মেয়েদের গর্ভাবস্থায় নিজের শরীরের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এ সময় রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়। ফলে সহজেই রোগজীবাণু আক্রমণ করতে পারে। আবার বেশির ভাগ অ্যান্টিবায়োটিক ও নানা ওষুধ সেবনে আছে বিধিনিষেধ। এ সময় যাতে পেটের সমস্যা বা ডায়রিয়া না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
ডায়রিয়া নানা কারণে হতে পারে। গর্ভাবস্থায় কিছু হরমোনের পরিবর্তন হয়ে থাকে। অন্য সব অঙ্গের মতো পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতায়ও তার কিছু প্রভাব থাকে। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়েদের নিজের ও গর্ভস্থ শিশুর সঠিক পুষ্টির জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হয়। গর্ভধারণের পর মায়েদের কিছু ভিটামিন-জাতীয় ওষুধ খেতে হয়। আয়রন বা ক্যালসিয়াম-জাতীয় ওষুধও বদহজমের কারণ হতে পারে।
গর্ভবতী মায়েরা অনেক সময় মানসিক চাপে থাকেন, এতে কেউ কেউ ডায়রিয়ায় ভুগতে পারেন। কারও আগে থেকেই আইবিএসের সমস্যা থাকতে পারে। গর্ভবতী হওয়ার পর এ সমস্যা বেড়ে গেলে বারবার ডায়রিয়া হতে পারে। তা ছাড়া নানা জীবাণু, যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্রোটোজোয়ায় আর সবার মতো মায়েদেরও ডায়রিয়া হতে পারে। এসব জীবাণু সাধারণত দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে থাকে।
করণীয় কী
কারণ যা-ই হোক না কেন, ডায়রিয়া হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে শরীরে যেন পানিশূন্যতা না হয়, সে জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে। অন্যান্য পানীয়ও গ্রহণ করা যেতে পারে। কোনো কোনো সময় শিরায় স্যালাইন দিতে হতে পারে।
রোগীকে স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে যেতে হবে। তবে রোগীর দুধ ও আঁশজাতীয় খাবার পরিহার করা ভালো। বেশির ভাগ ডায়রিয়া এমনিতেই সেরে যায়। কোনো অবস্থাতেই নিজে নিজে দোকান থেকে কিনে ফ্লাজিল, সিপ্রোসিন ইত্যাদি ওষুধ খাবেন না।
গর্ভাবস্থায় ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা জরুরি। এ সময় বাইরের খোলা খাবার পরিহার করুন। পানি অবশ্যই ফুটিয়ে পান করুন।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
ডায়রিয়া দুই দিনের বেশি দীর্ঘ হলে, তীব্র পানিশূন্যতা, পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে, পেটে ব্যথা, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে এবং জ্বর হলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের কাছে অথবা নিকটবর্তী হাসপাতালে যেতে হবে।
* ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র, লিভার ও প্যানক্রিয়াস রোগ বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল