What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review ইভটিজিং – সামাজিক ব্যাধির চালচিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,653
Messages
117,045
Credits
1,241,450
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
RakhYr2.jpg


“চলচ্চিত্র দ্বারা কখনো সমাজ পরিবর্তন করা যায় না।” – সত্যজিত রায়

আজ সনি সিনেমাতে দুপুরের শো’তে ৩৫ টাকা দিয়ে ডিসি-তে বসে দেখে এলাম ‘ ইভটিজিং‘। “ইভিটিজিং মানে নারীদের উত্যক্ত করা। কিন্তু বিষয়টা এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে যে, এটা এখন একপ্রকারের নারী নির্যাতন” – এটা সিনেমার একটা সংলাপ। ঠিক এই লাইনটার উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে গোটা ফিল্মটি। “লজিক এবং এন্টি লজিক” নিয়ে কাজ করেছে কাজী হায়াৎ।

প্রথমত, ইভটিজিং একটা ফোক সিনেমা। কিন্তু নির্মান ও গল্পের ধরন দেখে একে ঠিক “ফোক” বললে সম্ভবত কিছু হালকা করা হয়ে যাবে। বরং একে ‘মর্ডান ফোক’ অথবা ‘অলটারনেটিভ ফোক’ বললে ঠিকঠাক হয়। আমার মর্ডান ফোকটাই বেশী পছন্দ। অল্টারনেটিভ ফোক যেন আরেকটু কিছু দাবী করে। সে যেই “ফোক” হোকনা কেন, একরকমের ফোক তো – সেহেতু পুরো প্লট গ্রাম নির্ভরশীল। ফোক সিনেমার একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো গ্রাম্য কূটনীতি। সেসব তো আছেই, পাশাপাশি যোগ হয়েছে বর্তমান সমাজের কিছু অবক্ষয়ের প্রভাব।

কাহিনি খুব সহজ সাবলিল। কাহিনির ভিতরে কোন ‘এইরকম – সেইরকম’ ব্যাপার নেই। কিন্তু একদম স্বাভাবিক কিছু আছে যা আগে আপনি কোন বাংলা ছবিতে দেখেননি। এটার নিশ্চয়তা আমি দিলাম। এই ছবির মূল আকর্ষণ এর সুক্ষ্ম কাহিনি বলার ধরন। সেন্টিমেন্টে নাড়া দেওয়া, বিবেককে জাগ্রত করা, গ্রামের লাবন্য, গ্রাম্য যুবতীর আবেগ, কিছু কিছু জায়গায় কিছু মারাত্নক অভিনয়, আর চরিত্র বিশ্লেষণে। কাজী হায়াৎ যেন তার অধিকাংশ চরিত্রকেই “পারফেক্ট হিউম্যান” হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছেন। কিছুটা বিমল মিত্রের উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মতো। এরা যেন সঠিক, এরা সহজ, অবুঝ, এরা ভুল করবেনা, অন্যায় করবেনা কিন্তু অন্যায়ে আটকে থাকবে বারোমাস।

প্রধান চরিত্র কাশেম আলী নাম ভুমিকায় অভিনয় করেছে কাজী মারুফ। কাসেম আলীর কাজ হলো গ্রামে যদি কেউ অপঘাতে মারা যায় তবে তার লাশ ভ্যানে করে শহরের এক লাশকাটা ঘরে পৌছে দেওয়া। সে ভালো লাঠি খেলে এবং তার মৃত বাবার মতো ভালো তলোয়ার খেলে। কাসেম আলীর একটা চমৎকার ছোট বোন আছে। কাসেমের ইচ্ছা তাকে ম্যাট্রিক পাশ করানো। তাই কাসেম যেন একটু বেশী টাকা উপার্জন করতে আগ্রহী।

এরপর কাহিনি বেশ সাবলিল।

চেয়ারম্যানের ছেলের প্রধান কাজ হলো স্কুল যাত্রী বালিকাদের টিজ করা। এরকম চলছিল। কাসেমের বোনও বাদ যায় নি। কিন্তু মেয়েটা চাপা স্বভাবের। বাসায় এসে কিছু জানায় নি। এদিকে কাসেমের লাঠি খেলায় সাফল্যে ঈর্ষানিত হয়ে ওঠে চেয়ারম্যানপুত্র। সে প্রকাশ্যে ঘোষনা দেয়, সে কাসেমকে চ্যালেঞ্জ করে। প্রথমে কাসেমের সাথে খেলা হয় চেয়ারম্যানের ভাইয়ের পুত্রের। সে মাথায় আঘাত পায় এবং কাসেমের কাছে পরাজিত হয়।

