ঈদ উপলক্ষে সবারই ইচ্ছা করে ঘরটা একটু বিশেষভাবে গোছাতে। আর মাংসের রক্তের গন্ধ থেকে বাঁচাতে সুগন্ধির বিকল্প নেই। রান্নাবান্নার মাঝে নিজের একটু স্বস্তির জন্য ঘর যেন সুবাস ছড়ায়, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। ঘরের সব থেকে বিশেষ অর্নামেন্ট হলো এর সুগন্ধ। অন্দরসজ্জা বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, ঘরে প্রবেশের পরে প্রথমে সুগন্ধ আকৃষ্ট করতে পারে একজনকে। বলতে গেলে ঘরের ঘ্রাণই বলে দেয় ঘরের গল্প। এ ছাড়া গরম ও বৃষ্টির সময়ে ঘরে গন্ধ তৈরি হয়, যা ঈদের মতো বিশেষ উৎসবে দূর করা জরুরি। খুব সহজেই আর প্রাকৃতিকভাবেই আপনি সেটা করতে পারেন। জেনে নেওয়া যাক কিছু উপায়।
অনেকেই হয়তো ত্বকচর্চায় ব্যবহার করেন এসেনশিয়াল অয়েল। কিন্তু ঘরের সুঘ্রাণ বাড়াতেও যে ব্যবহার করা যায় এই তেল। সাধারণত এই অয়েলের ঘ্রাণ বেশ কড়া ধরনের হয়। তাই আপনার ঘরের এয়ার ফিল্টারে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে দিন। তাহলেই দেখতে পাবেন ঘ্রাণের জাদু।
পটপিউরি অনেকের কাছেই নতুন ধারণা। কিন্তু এটি খুব সহজেই ঘরে তৈরি করে নেওয়া যায়। আপনার ঘরে থাকা লেবু, ভ্যানিলা ও রোজমেরি মিলিয়ে একটা পাত্রে জ্বাল দিলে পরিচ্ছন্ন ঘ্রাণ পাবেন। এটিই পটপিউরি। ঘরে ময়লা রাখার পাত্রের কারণেই অনেক সময় ঘরে দুর্গন্ধ হয়। এর জন্য লেবু বা কমলার খোসা পিল করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে বরফ করে নিতে হবে। ময়লা পরিষ্কারের সময় এই বরফ দিয়ে দিতে হবে। এটি প্রাকৃতিক ডিওডোরেন্টের কাজ করে।
একটু বৃষ্টি হলেই ঘরের মেঝেতে বিছানো কার্পেট দ্রুত গন্ধ হয়। বিশেষ করে যে কার্পেটে বেশি মানুষের আনাগোনা, সেটি তত বেশি গন্ধ হয়। এর সহজ সমাধানের নাম বেকিং সোডা। কার্পেটে বেকিং সোডা ছিটিয়ে ১৫ মিনিট পর ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করলেই একধরনের ফ্রেশ ঘ্রাণ পাওয়া যাবে। ঘর মোছার সময় মিশিয়ে নিতে পারেন কয়েক ফোঁটা ভিনেগার।
কৃত্রিম এয়ার ফ্রেশনার শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই ঘরেই তৈরি করে নেওয়া উচিত এয়ার ফ্রেশনার, যার জন্য দরকার হবে এসেনশিয়াল অয়েল ও পানি। এদিকে ঘরের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো ওভেন। ওভেনের খাবার তৃপ্তি দিলেও ওভেনের ভেতরের হাওয়া সারা ঘরের বাতাস দূষিত করে। অনেক সময় পরিষ্কারের পরও গন্ধ থেকে যায়। তাই একটা মগে বা ওভেন প্রুফ পাত্রে ভ্যানিলার নির্যাস বা কয়েক টুকরা লেবু রেখে ৩০০ ডিগ্রিতে বেক করতে হবে ১ ঘণ্টা। এতে ওভেন খুললে দুর্গন্ধে ঘর ভরে না গিয়ে ছড়াবে সুবাতাস।
জুতার গন্ধ থেকে ঘরে সবচেয়ে বেশি দুর্গন্ধ ছড়ায়। আবার প্রতিদিন জুতাও পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। তাই সহজ উপায় হলো ড্রাই শ্যাম্পু স্প্রে করা। ড্রাই শ্যাম্পু সাধারণত চুলে ব্যবহার করা হয়। পানি ছাড়া শ্যাম্পু করার জন্য। এটি জুতার ওপর স্প্রে করলে জুতার দুর্গন্ধ অনেকটাই কমবে। আবার ঘরের আবহ পরিবর্তন করতে পারে মোমের আলো। এখন কৃত্রিম ঘ্রাণসহ মোমও পাওয়া যায়। তবে কৃত্রিম ঘ্রাণ পছন্দ না হলে একটি পাত্রে কিছু কফি বিন নিয়ে তার মধ্যে বসিয়ে দিতে পারেন একটা মোম। এতে মোমের আলো ও দারুণ ঘ্রাণও পাওয়া যাবে।
এ ছাড়া আপনি ঘরের টবে ইউক্যালিপটাস রাখতে পারেন। ইউক্যালিপটাসের পাতা থেকে কড়া ঘ্রাণ পাওয়া যায়, যা প্রাকৃতিকভাবেই গন্ধ কমাতে সাহায্য করে। আপনার ঘরের কোণে একটি জারে কিছু ইউক্যালিপটাসের ছোট ডাল রেখে দিলেও একই ফল পাবেন। ঘরের টবে লাগাতে পারেন বেলি, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ বা হাসনাহেনা। ফুলদানিতে বর্ষার ফুল কদম, দোলনচাঁপা, কামিনী বা সারা বছরের গোলাপও রাখতে পারেন।
* রিফাত পারভীন