গর্ভাবস্থায় শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল থাকে। তা ছাড়া এ সময় সব ওষুধও নিরাপদ নয় এবং যেকোনো সংক্রমণ হলে তা জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এখন ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। এ সময় অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও অনেক ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাঁদের ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ও ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের ঝুঁকি এবং এমনকি জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কাও বেশি।
বর্তমানে ডেঙ্গুর লক্ষণ অনেকটাই পাল্টে গেছে। হালকা জ্বর, হাত–পায়ের অস্থিসন্ধিতে ব্যথা খুব একটা হয় না, এমনি র্যাশও ওঠে না। অনেক সময় রোগী বুঝে ওঠার আগেই রক্তের প্লাটিলেট কমে গিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায় এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে রোগী মারা যায়। আবার ডেঙ্গুর কিছু উপসর্গ গর্ভাবস্থার উপসর্গের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় রোগ নির্ণয় করতে দেরি হয়ে যায়।
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত চার-পাঁচ দিন পর কমে যায়। কিন্তু জ্বর কমে যাওয়ার পরের সময়টাই বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এ সময় ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে রক্তের প্লাটিলেট কমে যায় এবং রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। অন্তঃসত্ত্বাদের শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তনের জন্য তাদের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।
করণীয়
- বর্তমানে ডেঙ্গুর উচ্চ হারের জন্য যেকোনো অন্তঃসত্ত্বা নারী জ্বরে আক্রান্ত হলে প্রথম বা দ্বিতীয় দিনেই ডেঙ্গু এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করান।
- অন্তঃসত্ত্বা নারীর ডেঙ্গু হলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
- জ্বর ও ব্যথানাশক হিসেবে শুধু প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে।
- স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে।
- হিমোগ্লোবিন কমে গেলে ফ্রেশ ব্লাড দেওয়া যেতে পারে।
- প্লাটিলেট অনেক কমে গেলে বা দ্রুত সিজারিয়ান অপারেশন করার প্রয়োজন হলে প্লাটিলেট দিতে হতে পারে।
- সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত একজন মেডিসিন ও একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিতে হবে।
প্রতিরোধে কী করণীয়
বাড়ির আশপাশে, বারান্দায় জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। তাই যেখানে পানি জমে থাকে, যেমন ফুলের টব, ডাবের খোসা, অব্যবহৃত পাত্র ও পরিত্যক্ত গাড়ির টায়ার ইত্যাদিতে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফ্রিজ বা এয়ারকন্ডিশনারে জমে থাকা পানিও নিয়মিত ফেলে দিতে হবে।
বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মশার ঘরে প্রবেশ ঠেকাতে সকাল ও সন্ধ্যায় দরজা–জানালা বন্ধ রাখতে হবে। প্রয়োজনে জানালার বাইরে নেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
এডিস মশা যেখানে লুকিয়ে থাকে যেমন খাটের নিচে, দরজার পেছনে, পর্দার আড়ালে, রান্নাঘর; এসব জায়গায় মশানাশক স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। স্প্রে করার পর ২০-৩০ মিনিট রুমের বাইরে থাকতে হবে।
শরীরের অনাবৃত অংশ হাত–পায়ে মশা ঠেকানো ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। দিনের বেলা ঘুমানোর আগে অবশ্যই মশারি টানাতে হবে।
[FA]pen[/FA] লেখক: ডা. শামীমা ইয়াসমিন, সহকারী রেজিস্ট্রার, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা