What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড এবং চীনের মহাদুর্ভিক্ষ (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,653
Messages
117,045
Credits
1,241,450
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
K8nHxJS.jpg


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। এশিয়ার চীন, ইউরোপের সোভিয়েত থেকে শুরু করে আটলান্টিকের ওপারে কিউবায় তখন নতুন বিপ্লবের ডাক। সময়টা পঞ্চাশ ও ষাটের দশক। সারা বিশ্বে তখন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এবং স্বাধীনতার সংগ্রামের আলোড়ন। এরই মাঝে চলছিল মার্কিন ও সোভিয়েতদের মাঝে স্নায়ুযুদ্ধ। চারিদিকে টান টান উত্তেজনা। এমন সময়ে চীনের মতো একটা দেশের হাল ধরা সহজ ছিল না। চীনাদের কাছে মাও তখন দেবতাতুল্য। তার কথাই শিরধার্য। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে মাও চাইতেন খুব দ্রুত চীনকে বিশ্বের নতুন পরাশক্তি হিসেবে দেখতে। ঠিক যেমন তিরিশের দশকে স্টালিন সোভিয়েত ইউনিয়নকে আমূল বদলে দিয়েছিলেন, তেমনই একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতেন কম্যুনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও। তারই সূত্র ধরে চীনে শুরু হয় ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’ নামের এক বিরাট আন্দোলন। যার শুরু মাওয়ের পরিকল্পনা মাফিক হলেও পরিণতি ছিল তার নাগালের বাইরে।

পটভূমি

পঞ্চাশের দশকে চীনে তখন বেশ ভালোভাবেই কম্যুনিস্ট পার্টির রাজত্ব চলছে। পার্টির দুই প্রধান নেতা মাও সে তুং এবং দেং জিয়াও পিং এর নেতৃত্বে শত্রুরা একরকম নিশ্চিহ্ন। স্বাভাবিক নিয়মেই আরেক কমিউনিস্ট রাষ্ট্র এবং বিশ্ব পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন চীনের বন্ধু। কাজেই চেয়ারম্যান মাও এর সামনে সুযোগ ছিল কম্যুনিস্ট শাসন নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার।

তবে মাও পুরোপুরি সোভিয়েতদের অনুসারী হলেন না। তিনি চাননি শুরুতেই বিরোধিতা বাড়ুক। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯৫৬ সালে হান্ড্রেড ফ্লাওয়ারস ক্যাম্পেইনের সময়ে চীনের বুদ্ধিজীবীদের খোলাখুলিভাবে সমালোচনা করার আহ্বান জানানো হয়। পরবর্তীতে সমালোচনার ঝড় বাড়তে থাকলে মাও সেসব বন্ধ করে দেন। প্রায় সাথেসাথেই শুরু হয় ‘অ্যান্টি রাইটিস্ট ক্যাম্পেইন’। দল ও দলের বাইরে বিরোধীদেরকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয় এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে। যার প্রথম এবং ফলপ্রসূ শিকার হন মাওয়ের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সহচরী এবং আধুনিক চীনের রূপকার দেং জিয়াও পিং। ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে সোভিয়েত নেতা নিকিতা খ্রুশ্চেভ যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়ে জানান পরবর্তী ১৫ বছরে সোভিয়েত ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে। সফরে থাকা মাওকে খ্রুশ্চেভের এই বক্তব্য ব্যাপাকভাবে অনুপ্রাণিত করে। দেশে ফিরে এসে মাও নিজেই জড়িয়ে পড়েন প্রতিযোগিতার এক মঞ্চে।

তবে মাওয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা সোভিয়েত ছিল না। বরং প্রতিযোগিতাটা ছিল গ্রেট ব্রিটেনের সাথে। খ্রুশ্চেভের মত তিনিও আশা দেখাতে থাকেন, ১৫ বছরেই ব্রিটেনকে ছাড়িয়ে যাবে চীন। আর এই লক্ষ্যে শুরু হয় তার সামাজিক আন্দোলন, ‘গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড’ ।

z6q4mQy.jpg


নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবারই মাঠে কাজ করা ছিল বাধ্যতামূলক

