করোনাকালে আরও একটি ঈদ। প্রয়োজন ছাড়া হয়তো কেউ বাইরে যাবেন না। তবে উত্সবের আমেজ আনতে ঈদপোশাক হওয়া চাই মনের মতো। সেই সঙ্গে মিলিয়ে জুতা পরবেন অনেকে। এবারের ঈদ ফ্যাশনে হালকা রঙে ফিউশনধর্মী পোশাকই বেশি দেখা যাবে। গরমের সময়ে ঈদ, তাই জবরজং নকশার পোশাক না পরাই ভালো বলে মনে করেন ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা।
পোশাকে প্রকৃতির ছোঁয়া
লা রিভের প্রধান নির্বাহী পরিচালক মন্নুজান নার্গিস বললেন, ‘ঈদের দিন ঘরে কাটলেও উত্সবের আমেজ আনতে পরতে পারেন গোলাপি বা ল্যাভেন্ডার রঙের পোশাক। মনের সতেজতা আর প্রশান্তির জন্য বেবি পিংক, সবুজ, সামুদ্রিক নীল, প্যাস্টেল, হালকা নীল, পার্সিয়ান গ্রে ইত্যাদি রঙের পোশাক পরা যেতে পারেন।’
পোশাকের প্রিন্টে এবার দেখা যাবে প্রকৃতির নানা বিন্যাস। সেখানে নজর কাড়বে নানা রকম রঙিন ফুল, পাতা, তৃণলতা। তা ছাড়া জ্যামিতিক নকশার সঙ্গে থাকবে দামাস প্রিন্টও। কাপড়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে ভিসকস, সাটিন-ভিসকস, সুতি, মসলিন, জর্জেট, কটন, অ্যান্ডি কটন, সিল্ক, শিফন, টিস্যু, অরগ্যাঞ্জা, ফেইলি, সেলুলোজ ইত্যাদি।
কামিজের ঝুলে এবার ততটা লম্বা ভাব থাকছে না। কম লেন্থের কামিজই চোখে পড়বে এবারের ঈদে। সে ক্ষেত্রে এ লাইন, আনারকলি, ভি শেপের পোশাক পরতে দেখা যাবে। গত ঈদে সারারা বেশ চোখে পড়েছিল কিন্তু এবার সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে ভিন্নধর্মী প্যান্ট এবং পালাজ্জো। কামিজের সঙ্গে বেশি ঘেরওয়ালা পালাজ্জো উত্সবের আবহ তৈরি করবে বললেন মন্নুজান নার্গিস। ফ্যাশনের মাত্রা বাড়াতে পোশাকের সঙ্গে এবার যোগ হবে মিলিয়ে মাস্ক। ঈদ পোশাকের কোনো একটি রং মিলিয়ে ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা আয়োজনে রেখেছেন নানা রকম নকশার রঙিন মাস্ক।
ফ্যাশন হাউসগুলো ঈদ উপলক্ষে এনেছে ছেলেদের ও মেয়েদের জন্য নতুন পোশাক। পাঞ্জাবি: লুবনান, কামিজ: ইনফিনিটি
যেমন পাঞ্জাবি এবার
ঈদের দিনের সকাল মানেই পাঞ্জাবি। ঈদ অনুষঙ্গের প্রধান পোশাক হিসেবে পাঞ্জাবিই বেছে নেন ছেলেরা। ঈদের দিন ও রাতকে উত্সবমুখর করে তোলে নতুন পাঞ্জাবিতে। ‘যেহেতু ঈদ গরমে মধ্যে তাই সুতি পাঞ্জাবি বেশি চোখে পড়বে। তবে রাতের জন্য সিল্ক, ধুপিয়ান, অ্যান্ডি কটন, লিনেন, ভিসকস, জ্যাকার্ডের চাহিদা বেশি বলে জানালেন ফ্যাশন হাউস ইনফিনিটির ফ্যাশন ডিজাইনার ফরহাদ সেলিম।
পাঞ্জাবির কাট ছাঁটে বৈচিত্র্য এবং উত্সবের আমেজ ফুটিয়ে তুলতে এমব্রয়ডারি, জারদৌসি, ডিজিটাল প্রিন্ট, অ্যাপ্লিক, কাটওয়ার্ক, হ্যান্ড পেইন্টের কাজ চোখে পড়বে। ক্যাজুয়াল লুকের সুতি পাঞ্জাবিগুলোতে লুবনান এবার সিলিকন এনজাইম ওয়াশ করেছে, যা আরামদায়ক ও দৃষ্টিনন্দন হবে বলে জানালেন ফরহাদ সেলিম। হালকা রঙের প্রাধান্যই বেশি এবার। এর মধ্যে হালকা সোনালি, ছাই রং, নীলাভ, হালকা সবুজের মিশ্রণ নজর কাড়বে। বুকের কাছে অল্প কাজই বেশি ভালো লাগবে ছেলেদের পাঞ্জাবিতে।
উত্সবমুখর হোক পাদুকাজোড়া
জুতায় পছন্দের শীর্ষে রয়েছে স্লিপার স্যান্ডেল। তবে বর্ষার কথাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা উচিত হবে না। পছন্দের জুতাটি পরে যদি বাইরে যান আর নেমে যায় ঝুম বৃষ্টি, তাহলে নষ্ট হতে পারে নতুন পোশাক। জলকাদায় সহজে ধোয়া যায় বা কাদা কম ছিটে ওঠে এমন জুতা বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ডিজাইনাররা। হালের ফ্যাশনে নজর কাড়বে জারদৌসি, এমব্রয়ডারি, হ্যান্টপেইন্টের জুতা। যারা স্লিপার পছন্দ করছেন না, তাঁরা বেছে নিতে পারেন হালকা হিলওয়ালা খোলামেলা শেপের জুতা। আরাম পাওয়া যাবে এতে। ফিতাওয়ালা জুতাও থাকবে ঈদ জুতার সংগ্রহে।
যেহেতু পশু কোরবানিতে ছেলেদের কাজকর্মের ঝক্কিটা বেশি থাকবে, তাই এই সময়ে বেছে স্যান্ডেল ধরনের পাদুকা বেছে নেওয়া ভালো। জুতার ওপরের অংশে আরামদায়ক লেদারের ফিটিং থাকতে পারে। ক্যাজুয়াল লুকের জন্য দুই ফিতাওয়ালা স্যান্ডেলও পরে নেওয়া যায়। তবে কারুকাজ কম করা এমন ধরনের স্যান্ডেলই ভালো হবে ছেলেদের জন্য।
জুতা: ইনফিনিটি
* সুরাইয়া নাজনীন, ঢাকা