প্রায় এক যুগ আগের এক দুপুরে দেখা হওয়া দুই বন্ধুর আলাপনের টুকরা স্মৃতি মনে পড়ে। সকাল থেকে ব্যস্ত সময় কাটানো বন্ধুটি ঘর্মাক্ত, তিনি অপরজনকে বোধ হয় তাঁর খুব কাছে আসতে নিষেধ করেছিলেন। তাঁর নিজেরই বিব্রত লাগছিল হয়তো। আদতে সেটাই স্বাভাবিক। অপরজন অবশ্য পরিশ্রমী মানুষের ঘামে ভেজা দেহকে সম্মান দেখিয়েছিলেন।
এই ঘটনা যেদিকেই প্রবাহিত হয়ে থাকুক না কেন, ঘামের গন্ধ অস্বস্তিতেই ফেলে, তা সে পরিচিত পরিসরেই হোক কিংবা সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষের মাঝেই হোক। ঘাম স্বাভাবিক। কারও কারও ক্ষেত্রে কম বয়স থেকেই একটু বেশি ঘামার প্রবণতা দেখা যায়, যা কোনো রোগ নয়। তাদের পরিবারেও বেশি ঘাম হওয়ার ইতিহাস থাকতে পারে। আবার তাপমাত্রা খুব বেড়ে গেলে বেশি ঘাম হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিভাগের অধ্যাপক হরষিত কুমার পাল জানালেন এমনটাই। এ জন্য ঘামের দুর্গন্ধ এড়াতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করার পরামর্শ দিলেন তিনি। ডিওডোরেন্ট স্প্রে বা ঘামনিরোধী স্প্রেও ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া ঘাম কমানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শমতো কিছু ওষুধ সেবন করা যেতে পারে বলে জানালেন তিনি।
চিকিৎসা প্রয়োজন?
কয়েকটি রোগে যেকোনো আবহাওয়াতেই বেশি ঘাম হতে পারে ঠিকই, কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে রোগের অন্য লক্ষণও থাকে (যেমন রক্তচাপের ভারসাম্য ঠিক না থাকা)। কোনো রোগের কারণে খুব বেশি ঘাম হলে তা অল্প বা বেশি সময়ের জন্য হতে পারে। ঘামের সঙ্গে অন্য লক্ষণ থাকলে কিংবা একই ধরনের তাপমাত্রায় আগে যতটা ঘামতেন, তার চেয়ে বেশি ঘামলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। এর বাইরেও যদি কোনো রোগের লক্ষণ ছাড়া কেবল অতিরিক্ত ঘামের কারণেই রোগী সমস্যার সম্মুখীন হন (যেমন হাতের তালু খুব বেশি ঘামলে লিখতে অসুবিধা হয়), সে ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
ঘাম কমানোর চিকিৎসা
ঘামের দুর্গন্ধ এড়ানো কঠিন। দুর্গন্ধের উৎসই হলো শরীরের বিভিন্ন অংশের ঘাম। বগল, কুঁচকির মতো জায়গার ঘামে দুর্গন্ধ বেশি হয়। শৈশবে ঘামে দুর্গন্ধ না হলেও বয়ঃসন্ধিকাল থেকে এ রকম দুর্গন্ধ শুরু হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজে না বুঝলেও আশপাশের মানুষেরা গন্ধটা টের পান। ঘাম যদি কমানো যায়, দুর্গন্ধও কমবে। অধ্যাপক হরষিত কুমার পাল বললেন, ঘাম কমানোর জন্য মুখে খাওয়ার ওষুধ, ইনজেকশন এবং ত্বকে প্রয়োগ করার ওষুধ রয়েছে। এ ছাড়া আয়ন্টোফোরেসিস ডিভাইস বা যন্ত্র রয়েছে, যা নির্দিষ্ট সময় পরপর ব্যবহার করতে হয়। স্নায়ুর অস্ত্রোপচারও করা যায়, তবে তা খুবই জটিল এক প্রক্রিয়া।
এদিকে হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন কেয়ার ক্লিনিকের রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমী বললেন ঘামের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তির কিছু উপায়। এই যেমন প্রতিদিন গোসলের পানিতে মিশিয়ে নিন অ্যাসকরবিক অ্যাসিড বা সাইট্রিক অ্যাসিড জাতীয় উপকরণ। বড় বালতির এক বালতি পরিমাণ পানিতে দেড় কাপের মতো লেবুর রস কিংবা ভিনেগার মিশিয়ে নিতে পারেন। অথবা সম্ভব হলে বাথ সল্ট ব্যবহার করতে পারেন, তাতেও রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড।
সাপ্তাহিক যত্ন
. ১৬ কাপ পানিতে ৪ কাপ পরিমাণ মাল্টার খোসা নিয়ে মৃদু আঁচে জ্বাল দিন। নির্যাস বেরিয়ে এলে নামিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে ছেঁকে ফ্রিজে রাখুন। গোসলের সময় সেখান থেকে দেড় কাপ পরিমাণ নিয়ে ১ বালতি পানিতে মিশিয়ে ফেলুন।
• লেবু কুচি করে নিন (রসসহ)। কুচিগুলো ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিন। এক কাপ পেস্ট নিয়ে এবার এর সঙ্গে ১ কাপ লবণ আর আধা কাপ চিনি মিশিয়ে নিন। শরীরের যেসব অংশ বেশি ঘামে (যেমন বগল), সেসব অংশে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করুন।
আরও যা
• শ্যাম্পু বা বডিওয়াশের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। বাটিতে ১ টেবিল চামচ শ্যাম্পু বা বডিওয়াশ নিলে সঙ্গে ১ চা–চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে পানি মেশানোর দরকার নেই।
• লেবু কুচি করে নিন (রসসহ)। ২ কাপ পরিমাণ হলে এর সঙ্গে গোলাপের পাপড়ি নিন ৪ কাপ। উপকরণ দুটি মিশিয়ে নিয়ে ১৬ কাপ পানিতে মৃদু আঁচে জ্বাল দিন। নির্যাস বেরিয়ে এলে নামিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে নিন। এরপর ফ্রিজে রেখে দিন। চাইলে কিউব করে ফ্রিজে রাখতে পারেন। প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার আগে টোনারের মতো করে (ঠান্ডা তরল অবস্থায় কিংবা কিউব অবস্থায়) ব্যবহার করুন শরীরের সেসব অংশে, যা বেশি ঘামে। এতে সারা দিন থাকবেন সতেজ।