maruftamimauthor
Member
গল্পের নাম: ঈদ আনন্দ
লেখক: মোঃ আব্দুল্লা-হিল-মারুফ তামিম
................................................................
=> বাবা এইবার ঈদটা আমাদের সাথে কর, প্রতিবারই বন্ধুদের সাথে দূরে যেয়ে করিস।
=> আম্মু! তুমি জানো না সারাবছর পর এই ঈদের সময় একটু ছুটি পাই একটু প্রশান্তির জন্য দূরে যাই
=> তাই বলে ঈদটা করতে হবে বাইরে যেয়ে।
=> আম্মু! ঈদের পরে আবার কলেজ খুলে যাবে তখন আর কোথাও ঘুরতে পারব না, তাছাড়া সারামাস রোজা রেখে কোথাও ঘুরতে ভালো লাগে না। তাই রোজার মধ্যে না যেয়ে ঈদে যাচ্ছি।
=>আচ্ছা বাদ দে এইবার কোথায় ঘুরতে যাবি?
=> এইবার যাব কক্সবাজার।
=> আচ্ছা সাবধানে থাকিস বাবা আর পানির কাছে যাবি না।
=> আম্মু! কক্সবাজার যেয়ে যদি পানির কাছে না যাওয়া হয় তাহলে সেখানে ঘুরতে যেয়ে লাভ কী?
=> তারপরও আমার ভয় করে যদি কোনো বিপদ হয়।
=> আম্মু! চিন্তা কর না, কিছুই হবে না আর আমি একা যাচ্ছি না আমার সাথে আরও অনেকে যাচ্ছে।
=> তবুও চিন্তা হয় রে বাবা, যখন নিজের ছেলেমেয়ে হবে তখন বুঝবি। যাক সে সব কথা তোর কাপড়-চোপড় সব গুছিয়ে দিয়েছি এখন আয় ইফতার করতে।
=> আচ্ছা আম্মু, তুমি যাও আমি আসছি।
=> ওহ আর একটা কথা তোর আব্বু টাকা রেখে গিয়েছেন নিয়ে নিস যাওয়ার সময়।
=> আম্মু! তোমাকে বলেছিলাম না আমার টাকা লাগবে না। আমি এখন টিউশনি করে নিজেই রোজগার করছি। তারপরও কেন টাকা দিচ্ছ?
=> তোকে আমরা নিষেধ করেছি টিউশনি করতে। আমাদের কী কম আছে বল, এই বাড়ী গাড়ী সম্পত্তি সব কিছুই তোর হবে। তারপরও কেন তুই টিউশনি করবি?
=> আচ্ছা বাদ দাও চল ইফতার করব সময় হয়ে গিয়েছে। সারাদিন রোজা রেখে আর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। এছাড়া আগামীকাল সকালে আমার ট্রেন।
=> তুই ট্রেনে যাবি। তোর আব্বুকে বললে প্লেনের টিকিট করে রাখতেন।
=> আম্মু! আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে যার যার জমানো টাকা দিয়ে এইবার কক্সবাজার ঘুরতে যাচ্ছি তাই এইবার আমাদের মত করে উপভোগ করতে দাও।
=> আচ্ছা তুই যা ভালো মনে করিস। চলে আয় আযান দিয়ে দিয়েছে।
=> হ্যাঁ চল।
এরপর ইফতার করতে আমি আর আম্মু খাবার টেবিলে যাই। আব্বু নিজের কাজে বেশিরভাগ সময় বাইরে ইফতার করেন তাই বাসায় আমার আর আম্মুর ইফতার করতে হয়।
প্রতি ঈদে বন্ধুদের সাথে কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাই। কারণ সারাবছরে এই ঈদ-উল-ফিতর এ আমরা সবাই একটু লম্বা ছুটি পাই তাই এই ছুটিটাকে মধুর করতে দূরে ঘুরতে যাই। প্রতিবারের মতো এইবারও যাব কিন্তু এইবার নিজেদের আয় করা টাকা দিয়ে ঘুরতে যাব। এতদিন বাবার টাকায় ঘুরতে গিয়েছি কিন্তু সেই ঘুরার ভিতর কোনো আনন্দ ছিল না নামে মাত্র ঘুরা হত। কারণ কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনলে আমাদের বাবারা সেখানে যাওয়ার জন্য আরামদায়ক ব্যবস্থা করে দিতেন যার ফলে আমরা সাধারণ জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে পারি না।
প্রত্যেকবারের তুলনায় এইবার আমরা খুবই উত্তেজিত। কারণ আমরা ছয় বন্ধু মিলে প্রথমবারের মতো কক্সবাজার যাচ্ছি তাও আবার নিজেদের টাকায়।
ইফতার করে নামাজ পড়ে কিছুক্ষণের জন্য ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে আগামীকাল ঘুরতে যাওয়ার জন্য সব পরিকল্পনা করে নিলাম। এরপর ঈশার নামাজ শেষ করে রাতের খাবার খেয়ে খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লাম কারণ আগামীকাল সকালে ট্রেন।