মাও বিশ্বাস করতেন চীনের বিপুল জনশক্তিকে ঢেলে সাজিয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে এবং যৌথ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করানো গেলে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পর বাড়তি ফসল থেকে যে বিপুল আয় হবে, তা থেকেই শুরু হবে দেশের শিল্প বিপ্লব। যার ফলাফল হিসেবে চীনজুড়ে স্থাপিত হবে প্রচুর কলকারখানা এবং লৌহ প্রস্তুত শিল্প। দেং জিয়াও পিং, ঝৌ এন লাই থেকে শুরু করে পার্টির অনেক প্রবীণ নেতাই মাওয়ের এই পরিকল্পনাকে সমর্থন দিলেন না। দেশের নীতিনির্ধারকদের অনেকের সাথে প্রকৌশলীরাও ভয় পেলেন, এত দ্রুত উৎপাদনে চীনের কলকারখানা আসলেই সক্ষম কিনা। এতসব সমালোচনায় মাও সে তুং ক্ষেপে গেলেন। প্রচন্ড ক্ষিপ্ত মাও দায়ী করলেন সবাইকে। ঘোষণা করলেন, যারাই গ্রেট লিপের বিপক্ষে, তারা প্রকৃতপক্ষে সমাজতন্ত্র এবং মাওয়ের বিরুদ্ধে। এর ফলে দেশজুড়ে চাটুকারদের হাতে ক্ষমতা চলে যেতে শুরু করে।

গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড

গ্রেট লিপের প্রথম প্রভাব পড়ে কৃষিখাতে। চীনের সব গ্রামকে একত্র করে যৌথ চাষাবাদের আওতায় আনা হলো। সব মিলিয়ে গঠন করা হলো ২০ হাজারের বিশাল কমিউন। সামরিক বাহিনীর অধীন চলতো সকল কাজকর্ম। আলাদা ব্যারাকে রাখা হত প্রত্যেক চাষীকে। গ্রামবাসীদেরকে বিউগল বাজিয়ে সকালে ডেকে তোলা হতো। প্যারেড করতে করতে এই বিরাট কর্মীবাহিনী, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মাঠে নামতো। বাচ্চা-কাচ্চারা থাকতো ডে কেয়ার সেন্টারে। এই কমিউনগুলোর বিশাল সব হলঘরে ছিল খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা। ব্যক্তিগত বাসা বা জমি বলে আর কিছু রইলো না চীনে। সব মৌসুমেই প্রতি মাসে ২৮ দিন কাজ করতে হতো চাষীদের। কাজ না করার অপরাধে ছিল ভয়াবহ শাস্তিবিধির ব্যবস্থা। অপমান,খাবার না দেওয়ার বিধানও চালু ছিল সেইসাথে। কমিউনের ওপরে নিয়মিত তদারকির জন্য বেইজিং থেকে নিয়োগ দেওয়া হলো মাওয়ের অনুসারী কর্মচারী আর রাজনৈতিক কমিশনারদের।

w1bKYjo.jpg


চীনাদের কাজের একটি মূহুর্ত

চীনের সমাজে তখন সর্বত্র চাটুকার শ্রেণীর আনাগোনা। যেহেতু মাওয়ের কথাই ছিল শেষ আশ্রয়, মানুষ সেটাই মেনে নিলো। প্রাদেশিক নেতারা বেইজিংয়ে মাওয়ের আনুকূল্য পেতে বিরাট উৎপাদনশীলতার স্বপ্ন দেখাতেন। তারপরে প্রদেশে ফিরে এসে কমিউনগুলোতে বিশাল পরিমাণ গম আর স্টিল উৎপাদনের জন্য চাপ দিতেন। কিন্তু চীনের পক্ষে এত বিপুল পরিমাণ গম ও স্টিল উৎপাদন তখন সম্ভব ছিলনা। মাওয়ের ভয়ে কিংবা মাওকে খুশি করতে কমিউন থেকে প্রাদেশিক নেতাদের মিথ্যে রিপোর্ট দেওয়া হত আর সেই খবর পৌঁছাতো মাওয়ের কাছে।

