billionbd2024
Member
মহাভারতেও গরু খাওয়ার কথা আছে, মহাভারত বন পর্ব, খন্ড ২০৭, অনুবাদে কিশোরী মোহন গাংগুলি।
বিষ্ণুপুরাণ বলছে,ব্রাহ্মণদের গো-মাংস খাইয়ে হবিষ্য করালে পিতৃগণ ১১ মাস পর্যন্ত তৃপ্ত থাকেন। আর এ স্থায়িত্ব কালই সবচেয়ে দীর্ঘ (বিষ্ণুপুরাণ ৩/১৬)। বৃষের মাংস [বেদ:১/১৬৪/৪৩],মহিষের মাংস [বেদ: ৫/২৯/৮],অজের মাংস [বেদ:১/১৬২/৩] খাওয়া হত। আরও বলা হয়েছে পরস্বিনী গাভী মানুষের ভজনীয় [বেদ:৪/১/৬]।
আর এজন্যই হয়তোবা স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন,
"You will be astonished, if I tell you that, according to the old ceremonials, he is not a good Hindu who does not eat beef. On certain occasions he must sacrifice a bull and eat it. [The complete works of Swami Vivekananda, Volume 3, Pg 536]"
জগত গুরু আদি শংকরাচার্য,যিনি ৭৮৮ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহন করেন। তিনি অদ্বৈত বেদান্ত শাখার প্রতিষ্ঠাতা। শংকরাচার্যের গীতাভাষ্য হিন্দু ধর্মীয় পন্ডিত মহলে অত্যন্ত বিখ্যাত। তিনি ব্রাক্ষসুত্র অধ্যায় ৩, পাদ্য ১, সূত্র ২৫ এ লিখেছেন,
"যজ্ঞে পশু হত্যা পাপ হিসেবে বিবেচিত হবে না, কারন শাস্ত্রই ইহার অনুমোদন দিয়েছে।"
বেদে স্পষ্ট ভাবে গরু খাওয়ার কথা থাকলেও হিন্দুরা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। হিন্দুরা হাজির করে ঋগ্বেদ (৭/৫৬/১৭) এই শ্লোক। ঋগবেদের ঐ শ্লোকে নাকি গোহত্যা কে মানুষ হত্যার সমকক্ষ বলা হয়েছে। নীচে তুলসীরামের উক্ত শ্লোকের অনুবাদ দিলাম দেখুন তো এরকম কিছু আছে কিনা। এরপর আবার হিন্দুরা,অথর্ব বেদের (৮/৩/১৫) এই শ্লোক দেখায় যেখানে বলা হয়েছে গো হত্যা ও ঘোড়া হত্যা উভয়ই নিষিদ্ধ। এখানে হিন্দুরা সত্য লুকিয়ে লেখে ঘোড়ার মাংস ও যেকোন প্রানীর মাংস খেতে নিষেধ করেছে। কিন্তু সত্য হলো ঐ শ্লোকে বলা হয়েছে,
"যারা বহিঃশত্রু দেশকে আক্রমণ করবে এবং প্রানীর মাংস, ঘোড়ার মাংস ও মানুষের মাংস খায় তাদেরকে হত্যা কর।"
ধারাবাহিক ভাবে এই মন্ত্রগুলো যেমন ৭, ৮, ৯ পড়লেই পরিষ্কার বোঝা যাবে। অথর্ব বেদের (৮/৩/১৫) এই শ্লোকে স্পষ্টভাবে গরুর দুধ গ্রহনকারীরও একই শাস্তি দেয়ার কথা আছে। তার মানে কি গরুর দুধ খাওয়াও বেদের নিষেধ? এটি আরো স্পষ্ট আছে ১৭ নাম্বার মন্ত্রে, এখানে বলা গরুর দুধ যে খায় তার বুকে বর্শা মারার কথা।
