What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

হিজরি নতুন বছর ও মহররম মাসের ফজিলত (1 Viewer)

dhxe1Sk.jpg


নববর্ষ ১৪৪৩ হিজরি সমাগত। ধর্মীয় বিধিবিধান চান্দ্র তারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইসলামি আচার–অনুষ্ঠান, আনন্দ–উৎসবসহ সব ক্ষেত্রেই মুসলিম উম্মাহ চান্দ্র তারিখের ওপর নির্ভরশীল। হিজরি সনের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর তাহজিব, তমদ্দুনও ঐতিহ্যগতভাবে সম্পৃক্ত। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কৃষ্টি–কালচারে ও মুসলিম জীবনে হিজরি সনের গুরুত্ব অপরিসীম।

জীবন বা আয়ু সময়ের সমষ্টি। বয়স যত বাড়ে, নির্ধারিত আয়ু তত কমে। সময়ের চাকা ঘুরে মানুষ তার জীবনের পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। সময়ের হিসাব দিতে হবে। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির সময় তার আয়ু নির্ধারিত করে দেন। তিনি আয়ু বাড়াতে ও কমাতে পারেন। নেক আমল, দান–খয়রাত, মাতা-পিতার খেদমত, গুরুভক্তি এবং আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর সেবা আয়ু বৃদ্ধির কারণ হয়।

সময়কে মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহারোপযোগী করে প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন দিন, রাত, মাস, বছর ইত্যাদি। বছরকে আমরা সাল বা সন বলি। বছর শব্দটি মূল হলো উর্দু বরছ, সাল শব্দটি ফারসি এবং সন শব্দটি আরবি; বাংলায় বর্ষ, বৎসর ও অব্দ। সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর আবর্তনের সময়কালকে সৌরবর্ষ এবং পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের আবর্তনের সময়কালকে চান্দ্রবর্ষ বলা হয়। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেছেন, ‘আর সূর্য ও চন্দ্র হিসাব নিমিত্তে।’ (সুরা-৫৫ আর রহমান, আয়াত: ৫)। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর হিজরতের বছরকে ইসলামি সন গণনার প্রথম বছর ধরা হয়েছে বলে এটি হিজরি সন নামে পরিচিত। হিজরি সন চান্দ্রবর্ষ ও সৌরবর্ষ উভয় হিসেবে গণনা করা হয়। সৌরবর্ষে ৩৬৫ ও ৩৬৬ দিনে বছর হয়। চান্দ্রবর্ষ ৩৫৪ ও ৩৫৫ দিনে বছর হয়। ইসলামি শরিয়তের ফিকহি বিধানগুলোতে বছর বলতে চান্দ্রবর্ষকেই বোঝানো হয়।

হজরত উমর (রা.)-এর খেলাফতের সময় বিস্তৃত ভূখণ্ড ইসলামি খেলাফতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ঐতিহাসিক আলবেরুনির বর্ণনায়, হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) একটি পত্রে উমর (রা.)-কে জানান, আপনি আমাদের কাছে যেসব চিঠি পাঠাচ্ছেন, সেগুলোতে সন-তারিখের উল্লেখ নেই, এতে আমাদের অসুবিধা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে খলিফা উমর (রা.) একটি সন চালুর ব্যাপারে সচেষ্ট হন। আল্লামা শিবলী নোমানী (রহ.) সুপ্রসিদ্ধ আল ফারূক গ্রন্থে উল্লেখ করেন: হজরত উমর (রা.)-এর শাসনামলে ১৬ হিজরি সনের শাবান মাসে খলিফার কাছে একটি দাপ্তরিক পত্রের খসড়া পেশ করা হয়, পত্রটিতে মাসের উল্লেখ ছিল; সনের উল্লেখ ছিল না। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন খলিফা বললেন, পরবর্তী কোনো সময়ে তা কীভাবে বোঝা যাবে যে এটি কোন সনে পেশ করা হয়েছিল? অতঃপর তিনি সাহাবায়ে কেরাম ও অন্যান্য শীর্ষ পর্যায়ের জ্ঞানী-গুণীদের পরামর্শে হিজরতের ১৬ বছর পর ১০ জুমাদাল উলা মুতাবিক ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে হিজরি সন প্রবর্তনের এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। হিজরতের বছর থেকে সন গণনার পরামর্শ দেন হজরত আলী (রা.)। পবিত্র মহররম মাস থেকে ইসলামি বর্ষ শুরু করার পরামর্শ প্রদান করেন হজরত উসমান (রা.)। (বুখারি ও আবুদাউদ)।

ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। মহররম শব্দের অর্থ সম্মানিত। ইসলামের ইতিহাসে এই মাস এমন কতগুলো উল্লেখযোগ্য স্মৃতিবিজড়িত, যে স্মৃতিসমূহের সম্মানার্থেই এই মাসকে মহররম বা সম্মানিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কালামে রয়েছে, ‘আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২, তার মধ্যে ৪টি মাস (মহররম, রজব, জিলকদ, জিলহজ) সম্মানিত।’ (সুরা-৯ তাওবা, আয়াত: ৩৬)। হাদিস শরিফে চান্দ্রবর্ষের ১২ মাসের মধ্যে মুহররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর মাস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি)।

চান্দ্রবর্ষের প্রথম মাসটির পুরো নাম হলো ‘মুহররামুল হারাম’। এ মাসের করণীয় আমলসমূহ হলো: চাঁদের প্রথম রাতে ও দিনে নফল নামাজ। প্রথম ১০ দিন নফল রোজা। বিশেষত ৯ ও ১০ মহররম আশুরার সুন্নাত রোজা। আশুরার দিনে ও রাতে নফল ইবাদত। (তরিকত শিক্ষা, খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা রহ. পৃষ্ঠা: ৩০ ও ৯৬; রাহাতুল কুলুব, ইমাম রাযীন রহ.)।

আসুন, তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে পুরোনো বছরকে বিদায় দিয়ে ইবাদতের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানাই। বিশ্বাস, আশা ও ভালোবাসা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাই। জীবনের অনন্ত যাত্রায় একে অন্যের সহযোগী ও কল্যাণকামী হই। আমিন!

● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top