ঈদে অনেককেই দেখি গ্রামের বাড়িতে যায়। সে এক বিশাল আনন্দের ব্যাপার, গ্রামের বাড়িতে সবার সাথে ঈদ উদযাপন, দেখা সাক্ষাৎ। ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি। তবে আগে কখনোই মনে হয়নি যে আমি এই ব্যাপারটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। কিন্তু ইদানিং কেন জানি এই বিষয়টা আমাকে ভীষণ ভাবে নাড়া দেয়। সম্ভবত আমার যখন সাড়ে তিন বছর বয়স তখন আব্বা আমাদের সবাইকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। যখন বুঝ আসে তখন থেকেই ঈদ বা যেকোন উৎসব ঢাকাতেই করে আসছি। কখনোই মনে হয়নি গ্রামের বাড়িতে উৎসব পালন করার কথা। তার মূল কারণ হচ্ছে গ্রামের বাড়িতে কোন বন্ধু-বান্ধব গড়ে না উঠা, সমবয়সী কোন ফুফাতো/খালাতো ভাই বোন না থাকা। তবে জীবনে একবার একটি কোরবানির ঈদ গ্রামের বাড়িতে করেছিলাম। তখন সম্ভবত আমি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তাম। সেই ঈদ করেছিলাম বড় খালার বাড়িতে। নিজের দাদার বাড়িতে ঈদ না করে বড় খালার বাড়িতে করার মূল কারণ হিসেবে আমার যেটা মনেহয় তখন আমার বাবার কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য ছিলোনা। বড় খালুরা তখন যথেষ্ট অবস্থাপন্ন। প্রতি বছরই বড় খালু বেশ ভালো আকৃতির একটা করে গরু কোরবানি করতেন। আর যেহেতু কোরবানি ঈদের মূল আকর্ষণ হচ্ছে পশু কোরবানি দেওয়া, তাই আমরা বড় খালার বাড়িতে ঈদ করি। আমার এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে, সকালে দুই খালাতো ভাই বাপ্পি ভাই (আমার বড় আপার বয়সী) আর উনার বড় বিপ্লব ভাইয়ের হাত ধরে খালু সহ ঈদের নামাজ পড়তে ঈদগাহে গয়ে ছিলাম। ঈদগাহের আশেপাশে বিশাল এলাকা জুড়ে অনেক বড় মেলার মতো আবহ তৈরি হয়েছিল। একেবারে পূর্ণাঙ্গ গ্রাম্য মেলা বলা যায়। ঈদের নামাজ শেষে খালু এবং বড় দুই ভাই আমাকে অনেক কিছু কিনে দিয়েছিলেন। নামাজ শেষ করে বাসায় আসার পর গরু কোরবানি করা হলো, বড় দুই ভাই ভীষণ ব্যস্ত গরু কো-পা-নোর কাজে, সাথে সহযোগিতা করছেন বাড়ির নিয়মিত কাজের লোক। এইসব দেখতে দেখতে বেলা বাড়তে শুরু করলো আর সেই সাথে শুরু হলো আমার ভালো না লাগা অনুভূতির প্রকাশ। শুধু মনে হচ্ছে মেলার কথা, খালাকে বললাম "খালা আবার মেলায় যাবো", খালা বলেন " মেলা তো শেষ, ঈদগাহ খালি হয়ে যাওয়ার পর আর কোন দোকান থাকেনা"। কিন্তু আমার অবুঝ মন তা মানতে নারাজ। শুধুই মনে হচ্ছে আমাকে ফাঁকি দিচ্ছে। আস্তে আস্তে মন খারাপ বাড়তে থাকলো। অবশেষে খালা বললেন বাপ্পি ওকে একবার ঈদগাহ থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আয়। বাপ্পি ভাইকে আমি খুব কমই বিরক্ত হতে দেখেছি, উনি হাসি মুখে আমাকে হাত ধরে ঈদগাহে নিয়ে গেলেন। ঈদগাহের সামনে যাওয়ার পর আমার তো সেই আকারের মন খারাপ, একটা মাছিও নেই, জনমানুষ আর দোকানপাট তো বহু দূরের কথা। আমার মনখারাপ দেখে বাপ্পি ভাই অনেকটা পথ ঘুরে একটা দোকান থেকে আমাকে চকলেট কিনে দিয়ে বাসায় ফিরে আসেন। তারপর বাকি দিনটা অলস ভাবেই কাটে এবং বিকেলের দিকে বাপ্পি ভাইয়ের সাথে গ্রামের আত্মীয় স্বজনের বাসায় কোরবানির গোস্তো দিতে যাই। আর এভাবেই শেষ হয়ে যায় ঈদ। তারপর থেকে আর কখনো ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে মনে জাগেনি। তবে ইদানিং গ্রামের বাড়ি আমাকে ভীষণ ভাবে টানে। একটা সময় মনে হতো মানুষ এতো কষ্ট করে ঈদে কেন বাড়িতে যায়! কিন্তু এখন মনে হয়, শত কষ্টে বাড়িতে পৌছানোর পর নিকটাত্মীয়দের সান্নিধ্য পাওয়ার যে আনন্দ তা সকলের ভাগ্যে জোটেনা। সকলের ঈদ আনন্দে কাটুক, ঈদ শেষে সকলেই নিরাপদে স্ব স্ব কর্মস্থল/আবাসস্থলে ফিরে আসুক।
ঈদ মোবারক
ঈদ মোবারক