একটি আরশোলার কীর্তি
## বাসু মুখোপাধ্যায় ##
...........আমাদের পাড়ার ক্লাবের পক্ষ থেকে গতবছর খুব ঘটা করে রবীন্দ্রজয়ন্তীর আয়োজন করা হয়েছিল। সেইদিন আমি জানতে পারি একটি নিরীহ আরশোলার কী বিপুল ক্ষমতা!
.
...দুজন প্রোমোটার প্রোগ্রামটা স্পন্সর করেছিলেন। বিশাল বাজেট, বড় প্যান্ডেল, নামী শিল্পী। সভাপতি করা হয়েছিল বিখ্যাত ডানপন্থী নেতা নারান চাকলাদারকে আর প্রধান অতিথি বিশিষ্ট সমাজসেবী বামপন্থী গদাই মহাপাত্রকে। আগেই প্রধান অতিথি জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর আরও সভা আছে তাই আসতে একটু দেরি হবে সুতরাং তাঁকে ছাড়াই যেন অনুষ্ঠান শুরু করে দেওয়া হয়।
.
...তাই সভাপতি এসে পৌঁছনো মাত্র নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়ে গেল। পাড়ার শর্মিলাদি উদ্বোধনী সংগীত শুরু করে দিলেন। ঠিক সেইসময় কোথা থেকে একটা আরশোলা এসে স্টেজে আসীন সভাপতির গায়ে বসল। সভাপতি এই একটি জীবকেই যমের মত ভয় পান। তিনি মস্ত এক লম্ফ দিয়ে স্টেজের মধ্যেই তিড়িংবিড়িং শুরু করে দিলেন। খুব দরদ দিয়ে শর্মিলাদি তখন গাইছেন,"মহিমা তব উদ্ভাসিত..."।
.
...সভাপতিকে হঠাৎ নাচতে দেখে শর্মিলাদি ঘাবড়ে গিয়ে গান বন্ধ করে দিলেন। এদিকে সভাপতির নর্তন-কুর্দনের চোটে আরশোলা তখন স্টেজের মধ্যে উড়তে শুরু করেছে।
ঠিক সেই সময়ে স্টেজে প্রধান অতিথির প্রবেশ। উড়ন্ত আরশোলার দিকে আঙুল দেখিয়ে সভাপতি তখন চেঁচাচ্ছেন, "আরশোলা আরশোলা।"
ডানপন্থী চাকলাদারের চিরশত্রু বামপন্থী মহাপাত্রের ধারণা হলো, চাকলাদার তাঁকেই আরশোলা বলছে। তিনি ভাবলেন, কী? স্টেজে এত লোকের সামনে এত বড় ইনসাল্ট? তিনিও তখন সভাপতির দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন, "ছুঁচো ছুঁচো।"
.
...সভাপতির তখন মহাপাত্রের কথায় কান দেওয়ার সময় নেই। ভয়কম্পিত বক্ষে তিনি আরশোলা দেখছেন আর চেঁচাচ্ছেন, "ওই যে আরশোলাটা, মারো, মারো, মেরে শেষ করে দাও।"
মহাপাত্রের আর সহ্য হলোনা। তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন, "কী আমাকে মারবি? আয় না শালা দেখি তোর কত হিম্মৎ?" বলেই তিনি সভাপতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ঘটনার আকস্মিকতায় সভাপতি প্রথমে হকচকিয়ে গেছিলেন, কিন্তু দমে যাবার পাত্র তিনি নন, শুরু হয়ে গেল দুজনের মধ্যে কুস্তি।
.
...এদিকে দর্শকরা এসব দেখে তো হতভম্ব। আর সবচেয়ে মর্মান্তিক অবস্থা শর্মিলাদির। দুজন প্রবীণ মানুষের মারামারি দেখে তিনি স্ট্যাচু হয়ে গেছেন। আর ঠিক সেইসময়ে আরশোলাটা উড়তে উড়তে এসে শর্মিলাদির গায়ে বসল। অমনি শর্মিলাদিও ভারত নাট্যম শুরু করে দিলেন।
.
