maruftamimauthor
Member
গল্পের নাম- স্বাধীন দেশ
লেখক- মোঃ আব্দুল্লা-হিল-মারুফ তামিম
(মুক্তিযুদ্ধ কে কেন্দ্র করে আমার প্রথম লেখা গল্প।সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।)
এই পরীক্ষাটা শেষ হয়ে গেলে বেচে যাই কি বলিস আকাশ?(আমি)
হুম ঠিক বলেছিস পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িও ফিরতে পারব না। (আকাশ)
এখানে থাকতে আর ভালো লাগছে না দেশের যে অবস্থা মনে ভয় লাগে এই বুঝি দরজা ভেঙে পাক-হানাদার বাহিনীরা আমাদেকরে মেরে চলে যাবে।এই পরিস্থিতি তে আর শহরে থাকতে মন চায় না।গ্রামে ফিরে গেলেই বাচি।(আমি)
ভয় করিস না ভাই কিছু হবে না আমাদের আর যদি কিছু হয়েও যায় মনে করবি দেশের জন্য জীবন দিয়েছি।আর এসব এখন বাদ দে এখন খেতে আয় খেয়ে আবার পড়তে বসতে হবে পরীক্ষা আছে কালকে।(আকাশ)
হ্যা চল খেয়ে নেই।(আমি)
আচ্ছা বন্ধু ধর পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে তুই তোর মত আর আমি আমার মত যার যার বাড়ি চলে যাব।এরপর চাকরি নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে যাব।তখন আর কেউ কাউকে সময় দিতে পারব না।অনেকদিনত আমরা একসাথে থাকলাম আমাকে তোর মনে পড়বে না।(আমি)
নাহ মনে পড়বে না।(আকাশ)
কেনো?(আমি)
কারন তোর মত ভিতুকে ভুলে যাবার মত না তাই তোকে ভুলতেও পারব না।এবার কথা কম বলে খাবার খেয়ে নে আমার শেষ হয়ে গেছে তুই আয়।(আকাশ)
আচ্ছা দাড়া একটু আমার জন্য একসাথে যাই দুজনে।(আমি)
তুই আসলেই ভিতু সামান্য এক ঘর থেকে আর এক ঘরে যেতে তোর এত ভয়।ভবিষ্যত এ কি করবি এখন না হয় আমি আছি এরপরেত আমি থাকব না তখন কি হবে তোর সেই চিন্তায় আছি।(আকাশ)
কে বলেছে তুই থাকবি না।আমরা সব সময় একসাথে থাকব।বিয়ের পরেও হাহা(আমি)
আচ্ছা থাকিস নে এবার চল।(আকাশ)
হুম চল।(আমি)
খেয়ে এসে দুজনে পড়তে বসলাম।পড়তে পড়তে অনেক রাত হয়ে গেছে।রাত তখন ৩টা বাজে।পড়া শেষ করে দুজনে যখন ঘুমানোর জন্য যাবো তখন কেউ একজন দরজার কড়া নাড়লো।আমি ভয়ে আকাশের কাছে চলে গেলাম।
আকাশ এই মনে হয় আমাদেরকে মারতে চলে এসেছে পাক-হানাদার বাহিনীরা।(আমি)
আরে চুপ কর তামিম সবসময় উল্টা পাল্টা চিন্তা ঘুরে মাথায়।এখানে বসে থাক আমি দেখছি।আর কিছু হলে আমি চিল্লানি দিলে তুই রান্না ঘর এর উপরে যে স্টোররুম আছে তার ভিতরে যেয়ে পিছন থেকে ঘরের টিন খুলে পালিয়ে যাস।(আকাশ)
নাহ তোকে রেখে যাবো না আমি চল একসাথেই যাবো।একটু দাড়া তুই।(আমি)
ছুটে যেয়ে রান্নাঘর থেকে দা আর বটি নিয়ে এলাম এরপর দা আকাশের হাতে আর বটি আমার হাতে নিয়ে দরজার কাছে চললাম ততক্ষণে দরজায় অনেক বার কড়া নাড়ানো হয়ে গেছে।এখন বাইরে থেকে কারো ডাক শুনতে পাচ্ছি আমাদেরকে ডাকছে।কণ্ঠটা পরিচিত লাগছে।এবার আমরা দরজা খুললাম।খুলে দেখি বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রাকিব ভাই।উনি আমাদের থেকে এক বছর এর বড়।পড়াশোনা শেষ করে এখন এক স্কুলে শিক্ষকতা করছেন।আমরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি সেখানেই তিনি পড়তেন আর সেই সুবাদে তার সাথে আমাদের পরিচয়।অনেক ভালোবাসেন আমাদেরকে উনি।মাঝে মাঝে দেখা করতে আসেন আমাদের সাথে।কিন্তু আজকে এভাবে এত রাতে তার এখানে আসাটা কেমন যেনো ভাবনার বিষয়।আমরা তাকে ঘরের ভিতর নিয়ে খাটে বসালাম।তাকে দেখে মনে হল অনেক চিন্তিত এবং কোনো কিছু নিয়ে তিনি খুব ভয়ে আছেন।আমি তাকে পানি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম।এত রাতে সে এখানে কেনো আর তাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো।তিনি অনেক্ষন চুপ থেকে এবার মুখ খুললেন।
আজকে রাত ১২টার দিকে আমাদের স্কুলের যত শিক্ষক ছিলেন তাদেরকে পাক-হানাদার বাহিনীরা হত্যা করেছে।(রাকিব ভাই)
কি বলেন ভাই?(আমরা দুজনে)
হ্যাঁ রে আমাদের স্কুলের মোট বিশজন শিক্ষক এবং শিক্ষিকা ছিলাম তাদের প্রত্যেককে বাড়িতে গিয়ে হত্যা করেছে শুধু হত্যা না তাদের বাড়ির মেয়ে বউদের ইজ্জত ও লুটে নিয়েছে ওই খা*******রা এরপর একে একে সবাইকে হত্যা করেছে।ওরা আমার বাড়িতেও গিয়েছিল কিন্তু আমাকে পায় নি তাই আমার বাড়ি ভাংচুর করে রেখে গেছে।আমার এক বন্ধুর বাসায় গেছিলাম তার বাচ্চার জন্মদিন এর অনুষ্ঠানে নাহলে ওরা আমাকেও মেরে ফেলত।(রাকিব ভাই)
এসব কথা একদমে বলে গেলেন রাকিব ভাই।তার চেহারায় এখন ভয়ের থেকে রাগটাই বেশী বোঝা যাচ্ছে।সে কিছুখন চুপ থেকে আবার বলতে লাগলেন।
আমাকে আজকের রাতটা তোদের কাছে থাকতে দিবি সকালে চলে যাবো আমি।(রাকিব)
আপনার যতদিন ইচ্ছা এখানে থাকেন ভাই সমস্যা নাই আমরা আপনার ছোট ভাইয়ের মত।(আকাশ)
নাহ শুধু আজকের রাতটাই থাকব এখানে।কাল সকালে চলে যাবো।অনেক কাজ বাকি আছে আমার।(রাকিব ভাই)
কি কাজ বাকি ভাই?(আমি)
ওই বা****** রাজাকার দেরকে মারার জন্য যাবো।এদেশকে রক্ষা করার জন্য।এদেশের মা-বোন দের ইজ্জত এর দাম ফিরিয়ে আনার জন্য আমি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিব।(রাকিব ভাই)
ভাই আমিও আপনার সাথে যেতে চাই।আমাকেও নিয়ে চলেন এদেশ যেমন আপনার তেমনি এই দেশ আমারও।(আকাশ)
আকাশ এর কথা শুনে রাকিব ভাই আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে আকাশের ঘাড়ে থাবা দিয়ে সম্মতি জানালেন।আমি ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে এবার রান্নাঘরে গেলাম।যেয়ে সব খাবার ব্যাগ এ ভরে নিয়ে আবার ফিরে ওদের কাছে। ওরা আমার দিকে অবাক নয়নে চেয়ে আছে।এবার আমি আমার কাপড় চোপড় গুছিয়ে নিয়ে ওদের দুজনের সামনে বসে পড়লাম।ওরা এখনও ভেবে যাচ্ছে আমি কি করতে চাইছি।এবার আমি বললাম।
তাহলে কাল সকালে আমরা তিনজন যাচ্ছি রাকিব ভাই মুক্তি ক্যাম্পে তাই না?(আমি)
তুই কেনো যাবি কালকে তোর পরীক্ষা আর তুই এসব পারবি না।এরথেকে তুই পড়াশোনা শেষ করে চাকরি-বাকরি কর।(আকাশ)
