What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

গির্জার শহরে বিদায়ের ঘণ্টা (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,653
Messages
117,045
Credits
1,241,450
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
5G014zW.jpg


বুবানি ন্যাশনাল পার্কের পর মিলান আমাকে নিশের সিটি সেন্টারের দিকে নিয়ে গেলেন। নিশ যদিও সার্বিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম নগরী, তবে আয়তনে শহরটি খুব বড়, এমনটি বলা যাবে না। নিশের সিটি সেন্টারও আয়তনে অত্যন্ত ক্ষুদ্র তবে পরিপাটি। সিটি সেন্টারের ভেতর প্রবেশ করতে না করতেই গানের সুর ভেসে এল। বয়স্ক এক লোককে দেখলাম ব্যাগ পাইপের সুরে গান ধরেছেন। দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যাগ পাইপ জাতীয় বাদ্যযন্ত্র হিসেবে পরিচিত। স্লাভরা ব্যাগ পাইপকে ‘গাইদা’ নামে ডেকে থাকেন।

XStSVDb.jpg


কিং মিলান’স স্কয়ার

নিশের সিটি সেন্টারের মূল চত্বর প্রাথমিকভাবে ‘কিং মিলান’স স্কয়ার’ নামে পরিচিত। ১৮৬৮ থেকে ১৮৮৯ সাল পর্যন্ত সার্বিয়ার শাসনভার রাজা মিলানের অধীনে ন্যস্ত ছিল। তাঁর হাত ধরে সার্বিয়া অটোমান সাম্রাজ্যের হাত থেকে স্বাধীনতা পায়। নিশের সিটি সেন্টারে তাঁর স্মরণে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। কিং মিলান’স স্কয়ার থেকে সামান্য কয়েক গজ হাঁটলে স্টেভান স্রেমাক অ্যান্ড কালচা মনুমেন্ট নামে আরও একটি বিখ্যাত ভাস্কর্য দেখতে পাবেন।

দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে স্টেভান স্রেমাক একজন জনপ্রিয় লেখক হিসেবে পরিগণিত হন। আর কালচা হচ্ছে স্টেভান স্রেমাক রচিত বিখ্যাত উপন্যাস ‘ইভকোভা স্লাভা’র অন্যতম আলোচিত চরিত্র। ভাস্কর্যটির নির্মাতা ছিলেন সার্বিয়ার বিখ্যাত ভাস্বর ইভান ফেলকার। ব্রোঞ্জের তৈরি এ ভাস্কর্য দেখলে মনে হবে কালচা নিজ মহিমায় গল্প বলে যাচ্ছেন এবং বাদশাহ আকবর যেভাবে তানসেনের গান মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতেন, ঔপন্যাসিক স্টেভান স্রেমাক ও কালচার বিশ্বস্ত গৃহপালিত কুকুর চাপা তাঁর বলা গল্প মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে।
দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চার শ বছরের অটোমান শাসন সার্বিয়ার স্থানীয় হস্তশিল্প ও সিরামিক শিল্পকে করেছে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। নিশের সিটি সেন্টারের উপকণ্ঠে অবস্থিত টিংকারস অ্যালে নামের সড়কটি অটোমান শাসনামলে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে কারুশিল্পের জন্য এক প্রসিদ্ধ স্থান হিসেবে গড়ে উঠেছিল। বর্তমানে অবশ্য সড়কটিতে তেমন কোনো কারুশিল্পের নিদর্শন চোখে পড়ে না, তবে সড়কটি নিশের অন্যতম ব্যস্ত অঞ্চল হিসেবে পরিগণিত হয়।

WPOik9p.jpg


সার্বিয়ার অন্যতম বিখ্যাত ভাস্কর্য স্টেভান স্রেমাক অ্যান্ড কালচা মনুমেন্টের সামনে লেখক, ছবি: সংগৃহীত

এ অঞ্চলে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে, এসব রেস্টুরেন্ট সার্বিয়ার নিজস্ব স্টাইলে তৈরি। কেউ যদি সার্বিয়ার ট্র্যাডিশনাল কোনো খাবারের স্বাদ পেতে চান, তাহলে এসব রেস্টুরেন্টে তাকে ঢুঁ মারতে হবে। চারদিক থেকে স্থলবেষ্টিত হওয়ায় সার্বিয়াতে কোনো ধরনের সাগরের উপস্থিতি নেই। তা সত্ত্বেও সার্বিয়ানরা মাছ খেতে ভালোবাসে। অবশ্য সার্বিয়ায় শূকরের মাংসের প্রচলন খুবই বেশি। ঐতিহ্যবাহী সার্বিয়ান রেস্টুরেন্টগুলোর অন্দরসজ্জা সত্যি অসাধারণ। কাঠের তৈরি আসবাবপত্র ও চীনামাটির তৈরি বিভিন্ন ধরনের তৈজস দিয়ে সাজানো থাকে এ সব রেস্টুরেন্টের ভেতরের অংশ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কৌচ সার্ফিংয়ের মাধ্যমে আগে থেকে আমার সঙ্গে নেভেনা স্টোইকোভিচ নামের এক তরুণীর পরিচয় হয়েছিল। বিকেলে নেভেনার দেওয়া লোকেশন অনুযায়ী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাই। মিলানের বাসা সেডমগ ইয়ুলা থেকে ১৩ নম্বর বাসে সরাসরি চলে যাই ট্রোসারিনাতে, সেখানে ক্যাফে জেব্রানো নামের একটি কফি শপ রয়েছে। ক্যাফে জেব্রানোতে আমাদের দেখা করার কথা ছিল। যথারীতি সেখানে পৌঁছানোর পর নেভেনার সাক্ষাৎ পেলাম। বলকান দেশগুলোতে একধরনের সাংস্কৃতিক চর্চা আমি লক্ষ করেছি। যখন বিপরীত লিঙ্গের দুজন ব্যক্তি একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরেন এবং একজনের গালের সঙ্গে অন্যজনের গাল লাগিয়ে চুমো খান। একে বলা হয় চিক কিস। আমাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে নেভেনা জড়িয়ে ধরলেন এবং আমার গালে চুমু আঁকলেন। আমি একইভাবে তাঁকে জড়িয়ে ধরলাম এবং তাঁর গালে চুমু আঁকলাম।

OwA6bT8.jpg


সান্ধ্য আড্ডা শেষে নেভেনা স্টোইকোভিচ ও লেখক, ছবি: সংগৃহীত

এরপর কফি শপের ভেতরে গিয়ে একসঙ্গে বসলাম। আমি অরেঞ্জ জুস অর্ডার করলাম আর নেভেনা অর্ডার করলেন ল্যাতে। একসঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম। নেভেনা বয়সে আমার চেয়ে প্রায় ১৪ বছরের বড়। কিন্তু তাঁকে দেখলে সেটা বোঝার উপায় নেই। রূপ-লাবণ্যের দিক থেকে নেভেনা কোনো অংশে সিনেমার নায়িকাদের থেকে কম নয়। নেভেনা মনোবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। যদিও বর্তমানে তিনি একজন স্কুলশিক্ষক এবং তিনি মূলত শিশুদের ইংরেজি ও চাইনিজ ভাষা শেখান। নেভেনার শখ সারা পৃথিবী ঘুরে দেখা, দেড় বছর আগে তিনি একবার ভারতেও এসেছিলেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নেভেনার সঙ্গে আলোচনা হলো। নেভেনা সার্বিয়ার ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক আমার কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করলেন।

সার্বিয়া তথা দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সংস্কৃতিতে আরও দুইটি জিনিস লক্ষ করলাম যা সচরাচর ইউরোপের অন্যান্য দেশে দেখা যায় না। দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে নারী-পুরুষের সম-অধিকারের বিষয়টি একটু ভিন্নভাবে দেখা হয়, সচরাচর আমরা রক্ষণশীল দেশগুলোতে যে রকম দেখি। যেমন সার্বিয়া, মেসিডোনিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, গ্রিস, মন্টিনিগ্রো, আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া—এসব দেশে আপনি যদি কোনো মেয়েকে ডেটিংয়ের জন্য প্রস্তাব দেন এবং তাকে কোনো রেস্টুরেন্টে আমন্ত্রণ জানান, তাহলে আপনাকে ওই মেয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। এমনকি রেস্টুরেন্টে খাবার গ্রহণ শেষে তার বিলও আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। আমাদের এ উপমহাদেশের মতো সেখানকার মেয়েরাও বিয়ের পূর্বে ছেলের সক্ষমতা যাচাই করে।

u765UoN.jpg


বিদায়লগ্নে মিলান গোলুবোভিচের সঙ্গে লেখক, ছবি: সংগৃহীত

এসব দেশে পরিবার প্রথা এখনো জোরালোভাবে প্রচলিত। আরেকটা বিষয়, সার্বিয়া কিংবা বলকান রাষ্ট্রগুলোতে আপনি যদি জুতা পায়ে কারও বাড়িতে প্রবেশ করেন, তাহলে বিষয়টিকে সেখানকার মানুষ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করবেন না। আপনাকে জুতা খুলে বাইরে রাখতে হবে অথবা আপনার জুতাগুলোকে খুলে হাতে নিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে হবে।

