maruftamimauthor
Member
গল্পের নাম: এসিড
লেখক: মোঃ আব্দুল্লা-হিল-মারুফ তামিম
...........................................................................
-> রাকিব ভাই জানেন শেফালীর বিয়ে ঠিক হয়েছে।
-> কী বলছিস এসব,মাথা ঠিক আছে তোর?
-> ভাই আমি সত্যি বলছি। আজকে ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছে এবং তারা পছন্দ করেছে। এখনও তারা ওদের বাড়িতে আছে, বিশ্বাস না হলে আপনি আমার সাথে চলেন।
-> কিন্তু এত কিছু হচ্ছে শেফালী আমাকে একবারও বলল না। রিফাত তুই কোনো ভুল কিছু বলছিস না আবার?
-> ভাই আপনি এখন আমার সাথে চলেন তাহলে বুঝতে পারবেন।
-> হ্যাঁ চল।
রাকিব এবং শেফালী একে অপরকে ভালোবাসে। স্বভাবের দিক দিয়ে দুজন দুই রকম। শেফালী শান্ত-শিষ্ট একটি মেয়ে এবং পড়াশোনার দিক থেকেও খুব ভালো। কিন্তু রাকিব তার উল্টো মানে পড়াশোনা অনেক আগে থেকেই ছেড়ে দিয়েছে এছাড়া সারাদিন নেতাগীরি আর আড্ডাতেই কাটিয়ে দেয়। দুজন দুপ্রান্তের মানুষ কীভাবে একত্রিত হয়েছে সেটা না হয় অজানা থেকে যাক।
আজকে শেফালীকে ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছে আর সেই খবর ছুটে এসে রাকিবকে জানায় তার কাছের এক ছোটভাই রিফাত। এই খবর শুনে সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না তাই সবকিছু জানার জন্য রিফাতকে নিয়ে শেফালীদের বাড়ির দিকে যায়।
পৌছানোর পর শেফালীদের বাড়ির সামনে একটি চায়ের দোকান আছে সেখানে তারা বসে অপেক্ষা করতে থাকে দেখার জন্য যে কারা ঐ বাড়ি থেকে বের হয়।
কিছুক্ষণ বসে থাকার পর তারা দেখতে পায় শেফালীদের বাড়ি থেকে কিছু লোক বের হচ্ছে। তাদের সাথে রয়েছে শেফালীর বাবা আর বড় ভাই।
এসব দেখার পর রাকিবের আর বুঝতে বাকী রইল না যে রিফাত তাকে সঠিক তথ্যই দিয়েছে। তাই সে সেখান থেকে চলে আসে বাড়িতে আর ভাবতে থাকে শেফালী তাকে একটিবারও জানাল না যে তাকে আজ দেখতে আসবে।
শেফালীর সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে আর তার সাথে কথা বলার জন্য একটাই সুযোগ তার কলেজের সামনে যেয়ে অপেক্ষা করা। তাই পরেরদিন রাকিব আর রিফাত দুজনে শেফালীর কলেজের সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
কিছুক্ষণ পর কলেজ ছুটি দেয়। ছুটি দেওয়ার পর রাকিব দেখতে পায় শেফালী কলেজ থেকে বেরিয়ে আসছে সাথে তার বান্ধবী রয়েছে। তার সাথে বান্ধবী থাকলে সে কথা বলতে পারবে না তাই রিফাতকে ঈশারা করলে রিফাত বুঝতে পারে তার বড় ভাই তাকে কী বলতে চাইছে।
রিফাত সোজা শেফালীর বান্ধবীর কাছে যায় এবং কোনো কথা না বলেই তার কাধের থেকে ব্যাগটী ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দেয় অন্য দিকে। আর ব্যাগ উদ্ধার করার জন্য রিফাতের পিছু পিছু শেফালীর বান্ধবীও দৌড়াতে শুরু করে।
এই সুযোগে রাকিব যেয়ে শেফালীর সামনে দাঁড়ায়। কিন্তু শেফালী তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে যায় ঠিক তখনই রাকিব ডাক দেয় আর সে দাঁড়িয়ে যায়। এরপর রাকিব বলতে শুরু করে-
রাকিব: তোমাকে গতকাল ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছিল আমাকে কিছু জানালে না কেন?
শেফালী: জানানোর সুযোগ পাই নাই আমি। আব্বু আর ভাইয়া সবকিছু হুটহাট ঠিক করে ফেলেছে।
রাকিব: এখন চল আমরা পালিয়ে যাই।
শেফালী: নাহ আমি এটা করতে পারব না। আমার পরিবারকে আমি কষ্ট দিতে চাই না।
রাকিব: তাহলে কী করবে এখন? আমি তোমার বাসায় যেয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেই?
শেফালী: আমার বাসা থেকে কেউ তোমাকে মেনে নিবে না কারণ তাদের ঐ ছেলেকে পছন্দ হয়েছে এছাড়া তুমি বেকার তার উপর পড়াশোনাও ঠিকভাবে জানো না। কোন মুখ নিয়ে তুমি আমার মা-বাবার সামনে দাঁড়াবে বল?
রাকিব: কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না শেফালী কিছু একটা উপায় বল তুমি আমাকে।
শেফালী: আমার কিছু বলার নেই একটি কথা ছাড়া আর সেটি হল আমাকে ভুলে যাও তুমি। হয়ত কষ্ট হবে তবুও এছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। আমার কপালে তুমি নেই তাই আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে খুজে নাও।
রাকিব: খুব সহজে বলে দিলে তুমি এই কথাটা কিন্তু তোমাকে ভুলব কীভাবে কত স্মৃতি রয়েছে আমাদের দুজনের মধ্যে সব কী ভুলে গিয়েছ তুমি।
শেফালী: সেগুলোকে কোনো খারাপ স্বপ্ন ভেবে ভুলে যাও।
রাকিব: নাহ এ হতে দিব না আমি তোমাকে এখনই বিয়ে করব আমি, চল আমার সাথে। (হাত ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।)
শেফালী: এমন পাগলামী কর না আশেপাশের সবাই দেখছে, কেউ আমার বাসায় বলে দিলে বিপদ হয়ে যাবে ছাড়ো আমাকে।
রাকিব: নাহ আজকে তোমাকে আমার সাথে যেতেই হবে কোনো বাধা বিপত্তি মানব না আমি চল আমার সাথে।
শেফালী: ছাড়ো বলছি... ছাড়ো.... ঠাস...... (চড় বসিয়ে দেয় রাকিবের গালে)
রাকিবের গালে চড় মেরে শেফালী কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে যায়। আর এদিকে রাকিব প্রচন্ড রেগে যায় এবং সে সিদ্ধান্ত নেয় শেফালী যদি তার না হয় তাহলে তাকে অন্য কারও হতে দিবে না।
রাকিব কলেজ থেকে বাড়ি চলে আসে এবং রিফাতকে ফোন দিয়ে তার কাছে আসতে বলে। কিছুক্ষণ পর রিফাত চলে আসে।
রিফাতকে সে সবকিছু ব্যবস্থা করে রাখতে বলে আগামীকাল হবে শেফালীর জীবনে সবথেকে ভয়ংকর দিন।
রাত্রে সবকিছু গুছিয়ে রেখে রাকিব ঘুমিয়ে যায় আর মনে মনে বলে "আজ ভালো করে ঘুমিয়ে নাও শেফালী, আগামীকাল তোমার জন্য কী অপেক্ষা করছে তুমি নিজেও ধারণা করতে পারবে না।"
পরেরদিন......