এখন এই মন্ত্রগুলোর অর্থ সার্বজনীন ভাবে নিলে হিন্দুরা কি বলবে যে বেদ অনুসারে দুধ খাওয়াও মানা? এরপর হিন্দুরা ঋগ্বেদের ১/১৬৪/৮০ এবং অথর্ব বেদের ৯/১০/২০ ও ৭/৭৩/১১ এইসব শ্লোক দেখিয়ে বলে এইসব শ্লোকে গরুকে (আঘ্ন্যা) বলা হয়েছে। আঘ্ন্যা মানে যাকে হত্যা করা উচিত নয়। অথচ এইসব শ্লোকে শুধুমাত্র মা গরুকে অর্থাৎ যে গরু থেকে দুধ পাওয়া যায় সেই গরুর প্রসংগে (আঘ্ন্যা) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে অর্থাৎ যে গরু দুধ দেয় সেই গরু হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। নীচের স্ক্রীনশটে দেখুন (ঋগ্বেদ ১/১৬৪/৮০) শ্লোকের তুলসীরামের অনুবাদ। তুলসীরাম লিখেছেন, Invioable (আঘ্ন্যা) as Mother Cow. তুলসীরাম অথর্ব বেদ ৯/১০/২০ শ্লোকেও একই কথা লিখেছেন, Inviolable (আঘ্ন্যা) as Mother Cow. হিন্দুরা আবার হাজির করে ঋগ্বেদের ৮/১০১/১৫ এই শ্লোক-
"Do not kill the cow. Cow is innocent and Aditi - that ought not to be cut into pieces"
মহাত্মা গান্ধী বলেছেন,
"I know there are scholars who tell us that cow-sacrifice is mentioned in the Vedas. I… read a sentence in our Sanskrit text-book to the effect that Brahmins of old (period) used to eat beef. (M.K.Gandhi, Hindu Dharma, New Delhi, 1991, p. 120)"
অর্থাৎ, "আমি জানি (কিছু সংখ্যক পণ্ডিত আমাদের বলেছেন) বেদে গো-উৎসর্গ করার কথা উল্লেখ আছে। আমি আমাদের সংস্কৃত বইয়ে এরূপ বাক্য পড়েছি যে,পূর্বে ব্রাহ্মণরা গো-মাংস ভক্ষণ করতেন।" (হিন্দুধর্ম,এম.কে. গান্ধী,নিউ দিল্লি, ১৯৯১,পৃ. ১২০)
অতএব এবার নিশ্চয়ই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় গরু খাওয়া হিন্দু ধর্ম সম্মত।
পৃথিবীতে ৬৫০০ এর ও উপরে ধর্ম আছে। বেশীর ভাগ ধর্ম সর্ম্পকে আমার কিছুই জানা নেই। সবাই সবার ধর্মকে সত্য ধর্ম এবং সঠিক ধর্ম বলে মনে করে। যেমন: ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, ইহুদি, জৈন, শিখ ইত্যাদি। প্রত্যেকটা ধর্ম এর আলাদা বৈশিষ্ট্য, কালচার ও রীতিনীতি। কোন ধর্ম এর সাথে কোন ধর্ম এর তেমন মিল পাওয়া যায় না। এমনকি এক এক ধর্ম এর আহার এ ও নানা বিধি নিষেধ আছে। এক ধর্ম যে খাদ্যকে উপাদেয় মনে করছে, অন্য ধর্ম সেটাকে নিকৃষ্ট খাদ্য মনে করে বর্জন করছে। যেমনঃ গরুর মাংস ভক্ষনে মোসলমানদের কোন বিধিনিষেধ নাই, কিন্তু হিন্দুরা গো-মাংস ছুঁয়ে ও দেখেনা। চলুন জানি, কেন হিন্দুরা গরুর মাংস খায় না।
হিন্দু ধর্মে গরুকে 'পবিত্র মাতা' বলা হয়ে থাকে। গরু নানাভাবে মানুষের উপকার করে বলে হিন্দু ধর্মে গো-হত্যা নিষিদ্ধ। তবে গরুর চামড়া দিয়ে জুতো তৈরী করে তা ব্যবহার করা কিন্তুহিন্দু ধর্মে নিষিদ্ধ নয়।
অবশ্য বৌদ্ধ যুগের আগ পর্যন্ত হিন্দুরা প্রচুর গোমাংস ভক্ষণ করতেন এ তথ্যও অনেকেই জানেন। ব্যাসঋষী স্বয়ং বলেছেন, 'রন্তিদেবীর যজ্ঞে একদিন পাচক ব্রাক্ষ্মণগণ চিৎকার করে ভোজনকারীদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন,মহাশয়গণ! অদ্য অধিক মাংস ভক্ষণ করবেন না, কারণ অদ্য অতি অল্পই গো-হত্যা করা হয়েছে; কেবলমাত্র একুশ হাজার গোহত্যা করা হয়েছে। (সাহিত্য সংহিতা-3য় খন্ড, পৃষ্ঠা-476)
