What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other গল্পটা সুরসম্রাটের - আলাউদ্দিন আলী (1 Viewer)

MOHAKAAL

Mega Poster
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
2,428
Messages
16,363
Credits
1,541,694
Thermometer
Billiards
Sandwich
Profile Music
French Fries
e6cj4rB.jpg


আলাউদ্দিন আলী..
নামটাই যথেষ্ট।
একটা সময় ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে সেই শিল্পীরা নিজেদের দুর্ভাগা ভাবতেন যারা আলাউদ্দিন আলী-র সুরে গান গাইতে পারেননি। জীবন্ত কিংবদন্তি তিনি।

জন্ম ২৪ ডিসেম্বর ১৯৫২ সালে। মুন্সিগণ্ঞ্জের টঙ্গিবাড়ি থানার বাঁশবাড়ি গ্রামে। একাধারে সুরকার, গীতিকার, বেহালাবাদক, সঙ্গীত পরিচালক।
সঙ্গীত পরিবারের সন্তান। বাবা এস্রাজ বাজাতেন, বোন সেতার বাজাতেন। প্রধান তালিম পেয়েছেন চাচা ওস্তাদ সাদেক আলীর কাছে তাছাড়া বাবার পাশাপাশি পেয়েছেন দুই ভাই ওস্তাদ মনসুর আলী, ধীর আলী-র কাছে। সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে পড়েছেন। রায়ের বাজার কলেজ থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে ভর্তি হন টিএন্ডটি কলেজে।

১৯৬৮ সালে যন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু এবং আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে এছাড়া আনোয়ার পারভেজের সহকারী ছিলেন। ‘অল পাকিস্তান মিউজিক কমপিটিশন’-এ ঢাকার যন্ত্রশিল্পী হিসেবে বেহালাবাদকের পুরস্কার জিতেছিলেন।
বিখ্যাত সুরকার সত্য সাহা তাঁর নামে দুটি ‘আ’ থাকাতে সারেগামাপা-র রেশ পেতেন তাই মজা করে তাঁকে ডাকতেন ‘ডবল টেক্কা’ বলে। প্রায় ৩০০ ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন।

বিখ্যাত সুরকার আলতাফ মাহমুদের সহকারী হয়ে কাজ শুরু করেন। আলতাফ মাহমুদ তাঁকে বিভিন্ন কথা দিয়ে বলতেন-‘তুই তোর মতো সুর কর কিছু একটা।’ এগুলো তিনি কাজে লাগাতেন না কোথাও কিন্তু প্রশিক্ষণ হিসেবে কাজে দিত।

চলচ্চিত্রে সফল সুরকার হিসেবে জনপ্রিয়তা পাবার আগে তিনি টেলিভিশনে জনপ্রিয়তা পান। এটা তাঁর ভাগ্য ছিল বলে তিনি মনে করেন।
কাজ শুরুর সময় খানআতা, আজাদ রহমান, সত্য সাহা, খন্দকার নুরুল আলম-দের মতো প্রতিষ্ঠিত শিল্পী ও সুরকারের মাঝে তিনি খুব কম বয়েসী ছিলেন। তাই নিজে গোঁফ রাখা শুরু করলেন। একদিন খন্দকার নুরুল আলম তাঁর গোঁফ টেনে বললেন-‘কি রে তুই কি মুরুব্বি হয়ে গেলি নাকি!’
প্রথম সুর করেন ‘ও আমার বাংলা তোর’ দেশের গানটি দিয়ে। ১৯৭৫ সালে ‘সন্ধিক্ষণ’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৭ সালে ‘ফকির মজনু শাহ’ ও ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’ ছবি দুটির সঙ্গীত পরিচালনা করে খ্যাতির শীর্ষে চলে যান তখনকার সময়ে। স্টারডম তৈরি হয়ে যায়। তাঁর মিউজিক কম্পোজিশনে পিকনিক অ্যারেন্জমেন্ট থাকত। উৎসবমুখর পরিবেশে গান সুর করতে পছন্দ করতেন। তিনি একমাত্র বাংলাদেশী সুরকার যিনি একইদিনে ৩০টি গান রেকর্ড করেছিলেন।