সকাল বেলা রাকিব আর রিফাত দাঁড়িয়ে আছে শেফালীর কলেজের সামনে তার আসার অপেক্ষায়। কিছুক্ষণ পর তারা দেখতে পায় দূর থেকে শেফালী আসছে একা একা। তাই তারা দুজনে লুকিয়ে পড়ে গাছের আড়ালে।
শেফালী যখন গাছের কাছে চলে আসে ঠিক তখনই রাকিব তার সামনে এসে দাঁড়ায় এবং তাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে পকেট থেকে বোতলটি বের করে তার মুখে এসিড মেরে চলে যায় তারা।
শেফালী তখন যন্ত্রণায় মাটিতে পড়ে ছটফট করতে থাকে কিন্তু তার এই কান্না রাকিবের কানে পৌছায় না।
শেফালীর মুখে এসিড ছুড়ে রাকিব আজ অনেক খুশি কারণ শেফালীকে আর কেউ বিয়ে করতে চাইবে না। যদি বিয়ে করতে হয় তবে তাকেই করতে হবে। এজন্য সে প্রস্তুত রয়েছে কারণ শেফালীকে তার চাই যেকোনো মূল্যে।
আশেপাশের লোকজন শেফালীকে নিয়ে হাসপাতালে যায় চিকিৎসার জন্য।
কয়েকদিন হাসপাতালে থাকার পর শেফালীকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সে সুস্থ হলেও তার চেহারা এখন আর আগের মতো নেই। এখন তার চেহারা দেখলে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে।
এই চেহারা নিয়ে বেঁচে থাকার থেকে না থাকাটাই ভালো হবে তাই শেফালী আত্মহত্যা করে।
"ভাই.... ভাই... কী হল ভাই এভাবে নড়াচড়া করতেছেন কেন ঘুমের মধ্যে। স্বপ্ন দেখছিলেন?" রিফাতের ডাকে রাকিব ধড়ফড় করে উঠে বসে এবং আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সে তার ঘরে বিছানার উপর বসে আছে আর বাইরে অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে। তখন সে বুঝতে পারে যে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল।
রিফাত আবার রাকিবকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা খেয়ে সে রিফাতের দিকে তাকায়।
রিফাত: ভাই সকাল হয়ে গিয়েছে একটু পরেই কিন্তু কলেজে ক্লাস শুরু হয়ে যাবে যা করার এখনই করতে হবে চলেন।
রাকিব: বোতলটা কোথায় রেখেছিলি রিফাত?
রিফাত: ভাই আপনার খাটের নিচে, এই যে দেখেন।
রাকিব: দে আমার কাছে বোতলটা।
রিফাত: এই নেন।
এরপর রাকিব বোতলটি হাতে নিয়ে বাথরুমে চলে যায় এবং ভিতরের সব এসিড ব্যাসিনে ফেলে দিয়ে ধুয়ে দেয়।
এসব দেখে রিফাত বলে-
রিফাত: ভাই কী হল সব ফেলে দিলেন কেন, শেফালীর মুখে মারবেন না?
রাকিব: নাহ।
রিফাত: কেন ভাই?
রাকিব: যাকে এতটা ভালোবাসি তার ক্ষতি কেন করব বল। সে যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হতে পারে তাহলে এর থেকে আনন্দের বিষয় আর কী আছে।
রিফাত: সেটা ঠিক বলছেন ভাই।
রাকিব: আর একটা কথা সবসময় মনে রাখবি জোর করে কোনোদিন কিছু পাওয়া যায় না। নিজের সুখের জন্য অন্যকে কখনও দুঃখ দিবি না। তোকে যে পছন্দ করবে না তার পিছনে শুধু শুধু ঘুরে সময়ও নষ্ট করবি না আর তার কোনো ক্ষতিও করবি না। গতকাল রাত্রে আমি এই স্বপ্নটা না দেখলে আজ বড় ভুল করে ফেলতাম যার জন্য অনেকগুলো মানুষের জীবন নষ্ট হয়ে যেত। আমার এসব কথা সবসময় মনে রাখবি আর এখনও সময় আছে ভালো কিছু কর। আমি এই জায়গা দিয়ে দূরে কোথাও চলে যাব আর আসব না কোনোদিন।
রিফাত: কেন ভাই আপনি চলে যাবেন কেন?
রাকিব: আমি চাই না আমার সামনে দিয়ে অন্য কেউ শেফালীকে নিয়ে চলে যাক। আমি এটা সহ্য করতে পারব না। চেয়েছিলাম আত্মহত্যা করব কিন্তু এটাযে পাপ আর আমি না থাকলে আমার মায়ের কী হবে। তাই আমি আর মা দুজনে চলে যাব এখান থেকে ভালো থাকিস।
রিফাত: ঠিক আছে ভাই।
কয়েকদিন পর শেফালীর বিয়ে হয়ে যায় আর রাকিব তার মা'কে সাথে নিয়ে কোথায় চলে গিয়েছে তা কেউ জানে না।
সমাপ্ত.......