বৌদ্ধযুগের পূর্ব পর্যন্ত হিন্দুরা যে প্রচুর গরু গোশত খেতেন ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ প্রণীত Beef in Ancient India গ্রন্থে, স্বামী ভুমানন্দ প্রণীত 'সোহংগীত', 'সোহং সংহিতা, 'সোহং স্বামী' গ্রন্থগুলোতে, আচার্য্য প্রফুলস্ন চন্দ্র রায়ের 'জাতি গঠনে বাধা' গ্রন্থে উল্লেখ আছে। এসব গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বৌদ্ধযুগের আগে পর্যন্ত গো-হত্যা, গো-ভক্ষণ মোটেই নিষিদ্ধ ছিল না। মধু ও গো-মাংস না খাওয়ালে তখন অতিথি আপ্যায়নই অপূর্ন থেকে যেতো। এখন প্রশ্ন হলো-ধর্মীয় গ্রন্থে গো-মাংস ভক্ষণের প্রমাণাদি থাকার পরও হিন্দুরা গো-মাংস ভক্ষণ করে না কেন?
আমরা জানি যে হিন্দু ধর্মে গরুর গোশত খাওয়া নিষেধ আছে? আসলেই কি তা?
যে গরু কোরবানি নিয়ে বালতে দেও-ভন্ড রা ফতোয়া পর্যন্ত দিল যে "গরু কোরবানি হারাম" ……… আসলে ব্যাপারটা কি?
নিচে দেখুন এক হিন্দু – ব্রাহ্মণ কি বলছে
গোমাংস খাওয়া নিয়ে প্রচুর তর্ক বিতর্ক হয়েছে। তাই কয়েকটা কথা বলি । অনেকেরই ধারণা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা গোমাংস খায় না বা খেত না । এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা ।
প্রথমেই বলি, সংস্কৃতে একটা প্রাচীন শব্দ আছে। "গো-সঙ্খ্য" । এই শব্দটার অর্থ হলো - গো পরীক্ষক । পরে অর্থ সঙ্কুচিত হয়ে "গোপ" হয়েছে ।
এই পরীক্ষা কেন হতো? কারণ, আর কিছুই না, যে বলদ বা ষাঁড়কে কাটা হবে, তার স্বাস্থ্য কেমন আছে সেটা দেখার জন্য। না পরীক্ষা হলে, সেই মাংস মানুষের জন্য খারাপ হতে পারে।
মাংস তিন প্রকারঃ
বৌদ্ধ যুগের আগে, হিন্দুরা প্রচুর গোমাংস ভক্ষণ করতো এ তথ্যও অনেকেই জানেন।
ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ প্রণীত Beef in Ancient India গ্রন্থে, স্বামী ভুমানন্দ প্রণীত অনেক গ্রন্থে, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের "জাতি গঠনে বাধা" গ্রন্থে উল্লেখ আছে।
এসব গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বৌদ্ধযুগের আগে গো-হত্যা, গো-ভক্ষণ মোটেই নিষিদ্ধ ছিল না। মধু ও গো-মাংস না খাওয়ালে তখন অতিথি আপ্যায়নই অপূর্ণ থেকে যেতো ।
তাই অতিথির আর এক নাম – গোঘ্ন ।
বৌদ্ধ সম্রাট অশোকের সময় থেকে গো-হত্যা নিষিদ্ধ করা হয়। সুতরাং বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাব ২০০০ বছর আগে হলেও গো-হত্যা আরও অনেক পরে নিষিদ্ধ হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, সম্রাট অশোকের নিষেধাজ্ঞা হিন্দুরা মানছে কেন?
এটাও ধর্মীয় সংঘাতের ফল । বৌদ্ধ ধর্ম এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, প্রচুর লোক, বিশেষ করে তথাকথিত "নীচ জাতি" আকৃষ্ট হয়েছিল, এই ধর্মের প্রতি ।
ব্রাহ্মণ্য বাদী এবং ব্রাহ্মণরা প্রমাদ গুনলো । তারাও পুরোপুরি মাছ- মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়ে ভেক ধারী হয়ে গেল ।
মূলত, এটা উত্তরভারতেই হয়েছিল । তাই এখনও ওটা "গো- বলয়"।
বেশীদিনের কথা নয়, আলিবর্দির সময়ে রামপ্রসাদের গুরু কৃষ্ণা নন্দ আগম বাগীশ একটা বই লেখে। নাম – বৃহৎ তন্ত্রসার ।
এতেও অষ্টবিধ মহামাংসের মধ্যে গোমাংস প্রথম বলেই বলা হয়েছে ।
ঋগ্বেদে ফিরে আসি। কি দেখছি? প্রথম মণ্ডলের ১৬৪ সূক্তের ৪৩ নং শ্লোকে বৃষ মাংসের খাওয়ার কথা আছে। মহিষ মাংসের উল্লেখ আছে পঞ্চম মণ্ডলের ২৯ নং সূক্তের ৮ নং শ্লোকে ।
মোষ বলি আজও হয়। নেপালে যারা মোষের মাংস খায়, তাদের ছেত্রী বলা হয় ।
এছাড়া, বনবাস কালে রামচন্দ্রের লাঞ্চের মেনু কি ছিল, অনেকেরই জানা নেই ।
তিন রকম মদ (আসব) গৌড়ী, (গুড় থেকে তৈরি) পৌষ্টি, (পিঠে পচিয়ে তৈরি) মাধ্বী (মধু থেকে তৈরি)। এর সঙ্গে প্রিয় ছিল শূলপক্ব গোবৎসের মাংস ।
বিশ্বাস না হলে রামায়ণ পড়া উচিত। রামকে যদি কল্প চরিত্র বলেও ধরি, তাহলেও এই গুলো তখনকার খাদ্যাভ্যাসের নমুনা।
বিষ্ণুপুরাণ বলছে,ব্রাহ্মণদের গো-মাংস খাইয়ে হবিষ্য করালে পিতৃগণ ১১ মাস পর্যন্ত তৃপ্ত থাকেন। আর এ স্থায়িত্ব কালই সবচেয়ে দীর্ঘ (বিষ্ণুপুরাণ ৩/১৬)। বৃষের মাংস [বেদ:১/১৬৪/৪৩],মহিষের মাংস [বেদ: ৫/২৯/৮],অজের মাংস [বেদ:১/১৬২/৩] খাওয়া হত। আরও বলা হয়েছে পরস্বিনী গাভী মানুষের ভজনীয় [বেদ:৪/১/৬]।
আর এজন্যই হয়তোবা স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন,
"You will be astonished, if I tell you that, according to the old ceremonials, he is not a good Hindu who does not eat beef. On certain occasions he must sacrifice a bull and eat it. [The complete works of Swami Vivekananda, Volume 3, Pg 536]"
জগত গুরু আদি শংকরাচার্য,যিনি ৭৮৮ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহন করেন। তিনি অদ্বৈত বেদান্ত শাখার প্রতিষ্ঠাতা। শংকরাচার্যের গীতাভাষ্য হিন্দু ধর্মীয় পন্ডিত মহলে অত্যন্ত বিখ্যাত। তিনি ব্রাক্ষসুত্র অধ্যায় ৩, পাদ্য ১, সূত্র ২৫ এ লিখেছেন,
"যজ্ঞে পশু হত্যা পাপ হিসেবে বিবেচিত হবে না, কারন শাস্ত্রই ইহার অনুমোদন দিয়েছে।"