ফেরার সময় নেভেনাকে জড়িয়ে ধরলাম এবং তাঁর সঙ্গে স্মৃতি হিসেবে কিছু ছবি রাখলাম।

এবার নিশ ছেড়ে যাওয়ার পালা। আগে থেকেই ব্লা ব্লা কার নামের কার রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের মাধ্যমে নিশ থেকে সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে পৌঁছানোর জন্য রাইড বুক করে রেখেছিলাম। এ যাত্রায় আমার সঙ্গে এক মাঝবয়সী সার্বিয়ান মহিলার পরিচয় হয়। তাঁর নাম ছিল সাস্কা। আসলে এ পুরো যাত্রাপথে সাস্কা ছিলেন আমাদের ড্রাইভার। আমার সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন, তারাও সার্বিয়ান। সাস্কাকে আগে থেকে মিলানের বাসার ঠিকানা দিয়ে রেখেছিলাম এবং মিলানও আমার পক্ষ থেকে আগে থেকে সাস্কার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে রেখেছিল। কার রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের মাধ্যমে নিশ থেকে বেলগ্রেডে যাতায়াত করতে ৯৫০ সার্বিয়ান দিনারের প্রয়োজন হয়েছিল।

CMf7eYN.jpg


নিশ সিটি সেন্টারের উপকণ্ঠে অবস্থিত টিংকারস অ্যালে। এ সড়কটি অটোমান শাসনামলে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে কারুশিল্পের জন্য এক প্রসিদ্ধ স্থান হিসেবে গড়ে উঠেছিল

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সাস্কা সেগমড ইয়ুলাতে এসে মিলানের নম্বরে ফোন দিলেন। সার্বিয়া যেহেতু ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য নয়; তাই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত কোনো দেশের সিম কার্ড সরাসরি সার্বিয়াতে ব্যবহার করা যায় না। নেভেনার মতো সাস্কাও আমাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে ধরলেন। বিদায়লগ্নে মিলানের সঙ্গেও স্মৃতি হিসেবে কিছু ছবি রাখলাম।

কোনো ভাবে নিশ ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছিল না। সার্বিয়ার প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি বন্ধুর হলেও নিশের প্রতি আমি সব সময় দুর্বল। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলোর মধ্যে নিশ একটি।

বলকান অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কতটা অনন্যসাধারণ, সেটা নিশে না এলে কোনো দিনও বুঝতাম না। নিশের প্রেমে সত্যি আমি দিওয়ানা, তাই যখন মস্তিষ্কের স্মৃতিপটে নিশের সে রঙিন মুহূর্তগুলো ভেসে ওঠে, কেন জানি তখন নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মাঝেমধ্যে আফসোস হয়, যদি নিশ ভ্রমণের প্রতিটি মুহূর্ত রেকর্ড করে রাখতে পারতাম! বলকান উপদ্বীপের সৌন্দর্য যিনি অবগাহন করতে পেরেছেন তিনি কোনো দিনও তা ভুলতে পারেন না। এ কারণে মিলান ডেনমার্কের মতো দেশে গিয়েও থিতু হতে পারেননি। ভালোবাসার টানে নিশে ফিরে এসে নিশে বসে তিনি ফ্রিল্যান্সের কাজ করছেন। হয়তো-বা খুব ভালো বেতন তিনি পান না, তবে মিলান বলেছেন, ফ্রিল্যান্সের মাধ্যমে তাঁর যে আয় হয়, তাতে তিনি সন্তুষ্ট। আর যেহেতু তাঁকে কোনো ধরনের ট্যাক্সও দিতে হয় না, তাই মোটামুটি তার দিন বেশ ভালোভাবে কেটে যায় বলে তিনি জানান।

RTlua14.jpg


বিখ্যাত বাইজেনটাইন সম্রাট কনসটান্টিনের জন্ম হয়েছিল নিশ শহরে

যাত্রাপথে সাস্কার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হলো। এমনকি আমাদের সঙ্গে থাকা বাকি দুই যাত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। সাস্কা নিশের অধিবাসী, তবে চাকরিসূত্রে বেলগ্রেডে বসবাস করেন। তিনি একজন এনজিও কর্মী, মূলত অটিজম নামের বিশেষ জটিলতায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে তিনি কাজ করেন।

প্রায় তিন ঘণ্টা ভ্রমণ শেষে আমরা বেলগ্রেডে পৌঁছালাম।

লেখক: রাকিব হাসান | শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিকস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top