পরেরদিন খেলা হয়, চেয়ারম্যান পুত্র কবিরের সাথে। তাকে আঘাত করা হয় এবং বিজয়ী হন কাসেম। এই জেদ ধরে পারষ্পরিক দন্দ্ব চলতে থাকে কাসেম-কবিরের। যার শিকার হয় কাসেমের ছোট্ট বোন হোসনে আরা। আসলে এই জায়গাটা ক্লিয়ার না, হোসনে আরার নির্যাতিত হওয়ার পিছনে সঠিক কারন কি কাসেমের প্রতি জেদ না কি স্বাভাবিক পৌরুষিক,পাশবিক লালসা সেটা কাজী হায়াৎ নিজেও ক্লিয়ার করেননি। এমন ভাববেন না যে, কাজী হায়াৎ ভুলে গেছেন। সে ইচ্ছে করে এই জায়গাটা ধোয়াটে রেখেছে। তিনি মেধাবী পরিচালক।

এরপর চলচ্চিত্র পুরোটাই ঘুরে গেল বলা যায়। মামলা-মোকদ্দমা ইত্যাদি আরও নানানরকম ফ্যসাদ। ঝুট ঝামেলা। এত কিছুর মধ্য দিয়েও একটা বিষয় পরিষ্কার ফুটে ওঠে – গ্রাম্য যুবতীর প্রেম। গোপনে, গভীরে, যেন জীবনানন্দ দাশের নায়িকা, যেন তারাশংকরের চরিত্র।

আগেই বলেছি, চলচ্চিত্র দ্বারা সমাজ পরিবর্তন করা যায় না এরকম একটা কথা বহুল পরিচিত। কাজী হায়াৎ ও পরিবর্তন করতে পারবেন না। কিন্তু তিনি কিছুটা নাড়া দিতে অবশ্যি পারবেন। কেননা সাধারন মানুষের সেন্টিমেন্টে হিট করার মতো যথেষ্টরকমের উপকরণ এতে আছে।

কিছু কিছু জায়গায় সংলাপ এত চমৎকার যে, সত্যি বাংলা চলচ্চিত্র যে উপভোগ করার মতো তা বোঝা যায়। শান্তি লাগে, আমরাও কম নই ভেবে।

pNinuaZ.jpg


কিছু বেসিক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজী হায়াৎ সবসময় কাজ করে থাকেন, যথারীতি তিনি এবারও করেছেন। সিনেমার পোষ্টারে সেই বিষয়ে ক্লিয়ার করা আছে।

কিছু বেসিক উদ্দেশ্য নিয়ে কাজী হায়াৎ সবসময় কাজ করে থাকেন, যথারীতি তিনি এবারও করেছেন। সিনেমার পোষ্টারে সেই বিষয়ে ক্লিয়ার করা আছে। কিন্তু এই সিনেমায় বিপ্লব নেই, লজিক থেকে এন্টিলজিক। শুরুটা রিয়েলিটি হলেও তথাকথিত ভাবে একটা রিভেঞ্জের মাধ্যমে মানসিক স্বান্ত্বনা দেবার চেষ্টা যেন আবেদন বাড়িয়ে দেয়। নাহ এই সিনেমাতেও হলো না।

মান্না ছাড়া এই চরিত্র কাউকে দিয়ে সম্ভব হতোনা। কাজি মারুফ “বেষ্ট ফর দিস রোল” টাইপ অভিনয় করছে। তমা মির্জার এক্সপ্রেশনগুলো ৯০ এর শাবনুরকে মনে করিয়ে দেয়। তমার অভিনয় আগামীতে সুন্দর হওয়া একান্ত প্রয়োজনীয়। মনি ডাক্তার চরিত্রে কাজী হায়াৎ এবং ডোম চরিত্রে কাবিলা মারাত্মক প্রশংসা পাবে। কাবিলা ১০০ তে ১০০ পাওয়ার দাবীদার। এর থেকে সেরা অভিনয় দেয়া কাবিলার পক্ষে সম্ভব না।

ব্যক্তিগতভাবে আমি ক্রাশড খেয়েছি ওই ছোট মেয়েটা মানে হোসনে আরা চরিত্রে অভিনয় করছে যে মেয়েটা তার উপর। অসম্ভব রুপবতী (ব্যক্তিগত মতামত) সিনেমা হলে আমার পাশের সিটের একজন হোসনা কে দেখে বললো “কবিরের দোষ নাই, এই মেয়েকে দেখে আমার অবস্থাইতো খারাপ” – ছেলেটার কথা শুনতে আমার খারাপ লেগেছিল কিছুটা। কিন্তু শেষের দিক এই ছেলেটাকে আমি হু হু করে কাদতে দেখেছি নির্যাতিত হোসনার পরিস্থিতি দেখে। সে চিৎকার দিয়ে বলেছে, ‘মার মারুফ মার, শুয়োরের বাচ্চারে মার’। আমার অনুভুতি এত তীব্র হয়নি কিন্তু পশমগুলো দু তিনমিনিট খাড়া হয়ে ছিল।

সিনেমা যেহেতু “ফোক” সেই হিসেবে আপনাকে ৮টা গান মোকাবেলা করতে হবে। দুশ্চিন্তা করবেন না – গানগুলো আপনার ভালো লাগবে। গ্রামগঞ্জের লোকেশন, মানুষের মুখের সাধারণ ভাষা, সরলতা, হলি খেলা,গায়ে হলুদ, লাঠিখেলা, তলোয়ার খেলা – গোটা বাংলার একটা অংশের সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন কাজী হায়াৎ। এবং আমি তার সেট ডিজাইনিং কে ১০ এ ১০ দিলাম। প্রায় ১০ হাজার মানুষকে এক করে শ্যুটিং করা হয়েছে, এরকম দৃশ্য আমি বাংলা সিনেমায় আগে পাইনি।

“পারফেক্ট হিউম্যান” বিষয়টাও ভালোই ফুটেছে। অত্যাচারিত মানূষ আইনের কাছে সাহায্য পেয়েছে। চেয়ারম্যান পুত্র বাজে কাজ করলে, চেয়ারম্যান তাকে শাসন করেছে। কিন্তু শেষ দুর্ঘটনটা ঘটিয়ে ফেললে নিজের সন্তানের জন্য সে অপরাধের আশ্রয় নেয়।

এক লাইনে ভালো খারাপ বলার চেষ্টা করি।

১। অভিনয় প্রত্যেকের ভালো হয়েছে। পিচ্চি মেয়েটা অসাধারন।
২। ক্যাস্টিং ৯০%
৩। পুলিশ চাইলে যে মানুষকে সত্যি সাহায্য করতে পারে, এটা ভালো। কিছু পজেটিভ প্রভাব হতেও পারে।
৪। ইভ টিজিং বিষয়টাকে ক্লিয়ার করা হয়েছে, সুন্দর করে।
৫। তমা মির্জা, একটা মেইন স্ট্রিম ফোক নায়িকার অভিনয় করেছে। সবসময় সে সেজে গুজে থাকে (আমি যখন গ্রামে থাকতাম, তখন একজনকে চিনতাম, বৈশাখী ভাবি, তিনি এইরকম সবসময় সেজে থাকতেন। আমি তাকে সবসময় সাজুগুজু অবস্থাতেই দেখেছি। ওনার কথা মনে পড়ছিল)
৬। সেট সেইরকম হয়েছে – ১০০ তে ১০০
৭। প্রথমদিক থেকে মুভি প্রচুর পরিমান লজিক এবং রিয়েলিটি নিয়ে আগায়। এটা ভালো।
৮। শেষের দিকে ফিল্ম ” এন্টি-লজিকে” মোড় নেয়। (একটা গানের সময় আমি আমার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম,’মারুফের জায়গায় তুই থাকলে এখন কি করতি?’ উত্তর, ‘ফাডাইয়া ফালাইতাম’। কাজি হায়াৎ সেইটাই দেখালো )
৯। সংলাপ ১০ এ ১০
১০। গানগুলো সুপার। এককথায় অনবদ্য।

“গাঙ্গের পাড়ে হিজল গাছ
গাছের নিচে পাতার বিছানা “

একটা চমৎকার রোমান্টিক গান। নৌকার মধ্যে, মধ্যরাতে, ফাকা বিলে, জোৎস্না রাতে এই গান দৃশ্যায়িত হয়েছে। ডিভিডি বের হলেই এই গান আমি ক্রয় করবো।

১১। তলোয়ার খেয়াল মারুফ একটা হাতে কোপ খায়। সেই দিন সুন্ধায় মনি ডাক্তারের সাথে গাঞ্জার আসরে গান গাওয়ার সময়ে তার হাত একদম ফ্রেস। (যেন ম্যাজিক)
১২। মোবাইলের গুরুত্ব ভালোভাবেই দেখানো হয়েছে। একটা মোবাইল থাকলে আর মেয়েটাকে এরকম অত্যাচারিত হতে হত না।
১৩। গ্যাং-রেপড হওয়ার ঘটনাটা ডাক্তার বর্ননা করার সময় ফ্লাশব্যাকে দেখানো হয়নি। একটা ডকুমেন্টরি দেখানো হয়। সেখানে বাঘ হামলা করে হরিনকে, ছিড়ে খায়। এভাবেই রূপক ব্যবহার করে বোঝানো হয়েছে, কতটা নির্মম নির্যাতন মেয়েটাকে করা হয়েছে।

সর্বোপরি, এই কথা বলে শেষ করতে চাই, আমি খুব চেপে চুপে এই ফিল্মকে ১০ এ ৭ দিতে পারি। চাপ ছাড়লে ১০ এ ১০। আপনি ব্লগার হোন, আর ফেসবুকার হোন, সুশীল হোন আর অশ্লীল হোন, রিক্সাওয়ালা হোন আর পিএইচডি-ধারী হোন – আসুন, এই সিনেমা দেখুন। আমার পক্ষ থেকে আমন্ত্রন রইলো।

প্রধান অভিনেতা – অভিনেত্রীঃ কাজী মারুফ, তমা মির্জা, কাজী হায়াৎ, মিজু আহমেদ, কাবিলা
পরিচালকঃ কাজী হায়াৎ

কাহিনীঃ, চিত্রনাট্য, সংলাপঃ কাজী হায়াৎ
 

Users who are viewing this thread

Back
Top