বিঃদ্রঃ দেশের প্রায়ই অঞ্চলে মাঝে মাঝে শোনা যায় মেয়েরা এসিডে দগ্ধ হচ্ছে। যার কারণে একটি মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শুধু তাই নয় তার পরিবারেও নেমে আসে এক কালো ছায়া। এর প্রতিকার সম্পর্কে আমি কিছু বলব না কারণ এর প্রতিকার একমাত্র নিজের মনের কাছেই প্রশ্ন করলে পাওয়া যাবে। শুধু একটি কথাই বলব কখন কারও কাছ থেকে জোর করে কিছু আদায় করে নেওয়া যায় না। আপনাকে যে পছন্দ করে না তার পিছনে সময় নষ্ট না করে সেই সময়টি ভালো কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন দেখবেন তার থেকেও হাজার গুণ ভালো কাউকে পেয়ে যাবেন। আর যদি আপনি তাকে মন দিয়েই ভালোবেসে থাকেন তাহলে আপনি তার ক্ষতি জীবনেও করতে পারবেন না। যদি ক্ষতি করেন তাহলে আপনি তাকে মন দিয়ে কখনও ভালোবাসেন নাই। সবসময় চেষ্টা করবেন যাকে ভালোবাসেন সেই মানুষটা যেন ভালো থাকে হয় আপনার সাথে না হয় অন্যের সাথে। কিন্তু তার ক্ষতি করার চিন্তা করবেন না এতে আপনার কোনো লাভ হবে না।
(গল্পটি সম্পুর্ণ কাল্পনিক। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। সবাই ভালো থাকবেন এবং গল্পটি সময় নষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।)
Copyright: July 18,2019 at 03:48 AM
Maruf Tamim (Author).
লেখক: মোঃ আব্দুল্লা-হিল-মারুফ তামিম
...........................................................................
-> রাকিব ভাই জানেন শেফালীর বিয়ে ঠিক হয়েছে।
-> কী বলছিস এসব,মাথা ঠিক আছে তোর?
-> ভাই আমি সত্যি বলছি। আজকে ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছে এবং তারা পছন্দ করেছে। এখনও তারা ওদের বাড়িতে আছে, বিশ্বাস না হলে আপনি আমার সাথে চলেন।
-> কিন্তু এত কিছু হচ্ছে শেফালী আমাকে একবারও বলল না। রিফাত তুই কোনো ভুল কিছু বলছিস না আবার?
-> ভাই আপনি এখন আমার সাথে চলেন তাহলে বুঝতে পারবেন।
-> হ্যাঁ চল।
রাকিব এবং শেফালী একে অপরকে ভালোবাসে। স্বভাবের দিক দিয়ে দুজন দুই রকম। শেফালী শান্ত-শিষ্ট একটি মেয়ে এবং পড়াশোনার দিক থেকেও খুব ভালো। কিন্তু রাকিব তার উল্টো মানে পড়াশোনা অনেক আগে থেকেই ছেড়ে দিয়েছে এছাড়া সারাদিন নেতাগীরি আর আড্ডাতেই কাটিয়ে দেয়। দুজন দুপ্রান্তের মানুষ কীভাবে একত্রিত হয়েছে সেটা না হয় অজানা থেকে যাক।