বেদে স্পষ্ট ভাবে গরু খাওয়ার কথা থাকলেও হিন্দুরা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। হিন্দুরা হাজির করে ঋগ্বেদ (৭/৫৬/১৭) এই শ্লোক। ঋগবেদের ঐ শ্লোকে নাকি গোহত্যা কে মানুষ হত্যার সমকক্ষ বলা হয়েছে। নীচে তুলসীরামের উক্ত শ্লোকের অনুবাদ দিলাম দেখুন তো এরকম কিছু আছে কিনা। এরপর আবার হিন্দুরা,অথর্ব বেদের (৮/৩/১৫) এই শ্লোক দেখায় যেখানে বলা হয়েছে গো হত্যা ও ঘোড়া হত্যা উভয়ই নিষিদ্ধ। এখানে হিন্দুরা সত্য লুকিয়ে লেখে ঘোড়ার মাংস ও যেকোন প্রানীর মাংস খেতে নিষেধ করেছে। কিন্তু সত্য হলো ঐ শ্লোকে বলা হয়েছে,
"যারা বহিঃশত্রু দেশকে আক্রমণ করবে এবং প্রানীর মাংস, ঘোড়ার মাংস ও মানুষের মাংস খায় তাদেরকে হত্যা কর।"
ধারাবাহিক ভাবে এই মন্ত্রগুলো যেমন ৭, ৮, ৯ পড়লেই পরিষ্কার বোঝা যাবে। অথর্ব বেদের (৮/৩/১৫) এই শ্লোকে স্পষ্টভাবে গরুর দুধ গ্রহনকারীরও একই শাস্তি দেয়ার কথা আছে। তার মানে কি গরুর দুধ খাওয়াও বেদের নিষেধ? এটি আরো স্পষ্ট আছে ১৭ নাম্বার মন্ত্রে, এখানে বলা গরুর দুধ যে খায় তার বুকে বর্শা মারার কথা।
এখন এই মন্ত্রগুলোর অর্থ সার্বজনীন ভাবে নিলে হিন্দুরা কি বলবে যে বেদ অনুসারে দুধ খাওয়াও মানা? এরপর হিন্দুরা ঋগ্বেদের ১/১৬৪/৮০ এবং অথর্ব বেদের ৯/১০/২০ ও ৭/৭৩/১১ এইসব শ্লোক দেখিয়ে বলে এইসব শ্লোকে গরুকে (আঘ্ন্যা) বলা হয়েছে। আঘ্ন্যা মানে যাকে হত্যা করা উচিত নয়। অথচ এইসব শ্লোকে শুধুমাত্র মা গরুকে অর্থাৎ যে গরু থেকে দুধ পাওয়া যায় সেই গরুর প্রসংগে (আঘ্ন্যা) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে অর্থাৎ যে গরু দুধ দেয় সেই গরু হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। নীচের স্ক্রীনশটে দেখুন (ঋগ্বেদ ১/১৬৪/৮০) শ্লোকের তুলসীরামের অনুবাদ। তুলসীরাম লিখেছেন, Invioable (আঘ্ন্যা) as Mother Cow. তুলসীরাম অথর্ব বেদ ৯/১০/২০ শ্লোকেও একই কথা লিখেছেন, Inviolable (আঘ্ন্যা) as Mother Cow. হিন্দুরা আবার হাজির করে ঋগ্বেদের ৮/১০১/১৫ এই শ্লোক-
"Do not kill the cow. Cow is innocent and Aditi - that ought not to be cut into pieces"
মহাত্মা গান্ধী বলেছেন,
"I know there are scholars who tell us that cow-sacrifice is mentioned in the Vedas. I… read a sentence in our Sanskrit text-book to the effect that Brahmins of old (period) used to eat beef. (M.K.Gandhi, Hindu Dharma, New Delhi, 1991, p. 120)"
অর্থাৎ, "আমি জানি (কিছু সংখ্যক পণ্ডিত আমাদের বলেছেন) বেদে গো-উৎসর্গ করার কথা উল্লেখ আছে। আমি আমাদের সংস্কৃত বইয়ে এরূপ বাক্য পড়েছি যে,পূর্বে ব্রাহ্মণরা গো-মাংস ভক্ষণ করতেন।" (হিন্দুধর্ম,এম.কে. গান্ধী,নিউ দিল্লি, ১৯৯১,পৃ. ১২০)