ঈদের আর মাত্র একদিন বাকী। আমরা ঈদের নামাজ দিয়েই কক্সবাজার ভ্রমণের সূচনা করতে চাই। তাই ঈদের একদিন আগে কক্সবাজার যাচ্ছি।
পরের দিন সকালে আব্বু-আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রেলস্টেশনের উদ্দেশ্যে।
স্টেশনে পৌছে দেখি আকাশ,রাতুল,রাকিব,আরিফ আর মেহেদী আগে থেকেই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা মোট ছয়জন কক্সবাজার যাচ্ছি।
আমি পৌছানোর পর সবাই দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ছবি তুললাম কারণ এই ভ্রমণটা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে কারণ এটা আমাদের নিজের টাকা দিয়ে প্রথম ভ্রমণ।
ছবি নেওয়া শেষে কিছু খাবার কিনলাম কারণ আমাদের আজকে পথে ইফতার করতে হবে আর ট্রেনের খাবার স্বাস্থ্যসম্মত হবে না। এরপর আমরা ট্রেনে উঠে যার যার আসনে বসলাম ট্রেন ছাড়তে এখনও দেরী হবে কিছুটা।
সবাই ট্রেনে বসে আড্ডা দিচ্ছি আর জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখছি মানুষের ছুটে চলা, সবাই ফিরে যাচ্ছে যার যার গন্ত্বব্যে। বাইরের মানুষজন দেখতে দেখতে একপর্যায় আমার চোখ আটকে যায় স্টেশনের একপাশে কিছু ছেলে বসে বসে তাদের পরণের জামা নিয়ে কিছু একটা করছে। কিছুটা খেয়াল করে দেখতে পাই তারা একে অপরের সেই পুরাতন ছেড়া জামাগুলি দেখাচ্ছে আর নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। তাদের সেই কথা আমি শুনতে পারছি না, কিন্তু তাদের ভাবভঙ্গি দেখে বুঝতে পেরেছি।
এরপর ট্রেন চলতে শুরু করে আর আমাদের যাত্রা শুরু হয়।
ঈদের দিন সকালে নামাজের পর........
=> ম্যাম এটা কী তামিম স্যারের বাসা?
=> জ্বী, কিন্তু আপনারা কারা?
=> ম্যাম আমাদেরকে তামিম স্যার পাঠিয়েছেন। এই খাবারগুলো তিনি এখানে রেখে যেতে বলেছেন।
=> এত খাবার দিয়ে কী করব তাছাড়া আমার ছেলে এখন কক্সবাজার।
=> সেটা জানি না ম্যাম আপনি উনার কাছে জিজ্ঞাসা করুন (আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়)
তামিমের মা সেই লোকের ইশারা মতে তাকিয়ে দেখেন তার ছেলে তামিম দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তার ছেলেকে এখন এখানে দেখতে পেয়ে অবাক না হয়ে পারলেন না কারণ তার ছেলের এখন থাকার কথা কক্সবাজার কিন্তু এখানে কীভাবে সম্ভব?
তামিম নিজেই মায়ের কাছে এসে দাঁড়ায়। তার মা তাকে পর্যবেক্ষণ করে দেখছেন। যেন তিনি ভুত দেখেছেন।
=> আম্মু এভাবে কী দেখছ?
=> দেখছি এটা আমার ছেলে না কী কোনো ভুত।
=> হা হা হা আমি তোমার ছেলে কোনো ভুত না।
=> তোর না এখন কক্সবাজার থাকার কথা, কিন্তু তুই এখানে কেন?
=> মায়ের চোখে পানি দিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করা এটা আমার পক্ষে সম্ভব না তাই চলে এসেছি।
=> কে বলেছে আমি কেঁদেছি?
=> আম্মু! আমি এখন আর ছোট নেই, আমি সব বুঝতে শিখেছি। গতকাল যখন বাসা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম তখন দেখেছি তুমি শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখ মুছতেছিলে।
=> তখন একটু কষ্ট হয়েছিল তাই আর কী চোখ থেকে পানি বেরিয়ে আসে। এখন আর কষ্ট নেই চল ভিতরে যাই তোর আব্বু নামাজ পড়ে বাসায় আসবেন এখনই এরপর আমরা একসাথে খাওয়া দাওয়া করব।
=> কিন্তু আম্মু আমাদের সাথে যে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে আরও মানুষ আছে।
=> কারা আছে?
=> তুমি দাড়াও আমি আসছি।
এরপর যেয়ে বাড়ীর বড় গেইটটা খুলে দিলাম আর সাথে ঢুকে পড়ল একঝাক ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যাদের পরণে রয়েছে নতুন জামা-কাপড়।
এত ছেলে-মেয়ে দেখে আম্মু অবাক হয়ে যান।
=> এরা কারা?
=> আম্মু এরা সবাই রেইলস্টেশনে থাকে। গতকাল ট্রেনে বসে এদের দিকে নজর যায় তখন কৌতুহলবসত এদের চলাফেরা দেখি এবং বুঝতে পারি এরা ঈদের নতুন কাপড় নিয়ে কথা বলছে। তাই তখনই কক্সবাজার যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আমরা সবাই মিলে এদেরকে ঈদের নতুন জামা আর কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আজকে ওরা আমাদের সাথে ঈদ করবে।
=> আলহামদুলিল্লাহ, বাবা তোর কাজে আমি অনেক খুশি হয়েছি। এতদিন ভাবতাম আমার ছেলেটা ছোট আছে কিন্তু না আজ বুঝতে পেরেছি আমার ছেলেটা বড় হয়ে গিয়েছে। এখন সবাইকে নিয়ে ঘরে চল। আজকে সবাইকে নিয়ে ঈদ আনন্দ করব।
এরপর সবাইকে নিয়ে উদযাবপন করলাম ঈদ-উল-ফিতর।
"ঈদ মোবারক"
সমাপ্ত............
(গল্পটি সম্পুর্ন কাল্পনিক। উক্ত পথ শিশুদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করার ইচ্ছা আমার আছে যদি কখনও সামর্থ হয় তাহলে অবশ্যই তাদের সাথে ঈদ উদযাপন করব। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। দেশে এবং দেশের বাইরের সকলকে জানাই ঈদ-উল-ফিতর এর শুভেচ্ছা। সবাই ভালো থাকবেন।)
Copyright: June 04,2019 at 05:57 AM
Md. Abdulla-Hill-Maruf Tamim
লেখক: মোঃ আব্দুল্লা-হিল-মারুফ তামিম
................................................................
=> বাবা এইবার ঈদটা আমাদের সাথে কর, প্রতিবারই বন্ধুদের সাথে দূরে যেয়ে করিস।
=> আম্মু! তুমি জানো না সারাবছর পর এই ঈদের সময় একটু ছুটি পাই একটু প্রশান্তির জন্য দূরে যাই
=> তাই বলে ঈদটা করতে হবে বাইরে যেয়ে।
=> আম্মু! ঈদের পরে আবার কলেজ খুলে যাবে তখন আর কোথাও ঘুরতে পারব না, তাছাড়া সারামাস রোজা রেখে কোথাও ঘুরতে ভালো লাগে না। তাই রোজার মধ্যে না যেয়ে ঈদে যাচ্ছি।
=>আচ্ছা বাদ দে এইবার কোথায় ঘুরতে যাবি?
=> এইবার যাব কক্সবাজার।
=> আচ্ছা সাবধানে থাকিস বাবা আর পানির কাছে যাবি না।
=> আম্মু! কক্সবাজার যেয়ে যদি পানির কাছে না যাওয়া হয় তাহলে সেখানে ঘুরতে যেয়ে লাভ কী?
=> তারপরও আমার ভয় করে যদি কোনো বিপদ হয়।
=> আম্মু! চিন্তা কর না, কিছুই হবে না আর আমি একা যাচ্ছি না আমার সাথে আরও অনেকে যাচ্ছে।
=> তবুও চিন্তা হয় রে বাবা, যখন নিজের ছেলেমেয়ে হবে তখন বুঝবি। যাক সে সব কথা তোর কাপড়-চোপড় সব গুছিয়ে দিয়েছি এখন আয় ইফতার করতে।
=> আচ্ছা আম্মু, তুমি যাও আমি আসছি।
=> ওহ আর একটা কথা তোর আব্বু টাকা রেখে গিয়েছেন নিয়ে নিস যাওয়ার সময়।
=> আম্মু! তোমাকে বলেছিলাম না আমার টাকা লাগবে না। আমি এখন টিউশনি করে নিজেই রোজগার করছি। তারপরও কেন টাকা দিচ্ছ?
