৩২,৮৭,২৬৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশ ভারত। এখানে যেমন রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বিভিন্ন স্থান, ঠিক তেমনি রয়েছে নানান গা ছমছম করা ভয়ংকর ভুতুড়ে যায়গা। সমগ্র ভারত বর্ষের বিভিন্ন জায়গাতে তাই ভৌতিক আনাগোনার কথা শোনা যায়। তার মধ্যে অন্যতম একটি স্থান হচ্ছে রামোজি ফিল্ম সিটি , যার অবস্থান হায়দ্রাবাদে।
রামোজি ফিল্ম সিটি
ভৌতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানার আগে চলুন স্থানটির ইতিহাস সংক্ষেপে জেনে নেই। রামোজি ফিল্মসিটি হল ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের অন্তর্গত একটি এলাকা যা মূলত চলচিত্র নির্মাণের জন্য বানানো হয়েছে। এটি ১৯৯৬ সালে হায়দ্রাবাদ শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হয়। এই ফিল্ম সিটির আয়তন ৬ বর্গকিলোমিটার এর বেশি। আয়তনের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফিল্মসিটি । এখন পর্যন্ত এই ফিল্মসিটিতে প্রায় ১২০০ চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এখানে হিন্দি, বাংলা, তামিল, তেলেগু,মালায়ালম, কান্নাদা সহ বেশ কিছু বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। মুভিতে আমরা কলকাতার গলি, চেন্নাই এর মহল্লা, দিল্লির পুরান বাজার কিংবা মুম্বাই এর যে বস্তি দেখে থাকি, তা আসলে রামোজি ফিল্মসিটিতে সেট ফেলে বানানো হয়েছে। এছাড়াও ভারতের বহু গুরুত্ব পূর্ন স্থাপনার রেপ্লিকা এখানে তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ স্থান। বিশেষ করে রাতের বেলা যখন উজ্জ্বল আলোয় স্থানটি আলোকিত হয়, তখন উন্মোচিত হয় রামোজি ফিল্মসিটির অপার্থিব সৌন্দর্য।
রামোজি ফিল্ম সিটি এর অজানা কথা
কিন্তু এই আলো দেখে খুব আনন্দে উদ্ভাসিত হবেন না! আলোর আড়ালেই রয়েছে অন্ধকার। নির্মাণের পর থেকেই নানান ভৌতিক কান্ডের জন্য এই স্থানটি কুখ্যাতি পেয়ে আসছে। তবে সব চেয়ে বেশি ভুতুড়ে কর্মকাণ্ডের কথা শোনা যায় ফিল্মসিটির অন্তর্ভুক্ত সিতারা হোটেলটি ঘিরে। এই হোটেল এর প্রত্যেকতি কক্ষে, বারান্দায়, লিভিং রুমে কিংবা ড্রেসিংরুমে, সর্বত্র ছড়িয়ে আছে অতৃপ্ত আত্মাদের উপস্থিতির নানান কাহিনী। বলা হয়ে থাকে যে, এখানকার আলো নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায় এবং একবার অন্ধকার হলে নিজে থেকেই ফিরে আসে। বাতি হাতে পাহারাদারেরা আহত হয় এবং অবশিষ্ট খাওয়ার নিজের মতো বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। শুধু সেতারা হোটেল নয়, রামোজি ফিল্ম সিটির বহু হোটেলেই ভৌতিক কাণ্ডকারখানার গল্প শোনা যায়। বহুবারই লোকজনদের একথা বলতে শোনা গিয়েছে যে, রহস্যজনক কিছু ছায়া দেখতে পেয়েছেন। কেউ কেউ আবার বলেছেন, রাতে নাকি দরজায় ঠোক্কর মেরে যায়। এ কি ভূত? নাকি অন্যকিছু! এখানে হঠাৎ করেই লাইটে উপর থেকে নিচে ভেঙে পড়ে, কাপড়জামা আপনা থেকেই ছিঁড়ে যায়৷ স্থানীয়রা বলেন এখানকার ভুতেরা নাকি মহিলাদেরই বেশি উত্যক্ত করে৷ এসব কারণে ভারতের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রায়শই প্রকাশিত হয় হায়দেরাবাদ এর রামোজি ফিল্মসিটিতে কেন্দ্র করে বলা নানান ভৌতিক কাহিনী।
কিন্তু কেন এমনটি হয় এখানে?
আসলে এর পেছনে রয়েছে এক ইতিহাস। ইতিহাস বলে, হায়দরাবাদ এর রামোজি ফিল্ম সিটি যে স্থানটিতে তৈরি করা হয়েছে তা মূলত মহাবীর নিজাম এর যুদ্ধক্ষেত্র অনাজপুর। এই স্থানটিতে বেশ কয়েকবার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। প্রতিটি যুদ্ধে শত শত সৈনিক নিহত হয়েছে এখানে। তাই অসংখ্য মৃত সৈনিকদের আত্মা পরিবেষ্টিত এই জায়গা। এ কারনেই অশরীরী আত্মার উপস্থিতি অনুভুত হয় এই ফিল্ম সিটি সমস্ত স্থান জুড়েই। বলা হয় রাত বাড়ার সঙ্গে ওই অঞ্চলে সৈনিকদের আত্মার উপদ্রব বাড়তে থাকে। যদিও অশরীরী আত্মার কারণে মানুষের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে কখনও শোনা যায়নি। তারপরও রাতের বেলা এই অঞ্চলে একা চলা ফেরা করাটা মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে।
এই ছিল রামোজি ফিল্মসিটি এর উপর আমাদের প্রতিবেদন। আমরা আগামিতে ভারত বর্ষের অন্যান্য ভৌতিক স্থানের উপর প্রতিবেদন নিয়ে হাজির হব। আপনার যদি কোন ভুতুড়ে স্থানের নাম জানা থাকে, তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানান।