হারানো শহর আটলান্টিস – পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে হতবাক করা রহস্যগুলোর মধ্যে একটা। আমাদের এই পৃথিবীতে এখনো অজানা অনেক রহস্য আছে যার সবকিছু আমরা এখনো সমাধান করতে পারিনি। আর এই সব রহস্যের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে পানির নিচের জগত। এই পানির নিচের জগতে কত যে হতবাক করা রহস্য আর অজানা প্রাণী ও গাছপালা রয়েছে, তার কোন ইয়ত্তা নেই। কিন্তু পানির নিচের আর সব রহস্যের মধ্যে হারানো শহর “আটলান্টিস” এর রহস্য সবচাইতে বেশি আলোচিত হয়ে থাকে। আজ আমরা এই রহস্য সম্পর্কে জানবো।
আটলান্টিস কি?
আটলান্টিস একটি কাল্পনিক শহর যা ডাঙায় নয়, পানির নিচে অবস্থিত ছিলো। তবে আসলেই এই শহরে অস্তিত্ব ছিল নাকি এটা পুরোপুরি কল্পনা, তা মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি। কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না এমন একটি শহর কি সত্যিই ছিল যেটি পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছে? তবে গ্রীক দার্শনিক প্লেটো এই শহরকে সম্পর্কে এমনভাবে বর্ণনা করেছেন যেন এই শহরে তিনি নিজে এসে বাস করে গিয়েছেন। এমনই নিখুঁত ও অদ্ভুত ছিল তার বর্ণনা যে অনেক ঐতিহাসিক ভাবেন যে এমন একটি শহর আসলেই ছিল। তাদের বর্ণনা মতে এই শহরের প্রানবন্ত জীবন উঠে এসেছে।
আটলান্টিস শহরের সম্ভাব্য অবস্থান
এই সম্পর্কে পুরোপুরি সঠিক কোন তথ্য কারো কাছে নেই। গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর বর্ণনা মতে, বর্তমান জিব্রাল্টার প্রণালীর কাছেই অসম্ভব উন্নত, আধুনিক ও সুশৃঙ্খল এক দ্বীপ ছিল আটলান্টিস। অদ্ভুত সব আবিষ্কার, সুন্দর সমাজব্যবস্থা ও আধুনিক জীবনধারা সবই ছিল আটলান্টিস শহরবাসীর কাছে। তবে কেন সেই সুন্দর শহরটি বিলুপ্ত হয়ে গেল? প্লেটোই এই শহরের হারিয়ে যাওয়ার এক গল্প শুনিয়েছেন – আজ থেকে প্রায় ১২ হাজার বছর আগে, শেষ বরফ যুগে ভয়াবহ এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে হারিয়ে যায় আটলান্টিস।
কেমন ছিলো সেই আটলান্টিস শহর?
ধারণা করা হয় যে পৃথিবীর বুক থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো শহর হারিয়ে গিয়েছে তার মধ্যে আটলান্টিস সবচেয়ে বিখ্যাত একটি শহর। বর্ণনা অনুযায়ী, এটি ছিল একটি সমৃদ্ধশালী ও উন্নত শহর। জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প-বাণিজ্য, সবুজ-শ্যামলের পাশাপাশি আটলান্টিস শহরের খনিগুলোও সোনা, রুপা ও তামার আকরিকে ছিল ভরপুর। এই শহরের প্রধান আকর্ষণ ছিল এর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত রাজপ্রাসাদ। এই রাজপ্রাসাদটি একটি টিলার উপর অবস্থিত ছিল। সাজানো-গুছানো জলপথ ও স্থলপথ দ্বারা শহরটি বেষ্টিত ছিল। এই শহরের রাজার সুশাসনের ফলে শহরের বাসিন্দারা সবাই সুখে-শান্তিতে বাস করতেন। কিন্তু তাদের সুখ প্রকৃতির সহ্য হয় নি। ভয়ংকর ভূমিকম্পের সাথে সাথে বিস্ফোরিত হতে শরু করল আগ্নেয়গিরি। মহাপ্রলয় শুরু হলো সমুদ্রে। সমুদ্রের দানবীয় থাবায় বিলীন হয়ে গেল সাজানো গুছানো শহরটি। তবে এটা কতটুকু সত্যি তা নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে।
আটলান্টিস শহরের ইতিহাস বিস্তারিত জানতে পারেন হিস্টোরি চ্যানেল থেকে।
এই হারানো শহর সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধারণা
আটলান্টিস শহরে আকৃতি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা মনে করেন যে, আটলান্টিস নামে কোন শহর যদি সত্যিই থাকতো, তাহলে তা হতো আজকের সমগ্র এশিয়া মহাদেশ এর সমান বড়। ধারণা করা হয় যে আটলান্টিস শহরটি পানির নিচে বড় বড় পাথুরে পাহাড়ের ওপর অবস্থিত এবং এটিকে ঘিরে আছে পানি ও ভূমির বলয়। এদের মধ্যে একটি পাহাড়ের নাম হলো “ক্লেইটোর পাহাড়”। বলা হয়ে থাকে যে, সমুদ্রের দেবতা পসেইডন তার স্ত্রীকে এই পাহাড়ের মাঝে কোন এক প্রাসাদে বন্দী করে রেখেছেন।
শুধু এখানেই শেষ নয়! পানির তলদেশের অধিকারী আটলান্টিসের অধিবাসীদের অলৌকিক ক্ষমতা ছিল বলে ধারণা করা হয়। এমনকি, তাদের আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ছিল। গ্রীক পুরাণে বলা হয়েছে তারা রাগ করলে কিংবা কারো ওপর ক্ষুব্ধ হলে সমুদ্রের তলদেশে নানা ধরণের ঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় এর সৃষ্টি করতো। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলেন অন্যকথা। তাদের মতে আটলান্টিস বলে যদি আদৌ কোন শহর থেকে থাকত, তবে সে শহরের মানুষ হত বর্বর প্রজাতির জলজ জাতি।
শেষ কথা
পানিচের নিচের সমৃদ্ধ শহর আটলান্টিসের এই মিথ আসলেই সত্য নাকি মিথ্যে, এটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক এখনো চলছে। তবে বেশিরভাগ মতামত আটলান্টিস এর পক্ষেই যাচ্ছে। একবার ভাবুন যদি আসলেই এমন একটি শহরের সন্ধান পাওয়া যায় পানির নিচে? তাহলে কি বিস্ময়কর ব্যপারই না ঘটবে! আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আগামীতে নতুন কোন রহস্যের সন্ধান নিয়ে হাজির হয়ে যাবো আপনাদের সামনে। ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।