=> তোকে আমরা নিষেধ করেছি টিউশনি করতে। আমাদের কী কম আছে বল, এই বাড়ী গাড়ী সম্পত্তি সব কিছুই তোর হবে। তারপরও কেন তুই টিউশনি করবি?
=> আচ্ছা বাদ দাও চল ইফতার করব সময় হয়ে গিয়েছে। সারাদিন রোজা রেখে আর কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। এছাড়া আগামীকাল সকালে আমার ট্রেন।
=> তুই ট্রেনে যাবি। তোর আব্বুকে বললে প্লেনের টিকিট করে রাখতেন।
=> আম্মু! আমি আর আমার বন্ধুরা মিলে যার যার জমানো টাকা দিয়ে এইবার কক্সবাজার ঘুরতে যাচ্ছি তাই এইবার আমাদের মত করে উপভোগ করতে দাও।
=> আচ্ছা তুই যা ভালো মনে করিস। চলে আয় আযান দিয়ে দিয়েছে।
=> হ্যাঁ চল।
এরপর ইফতার করতে আমি আর আম্মু খাবার টেবিলে যাই। আব্বু নিজের কাজে বেশিরভাগ সময় বাইরে ইফতার করেন তাই বাসায় আমার আর আম্মুর ইফতার করতে হয়।
প্রতি ঈদে বন্ধুদের সাথে কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাই। কারণ সারাবছরে এই ঈদ-উল-ফিতর এ আমরা সবাই একটু লম্বা ছুটি পাই তাই এই ছুটিটাকে মধুর করতে দূরে ঘুরতে যাই। প্রতিবারের মতো এইবারও যাব কিন্তু এইবার নিজেদের আয় করা টাকা দিয়ে ঘুরতে যাব। এতদিন বাবার টাকায় ঘুরতে গিয়েছি কিন্তু সেই ঘুরার ভিতর কোনো আনন্দ ছিল না নামে মাত্র ঘুরা হত। কারণ কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনলে আমাদের বাবারা সেখানে যাওয়ার জন্য আরামদায়ক ব্যবস্থা করে দিতেন যার ফলে আমরা সাধারণ জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে পারি না।
প্রত্যেকবারের তুলনায় এইবার আমরা খুবই উত্তেজিত। কারণ আমরা ছয় বন্ধু মিলে প্রথমবারের মতো কক্সবাজার যাচ্ছি তাও আবার নিজেদের টাকায়।
ইফতার করে নামাজ পড়ে কিছুক্ষণের জন্য ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে আগামীকাল ঘুরতে যাওয়ার জন্য সব পরিকল্পনা করে নিলাম। এরপর ঈশার নামাজ শেষ করে রাতের খাবার খেয়ে খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়লাম কারণ আগামীকাল সকালে ট্রেন।
ঈদের আর মাত্র একদিন বাকী। আমরা ঈদের নামাজ দিয়েই কক্সবাজার ভ্রমণের সূচনা করতে চাই। তাই ঈদের একদিন আগে কক্সবাজার যাচ্ছি।
পরের দিন সকালে আব্বু-আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রেলস্টেশনের উদ্দেশ্যে।
স্টেশনে পৌছে দেখি আকাশ,রাতুল,রাকিব,আরিফ আর মেহেদী আগে থেকেই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা মোট ছয়জন কক্সবাজার যাচ্ছি।
আমি পৌছানোর পর সবাই দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ ছবি তুললাম কারণ এই ভ্রমণটা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে কারণ এটা আমাদের নিজের টাকা দিয়ে প্রথম ভ্রমণ।
ছবি নেওয়া শেষে কিছু খাবার কিনলাম কারণ আমাদের আজকে পথে ইফতার করতে হবে আর ট্রেনের খাবার স্বাস্থ্যসম্মত হবে না। এরপর আমরা ট্রেনে উঠে যার যার আসনে বসলাম ট্রেন ছাড়তে এখনও দেরী হবে কিছুটা।
সবাই ট্রেনে বসে আড্ডা দিচ্ছি আর জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখছি মানুষের ছুটে চলা, সবাই ফিরে যাচ্ছে যার যার গন্ত্বব্যে। বাইরের মানুষজন দেখতে দেখতে একপর্যায় আমার চোখ আটকে যায় স্টেশনের একপাশে কিছু ছেলে বসে বসে তাদের পরণের জামা নিয়ে কিছু একটা করছে। কিছুটা খেয়াল করে দেখতে পাই তারা একে অপরের সেই পুরাতন ছেড়া জামাগুলি দেখাচ্ছে আর নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। তাদের সেই কথা আমি শুনতে পারছি না, কিন্তু তাদের ভাবভঙ্গি দেখে বুঝতে পেরেছি।
এরপর ট্রেন চলতে শুরু করে আর আমাদের যাত্রা শুরু হয়।
ঈদের দিন সকালে নামাজের পর........
=> ম্যাম এটা কী তামিম স্যারের বাসা?
=> জ্বী, কিন্তু আপনারা কারা?
=> ম্যাম আমাদেরকে তামিম স্যার পাঠিয়েছেন। এই খাবারগুলো তিনি এখানে রেখে যেতে বলেছেন।
=> এত খাবার দিয়ে কী করব তাছাড়া আমার ছেলে এখন কক্সবাজার।
=> সেটা জানি না ম্যাম আপনি উনার কাছে জিজ্ঞাসা করুন (আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়)
তামিমের মা সেই লোকের ইশারা মতে তাকিয়ে দেখেন তার ছেলে তামিম দাঁড়িয়ে আছে। তিনি তার ছেলেকে এখন এখানে দেখতে পেয়ে অবাক না হয়ে পারলেন না কারণ তার ছেলের এখন থাকার কথা কক্সবাজার কিন্তু এখানে কীভাবে সম্ভব?
তামিম নিজেই মায়ের কাছে এসে দাঁড়ায়। তার মা তাকে পর্যবেক্ষণ করে দেখছেন। যেন তিনি ভুত দেখেছেন।
=> আম্মু এভাবে কী দেখছ?
=> দেখছি এটা আমার ছেলে না কী কোনো ভুত।
=> হা হা হা আমি তোমার ছেলে কোনো ভুত না।
=> তোর না এখন কক্সবাজার থাকার কথা, কিন্তু তুই এখানে কেন?
=> মায়ের চোখে পানি দিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করা এটা আমার পক্ষে সম্ভব না তাই চলে এসেছি।
=> কে বলেছে আমি কেঁদেছি?
=> আম্মু! আমি এখন আর ছোট নেই, আমি সব বুঝতে শিখেছি। গতকাল যখন বাসা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম তখন দেখেছি তুমি শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখ মুছতেছিলে।
=> তখন একটু কষ্ট হয়েছিল তাই আর কী চোখ থেকে পানি বেরিয়ে আসে। এখন আর কষ্ট নেই চল ভিতরে যাই তোর আব্বু নামাজ পড়ে বাসায় আসবেন এখনই এরপর আমরা একসাথে খাওয়া দাওয়া করব।
=> কিন্তু আম্মু আমাদের সাথে যে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে আরও মানুষ আছে।
=> কারা আছে?
=> তুমি দাড়াও আমি আসছি।
এরপর যেয়ে বাড়ীর বড় গেইটটা খুলে দিলাম আর সাথে ঢুকে পড়ল একঝাক ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যাদের পরণে রয়েছে নতুন জামা-কাপড়।
এত ছেলে-মেয়ে দেখে আম্মু অবাক হয়ে যান।
=> এরা কারা?
=> আম্মু এরা সবাই রেইলস্টেশনে থাকে। গতকাল ট্রেনে বসে এদের দিকে নজর যায় তখন কৌতুহলবসত এদের চলাফেরা দেখি এবং বুঝতে পারি এরা ঈদের নতুন কাপড় নিয়ে কথা বলছে। তাই তখনই কক্সবাজার যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আমরা সবাই মিলে এদেরকে ঈদের নতুন জামা আর কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আজকে ওরা আমাদের সাথে ঈদ করবে।
=> আলহামদুলিল্লাহ, বাবা তোর কাজে আমি অনেক খুশি হয়েছি। এতদিন ভাবতাম আমার ছেলেটা ছোট আছে কিন্তু না আজ বুঝতে পেরেছি আমার ছেলেটা বড় হয়ে গিয়েছে। এখন সবাইকে নিয়ে ঘরে চল। আজকে সবাইকে নিয়ে ঈদ আনন্দ করব।
এরপর সবাইকে নিয়ে উদযাবপন করলাম ঈদ-উল-ফিতর।
"ঈদ মোবারক"
সমাপ্ত............
(গল্পটি সম্পুর্ন কাল্পনিক। উক্ত পথ শিশুদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করার ইচ্ছা আমার আছে যদি কখনও সামর্থ হয় তাহলে অবশ্যই তাদের সাথে ঈদ উদযাপন করব। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। দেশে এবং দেশের বাইরের সকলকে জানাই ঈদ-উল-ফিতর এর শুভেচ্ছা। সবাই ভালো থাকবেন।)
Copyright: June 04,2019 at 05:57 AM
Md. Abdulla-Hill-Maruf Tamim