হ্যাঁ আকাশ ঠিক বলেছে।পড়াশোনা শেষ করে চাকরি তে যা আর বাবা-মা কে নিয়ে সুখে থাক।(রাকিব ভাই)
হাহা সুখ আমার কপালে নাই ভাই।(আমি)
কেনো এমন বলছিস?(আকাশ)
এবার আর কান্না ধরে রাখতে পারলাম না কেদে দিলাম হাউমাউ করে।আমার কান্না দেখে ওরা দুজন অবাক।আমার কান্নার কারন জানতে চাইছে কিন্তু আমি কিছু বলতে পারছি না তাদেরকে।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।অনেক কষ্টে বইয়ের ভিতর থেকে একটা চিঠি দিলাম আকাশের হাতে।আকাশ জোরে জোরে পড়তে লাগল চিঠিটা।চিঠির কথাগুলো পড়ে আকাশ থমকে গেলো।ওরা দুজন এখন আর কোনো কথা বলছে না।শুধু চেয়ে আছে আমার দিকে।এবার আমি বলতে লাগলাম।
বলছিলে না বাবা-মা কে নিয়ে সুখে থাকতে সেই বাবা-মা একমাস আগে মারা গেছে ওই জানোয়ার গুলার হাতে।এখন আমি কাদের জন্য পড়াশোনা চাকরি করব।তোমরা বল?আমি এক হতভাগা যে কিনা বাবা মার মৃত্যু সংবাদ মারা যাবার একমাস পরে জানতে পারে।আজকে সন্ধ্যায় ছোট মামার চিঠি পাই হাতে পিয়ন এর কাছ থেকে। আমার আর কেউ থাকল না।এখন আমি বেচে থেকেও বা কি করব।আমাকে তোমাদের সাথে নিয়ে চল।আমিও মুক্তিযুদ্ধ করব একটা রাজাকার কে মারলেও মনে করব আমি আমার বাবা মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিতে পেরেছি।আমাকে নিয়ে চল তোমাদের পায়ে ধরি।(আমি)
ঠিক আছে চল আর একটু পড়েই সকাল হয়ে যাবে আমাদের সব গুছিয়ে নিয়ে বের হতে হবে।আকাশ তোর কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নে।(রাকিব ভাই)
সবকিছু নিয়ে ভোরের আলো বের হবার আগেই বেরিয়ে পড়লাম আমরা।কিছুদুর হেটে যাবার পরে নদীর কাছে চলে আসলাম।সেখানে নৌকা নিয়ে আগে থেকেই একজন অপেক্ষা করছিলো দেখে বুঝাই যাচ্ছে রাকিব ভাইর সাথে তার খুব ভালো সম্পর্ক।আমাদেরকে দেখেও তিনি খুব খুশি হলেন।এরপর আমরা চলে গেলাম মুক্তিক্যাম্পে।সেখানে গিয়ে প্রশিক্ষন নেওয়া আরম্ভ করলাম আমরা।কিছুদিনের মধ্যে আমরা বন্দুক চালানো,বোম দিয়ে আক্রমণ ও মাইন বোম পাতানো শিখে গেলাম।এরপর ছোট ছোট কিছু রাজাকার ক্যাম্প আর পাকিস্তানি দালালদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছি আমরা।কিন্তু আজকে আমাদের জীবনের সবথেকে বড় মিশন এ যাবো।পাকিস্তানি সেনাদের সবথেকে বড় ঘাটিটাকে আজকে শেষ করে দিতে হবে।আর এই ঘাটিটা শেষ করতে পারলে পাকিস্তানিদের আর কোনো শক্তি থাকবে না।এই আস্তানা কে দমন করার জন্য দল গঠন করা হল।সেই দলে আমি আকাশ আর রাকিব ভাইও আছি।আমাদের দলকে নেতৃত্ব দিবেন মুন্না ভাই।উনি আগে সেনাবাহিনী তে ছিলেন কিন্তু দেশের টানে চাকরি ছেড়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।উনার নেতৃত্বে আমরা সবাই মিলে পাকিস্তানের ক্যাম্পের কাছে চলে আসলাম।এখন মুন্না ভাই আমাদেকে আলাদা আলাদা দল করে চারপাশে ছড়িয়ে দিলেন আর উনার ইশারায় আক্রমণ করতে বললেন।