নায়ক জাফর ইকবালের নায়ক হবার আগে গায়ক হবার পেছনে অবদান ছিল তাঁর। তাঁকে নায়ক করার কথা তখন ভাবছিলেন পরিচালক এহতেশাম। আলাউদ্দিন আলী জাফর ইকবালকে বিটিভিতে প্রচারিত হবে বলে একটি গান করতে বললেন। সেই গান ছিল তাঁর সুরে ‘সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী’ নামে। গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এছাড়া জাফরের কণ্ঠে তাঁর সুরে ‘যেভাবেই বাঁচি বেঁচে তো আছি’ গানটিও জনপ্রিয়তা পায়। দুটি গানই আজ কালজয়ী। আলাউদ্দিন আলী ‘কিবা জাদু জানো’ শিরোনামে একটি গানও গেয়েছিলেন পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে। গানটি ছবিতে প্রবীরমিত্রের লিপে ছিল।

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ৮ বার :
সঙ্গীত পরিচালনা ও সুরকার হিসেবে ৭ বার এবং গীতিকার হিসেবে ১ বার।
সঙ্গীত পরিচালনায় – গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), সুন্দরী (১৯৭৯), কসাই (১৯৮০), যোগাযোগ (১৯৮৮), লাখে একটা (১৯৯০)। সুরকার হিসেবে – প্রেমিক (১৯৮৫), লাল দরিয়া (২০০২)।

অসংখ্য কালজয়ী ও জনপ্রিয় গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তালিকা :
আছেন আমার মোক্তার – গোলাপী এখন ট্রেনে
একবার যদি কেউ ভালোবাসত – জন্ম থেকে জ্বলছি
কত কাঁদলাম কত গো সাঁধলাম – ভাত দে
চোখের নজর এমনি কইরা – ফকির মজনু শাহ
এই দুনিয়া এখন তো আর – দুই পয়সার আলতা
আমার মতো এত সুখী – বাবা কেন চাকর
হয় যদি বদনাম – বদনাম
পারি না ভুলে যেতে – সাক্ষী
ভেঙেছে পিণ্ঞ্জর মেলেছে ডানা – ভাইবন্ধু
পাথরের পৃথিবীতে কাচের হৃদয় – ঢাকা ৮৬
এ সুখের নেই কোনো সীমানা – স্বামী স্ত্রী
সকালটা যে তোমার – যোগাযোগ
কারো আপন হইতে পারলি না অন্তর – প্রেমনগর
তুমি আরেকবার আসিয়া যাও মোরে কান্দাইয়া – নাগরদোলা