উৎপাদনের একটা অংশ কমিউনগুলো সরকারকে দিত। স্বভাবতই মিথ্যা রিপোর্টে ঊর্ধ্ব গতির উৎপাদন দেখে মাও উৎপাদনের বাড়তি অংশের চাহিদা জানিয়ে পাঠাতেন। মাওয়ের চাহিদা মিটিয়ে কমিউনগুলোতে খাওয়ার মতো কিছুই থাকতো না। প্রাথমিকভাবে কিছু অঞ্চলে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও গড় ফলাফল তখনও নেতিবাচকই ছিল। ফলস্বরূপ গ্রামাঞ্চলে জীবনযাত্রার মান কমলেও, বাড়তে থাকলো সরকারের চাহিদা। এটা ছিল যেন মিথ্যা রিপোর্টের দুষ্টচক্র। চাহিদা এবং যোগানের এই বিরাট ঘাটতি পরবর্তীতে ডেকে আনে এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ভিক্ষ।

iugEja5.jpg


মাওয়ের কঠোর শাসনে সবাইকে এভাবে গণভাবে খেতে দেয়া হতো

কিন্তু এর মাঝেও কিছু কিছু প্রাদেশিক নেতারা সত্য রিপোর্ট পাঠাতেন। এবং মাওকে বোঝাতে চাইতেন, গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ডের ফলে দেশে অভাব প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। কিন্তু মাওয়ের অনুসারীরা মাওকে বোঝালেন, এটি সম্পূর্ণভাবে পুঁজিবাদী ষড়যন্ত্র। নেতাদের প্রতি অন্ধবিশ্বাস থেকে মাও নিজেও সেটাই মেনে নিলেন। শুরু হলো নতুন নির্যাতন। অনেক কর্মকর্তা আবার খবর পাঠাতেন, কৃষকেরা বাড়তি শস্য লুকিয়ে রাখছে। মাওয়ের গঠিত রেড আর্মি এই মজুদ অনুসন্ধানে কৃষকদের বাড়িতে হানা দেয়। শুরু হয় আরেক লুটতরাজ। এমন অবস্থায় দুর্ভিক্ষের আশংকা দেখা দিল সর্বত্র। চীন কিন্তু তবুও শস্য রপ্তানি করা থামালো না।

দুর্ভিক্ষ ও গ্রেট লিপের অবসান

মাও নিজেও গ্রেট লিপের ফলে আসন্ন দূর্ভিক্ষ নিয়ে ধারণা করতে পারতেন। পরিকল্পনায় ছোটখাট ভুলগুলোর কথা তিনি স্বীকার করে নিতেন। কিন্তু কোনো মৌলিক সমালোচনা তিনি সহ্য করতে পারতেন না। তার একগুঁয়ে, জেদি স্বভাবের কারণেই এমনটা হয়েছিল। এছাড়া চেয়ারম্যান মাও আজীবন কাটিয়েছেন যুদ্ধ আর সংগ্রামের মধ্যে। যার ফলে তার মাঝে এই জেদ সবসময়ই চেপে ছিল।

বাস্তবে কিন্তু সাফল্যের পরিমাণ মোটেও ব্যাপক ছিল না। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত চীনে মহা দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। কৃষকদের কাছে খাবার না থাকার পরেও কমিউন থেকে খাবার চলে যেতে থাকে বেইজিং এর উদ্দেশ্যে। যা বাকি থাকে, তাতে সবার ক্ষুধা মেটানো সম্ভব হতো না। মরতে থাকে মানুষ। এসবের মধ্যে অহংকারী মাও রেড ক্রসের সাহায্যের আবেদন ফিরিয়ে দেয়। ঘটনার ভয়াবহতায় দুই দশক আদমশুমারী করেনি চীন। ১৯৮২ সালে আদমশুমারী করা হলে দেখা যায়, দুর্ভিক্ষের ফলে মৃতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ কোটি।

তবে চীনের মুক্তি সহসাই আসেনি। এই গ্রেট লিপ আর দুর্ভিক্ষের ব্যর্থতা ঠেকাতে মাও শুরু করেন আরেক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যার নাম ‘চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব।’
 

Users who are viewing this thread

Back
Top