...আমাদের ক্লাবের সম্পাদক ভজহরিদা কী হচ্ছে বোঝার জন্য স্টেজে উঠে পড়লেন। সভাপতি- প্রধান অতিথি ফ্রি স্টাইল কুস্তি লড়ে যাচ্ছেন। নৃত্যরতা শর্মিলাদি ভজহরিদাকে দেখতে পেয়ে তাঁর হাতে শাড়ির একপ্রান্ত ধরিয়ে দিয়ে শাড়ি খুলতে লেগে গেলেন। আরশোলা যে শাড়ির মধ্যেই সেঁধিয়েছে! স্টেজে তখন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ পালা চলছে। ভজহরিদা যেন দুঃশাসনের রোলে অবতীর্ণ হয়ে শর্মিলাদির বস্ত্রহরণ করছেন। দর্শকরা স্টেজে কী হচ্ছে তার বিন্দু বিসর্গ না বুঝে বেধড়ক চেঁচিয়ে যাচ্ছে।
.
...শর্মিলাদির স্বামী ছিলেন দর্শক আসনে। হঠাৎ ভজহরিদাকে শর্মিলাদির শাড়ি ধরে টানতে দেখে ভাবলেন তাঁর স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করা হচ্ছে।
তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন, "ইতর, ছোটলোক, আমার বউএর শাড়ি টানাটানি? দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।"
এইবলে তিনি হুড়মুড় করে স্টেজে উঠে পড়েই ভজহরিদার কলার ধরে গর্জে উঠলেন, "স্কাউনড্রেল, আমার বউয়ের শাড়ি ছাড় বলছি।"
.
...শর্মিলাদির স্বামী যখন এইকথা বলছেন তখন আরশোলাটা শর্মিলাদিকে ছেড়ে দিয়ে শর্মিলাদির বরের পা বেয়ে সুড়সুড় করে ওপরে উঠতে লাগল।
পায়ে সুড়সুড়ি লাগতেই শর্মিলাদির স্বামী লাফাতে লাগলেন আর পুরো ব্যাপারটা তাঁর কাছে ডিস্টিল্ড ওয়াটারের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল।
আরশোলা তখন শর্মিলাদির স্বামীর পা বেয়ে আরও ওপরে উঠে গেছে, বাধ্য হয়ে তিনি নিজের প্যান্ট খুলে ফেললেন আর হাতে জুতো নিলেন আরশোলাকে মারার জন্য। আরশোলা তখন তাঁর দেহের গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে ফের উড়তে শুরু করেছে।
.
...স্টেজের এই লঙ্কাকাণ্ড দেখে দর্শকদের তো আক্কেল গুড়ুম। সভাপতি ভার্সেস প্রধান অতিথি মল্লযুদ্ধ চলছে। শর্মিলাদি দাঁড়িয়ে আছেন স্খলিত বসনে। শাড়ির প্রান্তধরে হাং হয়ে যাওয়া মোবাইলের মত দাঁড়িয়ে আছেন ভজহরিদা আর শর্মিলাদির স্বামী জাঙিয়া পরে জুতো হাতে আরশোলাকে হত্যা করার জন্য খুঁজছেন। একটা ডামাডোলিয়াস কাণ্ডকারখানা!
.
...এইসব গণ্ডগোল যখন চলছে ততক্ষণে সামনের থানা থেকে বড়বাবু চলে এসেছেন। দুজন কনস্টেবল আগে থেকেই ছিল, তাদের নিয়ে তিনি স্টেজে উঠলেন রহস্যোদ্ঘাটনের জন্য। আর ঠিক সেই মুহূর্তে শর্মিলাদির স্বামী উড়ন্ত আরশোলা লক্ষ করে জুতো ছুঁড়ে দিয়েছেন। বড়বাবু কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই জুতো সজোরে এসে লাগল তাঁর মুখে। আচমকা সেই আঘাত সামলাতে না পেরে ভীমাকৃতি বড়বাবু তাঁর পাহাড় প্রমাণ শরীর নিয়ে একদম দড়াম। বড়বাবু পড়া মাত্র কাঠের স্টেজ বিকট আওয়াজ করে ভেঙে গেল।
কনস্টেবল দুজন বড়বাবুর এই অবস্থা দেখে,"বড়বাবু খুন হয়ে গেল, খুন হয়ে গেল" বলে চিৎকার করতে করতে থানায় দৌড়ে গেল।
মিনিট কয়েকের মধ্যে বিশাল সশস্ত্র বাহিনী এসে ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলল। কিন্তু এই তুমুল কাণ্ডের নায়ক, সেই আরশোলা ততক্ষণে কোথায় যে পালিয়ে গেল, আর তাকে খুঁজে পাওয়া গেল না।
-সংগৃহীত
## বাসু মুখোপাধ্যায় ##
...........আমাদের পাড়ার ক্লাবের পক্ষ থেকে গতবছর খুব ঘটা করে রবীন্দ্রজয়ন্তীর আয়োজন করা হয়েছিল। সেইদিন আমি জানতে পারি একটি নিরীহ আরশোলার কী বিপুল ক্ষমতা!
