What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ঘরের কাজ কি কেবল নারীর? (2 Viewers)

2alhy0m.jpg


সম্প্রতি চীনে একটি মামলায় ঘরের কাজের জন্য স্বামীর স্ত্রীকে তালাকের শর্ত হিসেবে টাকা দেওয়ার রায় হয়েছে। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে ব্যাপক আলোচনা চলছে এ নিয়ে। এশিয়ার এক প্রান্তে ‘ঘরের কাজ’ প্রসঙ্গে এই রায় স্বভাবতই বাংলাদেশের মতো দেশসহ এশিয়ার অন্যান্য প্রান্তেও সাড়া ফেলেছে।

চলতি বছর কার্যকর হওয়া চীনের নতুন এই দেওয়ানি আইনে বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী ক্ষতিপূরণ চাইতে পারবেন, যদি বৈবাহিক জীবনে তাঁর জীবনসঙ্গীর তুলনায় ঘর-গেরস্তালির কাজ বেশি করেন। এই আইন নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য হলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না, এতে অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘটবে নারীর। কারণ, নারীরাই সাধারণভাবে আমাদের সমাজে ঘরের কাজ করে থাকেন। যে নারী ঘরের বাইরে গিয়ে উপার্জন করেন, তাঁর জন্যও বাড়ি ফিরলে অপেক্ষা করে গাদা গাদা ঘরের কাজ। সেদিক থেকে এই আইন আপাতদৃষ্টিতে নারীর সুযোগ প্রাপ্তি ঘটাবে। নারীর যে কাজকে পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা বরাবর গুরুত্বহীন করেছে, এ আইন তাকেই বিচার করেছে অর্থনৈতিক মূল্যে। সে দিক থেকে এটা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রায়ের ফলেই নারীকে শৃঙ্খলিত করার গেরস্তালি সব বোঝা বিদায় হয়েছে তা বলার সুযোগ নেই।

এই আইনে সম্প্রতি চীনা সেই নারীর ৫ বছরে ঘরের কাজ ও সন্তান লালন-পালনের জন্য আদালত নির্ধারণ করেছেন বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা (৫০ হাজার ইউয়ান)। প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকার মতো।

চীনারা কেউ কেউ একে নারীর ঘরের কাজের স্বীকৃতি বা ঐতিহাসিক রায় হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, চীনে একজন গার্হস্থ্য শ্রমিক বা আয়ার বার্ষিক আয়ের চেয়েও কম টাকা নির্ধারণ করে আদালত আরেক দফা নারীর কাজকে খাটো করেছেন। এই সময়ে কেউবা সংসারে স্বামীর ভূমিকা নিয়েও আলাপ তুলেছেন। একই সঙ্গে ‘ঘরের কাজ’কি কেবলই নারীর? এই পাল্টা জরুরি প্রশ্নটি আমাদের মনে এবং সমাজে হাজির করেছে এই রায়। সর্বোপরি এটি সমাজে নারীর কাজ ও পরিচয়–রাজনীতি নিয়ে জরুরি কিছু আলোচনা, তর্ক ও লড়াইয়ের জায়গাকে নতুন করে সামনে এনেছে।

সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে এই রায় নারীর ঘরের কাজের গুরুত্বকে একটা মাত্রায় সামনে এনেছে ঠিকই, কিন্তু এই রায়ের টাকার পরিমাণ দেখলেই মোটামুটি বোঝা যায়, এটা নারীর গেরস্তালি শ্রম লাঘবে বিশেষ কোনো তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নয়। অল্প অর্থদণ্ডের কারণে পুরুষেরা কখনো গেরস্তালি কাজে উৎসাহ, দায় বা চাপ বোধ করবেন না। সমান অংশগ্রহণ তো দূরের বিষয়। বরং ঘরে বউকে সব ক্লান্তিকর কাজ চাপিয়ে দিয়ে ‘দাসী’ হিসেবে গণ্য করার কাজই চালিয়ে যাবেন। এভাবেই নারীর ওপর চাপানো হবে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও শোষণের কলকাঠি।

