একই পোশাকে নানা অনুষঙ্গের ব্যবহার, ভিন্ন উপস্থাপন, ঈদের সাজে আনবে নতুনত্ব। অভিনেত্রী সুনেরাহ্ বিনতে কামাল ঘরে থাকা পোশাক পরে সেজেছেন ঈদের আমেজে ...
মহামারির ছায়া মাথায় নিয়ে এ বছরও কেটে যাবে আরও একটি ঈদ। পরিবারের সবাইকে নিয়ে দল বেঁধে কেনাকাটা, নতুন পোশাকে ঘুরে বেড়িয়ে ঈদ উদ্যাপনের পরিচিত আমেজ নেই করোনাকালের ঈদে। অনিশ্চিত এই সময়ে একটু ভিন্নভাবেই না হয় করি ঈদ উদ্যাপন! কথা দিচ্ছি, নতুন জামা-জুতা ছাড়া একটুও ম্লান হবে না আপনার ঈদের আনন্দ।
একটু পরিকল্পনা করে বেছে নিন ঈদের দিনের পোশাক। ঘরে থাকা পোশাকগুলোতে চোখ বুলিয়ে নিন। সময় করে ভেবে নিন কোনটির সঙ্গে কোনটি মিলিয়ে পরলে হতে পারে দুর্দান্ত ফিউশন!আলমারিতে পড়ে থাকা প্রিয় নীল ওড়নায় যোগ করে নিন নতুন অনুষঙ্গ। মায়ের পুরোনো সিল্ক শাড়িটি গায়ে জড়িয়ে সঙ্গী করে নিন হাল আমলের পাফড স্লিভ ক্রপ টপ। এই একটুখানি নতুনত্বই এনে দেবে বেশ ফুরফুরে আমেজ!
স্কার্ট–টপের সঙ্গে শাড়ি পরেই শুরু হবে সুনেরাহ ঈদের সকাল
পুরোনো পোশাকে নতুন আবহ আনার এমন নানা উপায় নিয়েই কথা হচ্ছিল জাতীয় চলচিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ও মডেল সুনেরাহ্ বিনতে কামালের সঙ্গে। সুনেরাহ্ জানালেন, একই পোশাকে নানা অনুষঙ্গ যোগ করে দিনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ‘লুক’ আনাই এবারের ঈদে তাঁর পোশাক পরিকল্পনা। অর্থাৎ, করোনাকালের এই ঈদে ‘মাল্টিপারপাস ফ্যাশন’–এর দিকে ঝুঁকছেন তিনি।
ঈদের দিনের শুরুতে সুনেরাহ্ পরবেন সাদা-কালো রঙের সুতি শাড়ি। অনেক দিন ধরে আলমারিতে তুলে রাখা এই শাড়িতে নতুন আবহ আনতে ‘ফিউশন’ বেছে নেবেন তিনি। গতানুগতিক ধারায় শাড়ি না পরে ‘হাফ প্লিটেড’ কুচি আর সামনে ঝুলিয়ে রাখা আঁচলে ভিন্নমাত্রা পাবে পুরোনো শাড়িটি। ব্লাউজ নয়, বরং হাল আমলের ক্রেজ ক্রপ টপ হবে শাড়ির সঙ্গী। কপালে টিপ, কানে রুপার দুল আর টেনে বাঁধা খোঁপায় এভাবেই ঈদের সকালে নিজেকে সাজাবেন সুনেরাহ্ বিনতে কামাল।
দুপুরে টপের সঙ্গে পালাজ্জো দেবে স্বাচ্ছন্দ্য
দুপুরের সাজে সেই একই ক্রপ টপের সঙ্গে পরবেন কফি বাদামি পালাজ্জো প্যান্ট। চুল থাকবে খোলা আর সঙ্গে থাকবে হালকা নকশার গয়না।
এবার শাড়ি নয়, একই টপ, প্লিটেড স্কার্টের সঙ্গে একটি শ্রাগ পরেই ঈদের সান্ধ্য সাজে প্রস্তুত সুনেরাহ্
সাঁঝবেলার সাজে আবার ক্রপ টপের সঙ্গে পালাজ্জোর বদলে যোগ হবে কালো রঙের প্লিটেড স্কার্ট আর কপার ব্রাউন শেডের শ্রাগ। সফট কার্ল করে খুলে রাখা চুল আর হালকা নকশার গোল্ড চেইন মিলিয়ে তখন একদম ‘স্লিক মর্ডান’ সুনেরাহ্ বিনতে কামাল!
