বাজার থেকে ফিরে মায়ের বিছানার পাশে বসলাম।
মা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোর চোখ মুখ এত শক্ত কেন?
আমি কঠিন স্বরে বললাম, মা! এখানে আর থাকা যাবে না। সবাই বাবার ব্যাপারটা জেনে যাচ্ছে। তোমার এই অবস্থাতে এত অসম্মান আমি মানতে পারছি না।
মা বললেন, মানুষের বলার মুখ আছে। মানুষ তো বলবেই।
- একটা সীমা আছে মা। আমরা গ্রামে চলে যাব।
- গ্রামে গেলে তোর পড়াশোনার কি হবে?
- যা খুশি হোক।
- আমার চিকিৎসা?
- একটা কিছু তো হবেই।
- তোর বাবার চাকরি?
আমি শান্ত গলায় বললাম, তুমি বাবাকে ডির্ভোর্স দিয়ে দাও মা। আমি আর মেনে নিতে পারছি না। কোনো যুক্তিতেই মানতে পারছি না।
মা শোয়া থেকে উঠে বসলেন। আমার দিকে কঠিন মুখে করে তাকিয়ে বললেন, বাবার উপর এত রাগ কেন তোর?
- রাগ করব না তো কি করব?
- তাকে কি খারাপ মানুষ মনে হয়?
- অবশ্যই।
মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, তোর বাবা খারাপ মানুষ না। তুই আমার থেকে তাকে বেশি চিনিস না। সে হয়তোবা একটা ভুল করেছে। একটা ভুলে একটা মানুষের সংজ্ঞা বদলে যায় না, তার সারা জীবনের সব অর্জন মাটি হয় না। মানুষ ভুল করবেই। ভালো মানুষ খারাপ মানুষের সংজ্ঞা ভুল থেকে না, উদ্দেশ্য থেকে টানতে হয়।
বাড়িওয়ালা আন্টির কথা তখনো আমার কানে বাজছে। আমি মেজাজ হারিয়ে বললাম, তুমি আবহমান কালের পতিভক্ত স্ত্রীর গলায় কথা বলছ মা। এত পতিভক্তি ভালো না। মহিলাদের আস্কারা পেয়েই পুরুষ মানুষ সাহস পায়।
মা কখনো রাগ করেন না। মায়ের চোখে মুখে বিরল রাগ ফুটে উঠল। তিনি চড়া গলায় বললেন, বেশি বুঝতে যাবি না। এই লোকের সংসার আমি করছি, আমি জানি। সারা দুনিয়া এসে যদি তাকে খারাপ বলে আমি তবু বলব না। আমার সামনে থেকে এখন যা।
আমি অস্ফুটে গলায় বললাম, হায়রে প্রেম!
আমার কথা মায়ের কানে চলে গেল। তিনি আমাকে কাছে ডাকলেন। আমাকে চরম বিস্মিত করে দিয়ে গালে চড় বসিয়ে বললেন, এই যে ডায়ালাইসিসের জন্য আমার মাসে মাসে এত রক্ত লাগে, এক ব্যাগ যোগাড় করেছিস? খবর নিয়েছিস তোর বাবা কোথায় এত ও নেগেটিভ পায়? এই রক্ত কি বললেই মেলে?
এখন এসেছিস মাতৃভক্তি দেখাতে। দুনিয়ার হিসাব এত সোজা না।
আমি মাতালের টলতে টলকে মতো নিজের ঘরে চলে আসলাম। মা এসব কি বললেন! এটা সত্য যে মায়ের রক্তের ব্যবস্থা সব সময়ই বাবা করেছেন। আমার দরকার পড়েনি, পড়লে নিশ্চয়ই করতাম। এখন এই সময়ে এসে মা এমন খোটা দেবেন?
জগৎ বোধহয় সত্যিই আজব। আমার কি জগৎ বোঝার মতো এতটুকু বয়স হয়নি?
:
:
মায়ের কিডনী অপারেশন হচ্ছে।
মায়ের কিডনী অপারেশন করা সম্ভব এই ব্যাপারটা আমরা কখনোই ভাবতে পারিনি। আমাদের কোনো সম্পত্তি নেই, ব্যাংকে টাকা নেই। বাবা সামান্য একটা বেসরকারি চাকরি করেন। ঘরের একমাত্র ছেলে হিসেবে আমি খুব ভালো করেই জানতাম বাবার চাকরির বাইরে আমাদের অন্য কোনো আয়ের উৎস নেই। তার উপর ও নেগেটিভ রক্তের কিডনী পাওয়া প্রায় অসম্ভব। মায়ের ডায়ালাইসিসের টাকা কষ্টে সৃষ্টে যোগাড় হবে, ডায়ালাইসিস চলবে, এক সময় মা মারা যাবেন... এটাই জেনে এসেছি এতদিন। সে হিসেবে এই অপারেশন আমার জন্য প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার।
মাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হয়েছে। গত পনের দিনে যা ঝড় চলে যাবার, চলে গেছে। এই মুহুর্তে প্রার্থনা ছাড়া আর কিছু করার নেই। অপারেশনে সময় লাগবে। বাবা ওটি রুমের সামনে থেকে আমাকে হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে আসলেন। উৎসুক গলায় বললেন, খোকা চা খাবি?
- জ্বী।
- চল বাইরে থেকে চা খেয়ে আসি।
হাসপাতাল থেকে খানিকটা দূরে নির্জন একটা চায়ের স্টল থেকে ওয়ান টাইম কাপে করে বাবা দুই কাপ চা নিলেন। রাতের নির্জনতার মধ্যে সবকিছু কেমন জানি অপার্থিব মনে হচ্ছে। বাবা আমার হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে বললেন, খোকা!
- জ্বী বাবা!
- আমার উপর আর রাগ আছে?
- আমাকে মাফ করে দিন বাবা।
বাবা হাসলেন। মোটামুটি নীরব দেখে একটা জায়গায় বসে আমাকেও বসার জন্য ইশারা দিলেন। নরম গলায় বললেন, আমি কখনোই তোর উপর রাগ করিনি খোকা।
- আপনি সবকিছু কেন কখন পরিষ্কার করেন নি?
বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, পরিষ্কার করতে গেলে সমস্যা হতো তখন। আমি তাহমিনার থেকে টাকা নিয়ে তোর মায়ের চিকিৎসা করাব এটা তোর মা মানতে পারত না। কখনোই না। অথচ এর বাইরে আমার কিছুই করার ছিল না।
- জ্বী বাবা।
- তাহমিনা মানুষটা অনেক ভালো, জানিস? সে যখন তোর মায়ের অসুখের খবর জানল, এত ভেঙে পড়ল! আমি আশ্চর্য হয়ে দেখলাম তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমার স্ত্রীর জন্য আমি এবং তুই ছাড়া আর কেউ কাঁদেনি। আমি তখনই মানুষটার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে গেলাম। তারপর সে যখন বলল তার অনেকগুলো টাকা অযথা পড়ে আছে এবং সে টাকা যদি আমি নিই তবে সে খুশি হবে, তখন কেন জানি মনে হলো আকাশ থেকে ফেরেশতা নেমে পড়েছে।
আমি বললাম, উনি কেন এত টাকা এভাবে ফেলে রেখেছেন?
- বিতৃষ্ণায়। জীবন তাকে প্রচণ্ডভাবে ধোঁকা দিয়েছে। সে জীবনের প্রতি সকল আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল।
- তারপর?