.
...দুজন প্রোমোটার প্রোগ্রামটা স্পন্সর করেছিলেন। বিশাল বাজেট, বড় প্যান্ডেল, নামী শিল্পী। সভাপতি করা হয়েছিল বিখ্যাত ডানপন্থী নেতা নারান চাকলাদারকে আর প্রধান অতিথি বিশিষ্ট সমাজসেবী বামপন্থী গদাই মহাপাত্রকে। আগেই প্রধান অতিথি জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর আরও সভা আছে তাই আসতে একটু দেরি হবে সুতরাং তাঁকে ছাড়াই যেন অনুষ্ঠান শুরু করে দেওয়া হয়।
.
...তাই সভাপতি এসে পৌঁছনো মাত্র নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়ে গেল। পাড়ার শর্মিলাদি উদ্বোধনী সংগীত শুরু করে দিলেন। ঠিক সেইসময় কোথা থেকে একটা আরশোলা এসে স্টেজে আসীন সভাপতির গায়ে বসল। সভাপতি এই একটি জীবকেই যমের মত ভয় পান। তিনি মস্ত এক লম্ফ দিয়ে স্টেজের মধ্যেই তিড়িংবিড়িং শুরু করে দিলেন। খুব দরদ দিয়ে শর্মিলাদি তখন গাইছেন,"মহিমা তব উদ্ভাসিত..."।
.
...সভাপতিকে হঠাৎ নাচতে দেখে শর্মিলাদি ঘাবড়ে গিয়ে গান বন্ধ করে দিলেন। এদিকে সভাপতির নর্তন-কুর্দনের চোটে আরশোলা তখন স্টেজের মধ্যে উড়তে শুরু করেছে।
ঠিক সেই সময়ে স্টেজে প্রধান অতিথির প্রবেশ। উড়ন্ত আরশোলার দিকে আঙুল দেখিয়ে সভাপতি তখন চেঁচাচ্ছেন, "আরশোলা আরশোলা।"
ডানপন্থী চাকলাদারের চিরশত্রু বামপন্থী মহাপাত্রের ধারণা হলো, চাকলাদার তাঁকেই আরশোলা বলছে। তিনি ভাবলেন, কী? স্টেজে এত লোকের সামনে এত বড় ইনসাল্ট? তিনিও তখন সভাপতির দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন, "ছুঁচো ছুঁচো।"
.
...সভাপতির তখন মহাপাত্রের কথায় কান দেওয়ার সময় নেই। ভয়কম্পিত বক্ষে তিনি আরশোলা দেখছেন আর চেঁচাচ্ছেন, "ওই যে আরশোলাটা, মারো, মারো, মেরে শেষ করে দাও।"
মহাপাত্রের আর সহ্য হলোনা। তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন, "কী আমাকে মারবি? আয় না শালা দেখি তোর কত হিম্মৎ?" বলেই তিনি সভাপতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ঘটনার আকস্মিকতায় সভাপতি প্রথমে হকচকিয়ে গেছিলেন, কিন্তু দমে যাবার পাত্র তিনি নন, শুরু হয়ে গেল দুজনের মধ্যে কুস্তি।
.
...এদিকে দর্শকরা এসব দেখে তো হতভম্ব। আর সবচেয়ে মর্মান্তিক অবস্থা শর্মিলাদির। দুজন প্রবীণ মানুষের মারামারি দেখে তিনি স্ট্যাচু হয়ে গেছেন। আর ঠিক সেইসময়ে আরশোলাটা উড়তে উড়তে এসে শর্মিলাদির গায়ে বসল। অমনি শর্মিলাদিও ভারত নাট্যম শুরু করে দিলেন।
.