রাতে স্কার্ট–টপের সঙ্গে রুপালি গয়না যোগ করবে নতুন মাত্রা
ঘরে বসেই যেহেতু এবারের সব আনন্দ উদ্যাপন, তাই রাতের পরিকল্পনা মানেই হলো পরিবারের সবাই মিলে রাতের খাবার খাওয়ার আর জমিয়ে আড্ডা দেওয়া। আরাম আর স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রেখে তাই এ সময় ক্রপ টপ আর স্কার্টের অনুষঙ্গ হিসেবে অতিরিক্ত কিছু যোগ করবেন না সুনেরাহ্। খোলা চুলের সামনের দিকে হয়তো খানিকটা টুইস্ট করে নেবেন তিনি আর গলায় থাকবে রুপার অ্যান্টিক গয়না। এভাবেই এক টপ-স্কার্টেই ঈদের দিনে চার রকমভাবে নিজেকে সাজাবেন ন ডরাইখ্যাত এই অভিনেত্রী।
মাল্টিপারপাস ফ্যাশনের এই ধারনা এখন বিশ্বফ্যাশনেও জনপ্রিয়
মাল্টিপারপাস ফ্যাশন নিয়ে অনেক দিন ধরেই কাজ করছে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো। ক্রেতাদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করতে তারা এর উপকারী দিকগুলো নিয়ে নিয়মিত কথা বলছে। দেশীয় ফ্যাশন হাউস শরদিন্দুর স্বত্বাধিকারী ও ফ্যাশন ডিজাইনার হাবিবা আক্তারের কথাতেও একই সুর, ‘বর্তমানে আমরা সবকিছুতে নতুনত্ব খুঁজি। কিন্তু পোশাকে নতুনত্ব আনতে গিয়ে যদি সব সময় জামাকাপড় কিনতে হয়, তবে খরচ যেমন বাড়বে, তেমনি পরিবেশের ওপরও পড়বে ক্ষতিকর প্রভাব। ঘরে থাকার এই ঈদে মাল্টিপারপাস ফ্যাশন একদিকে আপনার স্টাইলে যেমন নতুনত্ব আনবে, তেমনি এটি হবে খরচ কমানোর দারুণ সুযোগ।’
একই পোশাক বিভিন্ন স্টাইলে পরার এই ধারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফ্যাশন ব্লগার সাবা চৌধুরী সম্প্রতি ‘মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ’ শিরোনামে একটি ইনস্টাগ্রাম ভিডিও দিয়েছেন। সেখানে সাবাকে দেখা যায় তিনি নিউট্রাল শেডের একটিমাত্র ব্লাউজকে শাড়ি, পালাজ্জো, স্কার্ফ দিয়ে তিন রকমভাবে পরেছেন। এবারের ঈদ নিয়েও তেমনটিই পরিকল্পনা সাবার, ‘ঈদে ঘরে থাকা এক কুর্তিতেই “মিনিমালিস্ট” আর ঐতিহ্যবাহী স্টাইলিং করতে চাই আমি। ডবল জর্জেটের ওপর কারচুপি করা কুর্তির সঙ্গে সকালে পরব সিগার প্যান্ট আর হালকা নকশার ওয়েস্টার্ন গয়না। আবার সন্ধ্যায় পরব একই কুর্তির সঙ্গে সাদা রঙের চওড়া ঘের দেওয়া পালাজ্জো। তখন কানে থাকবে বড় ঝুমকো দুল।’
নিজের সুস্থতার জন্য, নিজেদের ভালো থাকার জন্য ঘরে থেকেই আমরা উদ্যাপন করব ঈদের আনন্দ। উৎসবের আবহে মূল সুর হয়ে উঠবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রিয়জনদের ভালো রাখার প্রয়াস। তবে ঘরে উদ্যাপনের এই ঈদেও মনকে কিন্তু রাখা যায় একদম চাঙা! তাই আলমারিতে থাকা পোশাকেই বাড়ির মানুষদের নিয়ে ঝটপট তৈরি হয়ে নিন, মুঠোফোনের ক্যামেরায় ধরে রাখুন ঈদের পারিবারিক ছবি। দূরে থাকা আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলুন ভিডিও কলে। ভৌগোলিক দূরত্ব কাটিয়ে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান সবাইকে। একে অপরের পাশে থেকে সাহস দেওয়া, শুভকামনা ছড়িয়ে দেওয়ার এই তো সময়!
* তাবাসসুম ইসলাম, ঢাকা