অতএব এবার নিশ্চয়ই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় গরু খাওয়া হিন্দু ধর্ম সম্মত।
পৃথিবীতে ৬৫০০ এর ও উপরে ধর্ম আছে। বেশীর ভাগ ধর্ম সর্ম্পকে আমার কিছুই জানা নেই। সবাই সবার ধর্মকে সত্য ধর্ম এবং সঠিক ধর্ম বলে মনে করে। যেমন: ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, ইহুদি, জৈন, শিখ ইত্যাদি। প্রত্যেকটা ধর্ম এর আলাদা বৈশিষ্ট্য, কালচার ও রীতিনীতি। কোন ধর্ম এর সাথে কোন ধর্ম এর তেমন মিল পাওয়া যায় না। এমনকি এক এক ধর্ম এর আহার এ ও নানা বিধি নিষেধ আছে। এক ধর্ম যে খাদ্যকে উপাদেয় মনে করছে, অন্য ধর্ম সেটাকে নিকৃষ্ট খাদ্য মনে করে বর্জন করছে। যেমনঃ গরুর মাংস ভক্ষনে মোসলমানদের কোন বিধিনিষেধ নাই, কিন্তু হিন্দুরা গো-মাংস ছুঁয়ে ও দেখেনা। চলুন জানি, কেন হিন্দুরা গরুর মাংস খায় না।
হিন্দু ধর্মে গরুকে 'পবিত্র মাতা' বলা হয়ে থাকে। গরু নানাভাবে মানুষের উপকার করে বলে হিন্দু ধর্মে গো-হত্যা নিষিদ্ধ। তবে গরুর চামড়া দিয়ে জুতো তৈরী করে তা ব্যবহার করা কিন্তুহিন্দু ধর্মে নিষিদ্ধ নয়।
অবশ্য বৌদ্ধ যুগের আগ পর্যন্ত হিন্দুরা প্রচুর গোমাংস ভক্ষণ করতেন এ তথ্যও অনেকেই জানেন। ব্যাসঋষী স্বয়ং বলেছেন, 'রন্তিদেবীর যজ্ঞে একদিন পাচক ব্রাক্ষ্মণগণ চিৎকার করে ভোজনকারীদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন,মহাশয়গণ! অদ্য অধিক মাংস ভক্ষণ করবেন না, কারণ অদ্য অতি অল্পই গো-হত্যা করা হয়েছে; কেবলমাত্র একুশ হাজার গোহত্যা করা হয়েছে। (সাহিত্য সংহিতা-3য় খন্ড, পৃষ্ঠা-476)
বৌদ্ধযুগের পূর্ব পর্যন্ত হিন্দুরা যে প্রচুর গরু গোশত খেতেন ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ প্রণীত Beef in Ancient India গ্রন্থে, স্বামী ভুমানন্দ প্রণীত 'সোহংগীত', 'সোহং সংহিতা, 'সোহং স্বামী' গ্রন্থগুলোতে, আচার্য্য প্রফুলস্ন চন্দ্র রায়ের 'জাতি গঠনে বাধা' গ্রন্থে উল্লেখ আছে। এসব গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বৌদ্ধযুগের আগে পর্যন্ত গো-হত্যা, গো-ভক্ষণ মোটেই নিষিদ্ধ ছিল না। মধু ও গো-মাংস না খাওয়ালে তখন অতিথি আপ্যায়নই অপূর্ন থেকে যেতো। এখন প্রশ্ন হলো-ধর্মীয় গ্রন্থে গো-মাংস ভক্ষণের প্রমাণাদি থাকার পরও হিন্দুরা গো-মাংস ভক্ষণ করে না কেন?
আমরা জানি যে হিন্দু ধর্মে গরুর গোশত খাওয়া নিষেধ আছে? আসলেই কি তা?
যে গরু কোরবানি নিয়ে বালতে দেও-ভন্ড রা ফতোয়া পর্যন্ত দিল যে "গরু কোরবানি হারাম" ……… আসলে ব্যাপারটা কি?
