বাংলাদেশে অনেক আজেবাজে সিনেমা নির্মিত হয়! কিন্তু এই সব সিনেমার জন্য নেই যথাযথ স্বীকৃতি বা পুরস্কার। তাই ২০১৪ সাল থেকে আমরা তালিকা তৈরির মাধ্যমে পুরস্কৃত করা শুরু করি। যার নাম Golden Baash Awards তথা গোল্ডেন বাঁশ অ্যাওয়ার্ডস।
২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত যে সকল সিনেমা ও কলাকুশলীরা আমাদের বিনোদনের নামে রীতিমত বাঁশ দিয়েছেন, তাদের দেওয়া হবে এবারের পুরস্কার-
★ বাজে সিনেমা: গোয়েন্দাগিরি
নাসিম সাহনিক পরিচালিত ডিটেকটিভ-থ্রিলার ঘরানার ছবিটি গল্প বলার ধরনের দিক থেকে অত্যন্ত শিশুসুলভ ও বিরক্তিকর। শুরুতে স্বল্পদৈর্ঘ্যের টেলিফিল্ম বানানোর প্রয়াসে নির্মিত হলেও মাত্র ২০ দিনে শুটিং কমপ্লিট করার পর নির্মাতা চলচ্চিত্রটিকে পূর্ণদৈর্ঘ্যে রূপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কল্যাণ কোরাইয়া, কচি খন্দকারের মতো সু অভিনেতা এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্মের মতো জনপ্রিয় পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান এ চলচ্চিত্রে জড়িত থাকায় সিনেপ্রেমীদের এছবি নিয়ে আলাদা রকমের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু দর্শকের সকল প্রত্যাশায় পানি ঢেলে দিয়েছে এই অতিবিরক্তিকর চলচ্চিত্রটি।
★ বাজে পরিচালক: মো. আসলাম (প্রতিশোধের আগুন ও বেগমজান)
২০১৯ সালে সর্বাধিক তিনটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করে অখ্যাত এই পরিচালক আলোচনার টেবিলে চলে আসেন। তন্মধ্যে জায়েদ খান-মৌ খান-শাহরিয়াজ অভিনীত ‘প্রতিশোধের আগুন’ ছবিটি উপস্থাপনের দিক থেকে মাত্রাতিরিক্ত দূর্বল। এছাড়া শাকিব খান অভিনীত ‘সেরা নায়ক’ ছবির সাথে এ ছবির গল্পে হুবহু মিল থাকা মাস অডিয়েন্সকে এন্টারটেইন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। অন্য ছবি ‘বেগমজান’ অশ্লীলতা এবং সামাজিক গল্পকে উদ্ভটভাবে উপস্থাপনের জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়।
★ বাজে অভিনেতা: বাপ্পী চৌধুরী (ডনগিরি)
নিঃসন্দেহে বাপ্পী চৌধুরী তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময় পার করেছেন ২০১৯ সালে৷ একটি ছবিও মানের দিক থেকে সন্তোষজনক মনে হয়নি, সেইসাথে ব্যবসায়িক সফলতাও পায়নি। শাহ আলম মন্ডল পরিচালিত ‘ডনগিরি’-এর কলাকুশলীদের মধ্যে উনি তুলনামূলক অধিক জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও, গল্পে ওনার অভিনীত চরিত্রটি তেমন কোনো গুরুত্ব পায়নি। সেইসাথে তিনি অত্যন্ত বাজে পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন, যে পারফরম্যান্স কোনো প্রথমসারির তারকার প্রতি অসম্মানজনক।
★ বাজে অভিনেত্রী: অরিন (বেগমজান)
মো. আসলাম পরিচালিত ‘বেগমজান’ চলচ্চিত্রে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। অভিনয় দেখলে মনে হবে, তিনি অভিনয়ের তুলনায় শাড়ির আঁচল খুলতে মনোযোগ দিয়েছেন বেশি(!) সেইসাথে প্রধান চরিত্র হওয়া সত্ত্বেও তার অভিনয় করা চরিত্রটি দ্বিমুখী এবং যুক্তিসংগত নয়।
★ বাজে খল অভিনেতা: শতাব্দী ওয়াদুদ (দাগ হৃদয়ে)
এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এই গুণী অভিনেতা উক্ত ক্যাটাগরিতে পুরস্কার অর্জন করলেন। ‘দাগ হৃদয়ে’ তে রূপদান করা নেতিবাচক চরিত্রটি একদম গতানুগতিক দ্বিতীয় সারির খলনায়ক চরিত্রগুলোর মতো, যেখানে তার নায়িকার ওপর শারীরিক অত্যাচার এবং নায়কের হাতে মার খাওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই। উপরন্তু এই সামান্য চরিত্রতেও তিনি যে বাজে অভিনয় প্রদর্শন করেছেন, তা অত্যন্ত হতাশাজনক।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা গোল্ডেন বাঁশ অ্যাওয়ার্ড ডাউনলোড করে দিতে পারেন
★ বাজে পার্শ্ব অভিনেতা: সীমান্ত আহমেদ (গোয়েন্দাগিরি)
হাস্যরসাত্মক চরিত্রগুলোতে একসময় তাকে মানানসই মনে হলেও দিনকে দিন গতানুগতিক অভিনয়শৈলীর মাধ্যমে বিরক্তিকর হয়ে উঠছেন৷ সম্প্রতি ‘গোয়েন্দাগিরি’তে তার অভিনয় দেখে মনে হয়েছে তিনি পুরো গোলমাল পাকিয়েছেন, চরিত্রটিকে সিরিয়াস রূপ দিবেন না গতানুগতিক কমেডি চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে। পুরো ছবির সবথেকে বিরক্তিকর অংশের অংশীদার হলেন তিনি।
★ বাজে পার্শ্ব অভিনেত্রী: মনিরা মিঠু (আবার বসন্ত)
মনিরা মিঠু অত্যন্ত সু অভিনেত্রী, যারা ছোটপর্দায় নিয়মিত তার কাজ দেখেন, এ ব্যাপারে আশা করি দ্বিমত পোষণ করবেন না। কিন্তু অনন্য মামুন পরিচালিত ‘আবার বসন্ত’ চলচ্চিত্রে তাকে যে চরিত্রটি দেওয়া হয়েছে, তাতে তিনি একদমই মানানসই ছিলেন না। ফলস্বরূপ, খুবই দূর্বল পারফরম্যান্স পাওয়া গিয়েছে তার কাজ থেকে।
★ বাজে নবাগত/অভিনেতা: শান্ত খান (প্রেম চোর)
‘বাপের টাকা উড়িয়ে খাবো’ নীতি অবলম্বন করে যে কয়জন অভিনয়শিল্পী বড়পর্দায় পা রেখেছেন, প্রযোজক সেলিম খানের পুত্র শান্ত খান হলেন তাদের মধ্যে একজন। অভিষেক ছবি ‘প্রেম চোর’-এ তিনি এতোটাই বাজে অভিনয় করেছেন, যা রীতিমতো অসহ্যকর এবং ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে ফেলার মতো।
★ বাজে নবাগত/অভিনেত্রী: মৌ খান (প্রতিশোধের আগুন)
গ্ল্যামার প্রদর্শন ব্যতীত ‘প্রতিশোধের আগুন’ ছবিতে তার বিশেষকিছু করার ছিল না। কিন্তু এক্ষেত্রেও বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয়, যা তার অভিনয়ের মধ্যে অনুপস্থিত৷ এককথায় এ ছবিতে তিনি দর্শক আকর্ষণ টানতে পুরোপুরি ব্যর্থ।
★ বাজে গান: মনে মনে গোপনে (বয়ফ্রেন্ড)
‘আমরা করবো ডেট, খাবো রে চুমা;
তোরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমা, ঘুমা।
মিটিং-ফিটিং সেট, ফাটাবো বোমা;
তোরা নাকে তেল দিয়ে ঘুমা, ঘুমা।’
শুনলে হয়তো পর্দায় অবাকদৃষ্টিতে চেয়ে থাকবেন, এটি একটি রোম্যান্টিক গানের লিরিক্স! সেইসাথে তাসকিন রহমানের দূর্বল ড্যান্স পারফরম্যান্স গানটিকে এই পুরস্কার নিতে সহায়ক ভুমিকা রেখেছে। গানটি লিখেছেন বর্তমান চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় গীতিকার সুদীপ কুমার দীপ, সুর দিয়েছেন প্রীতম। গেয়েছেন ভারতের সংগীতশিল্পী প্রসেনজিৎ ও জেমী।
★ হতাশাজনক সিনেমা: ফরায়েজী আন্দোলন ১৮৪২
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে যখন কোনো চলচ্চিত্র নির্মিত হয়, তখন যেকোনো দর্শকই চাইবে সময়ের সেরা উপাদানগুলো বড়পর্দায় দেখতে। এতে করে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য বর্তমান জেনারেশনের কাছে ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে। কিন্তু আমিন খান অভিনীত ‘ফরায়েজী আন্দোলন ১৮৪২’ এ চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা চলচ্চিত্র নির্মাণে এতোটাই দূর্বলতার পরিচয় দিয়েছেন, কোনো আমিন খান ভক্ত এই চলচ্চিত্রকে মনে রাখতে চাইবে না। দীর্ঘসময় ধরে শুটিং এবং প্রযোজকের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান কারণ।
★ বাজে রিমেক: আকাশ মহল
এক সময়ের জনপ্রিয় নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত এ ছবিটি ১৯৮৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ফ্যান্টাসি ঘরানার ছবি ‘যাদু মহল’ এর আনঅফিসিয়াল রিমেক। একটি ভালো চলচ্চিত্রের ভেতরে দর্শক যেসব গুণাবলী খুঁজে বেড়ায়, তার কোনোটাই ‘আকাশ মহল’ চলচ্চিত্রে নেই। নির্মাতা মূল শিল্পী (আইরিন সুলতানা, ইমন) দের দিয়ে ডাবিং করানোর প্রয়োজনটুকু বোধ করেননি।
★ সিরিয়াস প্রেক্ষাপটে উদ্ভট সিনেমা: গার্মেন্টস শ্রমিক জিন্দাবাদ
গার্মেন্টস শিল্পকে রক্ষা করতে এছবিতে যা যা দেখানো হয়েছে তা অত্যন্ত শিশুসুলভ ও হাস্যকর। বিশেষকরে এছবিতে দেখানো খলচরিত্রগুলোর কুটকৌশল অত্যন্ত লেইম, সেইসাথে পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ছবিটিকে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। যার কারণে কাজী মারুফ, রুবেল, অমিত হাসানদের মতো তারকা অভিনেতা থাকা সত্ত্বেও ছবিটি আশানুরূপ আলোচিত হয়নি।
★ বাজে পর্দা জুটি: মাহি-রুশো (অবতার)
মাহিয়া মাহী এই নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার এ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার অর্জন করলেন। ছবিতে এই জুটি অনস্ক্রিন রোম্যান্সে একদমই স্বতঃস্ফুর্ত নয়, যার কারণে দর্শকমনে কোনোরকমের ভালোলাগা তৈরি হয় না।
★ নাম বদনাম অ্যাওয়ার্ড: মনের মতো মানুষ পাইলাম না
সবচেয়ে বাজে নামের সিনেমাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে। শাকিব খান, বুবলী, মিশা সওদাগর অভিনীত এবং জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত পবিত্র ঈদে মুক্তি পাওয়া এছবিটি দেখেছেন এমন কেউই এই নামের পেছনে যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
★ দাঁত ভাঙা অ্যাওয়ার্ড: জায়েদ খান (প্রতিশোধের আগুন)
সবচেয়ে বাজে ডায়লগ ডেলিভারি দেয়ার জন্যে এই পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে। বছর তিনেক আগে ‘অন্তর জ্বালা’ দিয়ে অভিনেতা জায়েদ খানের অভিষেক হয়েছে, এমনটাই বলে থাকেন অনেকে। কিন্তু এর পরের ছবিতেই তিনি যেনো তার পূর্বের আনাড়িপনায় ফিরে গেলেন, যার মধ্যে একজন নায়ক কিংবা অভিনেতার গুণাবলি খুব কম খুঁজে পাওয়া যায়।
নির্মাতা আর কলাকুশলীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, আপনারা টাকা বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিনেমার নামে অখাদ্য বানিয়ে দর্শকদের গেলানোর মত জুলুম করবেন না। দর্শকদের প্রকৃত ভালোবাসা পেতে চাইলে সিনেমাবান্ধব হয়ে উঠুন। সেন্সরবোর্ড পার করে সিনেমা নামের অখাদ্য দর্শকদের কাছে নিয়ে আসার মত অন্যায় করবেন না প্লিজ।