- টাকার লোভ আমার কখনো ছিল না, জানিস? জীবনে এই প্রথম টাকার লোভে পড়লাম। আমার কাছে যে কোনো মূল্যে তোর মাকে বাঁচানোর ইচ্ছে ছিল। আমি কিছু ভাবতে পারিনি। টাকার প্রতি লোভ ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অপারেশন করানোর মতো বিকল্প কোনো পথ আমার আর জানা ছিল না।
- হু।
- তারপর একদিন সে জানাল তার নিজের রক্তের গ্রুপ ও নেগেটিভ এবং আমি চাইলে তার একটা কিডনী নিতে পারি।আমি না তখন অনেকটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললাম। তাকে ভদ্রতার খাতিরেও না বলিনি। কেমন নির্লজ্জের মতো কিডনী দেবে জেনে খুশি হয়ে গেলাম।
আমি ঘোর লাগা গলায় বললাম, আর উনি সত্যি সত্যিই টাকার সাথে সাথে কিডনীও দিয়ে দিলেন?
- হ্যাঁ। তোর নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে ঘটনা তো এখানে শেষ হলেই পারত। বিয়ে কেন করতে গেলাম?
- আমার কিছুই মনে হচ্ছে না বাবা। আপাতত আমি সব প্রশ্নের উর্ধ্বে।
বাবা বললেন, না। তোর জানা উচিত। তাহমিনার থেকে টাকা নেয়ার পর কিছুদিনের মধ্যেই আমার মধ্যে গভীর অনুতাপ চলে আসল। সম্পূর্ণ একা একটা মানুষ, যতই টাকার প্রতি বিতৃষ্ণা থাকুক, তার বেঁচে থাকার জন্য টাকা সবচেয়ে বেশি দরকার। একটা একা নারীর জীবনে যখন তখন টাকার দরকার পড়বে। আমি সে হিসেবে তাকে শূন্য করে দিয়েছি। তার একটা কিডনী এনে তাকেও তোর মায়ের পথেই ঠেলে দিচ্ছি।
- আপনি অনুতপ্ত হয়ে গেলেন?
- কঠিনভাবে। আমি কি করব তখন ভাবতে পারছিলাম না। তোর মাকে বাঁচানো সবচেয়ে বেশি দরকার। তাই বলে আরেকটা মানুষকে তো ধ্বংস করে না। তারও একটা আশ্রয় দরকার।
- তারপরই আপনি বিয়ের প্রস্তাব দিলেন?
- হ্যাঁ। খুব যে ভেবে চিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা না। তাকে প্রস্তাব দিয়েছি ঘোরের মধ্যে।
- উনি প্রস্তাব শুনে কি বললেন?
- সে হাসল। তারপর সরাসরি না করে দিল। কিছুটা কঠিন স্বরে বলল, আপনাকে জানি বলে কিছু মনে করলাম না। অন্য কেউ হলে কঠিন অপমান করতাম। বয়স ৩৫ হয়ে গেছে, বাকি জীবন এমনিই কেটে যাবে। আমাকে দয়া দেখাতে হবে না।
- আপনি রাজি করলেন কীভাবে?
- বললাম রাজি না হলে টাকা ফেরত দিয়ে দেব। অবশ্য টাকা সত্যি সত্যিই সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম। হুমকিটা মিথ্যে ছিল না। রাজি না হলে টাকা ফেরত দিতাম। অনুতাপ নিয়ে বাঁচা সম্ভব ছিল না। তারচেয়ে বড় কথা তোর মাকে তো আমি চিনি। সে জানতে পারলে আমার চেয়ে বড় অনুতাপ নিয়ে বেঁচে থাকত।
- শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন কীভাবে? আর মা কে বিয়ের ব্যাপারটা জানালেই তো পারতেন। মা তো মেনেই নিয়েছেন।
বাবা আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন,তোর মাকে জানাইনি অন্য কারণে। তাকে জানালে সে টাকা আনতে রাজি হতো না। এরচেয়ে মরে যাওয়াকেই বেশি প্রেফার করত। এখন বিয়ে করে ফেলেছি বলে তার কিছু করার থাকছে না। অবশ্য সে এখন পর্যন্ত পুরো সত্যটা জানে না।
আমার পাশ ঘেষে ফোঁস করে একটা প্রাইভেট কার চলে গেল। বাবা চুপ হয়ে গেলেন। আমিও কিছু বলতে পারছি না।
বাবা বেশ কিছুক্ষণ পর বললেন, তাহমিনাকে রাজি করাতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। একটা জেদ চেপে বসেছিল।
- শেষ পর্যন্ত কি বলে রাজি করালেন?