নিচে দেখুন এক হিন্দু – ব্রাহ্মণ কি বলছে
গোমাংস খাওয়া নিয়ে প্রচুর তর্ক বিতর্ক হয়েছে। তাই কয়েকটা কথা বলি । অনেকেরই ধারণা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা গোমাংস খায় না বা খেত না । এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা ।
প্রথমেই বলি, সংস্কৃতে একটা প্রাচীন শব্দ আছে। "গো-সঙ্খ্য" । এই শব্দটার অর্থ হলো - গো পরীক্ষক । পরে অর্থ সঙ্কুচিত হয়ে "গোপ" হয়েছে ।
এই পরীক্ষা কেন হতো? কারণ, আর কিছুই না, যে বলদ বা ষাঁড়কে কাটা হবে, তার স্বাস্থ্য কেমন আছে সেটা দেখার জন্য। না পরীক্ষা হলে, সেই মাংস মানুষের জন্য খারাপ হতে পারে।
মাংস তিন প্রকারঃ
- ভূচর (যারা ভূমিতে চরে)
- খেচর (যারা আকাশে ওড়ে)
- জলচর (যারা জলে বিচরণ করে)
বৌদ্ধ যুগের আগে, হিন্দুরা প্রচুর গোমাংস ভক্ষণ করতো এ তথ্যও অনেকেই জানেন।
ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ প্রণীত Beef in Ancient India গ্রন্থে, স্বামী ভুমানন্দ প্রণীত অনেক গ্রন্থে, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের "জাতি গঠনে বাধা" গ্রন্থে উল্লেখ আছে।
এসব গ্রন্থ থেকে জানা যায়, বৌদ্ধযুগের আগে গো-হত্যা, গো-ভক্ষণ মোটেই নিষিদ্ধ ছিল না। মধু ও গো-মাংস না খাওয়ালে তখন অতিথি আপ্যায়নই অপূর্ণ থেকে যেতো ।
তাই অতিথির আর এক নাম – গোঘ্ন ।
বৌদ্ধ সম্রাট অশোকের সময় থেকে গো-হত্যা নিষিদ্ধ করা হয়। সুতরাং বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাব ২০০০ বছর আগে হলেও গো-হত্যা আরও অনেক পরে নিষিদ্ধ হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, সম্রাট অশোকের নিষেধাজ্ঞা হিন্দুরা মানছে কেন?
এটাও ধর্মীয় সংঘাতের ফল । বৌদ্ধ ধর্ম এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, প্রচুর লোক, বিশেষ করে তথাকথিত "নীচ জাতি" আকৃষ্ট হয়েছিল, এই ধর্মের প্রতি ।
ব্রাহ্মণ্য বাদী এবং ব্রাহ্মণরা প্রমাদ গুনলো । তারাও পুরোপুরি মাছ- মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়ে ভেক ধারী হয়ে গেল ।
মূলত, এটা উত্তরভারতেই হয়েছিল । তাই এখনও ওটা "গো- বলয়"।
বেশীদিনের কথা নয়, আলিবর্দির সময়ে রামপ্রসাদের গুরু কৃষ্ণা নন্দ আগম বাগীশ একটা বই লেখে। নাম – বৃহৎ তন্ত্রসার ।
এতেও অষ্টবিধ মহামাংসের মধ্যে গোমাংস প্রথম বলেই বলা হয়েছে ।
ঋগ্বেদে ফিরে আসি। কি দেখছি? প্রথম মণ্ডলের ১৬৪ সূক্তের ৪৩ নং শ্লোকে বৃষ মাংসের খাওয়ার কথা আছে। মহিষ মাংসের উল্লেখ আছে পঞ্চম মণ্ডলের ২৯ নং সূক্তের ৮ নং শ্লোকে ।
মোষ বলি আজও হয়। নেপালে যারা মোষের মাংস খায়, তাদের ছেত্রী বলা হয় ।
এছাড়া, বনবাস কালে রামচন্দ্রের লাঞ্চের মেনু কি ছিল, অনেকেরই জানা নেই ।
তিন রকম মদ (আসব) গৌড়ী, (গুড় থেকে তৈরি) পৌষ্টি, (পিঠে পচিয়ে তৈরি) মাধ্বী (মধু থেকে তৈরি)। এর সঙ্গে প্রিয় ছিল শূলপক্ব গোবৎসের মাংস ।
বিশ্বাস না হলে রামায়ণ পড়া উচিত। রামকে যদি কল্প চরিত্র বলেও ধরি, তাহলেও এই গুলো তখনকার খাদ্যাভ্যাসের নমুনা।