আজকে শেফালীকে ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছে আর সেই খবর ছুটে এসে রাকিবকে জানায় তার কাছের এক ছোটভাই রিফাত। এই খবর শুনে সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না তাই সবকিছু জানার জন্য রিফাতকে নিয়ে শেফালীদের বাড়ির দিকে যায়।
পৌছানোর পর শেফালীদের বাড়ির সামনে একটি চায়ের দোকান আছে সেখানে তারা বসে অপেক্ষা করতে থাকে দেখার জন্য যে কারা ঐ বাড়ি থেকে বের হয়।
কিছুক্ষণ বসে থাকার পর তারা দেখতে পায় শেফালীদের বাড়ি থেকে কিছু লোক বের হচ্ছে। তাদের সাথে রয়েছে শেফালীর বাবা আর বড় ভাই।
এসব দেখার পর রাকিবের আর বুঝতে বাকী রইল না যে রিফাত তাকে সঠিক তথ্যই দিয়েছে। তাই সে সেখান থেকে চলে আসে বাড়িতে আর ভাবতে থাকে শেফালী তাকে একটিবারও জানাল না যে তাকে আজ দেখতে আসবে।
শেফালীর সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে আর তার সাথে কথা বলার জন্য একটাই সুযোগ তার কলেজের সামনে যেয়ে অপেক্ষা করা। তাই পরেরদিন রাকিব আর রিফাত দুজনে শেফালীর কলেজের সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
কিছুক্ষণ পর কলেজ ছুটি দেয়। ছুটি দেওয়ার পর রাকিব দেখতে পায় শেফালী কলেজ থেকে বেরিয়ে আসছে সাথে তার বান্ধবী রয়েছে। তার সাথে বান্ধবী থাকলে সে কথা বলতে পারবে না তাই রিফাতকে ঈশারা করলে রিফাত বুঝতে পারে তার বড় ভাই তাকে কী বলতে চাইছে।
রিফাত সোজা শেফালীর বান্ধবীর কাছে যায় এবং কোনো কথা না বলেই তার কাধের থেকে ব্যাগটী ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দেয় অন্য দিকে। আর ব্যাগ উদ্ধার করার জন্য রিফাতের পিছু পিছু শেফালীর বান্ধবীও দৌড়াতে শুরু করে।
এই সুযোগে রাকিব যেয়ে শেফালীর সামনে দাঁড়ায়। কিন্তু শেফালী তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে যায় ঠিক তখনই রাকিব ডাক দেয় আর সে দাঁড়িয়ে যায়। এরপর রাকিব বলতে শুরু করে-
রাকিব: তোমাকে গতকাল ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছিল আমাকে কিছু জানালে না কেন?
শেফালী: জানানোর সুযোগ পাই নাই আমি। আব্বু আর ভাইয়া সবকিছু হুটহাট ঠিক করে ফেলেছে।
রাকিব: এখন চল আমরা পালিয়ে যাই।
শেফালী: নাহ আমি এটা করতে পারব না। আমার পরিবারকে আমি কষ্ট দিতে চাই না।
রাকিব: তাহলে কী করবে এখন? আমি তোমার বাসায় যেয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেই?
শেফালী: আমার বাসা থেকে কেউ তোমাকে মেনে নিবে না কারণ তাদের ঐ ছেলেকে পছন্দ হয়েছে এছাড়া তুমি বেকার তার উপর পড়াশোনাও ঠিকভাবে জানো না। কোন মুখ নিয়ে তুমি আমার মা-বাবার সামনে দাঁড়াবে বল?