...আমাদের ক্লাবের সম্পাদক ভজহরিদা কী হচ্ছে বোঝার জন্য স্টেজে উঠে পড়লেন। সভাপতি- প্রধান অতিথি ফ্রি স্টাইল কুস্তি লড়ে যাচ্ছেন। নৃত্যরতা শর্মিলাদি ভজহরিদাকে দেখতে পেয়ে তাঁর হাতে শাড়ির একপ্রান্ত ধরিয়ে দিয়ে শাড়ি খুলতে লেগে গেলেন। আরশোলা যে শাড়ির মধ্যেই সেঁধিয়েছে! স্টেজে তখন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ পালা চলছে। ভজহরিদা যেন দুঃশাসনের রোলে অবতীর্ণ হয়ে শর্মিলাদির বস্ত্রহরণ করছেন। দর্শকরা স্টেজে কী হচ্ছে তার বিন্দু বিসর্গ না বুঝে বেধড়ক চেঁচিয়ে যাচ্ছে।
.
...শর্মিলাদির স্বামী ছিলেন দর্শক আসনে। হঠাৎ ভজহরিদাকে শর্মিলাদির শাড়ি ধরে টানতে দেখে ভাবলেন তাঁর স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করা হচ্ছে।
তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন, "ইতর, ছোটলোক, আমার বউএর শাড়ি টানাটানি? দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।"
এইবলে তিনি হুড়মুড় করে স্টেজে উঠে পড়েই ভজহরিদার কলার ধরে গর্জে উঠলেন, "স্কাউনড্রেল, আমার বউয়ের শাড়ি ছাড় বলছি।"
.
...শর্মিলাদির স্বামী যখন এইকথা বলছেন তখন আরশোলাটা শর্মিলাদিকে ছেড়ে দিয়ে শর্মিলাদির বরের পা বেয়ে সুড়সুড় করে ওপরে উঠতে লাগল।
পায়ে সুড়সুড়ি লাগতেই শর্মিলাদির স্বামী লাফাতে লাগলেন আর পুরো ব্যাপারটা তাঁর কাছে ডিস্টিল্ড ওয়াটারের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল।
আরশোলা তখন শর্মিলাদির স্বামীর পা বেয়ে আরও ওপরে উঠে গেছে, বাধ্য হয়ে তিনি নিজের প্যান্ট খুলে ফেললেন আর হাতে জুতো নিলেন আরশোলাকে মারার জন্য। আরশোলা তখন তাঁর দেহের গোপন স্থান থেকে বেরিয়ে ফের উড়তে শুরু করেছে।
.
...স্টেজের এই লঙ্কাকাণ্ড দেখে দর্শকদের তো আক্কেল গুড়ুম। সভাপতি ভার্সেস প্রধান অতিথি মল্লযুদ্ধ চলছে। শর্মিলাদি দাঁড়িয়ে আছেন স্খলিত বসনে। শাড়ির প্রান্তধরে হাং হয়ে যাওয়া মোবাইলের মত দাঁড়িয়ে আছেন ভজহরিদা আর শর্মিলাদির স্বামী জাঙিয়া পরে জুতো হাতে আরশোলাকে হত্যা করার জন্য খুঁজছেন। একটা ডামাডোলিয়াস কাণ্ডকারখানা!
.
...এইসব গণ্ডগোল যখন চলছে ততক্ষণে সামনের থানা থেকে বড়বাবু চলে এসেছেন। দুজন কনস্টেবল আগে থেকেই ছিল, তাদের নিয়ে তিনি স্টেজে উঠলেন রহস্যোদ্ঘাটনের জন্য। আর ঠিক সেই মুহূর্তে শর্মিলাদির স্বামী উড়ন্ত আরশোলা লক্ষ করে জুতো ছুঁড়ে দিয়েছেন। বড়বাবু কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই জুতো সজোরে এসে লাগল তাঁর মুখে। আচমকা সেই আঘাত সামলাতে না পেরে ভীমাকৃতি বড়বাবু তাঁর পাহাড় প্রমাণ শরীর নিয়ে একদম দড়াম। বড়বাবু পড়া মাত্র কাঠের স্টেজ বিকট আওয়াজ করে ভেঙে গেল।
কনস্টেবল দুজন বড়বাবুর এই অবস্থা দেখে,"বড়বাবু খুন হয়ে গেল, খুন হয়ে গেল" বলে চিৎকার করতে করতে থানায় দৌড়ে গেল।
মিনিট কয়েকের মধ্যে বিশাল সশস্ত্র বাহিনী এসে ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলল। কিন্তু এই তুমুল কাণ্ডের নায়ক, সেই আরশোলা ততক্ষণে কোথায় যে পালিয়ে গেল, আর তাকে খুঁজে পাওয়া গেল না।
-সংগৃহীত