আমরা যার যার জায়গা নিয়ে নিলাম এখন শুধু অপেক্ষা মুন্নাভাইর ইশারার এরপরে খেলা শুরু হবে।এখন আমার আর কোনো ভয় নেই এই হাতে মানুষ মারতে কোনো ভয় করে না আগে মুরগি কাটতে গেলেও ভয় করত আর এখন সব পরিস্থিতির স্বীকার।অবশেষে ইশারা পেলাম যুদ্ধ শুরু আমরা গুলি করতে আরম্ভ করলাম।রাতের বেলা ঘুমন্ত পাকিস্তানিরা হতভম্ব হয়ে গেছে নিজেদেরকে রক্ষা করতে।আমরা গুলি করতে করতে ওদের অনেককেই মেরে ফেলেছি কিন্তু এখনও অনেক সৈন্য বাকি আছে এদিকে আমাদের গুলিও শেষের পথে এখন ভিতরে যেতে হবে আর ওদের অস্ত্র দিয়ে ওদেরকেই খতম করতে হবে।এবার মুন্নাভাইর ইশারায় আমরা ভিতরে গুলি ছুড়তে ছুড়তে ঢুকে পড়লাম।আমি আকাশ আর রাকিব ভাই অনেকটা সামনে চলে এসেছি।কিন্তু হঠাৎ করে একটা গুলি এসে রাকিব ভাইর মাথা ভেদ করে চলে গেলো।রাকিব ভাই মাটিতে পড়ে গেলো রক্তে মাটি ভিজে যাচ্ছে।রাকিব ভাইর মৃত দেহ দেখে মনে হচ্ছে তার কোনো কষ্ট নেই দেশের জন্য মরতে পেরে সে খুব খুশি।এদিকে গুলি চলতে থাকে চলতে থাকে।অনেক কেই আমরা মেরে ফেলতে পেরেছি আবার আমাদের অনেকের গায়ে গুলি লেগেছে।এখন আর পারছি না এরা সংখ্যায় অনেক আর আমরা কম তারউপর গুলিও শেষের পথে।এই অবস্থায় ফিরে যাবারও কোনো পথ নেই।তাই হয় মরতে হবে না হয় মারতে হবে।আমি আর আকাশ পাশাপাশি আছি।আকাশ সামনের দিকে গুলি চালিয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ খেয়াল করলাম আকাশের ডান পাশে একজন আকাশের দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়বে তখন আমি তারদিকে আক্রমণ করতে গিয়ে দেখি আমার গুলি নেই।তখনই পকেটে বোম ছিল সেটা বের করার আগেই সে গুলি চালায় আমি আকাশ কে সরিয়ে দিয়ে বোমটা মেরে দেই তার দিকে।এরপর মনে হল কিছু একটা আমার বুকের বাম পাশটায় ঠিক হৃদপিণ্ড এর মধ্য দিয়ে ভেদ করে চলে গেল।আমি মাটিতে পড়ে গেলাম চোখে শুধু দেখতে পাচ্ছি যেদিকে বোম মেরেছি সেখানে বোম ফেটে একটা বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়।যার জন্য আশেপাশের সব ধ্বংস হতে থাকে।বুকে হাত দিয়ে দেখি রক্ত বের হচ্ছে আকাশ আর অন্যরাও আমার কাছে চলে এসেছে সবাই আমাকে ডাকছে কিন্তু আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছি না।সবকিছু ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে তাহলে কি আমি আমার আব্বু আম্মুর কাছে চলে যাচ্ছি।ঝাপসা চোখে দেখছি আকাশে অনেক ধোয়া আর নিচে অনেক আগুন কিছু কিছু জায়গা আবার অনেক ফুল্কি দিয়ে আগুন জ্বলে উঠছে।তাহলে কি এটা দেশ স্বাধীন হবার জন্য আনন্দ পটকা।আজকে আমার কোনো কষ্ট নেই দেশের জন্য জীবন দিয়েছি আর কিছু চাই না আমি।এখন সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেছে।এখন আমার কানে বাজছে আমাদের দেশের জাতীয় সংগীত
আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালোবাসি।
সমাপ্ত...............
