What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review এক প্রেমিকের বেদনার অধ্যায় (1 Viewer)

fVpFHbi.jpg


প্রেমের নাম বেদনা; পরিচালক – রাজ্জাক; শ্রেষ্ঠাংশে – বাপ্পারাজ, পূর্ণিমা, শিল্পী, অমিত হাসান, খালেদা আক্তার কল্পনা, আবুল হায়াত, খলিল প্রমুখ; উল্লেখযোগ্য গান – তোমরা সবাই থাকো সুখে; মুক্তি – ১৬ জুন ২০০০

পৃথিবীতে সফল মানুষের সংখ্যা বেশি নাকি ব্যর্থ মানুষ?

ব্যর্থ মানুষের সংখ্যাই বেশি মিলবে। সফল মানুষ যারা তাদের সাফল্যের পেছনেও ব্যর্থতা লুকিয়ে আছে। ব্যর্থতা অনেক রকমের আছে তার মধ্যে একটি প্রেমে ব্যর্থতা। ‘ব্যর্থ প্রেমিক’ নামে একটা কথাও চালু আছে লোকসমাজে। প্রেমিক কি সত্যিই ব্যর্থ হয় কিংবা তার প্রেম কি ব্যর্থ হয়? নাকি পরিবেশ-পরিস্থিতির কাছে প্রেমিক হেরে যায়! ভাববার বিষয় আছে। ভাবাটা নায়করাজ সুযোগ করে দেন এ ছবিতে।

এক প্রেমিক যার গল্পটা শুরু হয়েছিল গ্রামের চঞ্চল মেয়েটিকে ঘিরে। তার জন্য বকুলের মালা গাঁথত প্রেমিকটি। মালা গেঁথে মেয়েটিকে দেখাত। মেয়েটি গাছে চড়ে পেয়ারা খেত। দুষ্টুমি করত। ছেলেবুড়ো সবাইকে জব্দ করত। একদিন হাতেনাতে ধরা পড়ে গেল খলিলের কাছে। তারপর দেখেশুনে তার বিয়ের কথাবার্তা চলল। মেয়েটির বিয়েও হয়ে গেল। আর যে প্রেমিক তাকে ভালোবাসত সে কিছু বলতেও পারল না। প্রেমিকটি বাপ্পারাজ, মেয়েটি পূর্ণিমা আর যার সাথে বিয়ে হলো সে তার বড়ভাই অমিত হাসান। ভালোবাসার মানুষটি তখন সম্পর্কে ভাবী। মেয়েটির কোনো দোষও নেই কারণ প্রেমিক বাপ্পারাজ তার আচরণে বুঝিয়েছে সে পূর্ণিমাকে ভালোবাসত। পূর্ণিমা তা জানত না। বাপ্পাকে ভালোবাসত শিল্পী এবং সে খলিলের মেয়ে। খলিল বাপ্পার মামা। গল্প এভাবে প্রথম দিকটা এগোয়।

ড্রামার প্রথম পার্টটা জমে অমিত-পূর্ণিমার সংসারে বাপ্পার সাথে পূর্ণিমার খুনসুটি এবং কানকথা ছড়ানো কাছের লোকজনের মাধ্যমে। বাপ্পার জীবনে একটা পরিবর্তন আসে যেটা অপ্রত্যাশিত ছিল। ড্রামার দ্বিতীয় পার্টের জায়গাটা হয় নিষিদ্ধ পল্লীতে। সেখানে মদ, জুয়া, মেয়েমানুষ ইত্যাদির আসর বসে। বাপ্পা হয়ে যায় সেখানকার একজন বাসিন্দা। ঘটনাক্রমে সেখানে বিক্রি হয় শিল্পী। শিল্পীর সাথে দেয়ালের আড়ালে কথা বলতে বলতে কণ্ঠ চিনে ফেলে বাপ্পা। শিল্পীকে দেখে বিশ্বাস করতে না পারলেও ভাগ্যকে মেনে নেয়। তাকে নিষিদ্ধ পল্লী থেকে মুক্তির কথা বলে। তারপর গল্প পরিণতির দিকে যায়।

ড্রামার চূড়ান্ত দুটি পার্ট ঘটে দুইভাবে ছবিতে। প্রথমত শিল্পীর মৃত্যু পরে বাপ্পার মৃত্যু।

১. শিল্পী বাপ্পার জন্য বউ সেজে বসে থাকে। বাপ্পা খুব খুশি শিল্পীকে নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে পেরে। কিন্তু শিল্পী যে বিষ খেয়ে বসে আছে তা কে জানত! খলিলের দেখা পেয়ে নিয়ে যায় মেয়ের লাশ দেখাতে। নিষিদ্ধ পল্লীতে তখন কান্নার রোল।

