নেট ফ্লিক্সের সিইও রীড হ্যাস্টিং হোম কোয়ারান্টাইনে লস এঞ্জেলসে নিজের বাড়িতে।
তাঁর ভ্রু কুঁচকে আছে। খুব সহজে তাঁর এই ভ্রু কুঁচকায় না। বড় ধরনের কোন গড়বড় হলেই শুধু কুঁচকানো ভ্রু দেখা যায়।
কফির মগ হাতে অনলাইন কনফারেন্সে সবাইকে ডাকা হয়েছে। বিষয় খুব বড় কিছু না। নেটফ্লিক্সের শত শত ব্লক বাষ্টার মুভির মাঝে এক্সট্রাকশন খুব সাধারণ একটা সিনেমা। ৬৫ মিলিয়ন বাজেটের মুভি তাদের কাছে কিছুই না। এটা থেকে আহামরি লাভ উঠে আসবে এমন কিছুও তার মাথায় ছিলনা। কিন্ত কাল থেকে রিড খুব অস্বস্থির মধ্যে আছে।
তাঁর দেখা সাম্প্রতিক কালের আর কোন মুভি নিয়ে এত হইচই হয় নাই। হইচই হওয়া ভাল। মার্কেটিং হয়, নেগেটিভ মার্কেটিং হলেও আখেরে ভাল। মানুষ ব্যাপারটা বোঝার জন্যে হলেও নেটফ্লিস্কে আসবে।
কিন্ত এইগুলো কোন কিছুই তার চিন্তার বিষয় নয়। তার চিন্তার বিষয়টা বের হয়ে আসলো যখন সে ভিডিও কনফারেন্সে তার মার্কেটিং হেড শুধীর ভাই ( ইন্ডিয়ান) কে জিজ্ঞেস করলো,
হেই শুধীর ভাই, এইটা কি হল? বাংগালীরা এত ক্ষেপলো কেন এই মুভি নিয়ে? অনলাইন তো গরম করে ফেলেছে। বিষয়টা কি?
শুধীর ভাই, তাঁর স্বভাব সুলভ মাথা ঝাঁকানো ভংগীতে বল, আমি তো বলেছিলাম আপনাকে, এই বাংগালীদের নিয়ে মুভি বানাবেন না। এরা খুব চ্যাতা জাতি। এরা একশন করেনা। কিন্ত করলে করোনার বাপরেও ছাড়েনা। ওদের চ্যাতে লাগছে। এক বি বাড়িয়া ডিস্ক্রিক্ট আমাদের ইন্ডিয়ার পুরো আর্মি শুয়াই ফেলতে পারবে টেঁটা দিয়া, সেখানে আমরা দেখাইছি পুরো ঢাকা আমরা তছনছ করেছি দুইজন দিয়া, ওরা চ্যাতবে নাতো চুমো দিবে? ৫৫ লাকস নেগেটিভ রিভিউ আসছে। ওরা খুব চ্যাতছে!
রীড একটু চিন্তিত ভংগীতে বল, তাহলে ওদের ওখানে ৫৫ লাকস মানুষ নেটফ্লিক্স ইউজ করে?
শুধীর ভাই বললো, না। মাত্র ৫ লাখ লোক ইউজ করে।
রীড অবাক হয়ে বলল, তাইলে বাকি ৫০ লাখস কিভাবে দেখলো?
শুধীর বিরস বদনে বলল, আপনারে তো এইটাই বুঝাইতে পারতে আছিনাা। বাংলাদেশে অন্য দেশের সিস্টেম চলেনা। ইনফ্যাক্ট ওরা দুনিয়ার সকল দেশ থেকে আলাদা। ওদের ৫ লাখ সাবস্ক্রাইবার কিন্ত প্রতি সাবস্ক্রাইবার এটা আবার শেয়ার করেছে গড়ে ৫ পরিবারের সাথে।। এর মানে হল, ৫ লক্ষ একাউন্ট দিয়ে ২৫ লক্ষ লোক দেখে।
রীড বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে বলল, কি বল? এরা এভাবে আমার কোম্পানীর সুপারী মেরে দিচ্ছে? তাইলে বাকি ৩০ লক্ষ কিভাবে আসলো?
শুধীর বলে চলল, এই ২৫ লক্ষ আবার টিভি শেয়ার করে। যেমন যে বাসায় সাবসস্ক্রিপশন আছে, তারা আবার পাড়া প্রতিবেশীর সাথে শেয়ার করে। আবার পাড়া প্রতিবেশী জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে, চুংগা লাগাইয়াও দেখে। ধরেন ৫০ লক্ষ এম্নিতেই দেখে। এরপর আছে টরেন্ট। এরা দুনিয়ার যে কোন মুভি ঝটপট দুইদিনের মধ্যে পয়দা করে নামাইয়া ফেলে। এই সংখ্যা হবে ৫ লক্ষ। তো এইভাবেই ৫ লক্ষ সাবস্ক্রাইবারের ট্যাকা দিয়া ৫৫ লক্ষ মানুষ নেট ফ্লিক্স দেখে। আমি কি কত্তাম!
সিরিয়াস সমালোচনা:
ঢাকা শহরের ক্যাসিনো আর ড্রাগ মাফিয়াদের বাহিনীই যে এইদেশের র্যাব,পুলিশ, সেনাবাহিনী- তার সবটাই জেনে গেছে দুনিয়া! বিচি থাকলে এক্সট্র্যাকশনের নামে মামলা করুক শুয়াড়ের বাচ্চারা!
হোয়াট আ ডেপিকশন ম্যান! সবচাইতে পাশবিক সুখের বিষয় হইলো- সমস্ত সিনেমায় এগো মানুষ বইলাও কাউন্টা করেনাই একবারও।কয় এনিম্যালস!
ড্রাগ ট্র্যাফিকিং, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর তাতে সম্পৃক্ততা, কিশোর গ্যাং- কী নাই সেখানে!পাশাপাশি, চরিত্রগতভাবে ঢাকা যে দিল্লীরই গুলাম- বসতবাড়ির ড্রয়িংরুম জুইড়া যে বলিউডি গানই চলে ঢাকায়- কী নিদারুণ চিত্রায়ণ তার! সাম্প্রতিক ঢাকারে এ্যাতো দূরে থেইকা কেমনে এত পরিষ্কারভাবে রিড করতে পারে হলিউডি লোকজন?