রাকিব: কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না শেফালী কিছু একটা উপায় বল তুমি আমাকে।
শেফালী: আমার কিছু বলার নেই একটি কথা ছাড়া আর সেটি হল আমাকে ভুলে যাও তুমি। হয়ত কষ্ট হবে তবুও এছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। আমার কপালে তুমি নেই তাই আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে খুজে নাও।
রাকিব: খুব সহজে বলে দিলে তুমি এই কথাটা কিন্তু তোমাকে ভুলব কীভাবে কত স্মৃতি রয়েছে আমাদের দুজনের মধ্যে সব কী ভুলে গিয়েছ তুমি।
শেফালী: সেগুলোকে কোনো খারাপ স্বপ্ন ভেবে ভুলে যাও।
রাকিব: নাহ এ হতে দিব না আমি তোমাকে এখনই বিয়ে করব আমি, চল আমার সাথে। (হাত ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।)
শেফালী: এমন পাগলামী কর না আশেপাশের সবাই দেখছে, কেউ আমার বাসায় বলে দিলে বিপদ হয়ে যাবে ছাড়ো আমাকে।
রাকিব: নাহ আজকে তোমাকে আমার সাথে যেতেই হবে কোনো বাধা বিপত্তি মানব না আমি চল আমার সাথে।
শেফালী: ছাড়ো বলছি... ছাড়ো.... ঠাস...... (চড় বসিয়ে দেয় রাকিবের গালে)
রাকিবের গালে চড় মেরে শেফালী কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে যায়। আর এদিকে রাকিব প্রচন্ড রেগে যায় এবং সে সিদ্ধান্ত নেয় শেফালী যদি তার না হয় তাহলে তাকে অন্য কারও হতে দিবে না।
রাকিব কলেজ থেকে বাড়ি চলে আসে এবং রিফাতকে ফোন দিয়ে তার কাছে আসতে বলে। কিছুক্ষণ পর রিফাত চলে আসে।
রিফাতকে সে সবকিছু ব্যবস্থা করে রাখতে বলে আগামীকাল হবে শেফালীর জীবনে সবথেকে ভয়ংকর দিন।
রাত্রে সবকিছু গুছিয়ে রেখে রাকিব ঘুমিয়ে যায় আর মনে মনে বলে "আজ ভালো করে ঘুমিয়ে নাও শেফালী, আগামীকাল তোমার জন্য কী অপেক্ষা করছে তুমি নিজেও ধারণা করতে পারবে না।"
পরেরদিন......
সকাল বেলা রাকিব আর রিফাত দাঁড়িয়ে আছে শেফালীর কলেজের সামনে তার আসার অপেক্ষায়। কিছুক্ষণ পর তারা দেখতে পায় দূর থেকে শেফালী আসছে একা একা। তাই তারা দুজনে লুকিয়ে পড়ে গাছের আড়ালে।
শেফালী যখন গাছের কাছে চলে আসে ঠিক তখনই রাকিব তার সামনে এসে দাঁড়ায় এবং তাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে পকেট থেকে বোতলটি বের করে তার মুখে এসিড মেরে চলে যায় তারা।
শেফালী তখন যন্ত্রণায় মাটিতে পড়ে ছটফট করতে থাকে কিন্তু তার এই কান্না রাকিবের কানে পৌছায় না।
শেফালীর মুখে এসিড ছুড়ে রাকিব আজ অনেক খুশি কারণ শেফালীকে আর কেউ বিয়ে করতে চাইবে না। যদি বিয়ে করতে হয় তবে তাকেই করতে হবে। এজন্য সে প্রস্তুত রয়েছে কারণ শেফালীকে তার চাই যেকোনো মূল্যে।
আশেপাশের লোকজন শেফালীকে নিয়ে হাসপাতালে যায় চিকিৎসার জন্য।
কয়েকদিন হাসপাতালে থাকার পর শেফালীকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সে সুস্থ হলেও তার চেহারা এখন আর আগের মতো নেই। এখন তার চেহারা দেখলে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে।
এই চেহারা নিয়ে বেঁচে থাকার থেকে না থাকাটাই ভালো হবে তাই শেফালী আত্মহত্যা করে।
"ভাই.... ভাই... কী হল ভাই এভাবে নড়াচড়া করতেছেন কেন ঘুমের মধ্যে। স্বপ্ন দেখছিলেন?" রিফাতের ডাকে রাকিব ধড়ফড় করে উঠে বসে এবং আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সে তার ঘরে বিছানার উপর বসে আছে আর বাইরে অনেক বেলা হয়ে গিয়েছে। তখন সে বুঝতে পারে যে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল।
রিফাত আবার রাকিবকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা খেয়ে সে রিফাতের দিকে তাকায়।
রিফাত: ভাই সকাল হয়ে গিয়েছে একটু পরেই কিন্তু কলেজে ক্লাস শুরু হয়ে যাবে যা করার এখনই করতে হবে চলেন।
রাকিব: বোতলটা কোথায় রেখেছিলি রিফাত?