- বললাম আমার স্ত্রীকে আমি কতটা ভালোবাসি সেটা তো বুঝতেই পারছ। তোমাকে তারচেয়ে কম বাসব না। দুজনকে ভালোবাসতে গিয়ে হয়তো ভাগে কম পড়বে। এই দয়াটুকু করতে হবে আমাকে।
- অদ্ভূত।
- খুবই অদ্ভূত। জীবন সত্যিই অদ্ভূত। এই যে পিতা হয়ে তোর সাথে এসব নিয়ে কথা বলছি, এটাই কম অদ্ভূত? তুই মাকে ওটি টেবিলে রেখে এসব কথা শুনছিস এটা কি স্বাভাবিক কিছু?
আমি বললাম, না।
বাবা একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, জীবনে আমরা যা ভাবি তার অনেক কিছুই আসল না। যেসব জিনিষকে আমরা ভুল ভাবি তার সবকিছু ভুল নয়, যাকে পাপ ভাবি তার অনেক কিছুই পাপ নয়। দৃষ্টিভঙ্গিকে কোনো নির্দিষ্ট খাপে ভরে ফেলা উচিত না। পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের আলাদা আলাদা গল্প আছে, জীবন আছে, পৃথিবী আছে। যার যার পৃথিবীতে সত্য আলাদা, মিথ্যে আলাদা। আমরা কারো জীবন কেউ দেখিনি। আমরা নিজের সংজ্ঞায় অপরকে ফেলে দিই। এটা খুব বড় ভুল।
আমি মুগ্ধ হয়ে বাবার কথা শুনছি। এই তো আমার বাবা, এটাই আমার বাবা। এটাই সেই মানুষ যে কথার জাদুতে আটকে রাখে, বিশ্বাসের জাদুতে বন্দি করে।
আমি প্রসঙ্গ একটু ঘুরিয়ে বললাম, সগীর আংকেল আপনার ব্যাপারে জানল কীভাবে?
বাবা একটু বিব্রত হয়ে বললেন, একমাত্র সে এই বিয়ের ব্যাপারে জানত। আমি তাকে বিশ্বাস করেছিলাম। সে বিয়ে করতে আমাকে উৎসাহিত করেছে। কিন্তু বিয়ের পর সে যখন তাহমিনার টাকার কথা জানল তখন আমার কাছে দুই লাখ টাকা চেয়ে বসল। অনেকটা ব্লেকমেইল করার মতো।
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, উনি এত নিচে নামতে পারল?
বাবা মিষ্টি করে হেসে বললেন, মানুষের উপরে নিচে উঠিনামার কোনো সীমা পরিসীমা নেই। সে প্রথমে ভেবেছিল বিয়ে করে আমি ধ্বংস হয়ে যাব তাই উৎসাহিত করেছে। পরে যখন সত্য জেনে গেল তখন উল্টোদিকে ধ্বংস করতে গেল।
বাবা কিংবা আমি কেউ ই চায়ের কাপে একটাও চুমুক দিই নি। চা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। বাবা হাত থেকে চায়ের কাপ ফেলে দিয়ে বললেন, চল আবার চা খাব। ঠাণ্ডা চা খাওয়ার কোনো মানে নেই।
আমিও উঠে দাঁড়ালেন। চা ফেলে দিয়ে বললাম, উনি এখন কেমন আছেন?
- কে তাহমিনা?
- জ্বী।
- মা বলতে অস্বস্তি লাগছে, তাই না? হাহাহা। সে ভালো আছে, আনন্দে আছে। কিডনী দিতে গিয়ে তারও একটা অপারেশন করতে হয়েছে।সুস্থ থাকলে আজকে সে থাকত।
- আচ্ছা।
বাবা আস্তে করে পা ফেলতে ফেলতে বললেন, তোর মাকে আমি বড় বেশি ভালোবাসিরে বাবা। তার রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ। তোর পরে এ কারণে আর কোনো বাচ্চা নিইনি। শুনেছি বাচ্চা নিতে গেলে নাকি তার ক্ষতি হতে পারত। আজকে দ্বিতীয় বিয়ে করে সমাজের চোখে ভিলেন হলাম, সেটাও তারই জন্য। তাহমিনাকে বিয়ে করা ভুল হলো কিনা এখনো জানি না। সেটা সময় বলবে।
আমার কেন জানি চোখ ঘোলা হয়ে আসছে। মায়ের এত বড় অপারেশন হচ্ছে,জীবন মৃত্যু দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি। আমার তবু একটু ভয় লাগছে না। মনে হচ্ছে জীবন খুব বেশি খারাপ না। অত অসুখ, এত বিচিত্রতা আর মৃত্যুর আতংকের পরেও।
আমি বাবাকে বললাম, আমার জন্য আপনার কোনো উপদেশ আছে বাবা?
বাবা এক মুহুর্তের জন্য থামলেন। আমাকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে শান্ত গলায় বললেন, চোখ দিয়ে কিছু দেখামাত্র সেটাকে সত্য ভাবতে নেই, কান দিয়ে কিছু শোনামাত্র সেটাকে বিশ্বাস করতে নেই। চোখ, কানের সীমাবদ্ধতা আছে। চোখ দেখতে পারে, শুনতে পারে না। কান শুনতে পারে দেখতে পারে না। একই সাথে দেখা,দেখা আর অনুভব করার কাজ কেবল হৃদয় করতে পারে। সবকিছুকে পরিমাপ করতে হয় হৃদয় দিয়ে। জগতের কিছু সত্য মিথ্যের চেয়ে কুৎসিত, আর কিছু মিথ্যা সত্যের চেয়ে পবিত্র।
আমি বাবার কথা শুনছি। আমার হাজার বছরের বাবা। আমার শিক্ষক, আমার অর্ধেক পৃথিবী।
আমার দৃষ্টিকোণে লোনাপানির প্রবাহ কমছেই না। বাবার জড়িয়ে ধরা বাহুডোরে আবদ্ধ হয়েও অস্থির লাগছে।
আমি বললাম, বাবা আমি একটু কাঁদতে পারি?
বাবা কঠিন গলায় বললেন, না। তোর মা সুস্থ হওয়ার পর সব কান্না। সকল আনন্দ আর সকল কান্না আমরা চারজন মিলে ভাগাভাগি করব।
আমার মুহুর্তের জন্য মনে পড়ল আমরা আর তিনজন নেই। মুহুর্তের ভুলে কিংবা শুদ্ধতায় আমরা তিনজন থেকে চারজন হয়ে গেছি।
আমার চোখ তবুও চিকচিক করছে। আমি আটকা পড়ে গেছি ভুল শুদ্ধের মাঝামাঝিতে। জগতের ভুল আর শুদ্ধের হিসাব সত্যিই কি কেউ জানে?
মনে হয়না। তবে এটা জানি দৃষ্টিকোণে আটকে পড়ে যে অশ্রু, সে বড় বেশি পবিত্র, বড় বেশি নির্মল। আমি না দেখেও বলতে পারি বাবার চোখেও এখন অশ্রু জমে আছে। তিনি ঠিক কার জন্য কাঁদছেন কে জানে!
জগতে কেউ কিচ্ছু জানে না। জগতের কিচ্ছু কেউ জানে না।
লেখকঃ-
জয়নাল আবেদীন