গিফি
জীবনে হাতের আঙুল ফোটাননি, এমনটা একজনকে দেখাতে পারবেন? হয়তো পারবেন। তবে সংখ্যাটা যে অতি অতি সামান্য হবে, তা চোখ বন্ধ করে বলা যায়। কোথাও লেখা নেই যে হাত বা পায়ের আঙুল ফোটাতেই হবে; তারপরও আমরা রোজ চেতনে–অবচেতনে আঙুল ফোটাই। কেন ফোটাই? আর আঙুল ফোটালে লাভই–বা কী? ক্ষতির কথাই তো বলেন অনেকে, বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠরা। আঙুল ফোটালে নাকি আর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথায় ভুগতে হয়। আসলে কোনটা সত্যি?
চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে, তা জানার আগে বাস্তবে যা হয়, তা নিয়ে খানিকটা কথা বলা যাক। এটা তো সবারই জানা, আঙুল ফোটালে মটমট করে একটা দারুণ শব্দ হয়। স্বীকার করতেই হবে, এই শব্দ কানে আরাম দেয়। আর কানের আরাম প্রশান্তি হয়ে ধরা দেয় মনে।
গিফি
তা ছাড়া ঘুম থেকে উঠে বা একটানা বসে থাকা কিংবা ক্লান্তিকর কাজের পর শরীরের জড়তা কাটানোর জন্যও আঙুল ফোটাই আমরা। কারও কারও বেলায় এটা মুদ্রাদোষেও পরিণত হয়। স্যালনে গেলে তো কথাই নেই। আর কিছু না হোক, হাতের আঙুলগুলো ফুটিয়ে নেন অনেকেই।
এবার আসা যাক আসল কথায়। হাতের আঙুল ফোটালে ক্ষতি কী? লাভ আছে কোনো? হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক ব্লগ পোস্টে বলা হয়েছে, আঙুল ফোটালে যে শব্দ হয়, তা হয়তো আশপাশের মানুষকে বিরক্ত করতে পারে, তবে এর থেকে আর্থ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় না। কারণ, বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা আঙুল ফোটান আর যাঁরা ফোটান না—উভয়ের ক্ষেত্রেই আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি নেই কিংবা সমান। ক্যালিফোর্নিয়ার চিকিৎসক ডি এল আনগার সারাজীবন কেবল একটি হাতের আঙুলই ফুটিয়েছেন এই গবেষণার স্বার্থে। প্রতি দশকে আঙুলের এক্সরে করে কোনো সমস্যাই খুঁজে পাননি তিনি।
গিফি
আঙুল ফোটানোর সময় যে শব্দ হয়, তা নিয়েও ভুল ধারণা আছে। অনেকেই মনে করেন, এই শব্দ হয় হাড়ের সঙ্গে হাড়ে ঘষা লাগার ফলে। আসলে কিন্তু তা নয়। মানবদেহে হাড়গুলোর সংযোগস্থলে একধরনের তরল পদার্থ থাকে। যা হাড়ের নড়নচড়নে সাহায্য করে। একে বলে সিনোভিয়াল ফ্লুইড।
হাড়ের সংযোগস্থলে শূন্যস্থান তৈরি হলে এই তরল পদার্থে বুদ্বুদ তৈরি হয়, আর তা ফেটেই শব্দ সৃষ্টি করে। একইভাবে হাড় বা আঙুল যখন টানা হয় অথবা বাঁকানো হয়, তখন হাড়ের সংযোগস্থলে ফাঁক বেড়ে যায়। আর ঠিক তখনই তরল পদার্থের বুদ্বুদ ফেটে যায় এবং মটমট শব্দ কানে আসে। এ কারণে একই আঙুল একবার ফোটালে সঙ্গে সঙ্গে আরেকবার ফোটানো যায় না। হাড়ের সংযোগস্থলে তরলের বুদ্বুদ তৈরি হতে কিছুটা সময় নেয়।
হাতের আঙুল ফোটালে কি আর্থ্রাইটিস হয়?
ফ্রিপিক
আর্থ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি নেই বলে কি আরও বেশি বেশি আঙুল ফোটানো ঠিক হবে? মোটেও না। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ওই ব্লগ পোস্টে আঙুল ফোটানো বদভ্যাসে পরিণত না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আঙুল ফুটিয়ে গেলে হাত মুষ্টিবদ্ধ করার শক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া আঙুল ফোটানোর সময় আঘাত পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে প্রচুর। তাই সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
(লেখাটা একটানে লিখেছি। এবার একটু আঙুল ফোটানো যাক!)
গিফি
* সূত্র: হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং