প্রতিবারের মতো এবারও গ্রীষ্মের দাবদাহে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। এ সময় বিরক্তিকর ও বিব্রতকর সমস্যা হলো ঘামের দুর্গন্ধ। শুধু দুর্গন্ধ নয়, গরমে শরীরে ঘাম জমে ছত্রাকজাতীয় সংক্রমণ দেখা যায়। শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে বিশেষ করে কুঁচকি, আঙুলের ফাঁক ও যৌনাঙ্গে এই সংক্রমণ বেশি হয়। তাই সংক্রমণ এড়াতে শরীরের ভাঁজগুলোয় ঘাম জমতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে ছত্রাকবিরোধী পাউডার ব্যবহার করতে হবে।
প্রতিদিন অন্তর্বাস ও মোজা পরিষ্কার করতে হবে। এ ছাড়া গরমে শরীরে ঘামাচি দেখা দিতে পারে। ঘামাচির চুলকানি রোধে অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি ঘামাচি থেকে পরিত্রাণ পেতে কখনো সিনথেটিক পোশাক পরা চলবে না। সব সময় সুতির ঢিলা পোশাক পরতে হবে।
খাবারে সালফারের পরিমাণ বেশি থাকলে শরীরের দুর্গন্ধ বাড়তে পারে। লাল মাংস, ডিম, পেঁয়াজ, ব্রকলি, রসুন ইত্যাদি খাবারে সালফারের পরিমাণ বেশি থাকে। এমনকি বিভিন্ন খাবারে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। এসব খাবার খেলে নানা রকমের দুর্গন্ধ তৈরি হয়।
আবার যাঁরা বেশি অ্যালকোহল পান করেন, তাঁদের শরীর থেকেও বাজে গন্ধ বের হতে পারে। অন্যদিকে মানসিকভাবে উদ্বিগ্ন থাকলে দেহের অ্যাপোক্রিন গ্রন্থি সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেমকে আরও উত্তেজিত করে তোলে। এতে শরীরের দুর্গন্ধ আরও বেড়ে যায়।
বয়ঃসন্ধিতে অনেকের এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। যাঁদের ডায়াবেটিস, স্নায়ুর অসুখ অথবা হাইপারথাইরয়েডিজম আছে, তাঁদের সমস্যা বাড়তে পারে।
ঘামের এসব দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই বডি স্প্রে ব্যবহার করেন। তবে এতে রয়েছে ক্ষতিকর রাসায়নিক। তাহলে ঘামের দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার উপায় কী? ঘরোয়া উপায়েই ঘামের দুর্গন্ধ দূর করা যায়:
মধু: একটি পাত্রে সামান্য গরম পানি নিয়ে তাতে মধু মিশিয়ে রাখুন। গোসল শেষে মধুমিশ্রিত পানি গায়ে ঢেলে নিন।
বেকিং সোডা: বেকিং সোডা পেস্ট বানিয়ে বগলে লাগিয়ে নিন।
গোলাপজল: পানির সঙ্গে গোলাপজল মিশিয়ে গোসল করুন। এটি দীর্ঘক্ষণ দেহকে ঘামের দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা করে।
নিমপাতা: নিমপাতার ব্যবহারে ঘামের দুর্গন্ধ রোধ করা যায় সহজেই। ঘামের দুর্গন্ধ হওয়ার জন্য শরীরে যে ব্যাকটেরিয়া দায়ী, তার বৃদ্ধি ঠেকাতে নিমপাতা খুব উপকারী। গোসলের সময় নিমপাতা সেদ্ধ পানি দিয়ে ব্যবহার করলে শরীরের টক্সিন রোধ হয় এবং ঘামের কটু গন্ধ দূর হয়।
এ ছাড়া প্রচুর পানি পান করতে হবে। রোদে বের হতে হলে ছাতা, হ্যাট ব্যবহার করবেন। হালকা বা সাদা রঙের কাপড় পরবেন। ঘামে ভিজে গেলে পোশাক পাল্টে নিন। সুতি কাপড় পরবেন। তারপরও অতিরিক্ত ঘাম হলে বিব্রত না হয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
* ডা. জাহেদ পারভেজ | সহকারী অধ্যাপক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