তোমায় আপন করে রাখবো বলে ভালো যে বেসেছি …
নব্বই দশকের শুরুতেই ‘চাঁদনী’ (০৪/১০/১৯৯১) ছবির মাধ্যমে ঝড় বইয়ে দেওয়া নতুন দুই তারকা নাঈম–শাবনাজের পরবর্তী কোন ছবি দেখার জন্য তখনকার দর্শকদের মতো আমারও আগ্রহ ছিল চরমে।
’দিল’ ছবিতে শাবনাজ-নাঈম
একঘেয়েমি ফোক, সামাজিক অ্যাকশন ছবি দেখতে দেখতে হাঁপিয়ে ওঠা আমার মতো আরও বহু দর্শক তখন ‘চাঁদনী’ ছবির নিটোল প্রেম কাহিনিতে মগ্ন। ফ্রেশ দুটি নতুন মুখ ভিন্ন কাহিনি চমৎকার গান আর লোকেশনের ভিন্নতায় আমরাও বেরিয়ে গেলাম একঘেয়েমির বেড়াজাল থেকে। আবারও মন চাচ্ছিল দ্রুত তাদের নতুন কোন রোমান্টিক ছবি দেখতে।
তবে তাদের দুজনের ছবি না আসলেও নাঈমের দ্বিতীয় ছবিটি ছিল ফজলে হকের পরিচালনায় ‘লড়াই’ (৩১/০১/১৯৯২), সঙ্গে শাবনাজকে না পেলেও নতুন মুখ হিসেবে দেখা গেল মুক্তি নামের সুন্দর একটি মুখকে। মুক্তি গুণী অভিনেত্রী আনোয়ারার মেয়ে এবং এই ‘লড়াই’ ছবিটিই ছিল তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। মুক্তিকে নাঈমের বিপরীতে ভালোই লেগেছিল, তারপরও কেমন যেন শূন্যতা কাজ করছিল শাবনাজকে না দেখে।
যাই হোক… অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নাঈমের তৃতীয় ছবি আর শাবনাজের দ্বিতীয় ছবি হিসেবে মুক্তি পেল গুণী পরিচালক আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘দিল’ (২১/০৫/১৯৯২)। নাঈম-শাবনাজ ছাড়াও বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে যোগ হলেন তখনকার টিভি দর্শকদের বিশেষ করে তরুণদের প্রিয় মুখ আফসানা মিমি, সঙ্গে আরও ছিলেন শবনম, শওকত আকবর ও এটি এম শামসুজ্জামানদের মতো তারকারা। এত সব তারকার ভিড়ে সাধারণভাবেই ছবিটির প্রতি আকর্ষণ বেড়ে গেল আরও বহুগুন।
শুটিং সেটে পরিচালক আজিজুর রহমানের সঙ্গে নাঈম-শাবনাজ। ছবি: মীর শামসুল আলম বাবু
এদিকে রেডিও’র প্রিয় বাণিজ্যিক কার্যক্রমের কল্যাণে ছবির গানগুলো সবার মতো আমারও মুখে মুখে। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও এখনকার মতো ছবি মুক্তির আগে কোনভাবেই গানগুলোর ভিডিও দেখার উপায় ছিল না। যদিও দু-একটি গান তখনকার বিটিভির বহুল জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘ছায়াছন্দে’ দেখানো হতো সেটাও আবার সেসব ছবি মুক্তির পর। অর্থাৎ কোন অবস্থাতেই ছবি মুক্তির আগে কিছু দেখার সম্ভব ছিল না। না পাওয়ার প্রতি সব সময়ই আকর্ষণ বেশি কাজ করে এটাই স্বাভাবিক।
তেমনিভাবে এই নাঈম-শাবনাজদের জুটির দ্বিতীয় ছবিটি দেখার আর্কষণও গিয়ে দাঁড়ালো তুঙ্গে। অবশেষে মুক্তি পেল বহুল প্রতীক্ষিত ‘দিল’। তবে আমার কাছে দুঃখের বিষয় হয়ে দাঁড়ালো, ছবিটি রাজশাহীর সদরের কোন হলে আসলো না বলে।
কিন্তু যখন জানতে পারলাম, শহর থেকে কিছু দূরে কাটাখালিতে অবস্থিত একটি হলে ছবিটি চলবে তখন দুঃখটা যেন সুখে পরিণত হয়ে গেল (হলটির প্রথমদিকে নাম ছিল নতুন সিনেমা হল, পরবর্তীতে নাম ছিল রাজতিলক)। এর কারণও আছে, আজ থেকে প্রায় ২৮/২৯ বছর আগে ব্যক্তিগত কোন ইনকামও ছিল না যে এক্সট্রা খরচ করে দূরের কোন জায়গায় গিয়ে ছবিটি দেখবো বলে, সঙ্গে পরিবারের কড়া শাসন তো ছিলই। সাধারণের চাইতে অতিরিক্ত সময় ঘরের বাইরে থাকার কৈফিয়ত দিতে হতো। ছবিটি দেখতে হবে এখন এটাই একমাত্র কাজ মনে করে ‘দে ছুট’ কাটাখালীর নতুন সিনেমা হলের উদ্দেশ্যে। অবশ্য আমি একা নই সঙ্গে আরও সিনেমাপ্রেমী দুজন বন্ধু মিলে চলে গেলাম কাটাখালীর নতুন সিনেমা হলে।
নাঈম, আফসানা মিমি ও শবনম
নতুন হলের নতুন পর্দা… এ ব্যাপারটি আমার দারুণ এক ভালো লাগার জিনিস ছিল। যার জন্য নতুন কোথাও বেড়াতে গেলে আগেই সেখানকার স্থানীয় হলে ঢুঁ মারতাম হলটি কেমন তা দেখার জন্য। একসঙ্গে বন্ধুরা মিলে হলে গেলে যথারীতি টাকা ভাগাভাগি করে টিকিট কাটতাম আমরা, সেই হিসেবে যার যার ভাগের টাকা এককরে কেটে নিলাম তিনটি টিকিট ডিসির ক্লাসে।
নতুন হল হিসেবে ভেতরে বাইরে দারুণ লাইটিং-এর সাজে হলের চমৎকার পরিবেশে দেখে নিলাম নাঈম-শাবনাজের আরেকটি অসাধারণ রোমান্টিক গল্পের চমৎকার চিত্ররুপ ‘দিল’। যার রেশ ঐ ছবি দেখা থেকে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করতে করতে চলেছিল মাস অবধি।
তবে এখন মনে হচ্ছে সেই ভালো লাগার রেশ হয়তো এখনো শেষ হয়নি, শুধু এই ‘দিল’ ছবিটিই না এ রকম আরও বহু বহু ভালো লাগার ছবির রেশ এখনো মনের কোন এক গভীরে ভালোলাগার পরশ বইয়ে দিচ্ছে নীরবে-নিভৃতে!
* লিখেছেন: আরিফুল হাসান