লেখক- মোঃ আব্দুল্লা-হিল-মারুফ তামিম
(মুক্তিযুদ্ধ কে কেন্দ্র করে আমার প্রথম লেখা গল্প।সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।)
এই পরীক্ষাটা শেষ হয়ে গেলে বেচে যাই কি বলিস আকাশ?(আমি)
হুম ঠিক বলেছিস পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িও ফিরতে পারব না। (আকাশ)
এখানে থাকতে আর ভালো লাগছে না দেশের যে অবস্থা মনে ভয় লাগে এই বুঝি দরজা ভেঙে পাক-হানাদার বাহিনীরা আমাদেকরে মেরে চলে যাবে।এই পরিস্থিতি তে আর শহরে থাকতে মন চায় না।গ্রামে ফিরে গেলেই বাচি।(আমি)
ভয় করিস না ভাই কিছু হবে না আমাদের আর যদি কিছু হয়েও যায় মনে করবি দেশের জন্য জীবন দিয়েছি।আর এসব এখন বাদ দে এখন খেতে আয় খেয়ে আবার পড়তে বসতে হবে পরীক্ষা আছে কালকে।(আকাশ)
হ্যা চল খেয়ে নেই।(আমি)
আচ্ছা বন্ধু ধর পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে তুই তোর মত আর আমি আমার মত যার যার বাড়ি চলে যাব।এরপর চাকরি নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে যাব।তখন আর কেউ কাউকে সময় দিতে পারব না।অনেকদিনত আমরা একসাথে থাকলাম আমাকে তোর মনে পড়বে না।(আমি)
নাহ মনে পড়বে না।(আকাশ)
কেনো?(আমি)
কারন তোর মত ভিতুকে ভুলে যাবার মত না তাই তোকে ভুলতেও পারব না।এবার কথা কম বলে খাবার খেয়ে নে আমার শেষ হয়ে গেছে তুই আয়।(আকাশ)
আচ্ছা দাড়া একটু আমার জন্য একসাথে যাই দুজনে।(আমি)
তুই আসলেই ভিতু সামান্য এক ঘর থেকে আর এক ঘরে যেতে তোর এত ভয়।ভবিষ্যত এ কি করবি এখন না হয় আমি আছি এরপরেত আমি থাকব না তখন কি হবে তোর সেই চিন্তায় আছি।(আকাশ)
কে বলেছে তুই থাকবি না।আমরা সব সময় একসাথে থাকব।বিয়ের পরেও হাহা(আমি)
আচ্ছা থাকিস নে এবার চল।(আকাশ)
হুম চল।(আমি)
খেয়ে এসে দুজনে পড়তে বসলাম।পড়তে পড়তে অনেক রাত হয়ে গেছে।রাত তখন ৩টা বাজে।পড়া শেষ করে দুজনে যখন ঘুমানোর জন্য যাবো তখন কেউ একজন দরজার কড়া নাড়লো।আমি ভয়ে আকাশের কাছে চলে গেলাম।
আকাশ এই মনে হয় আমাদেরকে মারতে চলে এসেছে পাক-হানাদার বাহিনীরা।(আমি)
আরে চুপ কর তামিম সবসময় উল্টা পাল্টা চিন্তা ঘুরে মাথায়।এখানে বসে থাক আমি দেখছি।আর কিছু হলে আমি চিল্লানি দিলে তুই রান্না ঘর এর উপরে যে স্টোররুম আছে তার ভিতরে যেয়ে পিছন থেকে ঘরের টিন খুলে পালিয়ে যাস।(আকাশ)
নাহ তোকে রেখে যাবো না আমি চল একসাথেই যাবো।একটু দাড়া তুই।(আমি)
ছুটে যেয়ে রান্নাঘর থেকে দা আর বটি নিয়ে এলাম এরপর দা আকাশের হাতে আর বটি আমার হাতে নিয়ে দরজার কাছে চললাম ততক্ষণে দরজায় অনেক বার কড়া নাড়ানো হয়ে গেছে।এখন বাইরে থেকে কারো ডাক শুনতে পাচ্ছি আমাদেরকে ডাকছে।কণ্ঠটা পরিচিত লাগছে।এবার আমরা দরজা খুললাম।খুলে দেখি বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রাকিব ভাই।উনি আমাদের থেকে এক বছর এর বড়।পড়াশোনা শেষ করে এখন এক স্কুলে শিক্ষকতা করছেন।আমরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি সেখানেই তিনি পড়তেন আর সেই সুবাদে তার সাথে আমাদের পরিচয়।অনেক ভালোবাসেন আমাদেরকে উনি।মাঝে মাঝে দেখা করতে আসেন আমাদের সাথে।কিন্তু আজকে এভাবে এত রাতে তার এখানে আসাটা কেমন যেনো ভাবনার বিষয়।আমরা তাকে ঘরের ভিতর নিয়ে খাটে বসালাম।তাকে দেখে মনে হল অনেক চিন্তিত এবং কোনো কিছু নিয়ে তিনি খুব ভয়ে আছেন।আমি তাকে পানি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম।এত রাতে সে এখানে কেনো আর তাকে এত চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো।তিনি অনেক্ষন চুপ থেকে এবার মুখ খুললেন।
আজকে রাত ১২টার দিকে আমাদের স্কুলের যত শিক্ষক ছিলেন তাদেরকে পাক-হানাদার বাহিনীরা হত্যা করেছে।(রাকিব ভাই)
কি বলেন ভাই?(আমরা দুজনে)
হ্যাঁ রে আমাদের স্কুলের মোট বিশজন শিক্ষক এবং শিক্ষিকা ছিলাম তাদের প্রত্যেককে বাড়িতে গিয়ে হত্যা করেছে শুধু হত্যা না তাদের বাড়ির মেয়ে বউদের ইজ্জত ও লুটে নিয়েছে ওই খা*******রা এরপর একে একে সবাইকে হত্যা করেছে।ওরা আমার বাড়িতেও গিয়েছিল কিন্তু আমাকে পায় নি তাই আমার বাড়ি ভাংচুর করে রেখে গেছে।আমার এক বন্ধুর বাসায় গেছিলাম তার বাচ্চার জন্মদিন এর অনুষ্ঠানে নাহলে ওরা আমাকেও মেরে ফেলত।(রাকিব ভাই)
এসব কথা একদমে বলে গেলেন রাকিব ভাই।তার চেহারায় এখন ভয়ের থেকে রাগটাই বেশী বোঝা যাচ্ছে।সে কিছুখন চুপ থেকে আবার বলতে লাগলেন।
আমাকে আজকের রাতটা তোদের কাছে থাকতে দিবি সকালে চলে যাবো আমি।(রাকিব)
আপনার যতদিন ইচ্ছা এখানে থাকেন ভাই সমস্যা নাই আমরা আপনার ছোট ভাইয়ের মত।(আকাশ)
নাহ শুধু আজকের রাতটাই থাকব এখানে।কাল সকালে চলে যাবো।অনেক কাজ বাকি আছে আমার।(রাকিব ভাই)
কি কাজ বাকি ভাই?(আমি)
ওই বা****** রাজাকার দেরকে মারার জন্য যাবো।এদেশকে রক্ষা করার জন্য।এদেশের মা-বোন দের ইজ্জত এর দাম ফিরিয়ে আনার জন্য আমি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিব।(রাকিব ভাই)
ভাই আমিও আপনার সাথে যেতে চাই।আমাকেও নিয়ে চলেন এদেশ যেমন আপনার তেমনি এই দেশ আমারও।(আকাশ)
আকাশ এর কথা শুনে রাকিব ভাই আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে আকাশের ঘাড়ে থাবা দিয়ে সম্মতি জানালেন।আমি ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে এবার রান্নাঘরে গেলাম।যেয়ে সব খাবার ব্যাগ এ ভরে নিয়ে আবার ফিরে ওদের কাছে। ওরা আমার দিকে অবাক নয়নে চেয়ে আছে।এবার আমি আমার কাপড় চোপড় গুছিয়ে নিয়ে ওদের দুজনের সামনে বসে পড়লাম।ওরা এখনও ভেবে যাচ্ছে আমি কি করতে চাইছি।এবার আমি বললাম।
তাহলে কাল সকালে আমরা তিনজন যাচ্ছি রাকিব ভাই মুক্তি ক্যাম্পে তাই না?(আমি)
তুই কেনো যাবি কালকে তোর পরীক্ষা আর তুই এসব পারবি না।এরথেকে তুই পড়াশোনা শেষ করে চাকরি-বাকরি কর।(আকাশ)
হ্যাঁ আকাশ ঠিক বলেছে।পড়াশোনা শেষ করে চাকরি তে যা আর বাবা-মা কে নিয়ে সুখে থাক।(রাকিব ভাই)
হাহা সুখ আমার কপালে নাই ভাই।(আমি)
কেনো এমন বলছিস?(আকাশ)
এবার আর কান্না ধরে রাখতে পারলাম না কেদে দিলাম হাউমাউ করে।আমার কান্না দেখে ওরা দুজন অবাক।আমার কান্নার কারন জানতে চাইছে কিন্তু আমি কিছু বলতে পারছি না তাদেরকে।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।অনেক কষ্টে বইয়ের ভিতর থেকে একটা চিঠি দিলাম আকাশের হাতে।আকাশ জোরে জোরে পড়তে লাগল চিঠিটা।চিঠির কথাগুলো পড়ে আকাশ থমকে গেলো।ওরা দুজন এখন আর কোনো কথা বলছে না।শুধু চেয়ে আছে আমার দিকে।এবার আমি বলতে লাগলাম।
বলছিলে না বাবা-মা কে নিয়ে সুখে থাকতে সেই বাবা-মা একমাস আগে মারা গেছে ওই জানোয়ার গুলার হাতে।এখন আমি কাদের জন্য পড়াশোনা চাকরি করব।তোমরা বল?আমি এক হতভাগা যে কিনা বাবা মার মৃত্যু সংবাদ মারা যাবার একমাস পরে জানতে পারে।আজকে সন্ধ্যায় ছোট মামার চিঠি পাই হাতে পিয়ন এর কাছ থেকে। আমার আর কেউ থাকল না।এখন আমি বেচে থেকেও বা কি করব।আমাকে তোমাদের সাথে নিয়ে চল।আমিও মুক্তিযুদ্ধ করব একটা রাজাকার কে মারলেও মনে করব আমি আমার বাবা মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিতে পেরেছি।আমাকে নিয়ে চল তোমাদের পায়ে ধরি।(আমি)
ঠিক আছে চল আর একটু পড়েই সকাল হয়ে যাবে আমাদের সব গুছিয়ে নিয়ে বের হতে হবে।আকাশ তোর কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নে।(রাকিব ভাই)
সবকিছু নিয়ে ভোরের আলো বের হবার আগেই বেরিয়ে পড়লাম আমরা।কিছুদুর হেটে যাবার পরে নদীর কাছে চলে আসলাম।সেখানে নৌকা নিয়ে আগে থেকেই একজন অপেক্ষা করছিলো দেখে বুঝাই যাচ্ছে রাকিব ভাইর সাথে তার খুব ভালো সম্পর্ক।আমাদেরকে দেখেও তিনি খুব খুশি হলেন।এরপর আমরা চলে গেলাম মুক্তিক্যাম্পে।সেখানে গিয়ে প্রশিক্ষন নেওয়া আরম্ভ করলাম আমরা।কিছুদিনের মধ্যে আমরা বন্দুক চালানো,বোম দিয়ে আক্রমণ ও মাইন বোম পাতানো শিখে গেলাম।এরপর ছোট ছোট কিছু রাজাকার ক্যাম্প আর পাকিস্তানি দালালদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছি আমরা।কিন্তু আজকে আমাদের জীবনের সবথেকে বড় মিশন এ যাবো।পাকিস্তানি সেনাদের সবথেকে বড় ঘাটিটাকে আজকে শেষ করে দিতে হবে।আর এই ঘাটিটা শেষ করতে পারলে পাকিস্তানিদের আর কোনো শক্তি থাকবে না।এই আস্তানা কে দমন করার জন্য দল গঠন করা হল।সেই দলে আমি আকাশ আর রাকিব ভাইও আছি।আমাদের দলকে নেতৃত্ব দিবেন মুন্না ভাই।উনি আগে সেনাবাহিনী তে ছিলেন কিন্তু দেশের টানে চাকরি ছেড়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।উনার নেতৃত্বে আমরা সবাই মিলে পাকিস্তানের ক্যাম্পের কাছে চলে আসলাম।এখন মুন্না ভাই আমাদেকে আলাদা আলাদা দল করে চারপাশে ছড়িয়ে দিলেন আর উনার ইশারায় আক্রমণ করতে বললেন।আমরা যার যার জায়গা নিয়ে নিলাম এখন শুধু অপেক্ষা মুন্নাভাইর ইশারার এরপরে খেলা শুরু হবে।এখন আমার আর কোনো ভয় নেই এই হাতে মানুষ মারতে কোনো ভয় করে না আগে মুরগি কাটতে গেলেও ভয় করত আর এখন সব পরিস্থিতির স্বীকার।অবশেষে ইশারা পেলাম যুদ্ধ শুরু আমরা গুলি করতে আরম্ভ করলাম।রাতের বেলা ঘুমন্ত পাকিস্তানিরা হতভম্ব হয়ে গেছে নিজেদেরকে রক্ষা করতে।আমরা গুলি করতে করতে ওদের অনেককেই মেরে ফেলেছি কিন্তু এখনও অনেক সৈন্য বাকি আছে এদিকে আমাদের গুলিও শেষের পথে এখন ভিতরে যেতে হবে আর ওদের অস্ত্র দিয়ে ওদেরকেই খতম করতে হবে।এবার মুন্নাভাইর ইশারায় আমরা ভিতরে গুলি ছুড়তে ছুড়তে ঢুকে পড়লাম।আমি আকাশ আর রাকিব ভাই অনেকটা সামনে চলে এসেছি।কিন্তু হঠাৎ করে একটা গুলি এসে রাকিব ভাইর মাথা ভেদ করে চলে গেলো।রাকিব ভাই মাটিতে পড়ে গেলো রক্তে মাটি ভিজে যাচ্ছে।রাকিব ভাইর মৃত দেহ দেখে মনে হচ্ছে তার কোনো কষ্ট নেই দেশের জন্য মরতে পেরে সে খুব খুশি।এদিকে গুলি চলতে থাকে চলতে থাকে।অনেক কেই আমরা মেরে ফেলতে পেরেছি আবার আমাদের অনেকের গায়ে গুলি লেগেছে।এখন আর পারছি না এরা সংখ্যায় অনেক আর আমরা কম তারউপর গুলিও শেষের পথে।এই অবস্থায় ফিরে যাবারও কোনো পথ নেই।তাই হয় মরতে হবে না হয় মারতে হবে।আমি আর আকাশ পাশাপাশি আছি।আকাশ সামনের দিকে গুলি চালিয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ খেয়াল করলাম আকাশের ডান পাশে একজন আকাশের দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়বে তখন আমি তারদিকে আক্রমণ করতে গিয়ে দেখি আমার গুলি নেই।তখনই পকেটে বোম ছিল সেটা বের করার আগেই সে গুলি চালায় আমি আকাশ কে সরিয়ে দিয়ে বোমটা মেরে দেই তার দিকে।এরপর মনে হল কিছু একটা আমার বুকের বাম পাশটায় ঠিক হৃদপিণ্ড এর মধ্য দিয়ে ভেদ করে চলে গেল।আমি মাটিতে পড়ে গেলাম চোখে শুধু দেখতে পাচ্ছি যেদিকে বোম মেরেছি সেখানে বোম ফেটে একটা বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়।যার জন্য আশেপাশের সব ধ্বংস হতে থাকে।বুকে হাত দিয়ে দেখি রক্ত বের হচ্ছে আকাশ আর অন্যরাও আমার কাছে চলে এসেছে সবাই আমাকে ডাকছে কিন্তু আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছি না।সবকিছু ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে তাহলে কি আমি আমার আব্বু আম্মুর কাছে চলে যাচ্ছি।ঝাপসা চোখে দেখছি আকাশে অনেক ধোয়া আর নিচে অনেক আগুন কিছু কিছু জায়গা আবার অনেক ফুল্কি দিয়ে আগুন জ্বলে উঠছে।তাহলে কি এটা দেশ স্বাধীন হবার জন্য আনন্দ পটকা।আজকে আমার কোনো কষ্ট নেই দেশের জন্য জীবন দিয়েছি আর কিছু চাই না আমি।এখন সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেছে।এখন আমার কানে বাজছে আমাদের দেশের জাতীয় সংগীত
আমার সোনার বাংলা
আমি তোমায় ভালোবাসি।
সমাপ্ত...............