What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected ইনস্টাগ্রাম - প্রেমের গল্প (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,653
Messages
117,045
Credits
1,241,450
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
MJL9xXc.png


‘আমার সঙ্গে একটা সিনেমা দেখবা?’

ঘুম থেকে উঠে দেখি সংগীতা টেক্সট করেছে। সকালে উঠে আমার এক গ্লাস পানি খাওয়ার অভ্যাস। তারপরের কাজ হলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁত ব্রাশ করা। ১৮ তলা থেকে হাতিরঝিল খুব সুন্দর দেখায়। সাতসকালে নিসর্গ না দেখলে আমার ঘুম কাটে না। আজ কী মনে করে ফোনটা হাতে তুলে নিয়েছি। নইলে অসময়ে সংগীতার টেক্সট চোখে পড়ত না। বিষণ্নতার মেঘ মাথায় বয়ে, পা টেনে টেনে বাথরুমে ঢুকলাম।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে ব্রাশ করতে করতে সংগীতার কথা ভাবছিলাম। সে আমার ছয় বছরের গার্লফ্রেন্ড। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় পরিচয়। ওর গান করার শখ, আমার গিটার বাজানোর। বাদ্যযন্ত্রের মূর্ছনার সঙ্গে কখন যে কণ্ঠের কারুকাজ মিশে গিয়েছিল, টেরও পাইনি। খুব প্রেম করেছিলাম তারপর। জানাশোনার কমতি যত দিন ছিল, তত দিন আমরা ডুবে গিয়েছিলাম প্রেমের অতলে। গ্লোরিয়া জিন্সে কাপের পর কাপ কফি খেয়ে, দৃক গ্যালারির করিডরে দিনের পর দিন হেঁটে দুজনের যোগসূত্র খুঁজেছিলাম। বান্দরবানের উঁচু-নিচু ট্রেইলে ট্রেকিং করে, নিঝুম দ্বীপে ক্যাম্পিং করে, জল-জোছনায় গানে-গল্পে মাতোয়ারা হয়ে কখন যে চার বছর কেটে গিয়েছিল, টেরও পাইনি।

ঝামেলা শুরু হলো পঞ্চম বছরে। তত দিনে আমার এমবিএ শেষ হয়েছে। একটা বহুজাতিক বিজ্ঞাপনী সংস্থায় চাকরি পেয়েছি। হাতের অবারিত সময় আস্তে আস্তে কমতে শুরু করল। অন্যদিকে সংগীতা তখনো পাপাস প্রিন্সেস। হোম স্টুডিওতে গান রেকর্ড করে সাউন্ডক্লাউড বা স্পটিফাইয়ে আপলোড করা ছাড়া তেমন কোনো কাজ নেই। হ্যাঁ, আরেকটা কাজ ছিল। ইনস্টাগ্রামে নানা রকম ডেয়ারে পার্টিসিপেট করত সংগীতা। সেবার ওর বার্থডেতে আমাদের নেপালে যাওয়ার কথা ছিল। লাস্ট রিসোর্টের ১৬০ মিটার উঁচু ব্রিজ থেকে বাঞ্জি জাম্প করার কথা ছিল। কিন্তু অফিসে হুট করে একটা বড়সড় ক্লায়েন্টের কাজ এসে পড়ায় আমি নেপাল যেতে পারলাম না। সংগীতা খুব কষ্ট পেয়েছিল। সেবারই প্রথম আমাদের পোর্সেলিনের মতো নিটোল সম্পর্কে চিড় ধরে। আমি মাফটাফ চেয়েও জোড়া লাগাতে পারিনি।

আমার জীবনে তখন প্রথমবারের মতো ক্যারিয়ারের স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে। একের পর এক বিজ্ঞাপন লিখছি। মগজে গিজ গিজ করা আইডিয়াগুলো বিজ্ঞাপনের ঝলমলে মঞ্চে চিত্রায়িত হচ্ছে। চিয়ারলিডারের মতো মুগ্ধ বস দিনরাত আমার পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন। তখন আমার ভীষণ সুসময়।

নেশা সংগীতার জীবনেও এসেছিল। তখন সে আক্ষরিক অর্থেই ড্রাগসের পাল্লায় পড়ে যায়। ও যে সোসাইটিতে বড় হয়েছে, সেখানে দু–চারজন কালপ্রিট ছিল। ভালনারেবল মানুষদের তারা ঠিকই চিনতে পারে। তারপর সময় বুঝে ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। এরপর কিছু কনফিউশন, আমার উদাসীনতা, মা–বাবার ব্যস্ততা গনগনে আগুনে ঘি ঢালে। সংগীতা ড্রাগসে আসক্ত হয়ে যায়।

এক বছর ধরে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। ঘটা করে ব্রেকআপ হয়নি। তবে বেশ বুঝতে পারি, সংগীতার প্রয়োজন আমার জীবনে ফুরিয়েছে। ও এখন আমার জীবনে একটা বার্ডেন, যাকে ফেলে পালাতে পারি না। কমন ফ্রেন্ডদের কাছে ওর দুর্দশার কথা শুনলে খারাপ লাগে, অনুশোচনা হয়। মনে হয় জীবনে একটা পজ বাটন পেলে ওকে ঠিকই সারিয়ে তুলতাম। কিংবা একটা টাইম মেশিন হলেও হতো। অবশ্য ভাবা পর্যন্তই। আমি সংগীতার কাছে সময় করে যাই না। সে-ও আমার কাছে আসে না। দুজন যেন দুটো অলঙ্ঘনীয় পর্দায় নিজেদের মুড়িয়েছি।

বারান্দা থেকে বেরিয়ে আবার বাথরুমে গিয়ে ঢুকি। আজ অভ্যাসমতো বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু নিসর্গ দেখা হয়নি। আধো ঘুমে চোখজোড়া নিষ্প্রভ হয়ে আছে। হাতের তালু অনবরত ঘামছে। বিছানা থেকে ফোনটা তুলে নিয়ে সংগীতাকে টেক্সট করি, ‘কখন?’

সংগীতা যেন ফোন হাতে নিয়ে বসেছিল। তৎক্ষণাৎ উত্তর আসে, ‘আজকে। সন্ধ্যায়।’

আমি পাউরুটিতে জেলি লাগাতে লাগাতে আজকের ‘টু ডু’ লিস্ট চেক করি। সন্ধ্যার পর তেমন কোনো কাজ নেই। একটা ফলোআপ মিটিং আছে, বসকে বলে অফিস থেকে বেরিয়ে আসা যাবে। রিপ্লাই লিখলাম, ‘ওকে। কিন্তু কোথায়?’

ব্রেকফাস্ট শেষ করা পর্যন্ত আর কোনো রিপ্লাই আসে না। কফি মেশিনকে চাপা যান্ত্রিক আওয়াজ করতে দিয়ে স্মৃতিতে ডুবে যাই আমি। অনেক দিন পর সংগীতার মেসেজ দেখে আমার মনের বন্ধ কপাট খুলে গেছে। মনে পড়ছে গোলাপগ্রামে ডে ট্যুরের কথা, শত শত ফুলের মধ্যে যেদিন বন্য আনন্দে উড়ে বেড়িয়েছিল সংগীতা। ভার্সিটির অডিটরিয়ামের ব্যাক স্টেজের কথা, আদরের বিড়াল ক্যাথি মরার পর আমাকে যেখানে জড়িয়ে ধরে কেঁদে আকুল হয়েছিল। বগা লেকের তারাভরা রাতের কথা, সেদিন আমাদের দুজোড়া ঠোঁট প্রথম এক হয়েছিল।

কফির কাপ উপচে এলে আমার হুঁশ হয়। ঠিক সে মুহূর্তে টেক্সট আসে, ‘শার্প অ্যাট সেভেন। আমাদের বাসায়।’

সুগারলেস কফি খেতে খেতে আমার ভ্রু কুঁচকে ওঠে। ভেবেছিলাম সংগীতা ব্লকবাস্টার বা সিনেপ্লেক্সের কথা বলবে। বড় পর্দায় অনেক দিন মুভি দেখা হয়নি। পপকর্ন চিবিয়ে আর কোলার কাপে চুমুক দিয়ে কোয়ালিটি টাইম পাস করা যাবে। তা না, সংগীতা ওদের বাসায় ডেকে বসল!

যাব কি না ভাবছি। এমন সময় আরেকটা টেক্সট এল, ‘ব্রিং টু ক্যানস অব ডায়েট কোক। আই উইল অ্যারেঞ্জ পপকর্ন।’

অফিস শেষ করে একটা উবার ডেকে সংগীতাদের বনানীর বাসায় হাজির হলাম। দরজা খুলে দিল সংগীতাই। পরনে টি–শার্ট আর ঢিলেঢালা পায়জামা। খোলা চুল। হালকা মেকআপ করেছে। তাতে অবশ্য খুব একটা লাভ হয়নি। চোখের নিচের গভীর কালো দাগ ঢাকেনি। হাতের ফ্লাওয়ার বুকে এগিয়ে দিয়ে বললাম, ‘ইউ লুক ওয়ান্ডারফুল!’

সংগীতা কোনো উত্তর দিল না। ম্লান হেসে বলল, ‘কোক আনো নাই, না? তুমি চিরকাল এই রকম ফরগেটফুল।’

জিব কেটে বললাম, ‘একেবারে ভুলে গেছি।’

সংগীতা দরজা লাগিয়ে দিয়ে বলল, ‘চিন্তা করিয়ো না। আমি এনে রেখেছি।’

সংগীতার পেছন পেছন ওর রুমের দিকে এগোই। পুরো বাসা আশ্চর্য রকম নীরব। বাতিগুলোও নেভানো। আমার মনে হলো প্রেতপুরীতে ঢুকছি। শুকনো গলায় বললাম, ‘বাসায় কেউ নেই নাকি?’

‘আব্বু-আম্মু স্টেটসে গেছে, বড় আপুর বাসায়। বাসায় আমি আর রোজেনা বুয়া। ওর ভাগনে না ভাতিজা কে মারা গেছে বলে ছুটিতে গেছে।’

অন্ধকার হাতড়ে অবশেষে সংগীতার রুমে পৌঁছাই। অনেক দিন পর ওর রুমে এলাম। খোলনলচে বদলে ফেলছে। দেয়ালে একটা বিরাট বড় স্ক্রিন আর সাউন্ড সিস্টেম লাগিয়েছে। পুরু কালো পর্দা দিয়ে জানালার দিকটা ঢাকা। একটা বেড ছাড়া রুমে আর কোনো ফার্নিচার নেই। আমার অবাক দৃষ্টি দেখে সে বলল, ‘রোদ সহ্য হয় না। এই জন্য ঘর অন্ধকার করে রাখি।’

নেটফ্লিক্সে ঢুকে সে একটার পর একটা মুভি স্ক্রল করতে শুরু করল। তারপর রিমোট আমার হাতে গুঁজে দিয়ে বলল, ‘নাও। তুমি কিছু একটা চুজ করো।’

মনে মনে ভীষণ বিরক্ত হলাম আমি। ডেকে এনে এ কেমন তামাশা! কিছু বলতে গিয়েও বললাম না। থ্রিলার সেকশন থেকে ক্লিন্ট ইস্টউডের দ্য মিউল ছেড়ে দিলাম। নব্বই বছরের এক বৃদ্ধের গল্প, পরিস্থিতির শিকার হয়ে যে ড্রাগসের কারবারে জড়িয়ে পড়ে। আমার ভীষণ অস্বস্তি হতে লাগল। আইএমডিবিতে একটু রিভিউ দেখে নেওয়া উচিত ছিল। এই জিনিস নিশ্চয়ই সংগীতারও ভালো লাগবে না।

প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য বললাম, ‘এখনো গান করো?’

সংগীতা বোধ হয় আসল ব্যাপারটা ধরতে পেরেছিল। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘করি। তুমি গিটার বাজাও?’

‘বাজাই।’

বলেই লক্ষ করলাম কথা ফুরিয়ে গেছে। বলার মতো আর কিছু মাথায় আসছে না। জোর করে টিভি পর্দায় চোখ সেঁটে রাখলাম। কোকেন বোঝাই গাড়ি নিয়ে ইলিনয়ের গ্রামীণ পথ পাড়ি দিচ্ছে বুড়ো ক্লিন্ট। কখনো সবুজ ফসলের মাঠ, কখনো উষর মরুভূমি চিরে যাচ্ছে গন্তব্যের দিকে।

সংগীতাই নীরবতা ভাঙল। বলল, ‘ইনস্টাগ্রামে আনফলো করার পর থেকে তুমি আমার কোনো আপডেট রাখো না, তাই না?’

একবার মনে হলো বলি, আমি ইনস্টাগ্রাম চালাই না। কিন্তু সেটা ডাহা মিথ্যা হবে। ছোট্ট করে বললাম, ‘না।’

ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সংগীতা। এত জোরে যে আমি চমকে উঠলাম। সে রহস্যময় ভঙ্গিতে মাথা বাঁ দিকে কাত করে বলল, ‘তোমাকে আজ ডেকেছি কেন জানো?’

আমার গলা ততক্ষণে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কোকের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বললাম, ‘কেন?’

‘একটা ডেয়ারের জন্য।’

ব্যাপারটা আমি ভালো করে বুঝিনি। মনের মধ্যে অশুভ চিন্তা হাত-পা ঝাড়া দিতে লাগল। ভীষণ নার্ভাসনেসে হাতের তালু ঘামতে শুরু করল। স্মরণ করার চেষ্টা করলাম, ইনস্টাগ্রামে এ মুহূর্তে কী কী ডেয়ার চলছে। কিন্তু মগজের মধ্যে ক্রমশ ঘনীভূত হতে থাকা মেঘ আমাকে কিছুই ভাবতে দিল না।

সংগীতা কোকের গ্লাসে লম্বা করে চুমুক দিল। কেমন ঘোলাটে দৃষ্টিতে আমাকে দেখতে দেখতে বলল, ‘তোমার জানার কথা না। ইনস্টাগ্রামে একটা এক্সট্রিম ডেয়ার চলছে। কোনো ট্রেন্ডিং নেই, হ্যাশট্যাগ নেই। বাট ভেতরে ভেতরে চলছে।’

কৌতূহল ও শঙ্কার যুগল অনুভূতি আমাকে ততক্ষণে গ্রাস করে নিয়েছে। বললাম, ‘আমাকে এসবের সঙ্গে কেন জড়াচ্ছ সংগীতা?’

সে একটা আচ্ছন্ন হাসিতে ফেটে পড়ে বলল, ‘আমাকে শেষ করতে দাও। এই ডেয়ারের নাম হলো সুইসাইড ডেয়ার। তেমন জটিল কিছু না। এই ঘরের চারদিকে চারটা স্প্যাই ক্যাম বসানো আছে। আমি ১৮ মিনিট ধরে লাইভে আছি। আর ৩ মিনিটের মধ্যে আমার মৃত্যু হবে। ৫ মিনিট পর লাইভ শেষ হবে। শেষের ২ মিনিট হলো আসল। তোমার এক্সপ্রেশন রেকর্ড হবে।’

আমার হাত থেকে কোকের গ্লাসটা ঠং করে মেঝেতে পড়ে গেল। প্রায় উড়ে গিয়ে সংগীতার কাঁধ আঁকড়ে ধরলাম। চিৎকার করে বললাম, ‘কোকের সঙ্গে কী মিশাইছ তুমি?’

সংগীতা নির্বিকার। তার মুখ রক্তশূন্য হতে শুরু করেছে। আমার শক্ত গ্রিপ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর কোনো চেষ্টা না করে বলল, ‘ভয় নেই। তোমার গ্লাসে কিছু নেই। আমার গ্লাসে বিশটা ঘুমের ওষুধ ছিল।’

আমি সংগীতাকে ছেড়ে দিতেই ও মেঝের ওপর ঢলে পড়ল। আমার মাথার ভেতরে তখন প্রবল ভাঙচুর। চিন্তাশক্তি প্রায় লোপ পেয়েছে। শুধু মনে হচ্ছিল সংগীতাকে বাঁচাতে হবে। মেঝে থেকে ফোনটা তুলে অ্যাম্বুলেন্সের নম্বর খুঁজতে শুরু করলাম। নেই। মনে হলো পুলিশকে ফোন করি। তিনটা ৯ চেপে ডায়াল করতে গিয়ে মনে হলো, উল্টো আমি বিপদে পড়ব না তো?

ফোনটা চুপচাপ পকেটে ঢুকিয়ে ফেললাম। ক্যামেরায় আমাদের রেকর্ড করা হচ্ছে, হোক। প্রমাণ থাকবে আমি কিছু করিনি। যা করার সংগীতাই করেছে। আমার এজেন্সির বস হোমরাচোমরা মানুষ। পুলিশি ঝামেলা সামলে নেবে।

ধীরপায়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম আমি। মেঝেতে সংগীতার অচেতন দেহ। ওর মৃত্যু হচ্ছে। হয়তো এতক্ষণে হয়েও গেছে, যেমন আমাদের প্রেমের একদিন মৃত্যু হয়েছিল। প্রেমিকার মৃত্যু হলে আমার কিছু করার নেই।

* নিয়াজ মেহেদী
 
শেষটায় হতাশ হলাম , আরও কিছু আশা করেছিলাম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top