VDVyBpy.jpg


তুমি এমন কোনো কথা বোলো না – প্রিয় তুমি
এ জীবন তোমাকে দিলাম বন্ধু – আত্মত্যাগ
সুন্দর সন্ধ্যায় এ গান দিলাম উপহার – শেষ খেলা
সত্য কি মিথ্যে কি – ভাইবন্ধু
তোমাকে চাই আমি আরো কাছে – নসীব
শুধু একবার বলো ভালোবাসি – দেন মোহর
তুমি আমার মনের মানুষ – স্বপ্নের পৃথিবী
সময় হয়েছে ফিরে যাবার – আদরের সন্তান
পিছু নিয়েছে কিছু লোক – আত্মত্যাগ
আজ বড় সুখে দুটি চোখে – বেঈমানী
কিছু কিছু মানুষের জীবনে – স্বপ্নের বাসর
আর যেন ভুল না হয় – ভালোবাসা কারে কয়
তোমাকে দেখলে একবার – অণ্ঞ্জলি
এত ভালোবেসো না আমায় – মিস ডায়না
আমি বধূ সেজে থাকবো – বাবা কেন চাকর
এমন মিষ্টি একটা বউ – সন্তান যখন শত্রু
তুমি আপনের আপন – স্বপ্নের পৃথিবী
চিঠি এলো জেলখানাতে – সত্যের মৃত্যু নেই
ভালোবাসা যত বড় – চরম আঘাত
সবকিছুরই শুরু আছে – নয়ন ভরা জল
ভালোবাসার সাধ পূর্ণ তো হয় না – লাল দরিয়া
আমি আছি থাকবো – সুন্দরী
কেউ কোনোদিন আমারে তো কথা দিল না – জন্ম থেকে জ্বলছি
জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো – জন্ম থেকে জ্বলছি
তোমারও দুনিয়া দেখিয়া শুনিও – সুন্দরী
তিলে তিলে মইরা যামু – ভাত দে
এমনতো প্রেম হয় – দুই পয়সার আলতা
দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা – জন্ম থেকে জ্বলছি
তোমার কারণে আমি উচ্ছল – হৃদয়ের কথা
কতটা বছর এই সুখ রবে গো – হৃদয়ের কথা
চোখের নজর এমনি কইরা – ফকির মজনু শাহ
আমি ভালোবাসার সুখে – বেঈমানী
আমার ভাগ্য বড় আজব জাদুকর – সন্তান যখন শত্রু
সে আমার ভালোবাসার আয়না – লাল দরিয়া
সাগরিকা – সাগরিকা
যেটুকু সময় তুমি থাকো কাছে – শত জনমের প্রেম
বৃষ্টি রে বৃষ্টি – স্বপ্নের পৃথিবী
জীবনের এই যে রঙিন দিন – সাক্ষী
বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িত গেলাম – কসাই
কহে চণ্ডিদাসে রজকিনীর আঁশে – চণ্ডিদাস ও রজকিনী
আমি হৃদয় চিরিয়া দেখাব – হীরামতি
হায়রে কপাল মন্দ – গোলাপী এখন ঢাকায়
কেন তারে আমি এত ভালোবাসলাম – গোলাপী এখন ঢাকায়
তারায় করে ঝিকিমিকি – গোলাপি এখন ঢাকায়
তুমি যখনই কাছে থাকো – শুধু তুমি
এসো ভালোবাসি দেশকে – সাহসী মানুষ চাই
প্রেমের আগুনে জ্বলে গেলাম – ফকির মজনু শাহ

চলচ্চিত্র ছাড়াও কিছু দেশের ও আধুনিক গানের কালজয়ী সুরকার তিনি।
দেশের গান – ও আমার বাংলা মা তোর, প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ, সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি, আমায় গেঁথে দাও না মাগো
আধুনিক গান – সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী, যেভাবেই বাঁচি বেঁচে তো আছি, শেষ কোরো না শুরুতে খেলা, যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়।
‘এলসিএস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান করেছেন নিজ উদ্যোগে। এটি শিল্পীদের রয়্যালটি রক্ষায় কাজ করে। ‘একতারা মাল্টিমিডিয়া প্রোডাকশন’ নামে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও আছে এখানে সঙ্গীত বিষয়ক বিভিন্ন কাজ করা হয়।

সাংসারিক জীবনে চার মেয়ে, এক ছেলে আছে। প্রথম স্ত্রী নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সালমা সুলতানা যিনি ২০১৬ সালে মারা যান। তাঁদের মেয়ে আলিফ আলাউদ্দিনও একজন শিল্পী। দ্বিতীয় স্ত্রী ফারজানা আলী মিমি।

তিনি নিজেকে তৃপ্ত মনে করেন। অনেক পেয়েছেন মনে করেন। দেশ ছাড়াও বিদেশি শিল্পীরা গেয়েছেন। লতা মুঙ্গেশকর, আশা ভোসলে ছাড়া ভারতীয় অনেক শিল্পী তাঁর গান গেয়েছেন।

আজকের দিনে চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা নিয়ে তিনি একটাই পরামর্শ দেন-‘শিখে কাজ করো।’
দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ৯ আগস্ট ২০২০ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

আলাউদ্দিন আলী বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে গর্বিত নাম হয়ে থাকবে। গান নিয়ে যারা কাজ করবে ভবিষ্যতে তাদের কাছে তিনি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হয়ে থাকবেন আদর্শ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top