেশ করেনি! তুমি কি জানো বন্ধুর গিরিপথ কী? এ হচ্ছে দাসমুক্তি অথবা দুর্ভিক্ষ দিনে আহার্য দান; এতিম আত্মীয়কে অথবা নিঃস্বকে। অতঃপর সে বিশ্বাসী মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং যারা পরস্পরে উপদেশ দেয় ধৈর্যধারণের ও দয়া-দাক্ষিণ্যের। এরাই সৌভাগ্যশালী। আর যারা আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছে, তারাই হতভাগ্য। তারা পরিবেষ্টিত হবে অবরুদ্ধ অগ্নিতে।’ (সুরা-৯০ বালাদ, আয়াত: ৮-২০)।

কর্মফল লাভের জন্য স্বাধীনতা। আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘তাকে পরীক্ষা করার জন্য, আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। আমি তাকে পথনির্দেশ দিয়েছি, হয়তো সে কৃতজ্ঞ হবে, নয়তো সে অকৃতজ্ঞ হবে।’ (সুরা-৭৬ দাহার, আয়াত: ২-৩)। ‘নিশ্চয়ই যারা ইমান আনবে ও সৎকর্ম করবে, তারাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য পুরস্কার হিসেবে রয়েছে স্থায়ী জান্নাত; যার নিম্নদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়, সেথায় তারা চিরস্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। এটি তার জন্য যে তার প্রতিপালককে সমীহ করে।’ (সুরা-৯৮ বাইয়্যিনাহ, আয়াত: ৭-৮)।

স্বাধীনতা যেমন মানুষের অধিকার, তেমনি ইসলামের মূল শিক্ষা। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) দাসদের মুক্ত করেই ক্ষান্ত হননি; তিনি দাসকে সন্তান বানিয়েছেন, তিনি ক্রীতদাসকে ভাইয়ের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন, তিনি গোলামকে সেনা অধিনায়ক বানিয়েছেন। বংশানুক্রমিক দাসানুদাস হাবশি বিল্লাল (রা.)–কে মসজিদে নববীর প্রধান মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। মানুষকে স্বাধীন করে তার মানবিক পূর্ণ মর্যাদা ও অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছেন।

ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে অনেকে পরিবারে ও সমাজে এমন কাজ করে, যা অন্যদের অস্বস্তি ও বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মনে রাখতে হবে, ব্যক্তিগত বিষয় ততক্ষণ ব্যক্তিগত থাকে, যতক্ষণ এর সঙ্গে কারও পছন্দ-অপছন্দ যোগ না হয়। মানুষ সামাজিক জীব হওয়ার কারণে তার জীবনের ব্যক্তিগত পরিসর খুবই সীমিত।

জগতের সব মানুষ ভাই ভাই, তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। বর্ণবৈষম্য, ভাষাবৈষম্য এবং ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিক পার্থক্য মানুষে মানুষে কোনো প্রভেদ তৈরি করে না। বিদায় হজের ভাষণে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কালোর ওপর সাদার প্রাধান্য নেই, অনারবের ওপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই।’ (ইবনে কাসির)।

স্বাধীনতা মানে কল্যাণের স্বাধীনতা, অন্যায় অপরাধের স্বাধীনতা নয়। স্বাধীনতা মানে মননশীলতা ও মুক্তচিন্তা; কিন্তু স্বাধীনতা মানে অন্যের ওপর নিজের মত জবরদস্তি চাপিয়ে দেওয়া নয়। স্বাধীনতা মানে সত্য, সুন্দর ও সৃজনশীলতার প্রচার–প্রসার এবং মঙ্গল পথে যাত্রা; স্বাধীনতা মানে কারও পথরোধ করা নয়। স্বাধীনতা মানে সহানুভূতিশীল হওয়া; স্বেচ্ছাচারিতা নয়। সবার স্বাধীনতা অন্যদের স্বাধীনতার চৌহদ্দি সীমানায় বেষ্টিত। তাই স্বাধীনতা সীমাহীন নয়; স্বাধীনতা স্বীয় সীমারেখায় সসীম।

* মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top