হোটেল থেকে চেকআউট করে বের হয়ে কেন যেন মনে হলো, টেক্সাসের সান অ্যান্টোনিওতে বেড়াতে এলে সব সময় রাতের রিভারওয়াকই দেখা হয়, দিনের বেলা জায়গাটা নিশ্চয়ই অন্য রকম। নাশতার জায়গাটা তাই রিভারওয়াকেই বেছে নিলাম।
নাশতা সেরে রিভারওয়াক ধরে হাঁটতে হাঁটতেই চোখে পড়ল গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস জাদুঘর। পত্রিকার পাতায় প্রতিদিনই যে নতুন নতুন রেকর্ডের কথা পড়তে পড়তে বড় হওয়া, তার সবকিছু একসঙ্গে দেখা যাবে! এ সুযোগ ছাড়ি কী করে? তাই সময় নিয়ে বরের সতর্কবাণী সত্ত্বেও ঢুকে পড়লাম।
ঢুকতেই চোখে পড়ল ওপর থেকে ঝুলিয়ে রাখা লাল, নীল, সবুজের মিশেলে তৈরি বিশাল এক হাওয়াই শার্ট। গলার মাপই সাড়ে ৬০ ইঞ্চি! ভাবা যায়? শার্টটা দেখে কেন যেন চাচা চৌধুরী সাবুর কথা মনে পড়ে গেল। ওই রকম দৈত্যাকৃতি কেউ ছাড়া এ শার্ট কার গলাতেই–বা মানাবে?
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস জাদুঘরের সামনে লেখক
দৈত্যদের কথা বলতে বলতেই দুই বিশালদেহী মানবমূর্তি সামনে চলে এল। পুরুষদের জন্য যেখানে ৪০ ইঞ্চি কোমরের মাপকেই বিপজ্জনক স্থূলতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেখানে নিউইয়র্কের ওয়াল্টার হাডসনের কোমরের মাপ ছিল ১১৯ ইঞ্চি! তার পাশেই একটা লাঠিসমেত রবার্ট ওয়াডলোর ভাস্কর্য, যিনি মাত্র ২২ বছর বয়সে মারা গেলেও ৮ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে এখনো বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানুষ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্থূলকায় অনেক ব্যক্তির ওজন কমানোর কসরত তো আজকাল দেখি, তবে সবচেয়ে বিশালদেহী মানুষের কথা কি জানি আমরা? জন ব্রোয়ার মিনোখ নামের একজনের ওজন ছিল প্রায় ৬৩৫ কেজি (বাপ রে!), বিছানায় তাঁকে কাত করাতে প্রয়োজন হতো ১৩ জন লোক! তবে শুধু পুরুষদের নিয়ে বললেই হবে নাকি? সবচেয়ে লম্বা নারী স্যান্ডি অ্যালেনের একটা খয়েরি রঙের স্কার্টও জাদুঘরে সযত্নে রাখা আছে। গিনেস রেকর্ডের মতে, তার উচ্চতা ছিল ৭ ফুট ৭ ইঞ্চি।
জাদুঘরে রবার্ট ওয়াডলোর ভাস্কর্য, ছবি: সংগৃহীত
দেখতে দেখতে দোতলায় চলে এলাম। বিশ্বের বিভিন্ন সময়ের ধনী ব্যক্তিদের নাম তো শোনাই যায়, এবার পরিচয় হলো বিশাল ধনী এক কুকুরের সঙ্গেও। ১৯৩১ সালে নিউইয়র্কের এলসা ওয়েন্ডেল তাঁর ‘টবি’ নামের পুডল কুকুরের জন্য দুই কোটি ডলারের সম্পদ রেখে যান। ইশ্, এত টাকা যদি আমাকে কেউ দিত!
‘লোহা হজম করা’ বলে একটা কথা চালু আছে না? সত্যি সত্যি টনকে টন লোহালক্কড় হজম করে ফেলতে পারে এমন মানুষ কিন্তু আসলেই ছিল। মাইকেল লোতিতো নামের এক ব্যক্তি তাঁর জীবনের চার দশকে প্রায় ৯ টন ধাতব বস্তু খেয়েছেন, যার মধ্যে ছিল বাইসাইকেল, বাজার করার কার্ট, টেলিভিশন, কম্পিউটার, এমনকি ‘সেসনা ১৫০’ নামের একটা ছোট সাইজের উড়োজাহাজও!
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস জাদুঘরের ভেতরে, ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকৃতি বইয়ের দেখাও মিলল, অবশ্য একটা বিশাল ম্যাগনিফাইং চশমার সাহায্য নিতে হলো। চীনা রাশিচক্র নিয়ে লেখা বইটি ২০০০ সালে মাত্র ১২টি কপি ছাপা হয়েছিল, প্রতিটির দৈর্ঘ্য–প্রস্থ দুই–ই ১ মিলিমিটারের কম। একটা কক্ষ শুধু টেলিভিশন আর সিনেমার বিভিন্ন রেকর্ড দিয়ে সাজানো। দেখা মিলল সবচেয়ে বেশি গানের অ্যালবাম বিক্রির রেকর্ডধারী মাইকেল জ্যাকসনের প্রমাণ সাইজের মোমের মূর্তির, নিলামে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া পোশাক হিসেবে স্বীকৃত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মেরিলিন মনরোর সোনালি পোশাকের ছবি, সবচেয়ে বেশি আয় করা নায়ক–নায়িকাদের নাম, এ রকম আরও কত কী!
এভাবে একটার পর একটা রেকর্ডের সঙ্গে পরিচিত হতে হতেই কোন ফাঁক দিয়ে যে একটা ঘণ্টা ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল, টেরও পেলাম না। নাহ্, পরেরবার এ রকম জাদুঘরে আসতে হলে সময় করে আসতে হবে।
[FA]pen[/FA] লেখক: আফরিনা হোসেন