অর্থদণ্ড যদি দৃষ্টান্তমূলকভাবে বেশি পরিমাণে হতো, তাহলে ভিন্ন ঘটনা ঘটার সুযোগ ছিল। পুরুষেরা অর্থদণ্ডের ভয়ে জীবনের প্রাত্যহিক কাজে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হতেন এবং এই কাজ করার জন্য চাপ বোধ করতেন। অন্যদিকে নারীরাও গেরস্তালি একঘেয়ে কাজের চাপ থেকে বেরিয়ে অর্থ উপার্জনসহ সমাজে ব্যক্তি ও নাগরিক হিসেবে ভূমিকা রাখার সুযোগ পেতেন। এ ক্ষেত্রে আইনে শাস্তি বা অর্থদণ্ড নারীর ব্যক্তিমানুষ ও নাগরিক হিসেবে ভূমিকা রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। এ জন্য দরকার নারীকে হেয়প্রতিপন্ন করা পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা ও চর্চার বদল।

তালাকের শর্ত হিসেবে তৈরি চীনা এ আইন সমাজে নারী-পুরুষের লিঙ্গীয় রাজনীতি ও বৈষম্যকে ঘিরে যে সংকট টিকে আছে, তাকে অতিক্রম করতে পারেনি। বরং এই রায় পুরোনো অনেক প্রশ্নকেই যেন উসকে দিয়েছে। ঘরের কাজ কি পুরুষেরও নয়? প্রতিদিন নিজের খাবার তৈরি, থালাবাসন মাজা, কাপড় কাচা, ইস্তিরি করা, ঘরের ধুলাবালু পরিষ্কার করা, রাতে শোবার আগে বিছানা ঝাড়া, মশারি টানানোসহ ইত্যাকার দৈনন্দিন কাজ ছাড়া পুরুষ বা নারী কেউই কি জীবন যাপন করতে পারেন?

সমাজে ঘর-গেরস্তালি থেকে নারী-পুরুষ উভয়েরই মুক্ত হয়ে অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিকসহ নানা কাজে ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি করার কথা রাষ্ট্রের। সব নাগরিকের মানুষ হিসেবে সমবিকাশ ও নাগরিক হিসেবে সমভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টির দায়িত্বও তাই রাষ্ট্রের। তা না হলে চীনা এই রায় কার্যত নারীর পুরুষের অধস্তন হয়ে কর্মচারী বা দাস হয়ে থাকাকেই সমাজ ও রাষ্ট্র ন্যায্য করবে। ন্যায্য করবে ‘ঘরের কাজ নারীর কাজ’ পুরুষতান্ত্রিক সমাজসৃষ্ট এই বাক্যকে। তাই উল্টো সমাজকে প্রশ্ন করা দরকার—হেঁশেল থেকে সন্তান দেখভাল সবই কি নারীর জন্য বরাদ্দ? পরিবারের পুরুষ সদস্যদের বাইরের কাজ কিংবা অর্থ উপার্জন সহজ করতে তাঁদের প্রতিদিনের জীবনের কেয়ারটেকারও কি নারীই? পুরুষই কি উৎপাদনশীল, সৃষ্টিশীল কাজে সক্ষম আর নারী অক্ষম? অর্থ রোজগারের বলেই কি পুরুষ বিশেষ ক্ষমতাবান হতে পারেন? ঘরে-বাইরে সর্বত্র পুরুষের সব তৎপরতাই ‘কাজ’ আর নারীর তৎপরতা কি ‘কাজ’ নয়? সমাজের ভবিষ্যৎ আজকের শিশুর লালন-পালনের দায় কি পরিবার কিংবা নারীর না রাষ্ট্রের? নারীর জীবনে অবসর তৈরিতে এবং সৃজনশীল সত্তা বিকাশে রাষ্ট্রের ভূমিকা কী? কেন সমাজে পর্যাপ্ত ডে কেয়ার নেই, নেই জাতীয় রন্ধনশালা কিংবা সস্তায় সাবসিডি দিয়ে ভালো মানের খাবারের সরকারি ক্যাফেটেরিয়া, লন্ড্রিসহ এমনি নানা উদ্যোগ, যা বিশেষভাবে নারীকে এবং পুরুষকেও গেরস্তালি ও সন্তান লালন-পালনের কাজ থেকে মুক্ত করতে পারে।