রিফাত: ভাই আপনার খাটের নিচে, এই যে দেখেন।
রাকিব: দে আমার কাছে বোতলটা।
রিফাত: এই নেন।
এরপর রাকিব বোতলটি হাতে নিয়ে বাথরুমে চলে যায় এবং ভিতরের সব এসিড ব্যাসিনে ফেলে দিয়ে ধুয়ে দেয়।
এসব দেখে রিফাত বলে-
রিফাত: ভাই কী হল সব ফেলে দিলেন কেন, শেফালীর মুখে মারবেন না?
রাকিব: নাহ।
রিফাত: কেন ভাই?
রাকিব: যাকে এতটা ভালোবাসি তার ক্ষতি কেন করব বল। সে যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হতে পারে তাহলে এর থেকে আনন্দের বিষয় আর কী আছে।
রিফাত: সেটা ঠিক বলছেন ভাই।
রাকিব: আর একটা কথা সবসময় মনে রাখবি জোর করে কোনোদিন কিছু পাওয়া যায় না। নিজের সুখের জন্য অন্যকে কখনও দুঃখ দিবি না। তোকে যে পছন্দ করবে না তার পিছনে শুধু শুধু ঘুরে সময়ও নষ্ট করবি না আর তার কোনো ক্ষতিও করবি না। গতকাল রাত্রে আমি এই স্বপ্নটা না দেখলে আজ বড় ভুল করে ফেলতাম যার জন্য অনেকগুলো মানুষের জীবন নষ্ট হয়ে যেত। আমার এসব কথা সবসময় মনে রাখবি আর এখনও সময় আছে ভালো কিছু কর। আমি এই জায়গা দিয়ে দূরে কোথাও চলে যাব আর আসব না কোনোদিন।
রিফাত: কেন ভাই আপনি চলে যাবেন কেন?
রাকিব: আমি চাই না আমার সামনে দিয়ে অন্য কেউ শেফালীকে নিয়ে চলে যাক। আমি এটা সহ্য করতে পারব না। চেয়েছিলাম আত্মহত্যা করব কিন্তু এটাযে পাপ আর আমি না থাকলে আমার মায়ের কী হবে। তাই আমি আর মা দুজনে চলে যাব এখান থেকে ভালো থাকিস।
রিফাত: ঠিক আছে ভাই।
কয়েকদিন পর শেফালীর বিয়ে হয়ে যায় আর রাকিব তার মা'কে সাথে নিয়ে কোথায় চলে গিয়েছে তা কেউ জানে না।
সমাপ্ত.......
বিঃদ্রঃ দেশের প্রায়ই অঞ্চলে মাঝে মাঝে শোনা যায় মেয়েরা এসিডে দগ্ধ হচ্ছে। যার কারণে একটি মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শুধু তাই নয় তার পরিবারেও নেমে আসে এক কালো ছায়া। এর প্রতিকার সম্পর্কে আমি কিছু বলব না কারণ এর প্রতিকার একমাত্র নিজের মনের কাছেই প্রশ্ন করলে পাওয়া যাবে। শুধু একটি কথাই বলব কখন কারও কাছ থেকে জোর করে কিছু আদায় করে নেওয়া যায় না। আপনাকে যে পছন্দ করে না তার পিছনে সময় নষ্ট না করে সেই সময়টি ভালো কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন দেখবেন তার থেকেও হাজার গুণ ভালো কাউকে পেয়ে যাবেন। আর যদি আপনি তাকে মন দিয়েই ভালোবেসে থাকেন তাহলে আপনি তার ক্ষতি জীবনেও করতে পারবেন না। যদি ক্ষতি করেন তাহলে আপনি তাকে মন দিয়ে কখনও ভালোবাসেন নাই। সবসময় চেষ্টা করবেন যাকে ভালোবাসেন সেই মানুষটা যেন ভালো থাকে হয় আপনার সাথে না হয় অন্যের সাথে। কিন্তু তার ক্ষতি করার চিন্তা করবেন না এতে আপনার কোনো লাভ হবে না।
(গল্পটি সম্পুর্ণ কাল্পনিক। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। সবাই ভালো থাকবেন এবং গল্পটি সময় নষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।)
Copyright: July 18,2019 at 03:48 AM
Maruf Tamim (Author).