২. শিল্পীকে কবর দেবার পর বাপ্পার কাশিতে বের হওয়া রক্ত দেখে খলিল অবাক হলে বাপ্পা জানায়-’এবার তো আমার পালা, মামা।’ হাসপাতালে চলে যায় যেখানে অমিত-পূর্ণিমার ঘরে নতুন অতিথি এসেছে। তাকে দেখে বাপ্পা খুব খুশি। বলে-’ওকে আমি কি দেব?’ পকেট ঘেঁটে পায় বকুল ফুলের মালা। সেই মালাটি যেটা গাঁথা ছিল পূর্ণিমার জন্য। পূর্ণিমা অবাক হয় দেখে এবং চিনতে পারে। শিশুটিকে পরিয়ে দেবার সময় বাপ্পার টাচি সংলাপ-’শুকিয়ে গেছে কিন্তু চিরদিন তো শুকনো ছিল না।’ অসাধারণ। পূর্ণিমাকে বলে-’তোমার মনে আছে ছোটবেলায় আমি দুষ্টুমি করলে তুমি আমাকে মারতে আজ আমি সবচেয়ে বড় দুষ্টুমিটা করেছি, আমাকে মারো।’ পূর্ণিমা মারতে থাকে তখন মুখে রক্ত উঠে বাপ্পা চলে যায় অনন্তে। মা খালেদা আক্তার, ভাই অমিত তখন কাঁদছে আর পূর্ণিমা বিস্মিত হয়ে হা করে আছে। মর্মস্পশী পুরো পরিস্থিতি।

গানের মধ্যে ছবিতে প্রেমিকের ব্যর্থতার চূড়ান্ত বেদনা প্রকাশ পায়। গানটি জীবনমুখী এবং জনপ্রিয়-

‘তোমরা সবাই থাকো সুখে, আগুন জ্বলুক আমার বুকে, মনটাকে বলি তুমি কেঁদো না, প্রেমের নাম বেদনা।’

প্রেম যে বেদনা আনে এটা সবার জন্য সত্য তা নয় কারণ অনেকের জন্য প্রেমে ভাগ্য ভালো থাকলে প্রেমিক-প্রেমিকার মিলন হয় আর যাদের জন্য সেটা হয় না বেদনাটা থাকেই। গানের প্রথম অন্তরার কথাগুলো-

‘পৃথিবীর কাছে নেই কোনো দাবি, মুছে যাক হৃদয়ের আঁকা ছবি।’

এ দুই লাইনে বাপ্পারাজের প্রেমের ব্যর্থতার বেদনা ফুটে উঠেছে। আবার দ্বিতীয় অন্তরার কথাগুলো-

‘আকাশের মতো আজ আমি একা, নেই কোনো আশা আর স্বপ্ন দেখা।’

এখানে আকাশের সাথে নিঃসঙ্গতার গভীরতা ফুটে উঠেছে এবং বিরহের গানে কাব্যিক উপমার চমৎকার ব্যবহার দেখা যায়। পুরো গানে মদের বোতল হাতে বাপ্পার অসাধারণ অভিনয় যে কাউকে মুগ্ধ করবে। শিল্পী তখন দোতলায় পায়চারি করে আর কাঁদে। গানটাতে যত্নের ছাপ আছে। নায়করাজের পরিচালনার জবাব নেই অন্তত বিরহের পরিবেশ তৈরিতে।

জীবনে দর্শন অনেকরকম। বাপ্পার বাড়ি ছাড়ার পরে মা খালেদা আক্তার কল্পনা অসুস্থ হয়ে পড়ে ছেলের শোকে। পূর্ণিমা, অমিত অপরাধী ভাবে সেজন্য নিজেকে। মা তখন দামি একটা কথা বলে এবং সেটা জীবনের একটা দর্শনও-’একটা মানুষ তখনই বেশি কষ্ট পায় যখন তার আপনজন তাকে সবচেয়ে বড় কষ্ট দেয়।’

নায়করাজ রাজ্জাক অনেক ধরনের ছবি নির্মাণ করেছেন। নিজের অভিনীত ছবিও নিজে রিমেক করেছেন। ‘প্রেমের নাম বেদনা’ ছিল তাঁরই অভিনীত ‘বদনাম’ ছবির রিমেক। তাঁর প্রতিটি ছবিই নির্মাণের আলাদা ধরণকে চেনায়। প্রেম বিরহের ছবির মধ্যে ‘প্রেমের নাম বেদনা’ তাঁর সেরা কাজ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top