চীনের এই নতুন আইন আমাদের নতুন করে ভাবার সুযোগ দিয়েছে। নারীর গার্হস্থ্য শ্রমের ঘানি দূর করতে রাষ্ট্র ও সমাজের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি নারী আন্দোলনে বরাবর সোচ্চার রয়েছে। ২০১৮ সালে সিপিডির একটি গবেষণাতেও বিষয়টি গুরুত্ব পায়। যে গবেষণায় সিপিডি দেখিয়েছিল, নারীর গার্হস্থ্য শ্রম বা ঘরে নীরব অবদানের অর্থমূল্য ১০ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালের মোট জিডিপির ৭৮ দশমিক ৮ শতাংশ। ওই প্রতিবেদনে এ-ও দেখানো হয়েছিল, প্রতিদিন একজন নারী পুরুষের তুলনায় ঘরে ৩ গুণ বেশি কাজ করেন, যা জাতীয় আয়ে যুক্ত হয় না। অর্থ রোজগারের গৌরবে পুরুষ ক্ষমতাচর্চা করে। এভাবেই নারীর কাজকে অস্বীকার করে এবং হেয় করার মধ্য দিয়ে পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও বীরত্বগাথা তৈরি হয়।

সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা আয়োজনে, আইনকানুনে, সংস্কৃতিতে এমন ব্যবস্থা দরকার, যাতে নারী-পুরুষ-ট্রান্সজেন্ডার সবার সমঅধিকারে বিকাশ এবং সুযোগ প্রাপ্তির জায়গা পায়। তা না হলে নারীর কাজ এবং পরিচয় সংকীর্ণ গণ্ডিতেই আটকে থাকবে। সমাজে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ ও অধিকার পাওয়ার সুযোগ না থাকলে যে নারীরা অর্থ রোজগার করেন না, অথচ প্রতিদিন সংসার সামলান, তাঁদের সমাজ ‘গৃহিণী’ বলে পরিচয় করিয়ে দেবে। ওই গৃহিণীরা নিজেরা এবং অন্যরাও তাঁদের পরিচয় দিতে গিয়ে বলবেন, ‘আমি কিছু করি না’, ‘আমার স্ত্রী কিছু করে না’ অথবা ‘আমার মা বা বোন কিছু করে না’। অর্থ উপার্জনকারী নারীও ঘরে স্বামীর সমান কিংবা স্বামীর চেয়ে বেশি আয় করেও ঘরে ফিরে ‘বুয়া’ কাজ করে অবসাদগ্রস্ত ও ক্লান্ত হবেন। আর এভাবে সমাজ ইতিহাসের বিকাশে সমাজের একাংশ নারী পিছিয়ে থাকলে সমাজও অনগ্রসর হয়ে থাকবে। তাই সমাজের নিমিত্তেই নারী-পুরুষের সমান সুযোগের জন্য নারীদের সংগ্রাম ও সামাজিক আন্দোলন শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এই আন্দোলনে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা রাখলেও এই আন্দোলনে সঙ্গী নারী ও পুরুষ উভয়ই।

* লেখা: তাসলিমা আখ্তার, সভাপ্রধান গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি এবং আলোকচিত্রী
 
ঘরের সকল কাজ করা কেবল নারীর দায়িত্ব নয়, পুরুষেরও সমান দায়িত্ব ঘরের কাজ করা। আশাকরি চিন্তাধারাই বদল আসবে।
 
husband wife sobar uchit free time bujhe kaj share kora. ek jon er upor sob pressure dile to hobe na
 
অবশ্যই নারীর একার কাজ না। পুরুষদের ও
 
সেরকম বউ এর পাল্লায় পড়লে সব সুখ ঘুচে যাবে
 

Users who are viewing this thread

Back
Top